Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলোক-চিত্রকলা প্রদর্শনী ‘অন্তর্দর্শন’: নান্দনিকতার ভিন্নপাঠ


৭ মে ২০১৯ ১৪:০৪

ক্যামেরার তুলিতে আঁকা ছবি নিয়ে চলছে একক প্রদর্শনী। গ্যালারির দেয়ালে প্রদর্শিত ছবিতে চোখ রাখতেই পা থেমে যাবে, সামনের দিকে সহজেই পা বাড়ানো যায় না! গভীর ভাবনায় ফেলে দেয়- এটা কি ফটোগ্রাফ না পেইন্টিং। দ্বিধাদ্বন্দ্বের ঘোর কেটে খানিক বাদে জানা যায়- এসব ছবি মূলত ক্যামেরায় ধারণ করা আলোকচিত্র। তবে প্রথম দেখায় সকলের মনে হবে পেইন্টিংস্, এই মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। সত্যিই পেইন্টিংসই বটে; তবে তা প্রকৃতির আপন খেয়ালে আঁকা। আমাদের চারপাশের ঘাস, লতাপাতা, বৃক্ষরাজি, ভূমি, শ্যাওলা, স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল, গাছের বাকল প্রভৃতি আপন বৈশিষ্ট্যে নানান রূপে এদের গতি-প্রকৃতি, রূপরেখা, আকার প্রভৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। বিচিত্র্যময় রূপবদলের কালে প্রকৃতি নিজস্ব একটি আদল পরিগ্রহ করে।

বিজ্ঞাপন

সাধারণ চোখে এসব লুকায়িত রূপ আমরা চর্চা করিনা। এসব লুকায়িত প্রকৃতির আপন খেয়ালসৌন্দর্যকে ক্যামেরার লেন্সে এঁকেছেন কাজী আনিসুল হক বরুণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে চলমান প্রদর্শনীতে দেখা মিলবে এসব ছবির। ছবিগুলোর বিষয় ও ভাষা প্রকৃতির নিয়মেই মূর্ত; তবে উপস্থাপন শিল্পবিচারে মাত্রা পেয়েছে বিমূর্ত রূপে মূর্তপ্রতীকের।

প্রতিটি ছবিতেই রয়েছে স্বতন্ত্র রূপ, রঙ, রেখা ও টেক্সচারের মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি। কাজী আনিসুল হক বরুণ একজন প্রতীভাবান শিল্পী। শিল্পের বহুমাধ্যমে তাঁর সদর্প বিচরণ। বিশেষ করে থিয়েটার ও টেলিভিশন নাটক অভিনয়ে তিনি বেশ সফলতা পেয়েছেন। এসবের পাশাপাশি ছবি তোলা তাঁর নেশা। পেশাদার শিল্পভূমির নিজ গণ্ডির সাবলীল শিল্পসীমানা অতিক্রম করে ভিন্ন এক শিল্পভেলায় চড়ে উজানে যাত্রা শুরু করেছেন। তাঁর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি সদা খুঁজে বেড়ায় অরূপে নিহিত রূপকে। এই অরূপ-রূপকে ধরার জন্য দীর্ঘসময় তিনি মাঠপ্রকৃতিতে তিনি ধ্যান করে চলেছেন। প্রার্থনাসঙ্গীতে নিমগ্ন চিত্তে ক্যামেরাবন্দি করেছেন শ’পাঁচেক প্রকৃতির খেয়াল। যা দেখার তীক্ষ্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও শৈল্পিক প্রেক্ষিতের দরুণ হয়ে উঠেছে ‘আলোক-চিত্রকলা’ বা ‘Photo Arts’।

প্রদর্শিত প্রতিটি ছবির ল্যান্ডস্কেপ দর্শককে গভীর ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। বহুছবি থেকে বেছে সাঁইত্রিশটি ছবি নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ‘অন্তর্দর্শন’ শিরোনামে এই একক প্রদর্শনীর। ছবিগুলো নামকরণের কারণে একেকটি ছবি একটি গল্পকে প্রতিনিধিত্ব করে, অদেখাকে ভূবনকে দেখার জন্য স্বাগত জানায়- চিন্তাচিত্র, কালের সাক্ষী, অন্তর্দর্শন, পূর্বরাগ, ভূমিচিত্র, কল্পনাবিলাস, নৃত্যশালা, নদীমাতৃক, অন্ত্যমিল, অভিসন্ধি, অভিসন্ধি, আত্মচেতনা, কৌতুহল, মা, দোলাচল, পূর্বাভাস প্রভৃতি প্রদর্শিত ছবিগুলোর একেকটি কথক।

বিজ্ঞাপন

গাছের বাকলের আপন বিন্যাস থেকে ফ্রেমবন্দি করেন একটি জনপদ অথবা নিকট পরাধীনতার ক্রন্দন। মরিচা ধরা টিনের বেড়া থেকে শুনতে পান নৃত্যশালার ঘুঙুরের আওয়াজ। আলোক রঙকে ক্যামেরার সাটার স্যালুট করে আবাহন জানায়; লেন্সের তুলিতে বিমূর্ত রূপে ধরা দেয়- আকাঙ্খিত তৃষিত নয়ন, কৌতুহল, দোলাচল, আত্মচেতনা, কল্পনাবিলাস, অন্ত্যমিল। আলোছায়ার রঙের বুননে এরা কখনও মূর্ত কখনও বিমূর্ত, কখনওবা রূপক-সাংকেতিক। বিমূর্ত বা সাংকেতিক ইংগিত গভীর চিন্তার নীলাভজলে ডুব দিতে শেখায়। মূর্ত-রূপক কথকতা আলাপ-সংলাপে নাট্যিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে অনন্ত-অসীমের।

এসব গল্প অনুবাদ করলে যে অর্থগুলো পাওয়া যায়- প্রশস্ত, নীরবতা, শান্ত, গভীরতা, মহাপরিসর, বিশালতা, উদার প্রভৃতি। তবে কিছু ছবির ভাষা বেশ কঠিন, যেটা অনুবাদ করা খুব সহজ নয়। ছবিগুলো একেকবার একেক কথা বলে, তবে চমক হলো প্রতিবারই এরা নতুন গল্প বলে- এখানেই থিয়েটারের সাথে অর্থবহ সংশ্লেষ ও সাযুজ্য পরিলক্ষিত হয়। ছবিগুলো প্রতি মুহূর্তে জীবন্ত হয়ে জীবনের নয়াগল্প বলে। প্রচলিত ফর্মকে ভেঙ্গে নতুন আঙ্গিক বিনির্মাণ করে। এই ছবি প্রদর্শনী অদেখাকে দেখার এক অপার সুযোগ। প্রকৃতির খেয়ালকে ছবির ক্যানভাসে আলোক রঙ ও ক্যামেরা-তুলি দিয়ে আঁকা চিত্রকলার নব-রূপায়ন কেন্দ্রীক প্রদর্শনীর প্রতিটি আলোকচিত্র নন্দনশিল্পের এক ভিন্নপাঠ।

প্রদর্শনী চলবে ৭ মে ২০১৯ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে  সকাল ১১.০০ থেকে সন্ধ্যা ৭.০০টা।

ড. ইসলাম শফিক : গবেষক ও শিক্ষক
[email protected]

সারাবাংলা/পিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর