বালিশ রহস্য
৩০ মে ২০১৯ ২১:১৮
পিঠ থেকে ইয়া বড় ব্যাগটা নামাল রিমি। পিঠটা ঘেমে ভিজে চিটচিটে হয়ে আছে।
ব্যাগ খুলে ভিতর থেকে জিনিসপত্র বের করতে লাগল। প্রথমেই বেরুল একটা বালিশ। বালিশ দেখে ফুফুমণি অবাক। চোখ দুটো কপালে তুলে দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘বালিশ নিয়ে ঘুরিস নাকি রিমি?’
আমতা আমতা করতে লাগল রিমি। ‘আঁ-আঁ…’
‘তোকে বুঝি ঘুমুনোর জন্য একটা বালিশও দিতে পারব না? বালিশ নিয়ে বেড়াতে এসেছিস, এটা কি ভালো দেখায়?’
এবার কথা ফুটল রিমির মুখে, ‘আমি আমার বালিশ ছাড়া ঘুমুতে পারি না। ভেবে দেখো ফুফুমণি, তোমার বাসায় আমার ঘুম এলো না, এটা কি ভালো দেখায়?’
তখনই ঘরে ঢুকল সাইফুল। রিমির ফুফাত ভাই। হাসতে হাসতে ফুফুমণি বললেন, ‘রিমির কান্ড দেখেছিস! বালিশ নিয়ে বেড়াতে এসেছে।’
সাইফুল গম্ভীর গলায় বলল, ‘খুবই ভালো কাজ করেছ রিমি আপু। আমাদের কারোরই বালিশ নেই।’
অবাক হয়ে রিমি বলল, ‘বালিশ নেই মানে?’
‘মানে সব বালিশ চুরি হয়ে গেছে।’
ফুফুমণি বললেন, ‘শুধু আমাদের নয়, পুরো বালিশপুর গ্রামে কারো বাড়িতেই বালিশ নেই। এক রাতে সবার বালিশ চুরি হয়ে গেছে। তা-ও সেটা গতরাতে।’
আরো অবাক হলো রিমি। এমনিতেই বেশ গরম। গরমে ওর ফর্সা চেহারা লাল হয়ে আছে। অবাক হলে ও আরো লাল হয়ে যায়। রিমি বলল, ‘বলো কি!’
সাইফুল বলল, ‘সত্যিই বলছি রিমি আপু। আমাদের কারুরই বালিশ নেই। আজ রাতে বালিশ ছাড়া ঘুম আসবে কি না জানি না।’
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সাইফুল।
‘কিন্তু এত কিছু থাকতে বালিশ চুরি কেন?’
‘কি জানি!’
ফুফুমণি বললেন, ‘থাক ওসব কথা। নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে? হাত মুখ ধুয়ে এসো। ভাগ্যিস হাঁড়ি-পাতিল চুরি হয়নি। রান্না হয়েছে। খাবার দিচ্ছি।’
খাবার দেখে রিমি তো মুগ্ধ। ফুফুমণির রান্না অসাধারণ! কিন্তু খেতে বসে বেশ ঘেমে গেছে ও। বিদ্যুৎ নেই। হাত পাখা দিয়ে ওকে বাতাস করছেন ফুফু। তখনই বাবার কল এলো রিমির মোবাইল ফোনে।
বাবাকে আশ্বস্ত করল রিমি, ‘আমি ঠিক মতোই এসেছি বাবা।’
বাবা ওকে বাসে তুলে দিয়েছিলেন। বাস থেকে নেমে একটা রিকশায় করে ফুফুর বাড়ি আসতে বেশিক্ষণ লাগে না। দশ-বারো মিনিট। ওকে একা একা আসতে দেয়ার ইচ্ছে বাবার ছিল না। কিন্তু কী করবেন! বাবা যে ভীষণ ব্যস্ত। ওকে নিয়ে আসার সময়টুকুও নেই। তবে বাবাও চান রিমি একা একা চলাফেরা করা শিখুক। পথ-ঘাট চিনে নিক। জগৎ দেখার এটাই সেরা সময়। বিশেষ করে যারা ক্লাস এইটে পড়ে।
রাতের বেলা শীতের কাঁথা বের করলেন ফুফু। সেই কাঁথা মুড়িয়ে বালিশ বানালেন। রিমি বলল, ‘বালিশ কিনে আনলেই তো হতো ফুফুমণি।’
ফুফুমণি বললেন, ‘দোকানে বালিশ থাকলে তো!’
