প্রাণের মেলায় প্রাণের ছোঁয়ার অপেক্ষায়…
৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:২০
হাসনাত শাহীন ।।
মেলা প্রাঙ্গণের স্টল-প্যাভিলিয়নে চলছে চূড়ান্ত মুহূর্তের কাজ
ছাপাখানাগুলো নতুন বই ছাপার কাজে ব্যস্ত
বাঁধাই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বই বাঁধাইয়ের তুমুল ব্যস্ততা
দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষা শেষে আবার শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। মাত্র একদিন পরেই শুরু হবে মাতৃভাষা রক্ষায় বাঙালির আত্মদানের মাস ‘ফেব্রুয়ারি’, যার প্রথম দিন থেকেই শুরু হবে প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’। ২০১৪ সালের ধারাবাহিকতায় এবারও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাংলা একাডেমি ও তার সম্মুখের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে বইমেলা।
দেশের হাজারও মেলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ববহ এই প্রাণের মেলায় প্রাণের ছোঁয়া লাগাতে চলছে-স্টল, প্যাভিলিয়ন, মঞ্চ তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ। অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেমন চলছে মেলা আয়োজনের ব্যস্ততা, তেমনি বাংলাবাজার, ফকিরাপুল, কাঁটাবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছাপাখানা এবং বাঁধাই প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন মেলায় নতুন বই আনার ব্যস্ততা। সেখানকার কর্মকতা-কর্মচারীদেরও এখন বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত নেই।
বুধবার (৩০জানুয়ারি) মাঘের হালকা বাতাসের সঙ্গে শীতের আমেজ মেশানো বিকেলে মেলার দুই প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল সাজ-সাজ আবহ। সেখানের স্টলে-স্টলে কিংবা প্যাভিলিয়নে-প্যাভিলিয়নে একদিকে-কেউ অবকাঠামো নির্মাণের শেষ অংশের কাজে ব্যস্ত, তো অন্যদিকে-কেউ রং করছেন, কেউ বই রাখার জায়গাগুলো ঠিক করছেন, কেউ স্টল কিংবা প্যাভিলিয়নের চারপাশ পরিচ্ছন্নতায় ব্যস্ত। আবার, বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পুরো মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে ইট বিছানোর কাজে এবং কোন কোন দল সেই ইটের উপরে বালির প্রলেপ দিতে ব্যস্ত।
মেলা প্রাঙ্গণের অবকাঠামো নির্মাণ শ্রমিকদের এই ব্যস্ততার মাঝেই তাদের কাজ ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কিনা তা বুঝিয়ে দিতে এবং নিতে ব্যস্ত মেলার বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নের নকশাকাররা। তাদেরই একজন প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু। তিনি তখন তার ডিজাইন করা জোনাকি প্রকাশনী’র স্টল নির্মাণ শ্রমিকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, এবারের মেলায় আমি-শুদ্ধ প্রকাশ, জোনাকি প্রকাশনী ও বিদ্যাপ্রকাশ; এই তিনটি প্রকাশনা সংস্থার স্টলের ডিজাইন করেছি। মেলায় স্টল বরাদ্ধ পাবার পরে থেকেই নির্মাণের কাজ বুঝিয়ে দিতে এবং নিতে প্রতিদিনই আসছি। আশা করছি আজ সেই কাজ শেষ হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে স্টলগুলোতে নতুন বইয়ের সমাহার ঘটবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্রকাশনা সংস্থাগুলোও তাদের বই নিয়ে হাজির হবে। তিনি বলেন, এবারের মেলার নকশা থেকে শুরু করে, স্টল বিন্যাস, প্যাভিলিয়ন বিন্যাসসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। এক সারি স্টল থেকে অন্য সারির স্টলের মাঝের রাখা খোলা জায়গার দূরত্বও বেশ ভালো, যার ফলে অন্যবারের চেয়ে এবার মেলায় আগতরা বেশ স্বচ্ছন্দে ঘুরে-ফিরে কাঙ্খিত বই দেখতে ও কিনতে পারবেন।
এবারের মেলায় অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ করা শিল্পী চারু পিন্টুর সাথে কথা বলা শেষ করে দু’কদম হাঁটতেই দেখা হলো প্রকাশনা সংস্থা আবিষ্কার প্রকাশনী’র সত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বললেন, এবারের মেলার আয়োজন বেশ গোছালো। স্টল বিন্যাসও ভালো হয়েছে। মেলার অবকাঠামোগত কাজ শেষ হলেই এর নান্দনিক দিক ফুটে উঠবে। আজকের মধ্যেই আমার প্রকাশনা সংস্থার স্টল নির্মানের সমস্ত কাজ শেষ হবে। আগামীকাল বেশ কিছু নতুন বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্যবারের বই নিয়ে স্টল সাজিয়ে ফেলবো। আশা করছি সার্বিক দিক থেকে এবারের মেলা অন্যান্যবারের চেয়ে ভালো হবে। এর বড় কারণ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
এদিকে, প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র প্রাণ যে বই, সেই বই প্রস্তুত করার এলাকা-বাংলাবাজার, ফকিরাপুল, কাঁটাবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছাপাখানা এবং বাঁধাই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যস্ততার শেষ নেই। অনেকটা নির্ঘুম-বিরামহীনভাবে চলেছে তাদের কাজ। এমনই ব্যস্ততার মাঝে কথা হয় কাঁটাবন এলাকার প্রেস কেয়ার প্রিন্টার্সের দুলাল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, সারাবছর ধরেই কাজ করি। কিন্তু বইমেলা এলেই কাজ অনেক গুন বেড়ে যায়। এবারও সেই অবস্থা। দম ফেলার ফুসরত নেই। আমার কর্মচারীরাও খুব ব্যস্ত। এটা চলবে বইমেলার মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।
বাংলাবাজার এলাকার প্রগতি প্রেসের মো. কাইয়ুম খান শোনালেন প্রায় একই কথা। তিনি বলেন, আমরা সারাবছরই কাজ করি। কিন্তু বইমেলা উপলক্ষে নভেম্বর থেকে কাজের চাপ বেড়ে যায়। যা চলে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে।
বই প্রকাশনার কাজের সঙ্গে জড়িত বই বাঁধাইখানাও। বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশের যে হিড়িক লাগে তাতে তাদেরও সারাবছরের তুলনায় কাজ বেড়ে যায় কয়েকগুন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাঁধাইখানাগুলোতেও দেখা গেলো ব্যস্ততার সেই চিত্র।
এ বিষয়ে বাংলাবাজারের বই বাঁধাইখানা এবি বাইন্ডিং-এর গাজী শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাবছরই ব্যস্ততা থাকে। বইমেলার কাছাকাছি সময়ে সেই ব্যস্ততা বাড়ে কয়েক গুন। নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আমাদের এই ব্যস্ততা চলবে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত। এসময়ে এত কাজ করতে হয় যে, কোন রকম বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ থাকে না।
সারাবাংলা/পিএম
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ছাপাখানা প্রাণের মেলা বইমেলা বাংলা একাডেমি বাংলাবাজার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান