আশ্চর্য এক কথার জাদুকর
১৮ জুলাই ২০১৮ ১৬:০৪
এসএম মুন্না ।।
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে …
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গানের এই ক’টি চরণ খুবই পছন্দ করতেন বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। শহীদ পিতা ফয়জুর রহমানের কবরে এপিটাফে চরণ দুটি খোদাই করেছেন তিনি। ‘লীলাবতী’ নামে হুমায়ূন আহমেদের এক কন্যা জন্ম নিয়েছিল দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের গর্ভে। সন্তানটি জন্মের সময় মারা যায়। এই মেয়ের নামে নাম রেখেছেন দিঘির। তার পাড়ে শানবাঁধানো ঘাটের পাশে মার্বেল পাথরে লিখে রেখেছেন এপিটাফ, রবীন্দ্রনাথের লেখা এই চরণ দুটি। কবিগুরুর কথাগুলোর মতোই তিনি আজ নেই নয়নের সম্মুখে। কিন্তু সবার অলক্ষ্যেই তিনি রয়ে গেছেন সকলের নয়নে নয়নে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়, ‘বাসনার বশে/মন অবিরত/ধায় দশ-দিশে পাগলেরও মত/স্থির আঁখি তুমি/মরমে শতত-জাগিছো শয়নে স্বপনে…’।
হুমায়ূনবিহীন ছয় বছর
দেখতে দেখতে কেটে গেল জননন্দিত এই কথাশিল্পীর প্রয়াণের ছয় ছয়টি বছর। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে (১৯ জুলাই) ক্যান্সার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি নিউইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যু শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী সব বাঙালির হৃদয়ে গভীর শোকের অন্ধকার ছড়িয়ে দিয়েছিল।
মাত্র ৬৪ বছরের জীবনে হুমায়ূন আহমেদ বাংলা কথাসাহিত্যের অঙ্গনে, টেলিভিশন নাটক আর চলচ্চিত্রাঙ্গনে এমন জনপ্রিয়তায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। তার মতো অতুলনীয় পাঠকপ্রিয় ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকারের শূন্যতা যে কখনও পূরণ হবে না-তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশকরা যে বিপুলসংখ্যক বই প্রকাশ করেন, সব বই মিলিয়ে যা বিক্রি হতো, একা হুমায়ূন আহমেদের লেখা বই তার প্রায় সমান বিক্রি হতো। তার প্রয়াণের ছয় বছর পরও চিত্র প্রায় একই। এখনও তার বই কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন পাঠক-সাধারন।
তিনি এদেশের সৃজনশীল সাহিত্য প্রকাশনাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বিপুল পাঠকপ্রিয়তা সৃষ্টির মাধ্যমে। ভারতীয় বাংলা গল্প, উপন্যাসে নিমগ্ন পাঠকদের বাংলাদেশি লেখকদের বই পড়তে বাধ্য করেছিলেন তার আশ্চর্য জাদুকরি গল্পের জালে জড়িয়ে। মোহাবিষ্ট পাঠক হুমায়ূন আহমেদের রচনায় মধ্যবিত্ত জীবনের হাসি-কান্নার এমন নিবিড় পরিচয় পেয়েছেন, যেখানে তাদের নিজেদেরই জীবনের ছবি প্রতিবিম্বিত।
কে বলে আজ তুমি নাই
গাজীপুরের পিরুজালীতে নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন সবুজ ছায়াঘেরা নিসর্গ ‘নুহাশপল্লী’। সেখানেই চিরঘুমে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার মুত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশ পল্লীর লিচুতলায় তার সমাধি যেমন ফুলে ফুলে ভরে উঠবে, তেমনই গণমাধ্যমও মুখর থাকবে তার স্মৃতির-মুদ্রিত আর ভিজুয়াল উপস্থাপনায়। দেশের প্রকাশনা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে পাঠকনন্দিত এই কথাশিল্পীকে। তার নাম জয় গৌরবে উচ্চারণ করে ভক্তকূল অকুণ্ঠ কন্ঠে বলে উঠবে- ‘কে বলে আজ তুমি নাই’।
জ্যোৎস্না আর বৃষ্টি ছিল তার ভীষণ প্রিয়
ভ্রমণ বিষয়ক লেখক ও নির্মাতা শাকুর মজিদ স্মৃতিচারণ করে তার একটি লেখা বলেছেন ‘নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিন ছিল ২০১২ সালের ২৫ মে। আগের দিন থেকে আমরা হাজির। আমরা মানে বেশি লোক নয়, অন্যপ্রকাশের মাজহার, মাসুম, কমল আর অবসর-এর আলমগীর রহমান। কথা ছিল, রাতের খাবার খেয়ে ফিরে আসব ঢাকায়। কিন্তু সে রাতে হঠাৎ করে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। বৃষ্টি নামছে নুহাশপল্লীর বাঁশঝাড়ে, মাঠে, বাগানে। বৃষ্টি থামলে মেঘের আড়াল থেকে কখনো বা ঝলসানো চাঁদ। এই জ্যোৎস্না আর বৃষ্টি, তার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের আড্ডা আমাকে ঢাকায় ফিরতে ভুলিয়ে দেয়। বৃষ্টি থামলে আমরা পুকুরপাড়ে চলে আসি। সেখানে দুটি নতুন কটেজ বানানো হয়েছে। কটেজগুলোর প্রশস্ত বারান্দা দিঘিমুখী। একটির মধ্যে ফ্লোরের ওপর আমরা সবাই বসে পড়ি। শাওন গান করে। হুমায়ূন আহমেদ নানা রকম চুটকি বলেন। আসরের কোথাও কিন্তু মনে হয়নি যে, মরণব্যাধিকে বুকে চেপে মৃত্যুর প্রহর গোনা একজন মানুষই আমাদের আড্ডার মধ্যমণি।’
পঞ্জিকা মতে, আজও আকাশে বুক চিড়ে উঠেবে করুণ-স্নিগ্ধ আলোর চাঁদ। ভরা জ্যোৎস্না না হলেও সে চাঁদের আলো আলোকিত করবে ধরণীকে। হয়তো বর্ষারানীও বারিধারা ঝরিয়ে স্নাত করবে বর্ষাপ্রিয় হুমায়ূনকে। নুহাশপল্লীর বৃষ্টিবিলাসের টিনের চালে ঝমঝম করে পড়বে বৃষ্টি। টিনের চালে বৃষ্টির মাদকময় শব্দ শুনতে তিনি ঢাকা থেকে মধ্যরাতেও ছুটে যেতেন সেখানে। কিন্তু আজ সে শব্দ শোনার মানুষটি নিজের প্রস্থানের ষষ্ঠ প্রয়াণবার্ষিকীতে থাকবেন অন্যতর এক বিশ্রামে, গভীরতর এক ঘুমে।
আজও ভোরে গাছাপালা-লতাপাতা চুঁইয়ে ঝরবে শিশিরকণা। গাখিরা গাইবে, ফুল ফুটবে। প্রকৃতির নিজস্ব ভাষায় গেয়ে উঠবে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান_ ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, এক বরষায়/এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে, জল ভরা দৃষ্টিতে/এসো কমল শ্যামল ছায়।’
হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখ তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। সেখান থেকেই ছয় বছর আগে আজকের এই দিনে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৩ জুলাই নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের উদ্দেশে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে। সেখানে হাজারো মানুষের অশ্রু-পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়। সেখানেই চির-ঘুমে শায়িত হয়ে আছেন প্রবাদপ্রতীম কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ।
তিনি ছিলেন আশ্চর্য এক কথার জাদুকর
সেই যে সদ্য স্বাধীন দেশের পাঠক তার ‘নন্দিত নরকে’ আর ‘শঙ্খনীল কারাগার’ পাঠ করে আবিষ্ট হয়েছিলেন, সেই আবেশ আজও কাটেনি বাংলা ভাষার পাঠকদের। প্রথম দুটি উপন্যাস লেখার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্রের তৎকালীন তরুণ অধ্যাপক পিএইচডি গবেষণার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় কিছুকালের বিরতি পড়ে তার লেখালেখিতে। কিন্তু আশির দশকে দেশে ফিরে রহস্য উপন্যাস ‘অমানুষ’ রচনার মধ্য দিয়ে আবার বিপুল পাঠকপ্রিয়তায় নতুন করে অভিষেক ঘটে তার বাংলার পাঠক সমাজে। প্রায় একই সময়ে টেলিভিশন নাটক রচনার মধ্য দিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে তার খ্যাতি। বিপুল জনপ্রিয়তায় অভিষিক্ত হয় তার প্রতিটি নাটক, উপন্যাস আর চলচ্চিত্র। তারপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। তার প্রতিটি বই মানেই লাখ লাখ কপি বিক্রয়। এক মেলাতেই বহু সংস্করণ।
প্রাণঘাতী কর্কট ব্যাধি অকালে কেড়ে নেয় এই অনন্য জননন্দিত সাহিত্যিককে মাত্র ৬৪ বছর বয়সে। জীবনে যেমন তিনি ছিলেন বরণীয়, মৃত্যুর পরও এতটুকু ম্লান হয়নি তার বইয়ের চাহিদা। শুধু দুঃখ এই যে, নতুন করে আর কোনো লেখা পাবে না বাঙালি পাঠক তার কাছ থেকে। দেখা যাবে না তার কোনো নতুন নাটক কিংবা চলচ্চিত্র।
হিমু আর মিসির আলীর জনক তিনি
হুমায়ূন আহমেদের হিমু আর মিসির আলী সিরিজ এদেশে সাহিত্যে এক নতুন ধারা এবং এ দুটি কালজয়ী চরিত্র তাকে বিশেষভাবে অবিস্মরণীয় করে রাখবে। শুধু হাস্যরস আর নিছক মধ্যবিত্তের হাসিকান্না ধরা পড়েনি তার কলমে, ধরা পড়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালি সমাজ-জীবনের অনেক বড় ঘটনাও। তার নাটকের টিয়া পাখির মুখের একটি সংলাপ ‘তুই রাজাকার’ বহু বছর আগে সারাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়েছিল, যা সেই সময়ে ছিল দুঃসাহসিক উচ্চারণ।
নিজের পদচিহ্ন এঁকেছেন সাহিত্যের সকল শাখায়
জীবনের অস্তবেলায় ক্যান্সারের সঙ্গে লড়তে লড়তেই লিখে গেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের মর্মস্পর্শী ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস ‘দেয়াল’। দুই শতাধিক গ্রন্থের অমর স্রষ্টা একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এই কুশলী কথাশিল্পী, চলচ্চিত্রকার, গীতিকার সাহিত্যের যে শাখায়ই হাত দিয়েছেন, সেখানেই রেখে গেছেন তার অসামান্য মেধার স্বাক্ষর।
মৃত্যুর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও হুমায়ূন আহমেদ এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। আর তিনি সাহিত্যের যে ক্ষেত্রেই নিজের পদচিহ্ন এঁকেছেন প্রত্যেকটিতেই দেখা পেয়েছেন সাফল্যের।
তার লেখা পছন্দ করেন না এমন মানুষও তার নতুন লেখাটি ‘গোপনে’ পড়ে ফেলেন। দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যারা তার অন্তত একটি নাটক বা চলচ্চিত্র দেখেনি কিংবা তার কোনো বই পড়েনি। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য। তিনিই তরুণ-তরুণীদের করেছেন বইমুখী।
হুমায়ুন আহমেদের লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে-নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচীনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল।
তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদ সংকেত। তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ও জয় করেছে দর্শক ও সমালোচকদের মন।
টিভি নাট্যকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সমান জনপ্রিয়। আশির দশকের মাঝামাঝি তার প্রথম টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ তাকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। তার হাসির নাটক ‘বহুব্রীহি’ এবং ঐতিহাসিক নাটক ‘অয়োময়’ বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন। নাগরিক ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর চরিত্র বাকের ভাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল টিভি দর্শকদের কাছে। যে চরিত্রে অভিনয় করেন গুণী অভিনেতা ও বর্তমান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও হুমায়ূন আহমেদ ।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের পুরস্কার লাভ করেন। দেশের বাইরেও তাকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। তার প্রমাণ জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ তাকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।
তার জন্মকথা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা ছিলেন গৃহিনী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার ছোটভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
তিনি ১৯৬৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক ও ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাস্ট্রের নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন।
১৯৭৩ সালে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর নাতনি গুলতেকিন খানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ । হুমায়ূন এবং গুলতেকিন দম্পতির চার ছেলে-মেয়ে। তিন মেয়ে নোভা, শীলা ও বিপাশা আহমেদ এবং ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। দীর্ঘ ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৫ সালে ডিভোর্সের মাধ্যমে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির দুই ছেলে- নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন।
প্রতিকৃতি : আবু হাসান
সারাবাংলা/পিএম