‘বলেন কি! এ গাঁয়ে কি বালিশের অভাব পড়ল?’
‘পড়বেই তো। সব বাড়িতে বালিশ চুরি হয়েছে। সবাই বালিশ কিনতে ছুটেছে। কাছের বাজারে বালিশের দোকান মাত্র একটা। তোমার ফুফা বালিশের অর্ডার দিয়ে এসেছে। তিনদিন পর যোগাযোগ করতে বলেছে।’
কিন্তু বালিশ কেন চুরি হলো? নিজের বালিশে মাথা রেখে ভাবতে লাগল রিমি। জানালা দিয়ে জোছনার আলো ঢুকেছে ঘরে। কখন ঘুম আসবে আসবে জানে না। নতুন জায়গায় ঘুম আসতে একটু সময় লাগে। চোখ বুজে ঘুমুনোর চেষ্টা করল।
চোখ বুজে থাকতে থাকতে, কখন যে ঘুমিয়ে গেল টের পেল না রিমি। তবে ছাড়া ছাড়া ঘুম। কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে ওর। ছটফট করতে থাকে।
খুব তৃষ্ণা পেয়েছে। ঘরের ও মাথায় টেবিলের উপর পানি আছে।
বিছানা থেকে উঠে আর বাতি জালাল না রিমি। যদি ফুফুমণির ঘুম ভেঙে যায়! ওর পাশেই শুয়েছেন ফুফুমণি।
চাঁদের আলোয় যেটুকু দেখা যায়, তাতেই চলবে। মশারি সরিয়ে বিছানা থেকে নামল রিমি। বিছানাটা একটু দুলে উঠল। ফুফুমণির দিকে তাকাল রিমি। ফুফুমণি কি একটু নড়ে উঠলেন!
‘ঘুম আসছে না রিমি?’
ফুফুমণি জেগে গেছেন। জবাব দিল রিমি, ‘তৃষ্ণা পেয়েছে। পানি খাবো। তোমার ঘুম আসছে না?’
জবাব পেল না রিমি। কথাটা বলেই কি ফুফুমণি আবার ঘুমিয়ে গেছেন? হতে পারে। ফুফুমণির হয়ত ঘুমিয়ে কথা বলার অভ্যাস আছে।
শব্দ না করে জগ থেকে পানি ঢালল রিমি। পানি খেয়ে আলতো করে গ্লাস রাখল। চটপট বিছানায় উঠে পড়ল। মশারি ঠিক ঠাক করে যেই শুতে যাবে, অমনি বিছনার দিকে তাকিয়ে অবাক হলো ও। ওর বালিশ কোথায়?
রিমির ঘুম ভাঙল অচেনা সুরে। সুরটা কিসের!
ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল। বিছানার নজর বোলালো। পুরো বিছানায় ও একা। ফুফুমণি কখন উঠে গেছেন টের পায়নি। গতরাতে বালিশ চুরির পরও ফুফুমণির ঘুম ভাঙায়নি ও।
ফুফুমণি ঘরে ঢুকে বললেন, ‘ঘুম হয়েছে রাতে?’
‘বালিশ ছাড়া ঘুম হয়?’
‘তোমার বালিশ কোথায় রিমি?’
‘চুরি হয়ে গেছে।’
কথাটা শুনেই ফুফুমণির চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। বললেন, ‘তোমার বালিশটাও চুরি হয়ে গেল!’
