Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিনদিনের ঢাকা লিট ফেস্ট শুরু


৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:১৩

।। এসএম মুন্না, উৎসব প্রাঙ্গণ থেকে।।

দেশে দেশে অস্থিরতা, জঙ্গীবাদের উত্থান, বাক স্বাধীনতা আক্রান্ত, বাঁধা মোকাবেলা করেই মুক্তিচিন্তার ধারকদের সামনে এগিয়ে যেতে হয়। যুগে যুগে কালে কালে লেখকদের এসব বাধা অতিক্রম করেই সত্য ও সুন্দরের কথা বলে যেতে হয়েছে। আগামীতেও আসবে অনেক বাঁধা। সে সব বাঁধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর তাদের মোকাবেলার শাণিত হাতিয়ার হচ্ছে সাহিত্য চর্চা। লেখকরা নানা দেশের হলেও তাদের লক্ষ্য অভিন্ন। আর তা হচ্ছে মানুষের মুক্তি। বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা। লেখাই পারে মানুষের মধ্যে শান্তি এনে দিতে। একই সঙ্গে মনের খোড়াক যোগান লেখকরা তাদের লেখনির মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারের সাহিত্য অঙ্গণে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়েই আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনের ঢাকা লিট ফেস্ট। উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথিসহ বিশিষ্ট লেখক-সাহিত্যিকদের দেওয়া বক্তব্যে বার বার এসব কথা প্রতিফলিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা লিট ফেস্ট কে কেন্দ্র করে সরব বাংলা একাডেমির সবুজ প্রাঙ্গণ। সকাল থেকে দ্বার খুলে দেওয়ার পর থেকে মুখর হয়ে উঠেছে লেখক-পাঠক, প্রকাশকদের আনাগোনায়। নানা দেশ থেকে এসেছেন লেখকরা। বাংলাদেশের লেখকদের সঙ্গে পাঠকদের সঙ্গে নানা আলোচনায়, উৎসবের বিভিন্ন নির্ধারিত বক্তৃতায় অংশ নিচ্ছেন তারা। উৎসবের প্রথম দিন রাত পর্যন্ত চলবে। আগামী দুই দিনও মুখর থাকবে একাডেমি প্রাঙ্গণ।

মূল আনুষ্ঠানিকতার আগেই উৎসবকে রাঙিয়ে তোলেন মুনমুন আহমেদ ও তার মেয়ে অপরাজিতা মুস্তাফা তাদের শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্য দিয়ে। এ সময় রেওয়াজ পারফর্মিং আর্টসের নৃত্য শিল্পীরাও উদ্বোধনী বৃন্দ নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয়।

বিজ্ঞাপন

এর পর একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনের মূল মঞ্চে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এবারকার উৎসবের অন্যতম আকর্ষন পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অ্যাডাম জনসন, ভারতের নারীবাদী-সমাজকর্মী-অভিনেত্রী নন্দিতা দাশ। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসবের তিন পরিচালক সাদাফ সায্ সিদ্দিকী, কাজী আনিস আহমেদ ও আহসান আকবর।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘এই উৎসব হচ্ছে মনের মিলন। এটি বাংলা ভাষা উদযাপনের উৎসব। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।’ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আসাদুজ্জামান নূর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালে তিনি অগ্রাহ্য করে বলেন ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিকদের এই মিলনমেলায় আমি কিভাবে যাই।’ তারপরেও আয়োজকরা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করলে তিনি একটি শর্ত দেন। কবি জসিম উদ্দীন, চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন এবং অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী যদি উপস্থিত থাকেন তবে তিনি উৎসবে যোগ দেবেন এবং সেটাই করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব সময়ই জ্ঞান ও সৃজশীলতা ওপর অগাধ বিশ্বাস করতেন। ঠিক যেমনটা তার পদাঙ্কন অনুসরণ করছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি সব-সময় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এবারও প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রলণালয় থেকে যাবতীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এই উৎসবে।’

অ্যাডাম জনসন বলেন ‘সাহিত্য হচ্ছে একটা বিরাট অঙ্গণ। যেখানে থাকে মুক্তচিন্তা-ভাবনা ও মতপ্রকাশে প্রধান ক্ষেত্র। এই লিট ফেস্ট হচ্ছে সেই ক্ষেত্রগুলোকে বাস্তবায়ন ও সবার সামনে উন্মুখ করার এক প্রয়াস। এই প্রয়াসের সঙ্গে এবার যুক্ত থাকতে আমি খুশি’।

নন্দিতা দাশ বলেন, ‘সব দেশে কোনো না কোনোভাবে বাক স্বাধীনতায় বাঁধা দেওয়া হচ্ছে বা এখনও রয়ে গেছে। কিন্তু বাঁধা উপেক্ষা করে সামনে দিকে এগিয়ে যেতেই হবে। মুন্তমনে নিজের চিন্তা-ভাবনার মধ্য দিয়ে আনন্দের প্রকাশটাই হচ্ছে বাক স্বাধীনতা। এটা যেমন হরণ করা অন্যায়, তেমনি স্বাধীনতা অর্জিত না হওয়ার পর্যন্ত আমাদের থেমে থাকা যাবে না। সাহিত্য সেই বাক স্বাধীনতা প্রকাশের অন্যতম হাতিয়ার।’

কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রতিককালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে বাক স্বাধীনতা হরণের একটি চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা লিট ফেস্ট সব সময় মুক্ত চিন্তা এবং বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। অতীতে নারী, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং বাক স্বাধীনতা নিয়েও কথা হয়েছে। এবারও হবে মুক্ত মনে।’

