বর্ধিত সময়ের প্রথমদিনে উচ্ছ্বসিত পাঠক ও প্রকাশকরা
২ মার্চ ২০১৯ ০৩:০০
।। হাসনাত শাহীন ।।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: একুশের শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো ভাষার ফেব্রুয়ারির শেষ দিনে। কিন্তু, শেষ হয়নি; লেখক-প্রকাশকদের দাবির মুখে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দুইদিন সময় বাড়ানো হয়েছৈ । যার ফলে ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত মাস মার্চে এসে গড়িয়েছে বইমেলা। একুশের চেতনায় আবিষ্ট গ্রন্থমেলায়, ভাষা আন্দোলনের চেতনা সঙ্গে এবার সরাসরি জড়িয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
যে কারণে লেখক ও প্রকাশক আর পাঠকদের মাঝে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার দুইদিন বাড়তি সময়ের প্রথম দিনে দেখা গেল বাড়তি উচ্ছ্বাস। কেননা, এবারের বইমেলায় নির্দিষ্ট সময়ে যারা আসতে পারেননি বলে আফসোস করেছিলেন বর্ধিত সময়ের প্রথম দিনে তারা মেলায় এসেছেন, বই কিনেছেন। আর যারা এবারের মেলায় এসেও নানা কারণে অনেক কাঙ্ক্ষিত বই কিনতে পারেনি তারাও এসেছেন; বই কিনেছেন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনের কারণে সকাল ১১টায় মেলা শুরু হয়। সকালের দিকে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা না গেলেও সময় বাড়ান সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় সেই ভিড় গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি দুই প্রাঙ্গণেই উপচে-পড়ে। বই বিকিকিনিও ছিলো চোখে পড়ার মতো। এদিন প্রায় সকল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরাই বিকিকিনিতে ছিলেন ব্যস্ত।
তবে বর্ধিত সময়ে শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন ও স্টলে ভিড় থাকলেও মাঝারি ধরনের স্টলে ভিড় ছিলো খুব কম। শুক্রবার বিকেলে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কথা হয় গ্রিন ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম রনির সাথে। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, সময় বাড়াতেই এবারের মেলায় আসতে পেরেছি। সময় না বাড়ালে মেলায় না আসার আফসোস থেকে যেতো। আমার মতো যারা মেলায় আসতে পারেনি, এখন তারা সবাই আসতে পারবে। বিকেল পাঁচটায় এসেছি, পছন্দের সবগুলো বই কিনেই বের হবো।
এদিকে, অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র বর্ধিত দুইদিনের প্রথম দিনের মেলা শেষ হলো। লেখক প্রকাশকদের দাবির মুখে শুক্রবার দু’দিন বর্ধিত সময়সীমার প্রথম দিনের মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিনের অর্থাৎ এবারের গ্রন্থমেলার ২৯তম দিনে মেলার মূল-মঞ্চে কোন আয়োজন না থাকলেও মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৬টি। আর এ পর্যন্ত মেলায় মোট নতুন বই এসেছে ৪হাজার ৯শত ২৪টি। এদিনের মেলায় নতুন বইগুলোর মধ্যে গল্প গ্রন্থ ১৫টি, উপন্যাস ৭টি, প্রবন্ধ ৩টি, কবিতা ৩১টি, ছড়া ২টি, শিশুসাহিত্য ৬টি, জীবনী গ্রন্থ ২টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৬টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক বই ৩টি, ভ্রমণ বিষয়ক বই ১টি, রাজনীতি বিষয়ক বই ১টি, কম্পিউটার বিষয়ক বই ১টি, অনুবাদ গ্রন্থ ১টি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বা সায়েন্স ফিকশন বই ১টি এবং অন্যান্য বিষয়ে বই এসেছে ৫টি।
মেলার এদিনের কিছু নতুন বই : দেশ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে মাসুদ রানা আশিকের গল্পের বই ‘আমার কোনো ছায়া নেই’, আশরাফুল ইসলামের উপন্যাস ‘আকাশ বালিকা’, প্রিন্স ইসলামের উপন্যাস ‘সোনালি দরজা’, স.ম শামসুল আলমের নাটক ‘তিমিরের কান্না’, মাহবুবা হক কুমসুমের শিশুতোষ ছড়ার বই ‘বাড়িয়া বাড়ি যায়’। রাবেয়া বুক হাউস থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার বই ‘আনন্দ উদ্যান’ ও সেলিনা হোসেনের শিশুতোষ গ্রন্থ ‘মেয়রের গাড়ি’। ইকরিমিকরি এনেছে কাকলী প্রধানের ছড়া গ্রন্থ ‘নদী নেবে’। য়ারোয়া বুক কর্ণার প্রকাশ করেছে হোমায়রা মোর্শেদা আখতারের কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘ ছুঁয়েছে রোদের দিন’ ও পীযুষ কুমার ভট্টাচার্য্যরে প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘সাহিত্য ভাস্কর নজরুল’। পায়রা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে সৈয়দা উলফাতের শিশুতোষ গল্পের বই ‘সেই মেয়েটি’। পাঠক সমাবেশ প্রকাশ করেছে সৈয়দ আবুল মকসুদের রাজনৈতিক ইতিহাস ভিত্তিক বই ‘ভাসানীর ভার প্রবাস’, মুহম্মদ নূরুল হুদা’র কাব্যগ্রন্থ ‘গলিবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা’ এবং কবি ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব আজিজের গল্পের বই ‘অমীমাংসিত’।
শনিবারের গ্রন্থমেলা : আগামীকাল ২রা মার্চ শনিবার বর্ধিত সময়ের শেষ দিন এবং এবারের মেলারও শেষ দিন। এদিনের মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে যথারীতি রাত ৯টা পর্যন্ত।
সারাবাংলা/এনএইচ