রিমি বলল, ‘এভাবে বালিশ চুরি তো মেনে নেয়া যায় না ফুফু। কিছু একটা করতেই হবে।’
নাস্তা খেয়েই সাইফুলকে বলল রিমি, ‘যাবি নাকি?’
‘কোথায় রিমি আপু?
‘বালিশ কিনতে।’
‘মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নাও আগে।’
অনুমতি দিলেন ফুফুমণি। বাইরে বেরিয়েই রিমি জানতে চাইল, ‘আজ মঙ্গলবার। হাট বসেছে কোথাও?’
সাইফুল বলল, ‘ঘাটবাড়িতে হাট বসেছে আজ। বেশি দূরে নয়। অটো রিকশায় যেতে আধাঘণ্টার মতো লাগবে।’
‘চল।’
ঘাটবাড়ির হাট। নদীর ঘাটে একটা পুরনো বাড়ি। ওই বাড়িকে ঘিরেই হাট। সেকারণে ঘাটবাড়ির হাট। বিশাল হাট। হাটে বেশ কয়েকটা বালিশের দোকান।
সাইফুল অবাক হয়ে বলল, ‘গত হাটবারেও তো এসেছিলাম। কিন্তু এত বালিশের দোকান ছিল বলে মনে হয় না।’
রিমি বলল, ‘তাহলে কি ওরাও বালিশ চুরির ঘটনা জানে?’
‘জানতে পারে।’
রিমি বলল, ‘পরীক্ষা হয়ে যাক।’
সাইফুল বলল, কিভাবে? ওদেকে জিজ্ঞেস করবে?’
‘না।’
‘তাহলে কিভাবে?’
‘নিজের চোখেই দেখবি, চল।’
চারটা বালিশ কিনল রিমি। কিনেই ছুটল ফুফুমণির বাড়িতে। বিকেলে ও বাড়ির উঠানে বালিশ খেলার আয়োজন করেছে।
অটো রিকশায় জানতে চাইল সাইফুল, ‘বালিশঅলারা কি বালিশ চুরির ঘটনা জানে?’
‘এখনও বুঝতে পারছি না। বালিশের দাম জানলে বুঝতে পারব।’
বালিশের দাম জানার সঙ্গে বালিশ চুরির কী সম্পর্ক, বুঝতে পারছে না সাইফুল। তবে ভাবতে লাগল।
বালিশ দেখে ফুফুমণি বললেন, ‘খুব ভালো কাজ করেছ রিমি। বালিশ যে কত দরকারি জিনিস, চুরি না হলে বুঝতাম না।’
রিমি বলল, ‘বালিশের দাম কি ঠিক আছে ফুফুমণি? আগে কখনো কিনিনি।’
দাম শুনে ফুফুমণি বললেন, ‘ শিমুল তুলোর বালিশ সবচেয়ে দামি। এই বালিশগুলো ওরা কী তুলো দিয়ে বানিয়েছে, সেটা না দেখলে বুঝব না। ’
সাইফুল বলল, ‘রিমি আপু, ওরা কি বালিশ চুরির ঘটনা জানে?’
‘এখনও জানি না। বালিশের ভিতরে কী তুলো আছে, আগে সেটা জানতে হবে।’
বেশ বিরক্ত হলো সাইফুল। বলল, ‘থাক। তোমাকে আর বলতে হবে না।’
রিমি মুচকি হেসে বলল, ‘আচ্ছা তোকে বুঝিয়ে বলছি। শোন। বালিশের দাম যদি বেশি হয়, তাহলে বুঝব ওরা বালিশ চুরির ঘটনা জানে। আর দাম যদি ঠিকই থাকে, তাহলে বুঝব…’
বাকিটা সাইফুলই বলে দিল, ‘ওরা বালিশ চুরির ঘটনা জানে না। তাই তো!’
‘ঠিক তাই।’
‘এটা জেনে কী হবে? বালিশ চোর ধরা পড়বে?’
‘পড়তেও পারে।’
‘যদি ধরা না পড়ে।’
‘পড়তেই হবে। কারণ আমি ফাঁদ পেতেছি।’
অবাক হলো সাইফুল। বলল, ‘ফাঁদও পেতেছ?’
‘এটাও নিজের চোখে দেখতে পাবি।’
ফুফুমণির বাড়ির উঠানটা বিশাল। এখানেই বালিশ খেলার আয়োজন করেছে রিমি। বালিশ চুরির পর বালিশ খেলাটাকে বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ বাঁকা চোখে দেখেছে। খুব সাধারণ একটা খেলা। গান বাজিয়ে বালিশ ছোঁড়া-ছুড়ি খেলা। যার হাতে বালিশ থাকা অবস্থায় গান থেমে যাবে, সে আউট।
খেলছে মেয়েরা। কিন্তু ছেলে বুড়ো সবাই দেখছে সে খেলা। দেখতে দেখতে বেশ ভিড় জমে গেল। খেলাটা এতই জমে উঠেছে, কখন যে সন্ধে হয়ে গেল টেরই পায়নি কেউ। আউট হতে হতে তিন প্রতিযোগী টিকে আছে তখনও। আর দুবার গান থামলেই বিজয়ী একজন হবে। চারপাশে থাকা মানুষের ভিড়ের বৃত্তটা অনেক ছোট হয়ে এসেছে। দর্শকদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল ধাক্কাধাক্কি। আর তখনই ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ একজন বালিশটা নিয়ে ছুটতে লাগল। সবার চোখের সামনে দিয়ে।
‘ওই তো বালিশ চোর!’ ‘ওই তো বালিশ চোর!’
শুরু হয়ে গেল তুমুল হইচই। বালিশ চোরের পিছু নিয়েছে সবাই। কিন্তু বালিশ চোরের নাগাল পেল না। চোরটা কে ছিল? কেউ জানে না। চোরের চেহারা মনেও করতে পারল না কেউ।
বাবাকে কল দিল রিমি। ‘বাবা, এখানে তো বালিশ চুরির হিড়িক পড়েছে।’
‘বালিশ চুরি!’
হ্যাঁ, বালিশ চুরি। পুরো গ্রামে সবার বালিশ চুরি হয়েছে। আমার বালিশটাও গত রাতে চুরি হয়ে গেছে।’
‘বলিস কী! এ তো অবাক কা-!’
‘আমি আজ চারটা বালিশ কিনেছিলাম। সবার চোখের সামনে একটা বালিশ চুরি হয়ে গেল।’
আরো অবাক হলেন বাবা। চুপ করে রইলেন। কী বলবেন হয়ত বুঝতে পারছেন না।
রিমি জানতে চাইল, ‘বালিশ চোরের বিরুদ্ধে কি মামলা করা যায়?’
কথাটা মনে হয় বাবা শুনতে পাননি। কল কেটে গেছে। কিংবা হয়ত বাবাই কেটে দিয়েছেন। ভীষণ ব্যস্ত।
পরদিন রিমির ঘুম ভাঙল হইচইয়ের শব্দে। উঠানে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল রিমি। গ্রামের সব মানুষ জড় হয়েছেন ওখানে। আর সবার সামনে বাবা! কিন্তু বাবা কখন এলেন?
বাবা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ‘আপনারা চাইলেই আমি এখন বালিশগুলো দিতে পারব না।’
বালিশ! কিসের বালিশের কথা বলছেন বাবা?
এগিয়ে গেল রিমি। জানতে চাইল রিমি, ‘কিসের বালিসের কথা বলছেন বাবা?’
রিমির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন বাবা। বললেন, ‘ঘুম ভাঙল? ভেবেছিলাম তোকে চমকে দেবো। কিন্তু পারলাম না। বালিশের খোঁজে এসে সবাই হইচই শুরু করে দিয়েছে।’
‘কিসের বালিশ?’
‘চুরি যাওয়া বালিশ।’
‘চুরি যাওয়া বালিশ তুমি কোথায় পেলে?’
‘এখানেই আসছিলাম। হঠাৎ হাইওয়েতে দেখলাম একটা পুলিশের গাড়ি একটা পিকআপ ভ্যানকে তাড়া করছে। ঘটনা কি? কিছুক্ষণ পর পিকআপটাকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখলাম। পিকাআপে কেউ নেই। সবাই পালিয়েছে। পিকআপের তালা ভেঙে ভিতরে তাকাতেই দেখি…’
বলেই বাবা থামলেন। তাকালেন রিমির দিকে। বললেন, ‘আন্দাজ করতে পারিস, কী থাকতে পারে?’
‘জানি না। কী?’
‘বালিশ।’
‘বালিশ!’
‘হ্যাঁ। বালিশ।’
রিমি বলল, ‘নিশ্চয়ই এ গ্রামে বালিশ চুরির কথা শুনে এখানে নতুন বালিশ বিক্রি করতে আনছিল।’
বাবা মুচকি হেসে বললেন, ‘যদি সেটাই হবে, তাহলে পিকআপের চালকসহ সবাই পালালো কেন? পালিয়েছে, কারণ পিকাআপ ভরা পুরনো বালিশ। চুরি করা বালিশ। পুলিশের পেট্টোল টিমকে নিজের পরিচয় দিয়ে পিকআপটা এখানে এনেছি। শুধু এটুকু জানার জন্য যে বালিশগুলো এ গ্রামের চুরি যাওয়া বালিশ কি না। গ্রামের দুতিনজনকে দেখালাম। এবং সত্যিই তাই! তুই কাল রাতে বালিশ চুরির ঘটনা জানিয়ে ভালোই করেছিস। নইলে তো অনেক কিছু অজানাই থেকে যেত। কিন্তু খবর পেয়ে পুরো গ্রামের মানুষ যেভাবে ঝেঁকে ধরেছে, আশ্চর্য হচ্ছি!’
রিমি বলল, ‘সবার বালিশ ফেরত দিয়ে দাও! দেখো তো আমার বালিশটাও আছে কি না?’
বাবা বললেন, ‘এখন বালিশ ফেরত দেয়া যাবে না।’
আবার হইচই, ‘আমাদের বালিশ আমাদেরকে ফেরত দেবেন না কেন?’
বাবা বললেন, ‘বুঝতে চেষ্টা করেন। ওগুলোকে পরীক্ষাগারে পাঠাতে হবে। জানতে হবে ওগুলো চুরি হলো কেন? তদন্ত হবে।’
‘তাহলে বালিশ ফেরত দেবেন কবে?’
‘জানি না। হয়ত পুরনো বালিশের বদলে নতুন বালিশ পাবেন সবাই।’
‘কবে পাবো?’
‘দেখি, আজই ঢাকা থেকে নতুন বালিশ আনানো যায় কি না। আমি চেষ্টা করব।’
রিমির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি এখন যাই মা।’
রিমি অবাক হয়ে বলল, ‘কোথায়?’
‘ঢাকায় ফিরতে হবে। বালিশগুলো পরীক্ষা করতে হবে। বিশেষ জরুরি।’
রিমি জানে বাবা এর বেশি কিছু বলবেন না।
খানিকটা এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ থামলেন বাবা। ঘুরে দাঁড়িয়ে রিমিকে ইশারায় ডাক দিলেন। রিমি ছুটে গেল। রিমির ডানকানে মুখটা এসে ফিস ফিস করে বললেন, ‘সম্ভবত এখানে একটা বালিশ আছে, সেই বালিশটার দাম শুনলে তুই চমকে উঠবি।’
কথাটা শুনে এমনিতেই চমকে উঠেছে রিমি।
‘ওই বালিশটার দাম তিন কোটি টাকা।’
বলেই ঘুরে হেঁটে চলে গেলেন।
বিকেলের দিকে এক ট্রাক বালিশ এসে হাজির বালিশপুর গ্রামে। গ্রামের সবাইকে সেই বালিশ বিতরণ করা হলো। সবাই নতুন বালিশ পেয়ে খুশি। কেবল টুনির দাদি নাখোশ। বললেন, ‘আমার তো কোলবালিশটাও নিয়ে গেছে। ওটা কে ফেরত দেবে শুনি?’
