শায়রা’র কবিতায় গভীরতা খুঁজে পাই
১১ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৪৮
||মাহমুদ মেনন||
শায়রা’র কবিতায় গভীরতা খুঁজে পেয়েছি… এভাবেই শুরু করা যায়। ‘এমনই দিনগুলোতে’হাতে পাওয়ার পর পড়া শুরু করি দুটি কারণে- আকারে ছোট্ট বইটির প্রচ্ছদটি বেশ সুন্দর। হালকা স্বর্ণালী গ্লিটারিং হার্ড পেপারে অ্যাম্বোশড অক্ষরে কাভার জুড়ে ইংরেজিতে লেখা ‘অন ডেইজ লাইক দিস’। নিচে লেখকের নাম- শায়রা আফ্রিদা ঐশী।
এরকম একটি বইয়ের মলাট আপনি ওল্টাতে বাধ্য। মলাট উল্টে দেখতে পেলাম ক্যালিগ্রাফিক হস্তাক্ষরে আমাকে একটা শুভেচ্ছা নোট দিয়ে বইটি পাঠিয়েছেন কামরুল হাসান শায়ক। বইয়ের বাহক পলাশ মাহবুব (কথা সাহিত্যিক, নাট্যকার ও সারাবাংলা.নেট’র ডেপুটি এডিটর) জানালেন বইয়ের লেখক কামরুল হাসান শায়কের মেয়ে। একটি প্রকাশক পরিবারে লেখকের আবির্ভাব আগ্রহের বিষয় বটে। দ্রুত পড়তে শুরু করার পেছনে সেটি ছিল অপর কারণ। উল্লেখ্য, কামরুল হাসান শায়ক দেশের অন্যতম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী’র সত্ত্বাধিকারী।
পাতা উল্টিয়ে দেখা গেলো বইটি কবিতার। আর বলাই বাহুল্য কবিতাগুলো ইংরেজিতে। সুতরাং কবিতায় না ঢুকে ব্যাক ফ্লিপে চলে গেলাম। সেখানে কবির পরিচয় মিলল। নিঃসন্দেহে তাতে এ কথা লেখা ছিলো না যে কবি শায়ক-কন্যা। তবে এই ছিলো যে কবিতা তার ধ্যান-জ্ঞান। পড়েছেন নকশাবিদ্যা- মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কবিতা লিখছেন সেই স্কুল জীবন থেকে। তখন তার লেখা ছাপা হতো স্কুল ম্যাগাজিনে। এখন ছাপা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য পত্রিকায়। তবে ভালো কবিতা লিখতে তার চেষ্টার অন্ত নেই। লিখতে লিখতে লিখিয়ে… সে ফর্মুলাতো রয়েছেই… পাশাপাশি সৃষ্টিশীল লেখালেখির নানা কোর্সে অংশ নিয়ে রীতিপদ্ধতিও তার জেনে নেওয়া। সুতরাং কবিতা পড়াই যায়। ফ্লিপ চেপে বইটির মাঝ বরাবর খুলে প্রথম যে কবিতাটি চোখে পড়লো সেটি ‘প্রেমপত্র’। তোমার জন্য নয়, আমার জন্য হলেও তুমি কী নিজেকে একটু ভালোবাসতে পারো না? মোটে আট ছত্রের কবিতাটি শেষ হয়েছে- তোমার জন্য নয়, আমার জন্য তুমি নিজে কিছু ফুল কিনতে পারবে? বুঝলাম লেখায় গভীরতা রয়েছে। এরপর উল্টে এক্কেবারে শুরুর কবিতাটি ‘বেড়ে ওঠা’ পড়লাম। এরপর উল্টে-পাল্টে আরো কয়েকটি কবিতা পড়ে ফেললাম বটে, তবে হালকা পাঠ। ভাবলাম গভীর পাঠ আবশ্যক। তাই সময় নিয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে সপ্তাহখানেক ধরে একে একে পড়লাম শায়রার সব কটি কবিতা। বিবাহস্নান, অসহায় প্রার্থণা, পাপ, কোনও এক কালে, পঙ্ক্তিমালা, ভগ্নহৃদয়, দাদুর কবর- বাংলা করলে কবিতার নামগুলো এমনই দাঁড়ায়।
‘দাদুর কবর সেই একই আছে…
আজো সেখানো রোপণ হয়নি কোনও বসন্তের ফুল।
গোররক্ষকের অজুহাত একটাই
শীতের আগে লাগিয়েছিলো কিছু চারা,
হিমবাতাসে তা সব নষ্ট হয়ে গেছে।
কবিতায় এই গোর রক্ষকের মধ্যে কবি খুঁজে পেয়েছেন শার্লক হোমসকে… যা ধীরে ধীরে তাকে দাদুর মৃত্যুর কথাই ভুলিয়ে দিয়েছে। পুরো কবিতায় একটি সাধারণ চিত্রকল্প আঁকা হয়েছে অসাধারণ দ্যোতনায়।
কবিকে নিয়ে এতকিছু আর লেখাই শোভা পায় না, যখন দেখি স্বয়ং দেশ সেরা অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম শায়রা আফ্রিদার কবিতাগুলোকে সময়ের ঘটনাপঞ্জি বলেই আখ্যা দিয়েছেন। এসএমআই নামেই সুপরিচিত এই অধ্যাপক শায়রার কাব্য রচনায় আস্থা দেখেছেন, দেখেছেন খোলামনে বলার ভঙ্গিমা।
কবিতাগুলোর কোনওটাই অতি দীর্ঘ নয়, কোনও কোনওটাতো স্রেফ একলাইনে শেষ। যা শিরোনাম, সেটাই কবিতা। ‘চুনিই আমার পছন্দ’ (আই প্রেফার রুবি) সে কথা বলে দিলে আরতো কিছু বলাই প্রয়োজন হয় না। শায়রার কবিতা একটি বিষয় স্পষ্ট করে, বিদ্যার্থে ঘর থেকে সুদুরে গেলেও মন তার ঘরের জানালায় পড়ে রয়। আবার যেখানে তিনি রয়েছেন তারও পারিপার্শ্বিকতা তাকে ছুঁয়ে থাকে। ফলে আমরা দাদুর কবর নিয়ে কবিতা যেমন পেয়েছি তেমনি রুম নং ৪০৯ ও পেয়ে যাই এই স্বল্প কলেবরের কাব্যগ্রন্থে।
কবিতাগুলো আরেকটি কারণে ভালো লেগেছে- ওগুলো মেদবর্জিত সহজ সাবলীল ভাষায় লেখা আর চিত্রকল্পগুলো চেনা-জানা।
ধরেই নেওয়া যায় শায়রা’র দিনগুলো বিস্তৃত হবে জীবনের পথে। ঘটবে আরও অযুত ঘটনা যাতে তৈরি হবে নতুন নতুন কাব্য। তার কলমে লেখা হবে – নিজেরাই নিজেদের সামলাও, আমি ছুটিতে যাচ্ছি (পিপল নিড টু সেভ দেমসেলভস, আ’য়্যাম গোয়িং অন ভ্যাকেশন) এমন ধরণের আরও অনেক অনেক পংক্তিমালা।
বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা-২০১৮’য়। প্রকাশ করে ঢাকার জার্নিম্যান বুকস। ওয়ান স্টপ প্রিন্টশপ থেকে মুদ্রিত। আর বিপণনে রয়েছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস লিমিটেড।
মাহমুদ মেনন, নির্বাহী সম্পাদক, সারাবাংলা.নেট
সারাবাংলা/এমএম