সুইট সিক্সটি থ্রি
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:১০
||পলাশ মাহবুব ||
মিলন ভাইকে নিয়ে কোনও কিছু লেখা দুটো কারণে খুব কঠিন।
প্রথম কারণটি স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদ।
তিনি তাঁর ভীষণ প্রিয় ইমদাদুল হক মিলনকে নিয়ে এত এত লিখেছেন যে অন্যেরা লিখবে কি? লেখার ব্যাপারটা অন্যদের জন্য তিনি কঠিন করে দিয়েছেন। ধারণা করি হুমায়ুন আহমেদ কোনও একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি লিখেছেন ইমদাদুল হক মিলনকে নিয়ে। সেসব লেখায় ইমদাদুল হক মিলনের প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখেছি আমরা।
হুমায়ূন আহমেদ, অধুনালুপ্ত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকায় ‘বলপয়েন্ট’ নামে একটি প্রায় আত্মজৈবনিক কলাম লিখতেন। আমি তখন ওই পত্রিকায় কাজ করি। সেসময় দেখেছি বলপয়েন্টের প্রায় সব লেখাতেই কোনও না কোনওভাবে ইমদাদুল হক মিলন থাকতেন। হুমায়ূনের বলপয়েন্টের অন্যতম চরিত্র ছিলেন ইমদাদুল হক মিলন।
দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে- ইমদাদুল হক মিলন আমাদের সাহিত্য জগতের এতবড় মাপের একজন ব্যক্তিত্ব, আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষ তাকে নিয়ে কি লিখবে? পাছে কোনও ভুল হয়ে যায়!
তবুও সাহস করছি। বিশেষ দিনের বিশেষ লেখার ব্যাপারে একটু-আধটু সাহস করাই যায়।
মিলন ভাইকে প্রথম দেখি খুব সম্ভবত ২০০০ সাল কিংবা তার কিছু আগে-পরে।
সামনাসামনি সেদিন তাঁর দেখা পেয়েছিলাম কিনা মনে নেই।
তবে তাঁর বসবার ঘর দেখেছিলাম।
সেটা দেখেই একটা বাকুম বাকুম ভাব তৈরি হয়েছিল মনে।
তিনি তখন ‘কিশোর তারকালোক’ নামে একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক। সেখানে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস ‘ফিরে এলো রমাকান্ত কামার’। ‘রমাকান্ত কামার’ নামটা এমন যার বর্ণগুলো উল্টো দিক দিয়ে সাজালেও একই জিনিস দাঁড়ায়। দারুণ ব্যাপার। আমরা গোগ্রাসে রমাকান্ত কামারের ফিরে আসার গল্প পড়ছি।
তখন কৈশোর পেরিয়ে তরুণ হবার লাইনে দাঁড়িয়েছি মাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি কিংবা হতে যাচ্ছি। তখন পকেট ভর্তি লেখা আর বুকভর্তি সাহস নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে যাওয়া ছিল নেশার মতো। প্রতিদিন কোনও না কোনও অফিসে যেতাম। একদিন দুটো লেখা নিয়ে চলে গেলাম গ্রীণরোডের তারকালোক কমপ্লেক্সে।
ভরসা, কিশোর তারকালোকে এর আগেই পাঁচ-ছটি লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে। আর ভরসা ছিলেন ওবায়দুল গণি চন্দন ভাই। তিনিও তখন কিশোর তারকালোকে কাজ করতেন। খুব সম্ভবত সহকারি সম্পাদক ছিলেন।
মাঝে আঠারো বছরের মতো সময় পেরিয়ে গেছে।
মিলন ভাই এখনও সম্পাদক। তবে এখন দৈনিক পত্রিকার। একই সঙ্গে বড় লেখক এবং বড় সম্পাদক হওয়া কঠিন না, প্রায় অসম্ভব। তিনি সেটাও করে দেখিয়েছেন। আসলে মিলন ভাইয়ের পুরো জীবনটাই এরকম নানান বৈচিত্র্যে ভরপুর। তাই তাঁর নামের পাশে বিশেষণ বসাতে গেলে সেটা বেশ লম্বা হয়ে যাবে।
তবে ‘কথাসাহিত্যিক’ এই পরিচয়ের বাইরে ইমদাদুল হক মিলনের আর কোনও পরিচয়ের দরকার পড়ে না। সমানভাবে এটাও সত্য ইমদাদুল হক মিলন এই নামটাই আসলে তাঁর সব পরিচয় ধারণ করে।
গল্প-উপন্যাসে তিনি যেমন নিজের জাত চিনিয়েছেন তেমনি নাট্যকার হিসেবেও পেয়েছেন সমান জনপ্রিয়তা। বিটিভি’র সেই যুগে জনপ্রিয় নাটকের কিছু সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ফিরত। বাংলা নাটকের জনপ্রিয় সংলাপের যে তালিকা তাতে সবচেয়ে বেশি সংলাপ ইমদাদুল হক মিলনের নাটকের।
‘বারো রকম মানুষ’ নাটকে তারিক আনাম খানের সংলাপ ‘থামলে ভালো লাগে’। কিংবা ‘রূপনগর’ নাটকে খালেদ খানের ‘ছি! ছি! ছি! ছি! ছি! তুমি এত খারাপ’, অথবা রূপনগর নাটকে রফিকুল্লাহ সেলিমের কন্ঠে ‘বিক্রমপুইর্যা পোলা আশি টাকা তোলা’ এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
এরকম আরও অসংখ্য উদাহরণ আছে।
লেখকদের সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে তারা অগোছালো হন। মিলন ভাইকে যারা দেখেছেন এ কথায় তারা হাসবেন।
তাঁর মতো কেতাদুরস্ত এবং পরিপাটি মানুষ খুব কম দেখা যায়। ষাট পেরিয়েও তিনি আগের মতোই ফিটফাট।
বয়সে ষাট পেরোনোদের মজা করে বলা হয় ‘বালাই ষাট’। মিলন ভাইয়ের বেলায় সেটা উল্টো। ‘পালাই ষাট’।
ভাগ্যিস, নায়ক-নায়িকাদের মতো লেখকদের বয়স লুকানোর রেওয়াজ নেই। তাহলে তো মিলন ভাই পঁয়তাল্লিশেই আটকে থাকতেন। তিনি বলতেন পঁয়তাল্লিশ। লোকজন বলত আরও কম। হা হা হা।
লেখকদের বয়স নাকি পঞ্চাশে শুরু হয়। সেই হিসেবে মিলন ভাইয়ের বয়স তো মোটে তেরো। তা তেষট্টি কিংবা তেরো, যাই হোক- দুটোই সংখ্যা মাত্র। আপনার মনের বয়স কতো সে তো আমাদের জানাই আছে।
শুভ জন্মদিন মিলন ভাই। চিরসবুজ থাকুন আপনার মতো করে। শুভেচ্ছা সুইট সিক্সটি থ্রি’র।
পলাশ মাহবুব : কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার। উপ সম্পাদক, সারাবাংলা।