রিমিও একটা নতুন বালিশ পেল। নতুন বালিশ পেয়েই বলল, ‘আমি বালিশ কিনে ঠকেছি কি না, একটু দেখবে ফুফুমণি?’
রিমির কিনে আনা একটা বালিশ খুললেন ফুফুমণি। আর খুলেই অবাক! বললেন, ‘তোমাকে চরম ঠকিয়েছে বালিশঅলা। রাবিশ দিয়ে বানানো বালিশ। অথচ তোমার কাছ থেকে শিমুল তুলো বালিশের দাম রেখেছে।’
মনটাই খারাপ হয়ে গেল রিমির। আরেকটা বালিশ খুললেন ফুফুমণি। ওটাও রাবিশ দিয়ে বানানো। একটা নিয়ে গেল চোরে। শেষ বালিশটা হাতে নিল রিমি। এটা ও খুলবে।
বালিশের এক পাশে সেলাইটা চোখে পড়ল ওর। অল্প একটু জায়গা সেলাই করা। সেলাই খুলে হাত ঢুকিয়ে ভেতর থেকে এক মুঠো তুলো বের করে আনল।
ফুফুমণি দেখেই বললেন, ‘এটা শিমুল তুলো। তবে ভিতরে সবটাই শিমুল তুলো কি না, কে জানে!’
এবার বালিশের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে মুঠো মুঠো তুলো বের করতে লাগল রিমি। আর ওড়াতে লাগল। বাহ্! তুলো ওড়াতে তো দারুণ মজা।
বিরক্ত হলেন ফুফুমণি। ‘আহ রিমি! কী দুষ্টুমি শুরু করেছ। তুলোয় পুরো ঘর ভরে যাচ্ছে তো!’
আরেকমুঠো তুলো নেয়ার জন্য যেই বালিশের ভিতর হাত ঢোকাল, ওর হাতে কিছু একটা লাগল। কী ওটা!
ফুফুর কাছে বালিশগুলো দিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। চলে গেল ছাদে। মুঠো খুলে তাকাল। আরে! এটা তো…!
জিনিসটা পকেটে ভরল ও। তারপর কল করল বাবাকে। কল ধরেই বাবা বললেন, ‘বালিশগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে রিমি। দামি বালিশটা এখানে নেই।’
রিমি বলল, ‘সম্ভবত ওটা এখন আমার কাছে বাবা। হা হা হা।’
‘তোর কাছে? মজা করছিস না তো?’
‘মজা নয় বাবা। সত্যি বলছি। ওটা এখন আমার কাছে। বালিশের ভিতর কী পেয়েছি জানো?’
‘কী?’
‘তার আগে বলো তোমরা কী খুঁজছ?’
‘আমরা কী খুঁজছি, এখনও আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চিত নয়। তবে দামি কিছু একটা, সেটা নিশ্চিত। হতে পারে সেটা একটা কোড নাম্বার। কিংবা একটা কয়েন। অথবা একটা হীরে। হারিয়ে যাওয়া এই তিনটা জিনিস খুঁজছি আমরা। কাকতালীয় বিষয় হলো প্রত্যেকটার বাজার মূল তিন কোটি টাকা।’
রিমি বলল, ‘সম্ভবত একটা জিনিস পাওয়া গেছে বাবা।’
‘কোনটা?’
‘শেষ জিনিসটা।’
বাবা বললেন, ‘আমি এখনই রওনা হচ্ছি। তুই কোথাও নড়বি না। যেখানে আছিস, সেখানেই বসে থাক।’
কল কেটে দিলেন বাবা।
পকেট থেকে জিনিসটা বের করল রিমি। কী সুন্দর! গোলাপী। এক নজর দেখেই চটপট পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল আবার। বাবা না আসা পর্যন্ত এটাকে সামলে রাখতেই হবে।