মাসরুর আরেফিনের ‘বানোয়াট মন্তব্যের’ প্রতিবাদ হাসান আজিজুল হকের
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:৩৯
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত মাসরুর আরেফিনের উপন্যাস ‘আগস্ট আবছায়া’র পেছনের মলাটে লেখা মূল্যায়নধর্মী মন্তব্যটুকু নিজের নয় বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। বিষয়টি নিয়ে ‘আমার নামে প্রকাশ পাওয়া বানোয়াট মন্তব্য সম্পর্কে প্রতিবাদ ও পূর্বাপর বক্তব্য’ শিরোনামে একটি প্রতিবাদলিপিও পাঠিয়েছেন এই কথাসাহিত্যিক।
প্রতিবাদলিপিতে হাসান আজিজুল হক লিখেছেন, ‘‘সম্প্রতি প্রকাশিত (ফেব্রুয়ারি ২০১৯) মাসরুর আরেফিনের ‘আগস্ট আবছায়া’ শিরোনামের একটি উপন্যাসের পেছন মলাটে আমার নামে মুদ্রিত একটি মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে আমার কানে এসেছে। পুরো বিষয়টি সম্যকভাবে অবগত হওয়ার পর আমি অত্যন্ত বিরক্ত ও বিব্রত হয়েছি। তাই বক্ষ্যমাণ বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়লো।’’
এই কথাসাহিত্যিক আরও লিখেছেন, ‘‘… বর্তমানে সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিনকে আমি একজন অনুবাদক হিসেবেই চিনি। সপ্তাহখানেক আগে সে আমাকে ফোন করে বলে, তার একটি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি দেখাবার জন্য আমার ঠিকানায় পাঠাতে চায়। আমি বিষয়টি নেহাতই সরল ভেবে তৎক্ষণাৎ আর না করিনি। তাকে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দিতে বলি। কিন্তু স্পাইরাল বাইন্ডিং করা সাড়ে তিনশ পাতার সেই পাণ্ডুলিপি আমার কাছে আসার পর শুরু হলো নতুন বিপত্তি। মাসরুর বারংবার আমাকে টেলিফোন করে তার সেই উপন্যাসের জন্য দ্রুততম সময়ে একটি ‘ফ্ল্যাপ’ বা শংসাবচন লিখে দিতে বলে। (…)এমনকি এক সময় সে এই ফ্ল্যাপটুকু লেখাবাবদ আমার ব্যাংক একাউন্টে ত্রিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও দেয়, কিন্তু আমি সে প্রস্তাব তখনই প্রত্যাখ্যান করি। ’’
হাসান আজিজুল হক তার প্রতিবাদলিপিতে আরও উল্লেখ করেছেন, ‘বয়সজনিত কারণ ও অসুস্থতার জন্য এত বড় পাণ্ডুলিপি অল্পদিনে পড়ে ফেলাটা আমার পক্ষে অসম্ভব। উপরন্তু তার ওই পাণ্ডুলিপি নাড়াচাড়া করে তা আদৌ উপন্যাস নাকি নানাবিধ বিদেশি গ্রন্থের সারের বমনমাত্র—তা আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি। এটা কবুল করতে দ্বিধা নেই যে, ওই উপন্যাসটি আমি আদতে পুরো পড়তে পারিনি। (…) অগত্যা উপায়ান্তর না দেখে আমি পরে একদিন টেলিফোনে ভদ্রতার খাতিরে তাকে উপন্যাস সম্পর্কে দু’চার কথা বলি নেহাতই অনানুষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু এখন দেখছি সে, আমার নামে মনগড়া কথা বানিয়ে তা ওই বইয়ের পেছন মলাটে বসিয়ে দিয়েছে।’’
প্রতিবাদলিপিতে এই কথাসাহিত্যিক আরও বলেন, ‘‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ও স্পষ্ট করেই আমার পাঠক, শুভানুধ্যায়ী-স্বজন-সুহৃদদের বলতে চাই, ‘আগস্ট আবছায়া’ বইয়ের পেছন মলাটে আমার নামাঙ্কিত যে কথাগুলো মুদ্রিত হয়েছে, তা আমার লেখা নয়। আমার কথাও নয়। মাসরুর আরেফিন… কে আমি কোনো লিখিত ভাষ্য দেইনি। আমার সই করা কোনো কাগজও তাদের পাঠানো হয়নি। আমার তাৎক্ষণিক টেলিফোন আলাপকে বিকৃত করে মাসরুর নিজের উপন্যাসের প্রচারণায় অসৎভাবে ব্যবহার করেছে। কার্যত আমার সারল্য ও স্নেহের সুযোগ নিয়ে তারা আমার মানহানি ঘটিয়েছে এবং আমার সঙ্গে স্পষ্টতই প্রতারণা করেছে। এতে যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন, এই অনুরোধ করি।’’
হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘‘উপরন্তু আমি আরো জানতে পেরেছি ও এমন চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়েছি যে, আমার নামে ছাপা হওয়া ওই ভুয়া বক্তব্যটি উক্ত বইয়ের বিজ্ঞাপনে এবং প্রচারণার জন্য ছাপা হওয়া পোস্টার, ব্যানার এমনকি বিলবোর্ডেও ব্যবহার করা হয়েছে। (…) আমার নামে বানোয়াট বক্তব্য তৈরি করে পোস্টার ব্যানারে ছাপানো, তা নিয়ে ব্যবসা করা ও প্রচারের সুবিধার্থে আমাকে ব্যবহার করার অধিকার মাসরুর আরেফিনকে কে দিলো?
বইটির প্রকাশকের প্রতি হাসান আজিজুল হক অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তার নামে ছাপা হওয়া ‘বানোয়াট মন্তব্যটি’ প্রত্যাহার করে নেয়। এইকসঙ্গে তারা যেন বইয়ের মলাট নতুনভাবে ও সংশোধিত আকারে ছাপায় সে বিষয়ে তিনি অনুরোধ জানান।
উপন্যাসের পেছনের মলাটে হাসান আজিজুল হকের নামে প্রকাশিত মূল্যায়নধর্মী মন্তব্য ছাপানোর বিষয়ে জানতে বইটির লেখক মাসরুর আরেফিনের মোবাইলফোনে একাধিকবার করলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ‘আগস্ট আবছায়া’র প্রকাশক ‘প্রথমা’। প্রথমা প্রকাশন দৈনিক প্রথম আলোর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ‘আগস্ট আবছায়া’ বইটির লেখক মাসরুর বেসরকারি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
সারাবাংলা/এমএনএইচ