সাদাফ সায্ বলেন, ‘বিশ্বের সব জায়গায় মুক্ত-চিন্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানে এ রকম আয়োজন করতে গেলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ ধরনের আয়োজনে আমরা যেসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করবো তা বিশ্বের কোথাও হয়তো একত্রে করা সম্ভব নয়। নারী ইস্যু, হ্যাশ ট্যাগ মি টু, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসবে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা।’

আহসান আকবার বলেন ‘বাংলাদেশকে বিশ্বের সাহিত্যের বাজারে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

তারকাদের মিলনমেলা

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সাহিত্য এই উৎসবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৫টির দেশের তিন শতাধিকের বেশি লেখক, সাহিত্যিক, অভিনেতা, নির্মাতা, বক্তা, পারফর্মার এবং চিন্তাবিদ অংশ নিচ্ছেন। উৎসবের মূল আকর্ষণ পুলিৎজার বিজয়ী সাহিত্যিক এডাম জনসন। যোগ দিচ্ছেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিল্ডা সুইন্ট, এপার ওপার জনপ্রিয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং নারীবাদী লেখিকা-অভিনেত্রী-নির্মাতা নন্দিতা দাশ। বলিউড-তারকা মনীষা কৈরালার প্রথমবারের মতো আসছেন এবারকার উৎসবে। তার অভিনয় জীবন ছাড়াও ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার এক মানবিক গল্প তুলে ধরবেন উৎসবের একটি অধিবেশনে। ঢাকা লিট ফেস্টে তিনি তার এ বই ও জীবন নিয়ে এক ঘন্টার একটি বিশেষ সেশনসহ দুইটি অধিবেশনে অংশ নেবেন।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন কাল শুক্রবার মূল মঞ্চ আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত ‘ব্রেকিং বেড’ শিরোনামে অংশ নেবেন তিনি। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেবেন ভারতের নারীবাদী লেখক, অভিনেত্রী ও নির্মাতা নন্দিতা দাশ। সঞ্চালনা করবেন উৎসবের অন্যতম আয়োজক সাদাফ সায্ সিদ্দিকী। উৎসবের সমাপনী দিন শনিবার একই মঞ্চে আবারও মঞ্চে আসবেন মনীষা কৈরালা সাদাফ সায্ সিদ্দিকীর সাথে ‘হিলড্’ শিরোনামে আলাপচারিতায়।আশা করা হচ্ছে এই অধিবেশন শোনাবেন তার জীবন কাহিনী।

উৎসবে আরও যোগ দিচ্ছেন চেরিস হেইসার, ক্রিস্টেইন হডেল, কৌটনি হডেল, ডেভিড ভেলিউ, এড কামিং, জয়শ্রী মিশ্রা, জেমস মিক, ক্যাটরিনা ডন. মারিও পালমা, মিথিলা বোস পারকিনস, প্যাট্টিক ইউন, ফিলিপ হ্যানসার, রিচার্ড বিঅ্যার্ড, স্যান্ডু কপসহ অর্ধশতাধিক গুণী ব্যক্তিত্ব।

বাংলাদেশি লেখক, সাহিত্যিক, সমালোচক, প্রকাশক ও চিন্তাবিদের মধ্যে থাকবেন- অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, বিনায়ক সেন, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের, কবি রুবী রহমান, আসাদ চৌধুরী, কামাল চৌধুরী, মুস্তাফিজ শফি, বিশ্লেষক-সাংবাদিক আফসান চৌধুরী, নির্মাতা অমিতাভ রেজা, অভিনেত্রী বন্যা মির্জাসহ সাহিত্য অঙ্গনের অনেকে। আগামী দুইদিন এক যোগে ছয়টি মঞ্চে সম-সাময়িক বিষয় ছাড়া সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে শতাধিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেই সঙ্গে থাকছে শেকড়ের গান।

প্রথম অধিবেশন
উৎসবের প্রথম অধিবেশন বসেছিল উৎসবের মূল মঞ্চ আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে। বিষয় ছিল ‘পোস্ট-আমেরিকান ফিউচার’। আলাপে মেতে উঠেছিলেন পুলিৎজার বিজয়ী লেখক অ্যাডাম জনসন ও বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক ও ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ। উৎসবের অন্যান্য মঞ্চ হচ্ছে-কবি শামসুর রাহমান স্মৃতি কক্ষ, ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনী কক্ষ, বর্ধমান হাউস সংলগ্ন লন, কসমিক টেন্ট ও নজরুল মঞ্চ।

আজকের অন্যান্য কর্মসূচি
আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৫ দেখানো হবে ভারতের নারীবাদী অভিনেত্রী ও নির্মাতা নন্দিতা দাসের চলচ্চিত্র ‘মান্টো’। পরে চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন অ্যানি জায়দীর সঞ্চালনায় নন্দিতা দাশ। বর্ধমান হাউস সংলগ্ন লন-মঞ্চে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঞ্চালনায় ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি-১’ শিরোনামে আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় কবি।
নজরুল মঞ্চে বিকেল ৩টায় মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি-কিশোর মনন আবৃত্তি শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন খালেক বিন জয়নুদ্দিন, আসলাম সানী প্রমুখ।সন্ধ্যায় একই মঞ্চে আনপ্লাগড বাংলা গান পরিবেশন করবেন জয়ীতা।

সারাবাংলা/পিএম

ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৮

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর