Wednesday 09 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের বর্ষার কবিতা


৯ জুলাই ২০২৫ ১৫:১৯ | আপডেট: ৯ জুলাই ২০২৫ ১৫:৩৫

বর্ষার প্রেমপত্র

বর্ষা তোমার লেখা চিঠির মতোই
প্রতিটি ফোঁটা আমার নাম ধরে পড়ে
আমায় ডাকে, ইশারা করে কিছু বলতে চাই
বৃষ্টির ফোঁটায় তোমার চোখের জল মিশে আছে হয়তো।
তুমি বলেছিলে, বৃষ্টি ভালোবাসো
আর আমি তো বৃষ্টি মানেই—তোমাকে ভালোবাসি।
তোমার খোলা চুলে, ভেজা শাড়ির ভাঁজে, টিনের চালে পড়ে যাওয়া জলের শব্দে
খুঁজে ফিরি আমাদের অর্ধেক শেষ হয়ে যাওয়া গল্পটাকে।
সেদিন ছাতা ছিল না আমাদের, ছিল শুধু দুইজোড়া হাত, আর একজোড়া স্বপ্ন
যা আজও ভিজে থাকে, আকাশের রং বদলালেই।
এই যে টুপটাপ ঝরে পড়ছে আকাশ,
এর প্রতিটি শব্দে আমি একটা করে “ভালোবাসি”
তোমার জন্য, শুধুই তোমার জন্য
এক বর্ষা দিনে, তুমি ফিরে আসবে
এ যেনো এক কিশোরের এক বিকেলের পথ চেয়ে থাকা।

বিজ্ঞাপন

বৃষ্টি ও পুরনো মুখ

দরজার ওপারে তুমুল বৃষ্টি
জানালার কাঁচ বেয়ে নামে পিছলে পড়া পুরনো দিনের ছবি।
একটা ভেজা দুপুর, এক টুকরো মাঠ—
বৃষ্টির ভেতর ভিজে ভিজে ছুটে বেড়ানো, জামাল, তরিকুল, শরিফুল, অজয়, সুব্রত…
সবুজের হাত ধরে হেসেছিল কমল, কাঞ্চি তখন ঘাড়ে পাটির ব্যাগ, ইমরান ডেকে বলেছিল
“চল, স্কুল পালাই, ভিজব আজ পুরোদমে।“
কে কোথায় আজ, কে কেমন আছে?
সেই চেনা মুখগুলো মুছে গেছে সময়ের পৃষ্ঠায়
বৃষ্টিতে শরীর ভেজে না মন ভিজে একাকার।

এ কেমন বদলে যাওয়া

খবর পেলাম তুমি এখন বৃষ্টি ভালবাসো না,
অথচ তুমিই বলতে “বৃষ্টি মানেই প্রেম, প্রতিটি নারী বৃষ্টি ভালোবাসে
পুরুষকে বৃষ্টিতে শেখায় একমাত্র নারী।“
আর আজ তুমি গর্ব নিয়ে চৈত্রের রোদে হাঁটো
ঘামের মধ্যে খুঁজো নিজেকে— তাজা সূর্যের আলিঙ্গনেই যেন স্বস্তি!
নারী কেন তুমি মেঘলা আকাশ দেখে জানলা বন্ধ করো,
কেন তোমার বৃষ্টি মানেই ভেজা পথ, কাদায়,পানিতে বিরক্তি মনে হয়?
কেন তোমার চোখে আর দেখা যায় না সেই ভিজে যাওয়া বিকেলের উচ্ছ্বাস?
সেই কাঁপতে থাকা ঠোঁটে ফিসফিসে কবিতা, সেই অলস সময়ে হাত ধরা স্মৃতি?
নারী কেমন করে বদলে গেলে তুমি?

না পড়া বইয়ের কষ্ট

বর্ষা বিকেল, জানালার কাঁচে ঠকঠক করে বৃষ্টি, চায়ের কাপের পাশে বসে থাকি আমি
সেলফে তাকাই-
ঠাসাঠাসি শত শত বই, তার মাঝে কিছু চুপ করে বসে — না পড়া, আধপড়া, উপেক্ষিত চিরকাল
তারা কি অভিশাপ দেয়? নাকি আমার মতই বিষণ্ন থাকে?
যে শিশুকে জন্ম দিলাম দায়িত্ব নিলাম না,সে তো অভিশাপ দিবেই।
ফুলবউ — পড়েছিলাম অর্ধেক,
বাকি গল্পটা আজও চুপ করে বসে, পাঁচ বছর ধরে পৃষ্ঠা ভাঁজে ধুলোর গন্ধ।
কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, সেই সৈনিকটার নাম মনে নেই,
তবে তার মৃত্যুর দিনে ঘনিয়ে আসায় আমার মনটা কেমন ভারী হয়ে গিয়েছিল
শেষ করেছিলাম কিনা মনে পড়ে না, তবুও তার ছায়া বুকের ভেতর
সেই ছেলেটা সৈনিক হতে চাইনি।
দেশবিভাগ — পড়ি আর ভুললি, পৃথক ভাষা, পৃথক মানচিত্র,
তবুও শেষ পৃষ্ঠায় যেতে পারি না কেমন যেন!
কালো বরফ জমে গেছে হৃদয়ের প্রান্তে, ঘন তুষার হয়ে, অর্ধেক পড়েই জমাট।
আনোয়ারা, দুই কী তিন পাতা পড়া হয়নি।
তার পরই আমি হারিয়ে গেছি, সে কি আমাকে খুঁজে বেড়ায় এখনো?
নাকি আমার উদাসীনতায় সে পাতাগুলো শুকিয়ে গেছে?
বইগুলো আমার মতোই অসম্পূর্ণ, আমার মতোই অপেক্ষমাণ, তারা কি রাতে কাঁদে?
যেমন আমি কাঁদি কখনো, অপরাধবোধে, অবহেলায়?

সারাবাংলা/জিএস/এএসজি

কবিতা বর্ষার কবিতা মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর