Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৯৭১: একটি জানুয়ারি ও চারটি ডিসেম্বর ডেসপাচ – ৪


১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৩৪

জ্যাক এন্ডারসনের ডিসেম্বর রিপোর্ট

১৯৭১-এর ডিসেম্বরের প্র্রতিবেদন জ্যাক এন্ডারসনকে এনে দিয়েছে সাংবাদিকতার জন্য পুলিৎজার পুরস্কার। ইউনাইটেড ফিচার সিন্ডিকেটের প্র্রতিবেদক ও কলাম লেখক জ্যাক এন্ডারসনের যে প্র্রতিবেদনগুলো বিবেচনায় আনা হয়েছে, সেগুলো মূলত ১৯৭১-এর ডিসেম্বর যুদ্ধ নিয়ে, যার পরিণতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রণতরী।
বঙ্গোাপসাগরে সোভিয়েত ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌশক্তির মুখোমুখি হওয়ার পরিণতি হবে ভয়ংকর। ভারতকে নিরস্ত্র করার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন নৌ টাস্কফোর্সকে ঝামেলার দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
বিমানবাহী জলযান এন্টারপ্রাইজ বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোচ্ছে, সঙ্গে আছে উভচর যান ত্রিপোলি, গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট কিং, গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার তিনটি-পার্সন, ডেকাটুর এবং টার্টার স্যাম।
একইসঙ্গে স্পষ্টতই ভারতকে সাহায্য করার জন্য বঙ্গোপসাগরের দিকে সোভিয়েত যুদ্ধজাহাজকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা প্র্রতিবেদন থেকে আরও অমঙ্গলজনক খবর পাওয়া গেছে-ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজে সোভিয়েত টেকনিশিয়ান রয়েছে, সে জাহাজ পাকিস্তানি বন্দর এবং সংলগ্ন স্থাপনার উপর আক্রমণ চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক জাহাজও আক্রান্ত হয়েছে, সমুদ্রতল থেকে উৎক্ষিপ্ত রকেটও শনাক্ত হয়েছে। সোভিয়েত সাবমেরিন থেকে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে কি না তা জানতে যুক্তরাষ্ট্র আশু সাহায্য চেয়েছে।
এদিকে হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট নিক্সন-এর পক্ষপাত লুকোবার আর কোনো চেষ্টা করা হচ্ছে না।
পাকিস্তানের ‘ডিনামিক’ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ নামে পরিচিত তার সংকটকালীন সহায়তা দলকে সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তানকে সাহায্য করার পথ বের করতে তিনি বলেছেন। প্র্রেসিডেন্টের নীতি-নির্ধারক হেনরি কিসিঞ্জার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই হোয়াইট হাউজের গল্পকথার গোপন ‘সিচুয়েশন রুমে’ প্র্রায় প্র্রতিদিনই সভা করছেন।

বিজ্ঞাপন

নিক্সনের গোপন ক্রোধ
৩ ডিসেম্বর বৈঠকে বিরক্তিভরে কিসিঞ্জার বললেন, প্র্রতি আধঘণ্টা পরপর প্রেসিডেন্ট একবার করে আমাকে এক হাত নিচ্ছেন যে, আমরা ভারতের ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর ভূমিকা পালন করছি না। কিছুক্ষণ আগেও তিনি আমাকে আবার সে কথা বলেছেন। আমরা তার ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করছি- এটা তিনি বিশ্বাস করছেন না। তিনি চান আমরা পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়ি। তিনি মনে করেন আমরা যা করতে চাই ঠিক তার উল্টোটাই ঘটছে।

জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ-এর চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল টমাস মুরার বৈঠকে সামরিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন। যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে সিআই-এর প্র্রতিনিধির পাঠানো প্র্রতিবেদন তুলে ধরেন সিআইএ প্রধান রিচার্ড হেল্মস। তারপর কিসিঞ্জার জাতিসংঘের বিষয় উপস্থাপন করেন। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ যদি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে না পারে, তাহলে বুঝতে হবে এর উপযোগিতা ফুরিয়ে গেছে, কাজেই মধ্যপ্র্রাচ্যে জাতিসংঘ যে গ্যারান্টি দিচ্ছে তা নিয়ে চিন্তা করা অর্থহীন।
অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট জোসেফ সিসকো বলেন, ‘আজ বিকেলে’ আমরা সুপারিশমালা পেশ করতে পারব।
কিসিঞ্জার জোর দিয়ে বললেন, আমাদের অ্যাকশনে যেতে হবে। প্রেসিডেন্ট আমাকে দোষারোপ করছেন আর আপনারা হাত-পা ঝেড়ে বসে আছেন।

রাষ্ট্রদূত বুশ জাতিসংঘে যে বিবৃতি দেবেন তার খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়, কিসিঞ্জার বলেন, এটা তো দুদিক সামলে নিয়ে তৈরি করা বিবৃতি; ভারতের প্র্রশ্নে আমাদের কঠোর হতে হবে।
সিসকো বললেন, একটি কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আমরা ভারতের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারি, সেক্ষেত্রে এটাও ঘোষণা দিতে হবে পাকিস্তানের ব্যাপারে অনুরূপ পদক্ষেপ বিবেচনাধীন।
এই কথা শুনে গুমরে উঠে কিসিঞ্জার বললেন, ভারতীয় পদক্ষেপের সাথে পাকিস্তানি পদক্ষেপ মেলাতে হলে পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়া খুব কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

বিজ্ঞাপন

[চলবে…]

পর্ব ৩ – ১৯৭১: একটি জানুয়ারি ও চারটি ডিসেম্বর ডেসপাচ

আন্দালিব রাশদী ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর