Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হুমায়ূন আহমেদের অগ্রন্থিত লেখা: ‘আজ আমাদের খেলা’


১২ নভেম্বর ২০১৯ ২০:১২

জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। মৃত্যু ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক পদ থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে লেখালেখি চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোনিবেশ করেন। বহুমাত্রিক তার সত্তা প্রতিভা, মেধার বিচ্ছুরণ। কথাশিল্পী, নাট্যকার, কলামিস্ট, চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, সৌখিন জাদুশিল্পী, পর্যটক, তুখোড় আড্ডাবাজ, দুর্দান্ত গল্পবলিয়ে একের মধ্যে অনেক গুণের সমাবেশ। তার ক্রীড়ানুরাগও ছিল প্রবল। আমি যখন দৈনিক জনকণ্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করি, তার পরের বছর ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। সেবারই প্রথম বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসরে যোগ দেয়। অভিষেক ম্যাচটি ছিল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তারিখ ১৭ মে ১৯৯৯।

বিজ্ঞাপন

আমার ওপর দায়িত্ব বর্তায় হুমায়ূন আহমেদের নিয়মিত একটি কলাম যেন জনকণ্ঠে ছাপা হয় নিয়মিত, সে ব্যবস্থা করা। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বা অপরাধে (!) এই শাস্তি। পেশাগত কারণে সেটা হজম করতে হয়। জীবিকা বলে কথা! এড়ানোর কোনো উপায় নেই। হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে লেখা আদায় করা (একটাদুটো নয়, বেশ কয়েকটা) যে কী সুকঠিন কাজ, তা ভুক্তভোগীরাই কেবল জানেন। এর চেয়ে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করা হয়তো সহজতর। আনন্দের কথা, সেই অগ্নিপরীক্ষায় ফেল করিনি। টুর্নামেন্ট চলাকালীন বেশ কয়েকটি লেখা আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলাম। দৈনিক জনকণ্ঠে তার প্রথম লেখাটি (ক্ষুদ্রাকার অতিথি কলাম) ছাপা হয় ১৮ মে ১৯৯৯। সেই লেখাটির শিরোনাম ছিলআজ আমাদের খেলা ওই লেখা এখন অব্দি কোনো গ্রন্থভুক্ত হয়নি। সেই লেখাটি এখানে

বিজ্ঞাপন

আজ আমাদের খেলা

হুমায়ূন আহমেদ

আজকের দিনটা অন্যরকম কেন? আকাশ মেঘলা, মেঘমেদুর। মনে হচ্ছে বর্ষা এসে গেছে। বর্ষার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে বিষাদ জড়িয়ে থাকে। আজকের মেঘমেদুর পরিবেশে কোনো বিষাদ নেই। কারণ আজ আমাদের খেলা। আমরা খেলছি বিশ্বকাপের দুর্দান্ত খেলা।

এখন বাজছে দেড়টা। রাস্তাঘাট এর মধ্যেই ফাঁকা। স্কুল-কলেজ ছুটি হয়ে গেছে। সবাই আগেভাগে বাসায় চলে যাচ্ছে। খেলা শুরু হবে, তার আয়োজন আছে না? ফ্লাস্ক ভর্তি চা, বাদাম-চানাচুর। এত বড় খেলা একা একা দেখা যায় না। বন্ধু-বান্ধবরা একসঙ্গে দেখবে। আত্মীয়-স্বজনরা একত্রিত হবে। আমি একজনের কথা জানি, যার আজ অপারেশন হওয়ার কথা। সে ডাক্তারদের বলে টলে ক্লিনিক থেকে বাড়িতে চলে এসেছে। ভদ্রলোকের যুক্তি হলো— অপারেশনে কোনো ঝামেলা হলে মরে যাব। এত বড় একটা খেলা বাংলাদেশ খেলবে, সেটা না দেখেই মরব? তার চেয়ে বরং একটা দিন কষ্ট করি।

আমি আজ ভোরবেলা বাংলাদেশের খেলার ফল কী হবে, তার জন্য ছোট্ট পরীক্ষা করলাম। আমার পুত্রের দিকে মধ্যমা এবং তর্জনী বের করে বললাম— দেখি, একটা আঙুল ধরো তো। সে মধ্যমা ধরল। আমি চেঁচিয়ে বললাম, জয়। কারণ আমি দু’টো আঙুলেই জয় ধরে আছি।

শুধু আমি না, সবাই আজ বাংলাদেশকে জয়ী ধরে বসে আছে। আমার বন্ধু আর্কিটেক্ট করিম সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ দলের শক্তিসামর্থ্য নিয়ে মোটেই আশাবাদী নয়। সেও গতকাল বলল, বাংলাদেশ জিতবে— এ তো জানা কথা।

আমি জানি, ’৯০ সালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা একদিনের খেলা হয়েছিল শারজায়। নিউজিল্যান্ড করেছিল ৩৩৮ রান। এর উত্তরে অনেক কষ্টে আমরা করেছিলাম মাত্র ১৭৭ রান। ওই রেজাল্টের কথা মনে রাখলে চলবে না। আমরা নতুন ইতিহাস তৈরি করব।

ওদের আছে ক্রিস হ্যারিস। মারাত্মক ব্যাটসম্যান। তাতে কী? আমাদেরও আছে খালেদ মাহমুদ সুজন।

ওদের আছে ফাস্ট বোলার সাইমন ডৌল। আমাদেরও আছে শান্ত, বাবু, মঞ্জু— এরা প্রয়োজনে ঝলসে উঠবে।

বাংলাদেশের খেলা নিয়ে এই লেখাটি লিখতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো— আমাদের প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলা পছন্দ করেন। তিনি ইংল্যান্ডের এত কাছ থেকে ঘুরে এলেন, তিনি কেন একটু কষ্ট করে ইংল্যান্ড হয়ে এলেন না! আমাদের দলের সঙ্গে কিছুক্ষণ থাকলেও তো ওরা উৎসাহ পেত।

আমরা ১২ কোটি মানুষের একটা দল। সেই ১২ কোটি থেকে আমরা ১১ জন নিয়েছি। এই ১১ জন খেলবে ১২ কোটি হৃদয়কে বুকে নিয়ে।

ভাবতেই কেমন লাগে! আজ যখন খেলা দেখব— যখন দেখব অপি চারের মার মেরেছে, তখন নিজের কাছে মনে হবে অপি না, ওই চারের মারটি আমরা ১২ কোটি মানুষ একসঙ্গে মেরেছি। সেই আনন্দ আমি রাখব কোথায়?

১৭.০৫.৯৯

অগ্রন্থিত হুমায়ূন আহমেদ বিশ্বকাপ ক্রিকেট হুমায়ূন আহমেদ

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর