অশীতিবর্ষে পদার্পণে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে সংবর্ধনা
১১ মার্চ ২০১৯ ১৩:৩১
হাসনাত শাহীন ।।
ষাটের দশকের অন্যতম কথাসাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। সাহিত্য বিচারে অন্যতম শুধু নয়, ব্যতিক্রমীও। পহেলা সেপ্টেম্বর তার আশিতম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৯ সালে জন্ম নেওয়া এই গল্পকার ও ঔপন্যাসিকের জন্মের এ শুভক্ষণকে সামনে রেখে রোববার তাকে জানানো হলো অভিনন্দন। কথামালা, ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন, বই প্রকাশনা আর সাংস্কৃতিক আয়োজনে সাজানো সে আয়োজনে তাকে সংবর্ধিত করে তার শতায়ু কামনা করেছেন তার জীবনঘনিষ্টজনেরা। সেই সঙ্গে তার সবল কর্মময় জীবনের প্রণতীও জানিয়েছেন তারা।
জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের অশীতিবর্ষে পদার্পণ’ শিরোনামে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স ও পুথিনিলয়। রোববার (১০ মার্চ) অপরাহ্ন সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের বন্ধু অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ।
সবার ভালোবাসার জবাবে শুরুতেই রসিকতা করলেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। বললেন, এখন আমার আশিতম জন্মবার্ষিকী আসেনি। আগামী ১ সেপ্টেম্বর আসবে। সুতরাং এখনই আমাকে ‘অশীতিপর’ বলা যাবেনা। আর এ কারণেই এখনও আমার মধ্যে প্রাণচঞ্চলতা রয়েছে।
নিজের সাহিত্যিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ এ তিন বছরে তার তিনটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছিলো। এর পর দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি লেখালেখি করেননি। প্রথম জীবনের লেখালেখির জন্য সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো তার লেখা নিয়ে বন্ধু হায়াৎ মামুদের দীর্ঘ সমালোচনা। এর পর স্ত্রী কথাসাহিত্যিক পূরবী বসুর অনুরোধে তিনি আবারও লেখা শুরু করেন। তিনি বলেন, তার লেখালেখি জীবনে এ দু’জন মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ঘরে স্ত্রী হিসেবে এসে ৫১টি বছর পার করেছেন পূরবী বসু। অনুষ্ঠানে পূরবী বসু বলেন, জীবনে অনেকেই পরিচিত থাকে; কিন্তু একজন থাকে যিনি নির্ভয়ে হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে আশ্রয় দেন। তার জীবনে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত সেই জন। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন একসঙ্গে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারার জন্য সবার কাছে আর্শিবাদ চান তিনি। আর নিজের স্বামীকে তিনি একজন সৎ ও সত্যবাদী মানুষ হিসেবে মনে করেন বলেও জানান।
ছাত্র জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আনিসুজ্জামান বলেন, যেসব ছাত্রদের জন্য একজন শিক্ষক গর্ববোধ করেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তাদেরই একজন। তার কথাসাহিত্য জীবনঘনিষ্ট। তার ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব রীতির প্রকাশ পায়। সাহিত্যের যেকোন মানদ-ে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত একজন বড় কথাসাহিত্যিক। সে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান চিরস্থায়ী।
কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, তার গল্প মেদহীন, সুঠাম। তার গল্পে জীবনের শক্তি পাওয়া যায়। যেখানে দুর্বলতা হারিয়ে যায়।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তথাকথিত জনপ্রিয় লেখক নন। তবে তার লেখা একটি নির্দিষ্ট পরিসরের পাঠকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ১৯৬৭ সাল থেকে তার লেখার একজন অন্ধ পাঠক তিনি। তার লেখা পড়ে মনে হয়েছে, বাংলার জল-মাটিতে তাকে খুঁজে ফিরতে হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ব্যক্তিগত ঘনিষ্টতা না থাকলেও, তার লেখার মধ্য দিয়ে তাকে আবিষ্কার করা সম্ভব।
এর আগে মহাদেব ঘোষের কণ্ঠে ‘আগুণের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ ও ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে এ প্রাণে’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্য সংগঠন কাঁদামাটি’র নৃত্যশিল্পীরা। পরে স্বাগত বক্তব্য দেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া, নাট্যকার-ভ্রমণ লেখক শাকুর মজিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফি আহমেদ, পারিবারিক বন্ধু দ্বিজেন শর্মার স্ত্রী দেবী শর্মা, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মদ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়ক।
অনুষ্ঠানে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত রচিত পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘সাম্প্রতিক সেরা গল্প’ এবং পুথিনিলয় থেকে প্রকাশিত ‘গদ্য সমগ্র ১’র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়ক ও পুথিনিলয়ের প্রধান নির্বাহী শ্যামল পাল।
সারাবাংলা/পিএম
আনিসুজ্জামান কামরুল হাসান শায়ক গোলাম কুদ্দুছ জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত পূরবী বসু মুনতাসীর মামুন রিয়াজ আহম্মদ শাকুর মজিদ শ্যামল পাল হাবীবুল্লাহ সিরাজী