Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উপেন্দ্রকিশোরের বেহালা


২৬ মে ২০২০ ১৮:২৬

এ কেমন আজব ছেলেরে বাবা!

ময়মনসিংহ বয়েজ হাইস্কুলের সকল শিক্ষক অবাক। ভীষণ অবাক। ছেলেটিকে সবাই খুব পছন্দ করেন। প্রতিদিন ক্লাসে পড়া পারে। পরীক্ষায় কখনো সেকেন্ড হয় না। সবসময় প্রথম। দুরন্ত মেধা আর বিপুল প্রতিভা। কিন্তু এ কেমন আজব ছেলে! স্কুলের পাঠ্যবিষয়ে তার একেবারেই আগ্রহ নেই। পড়াশোনাও করে না ঠিকমতো।

রাতে তো এক অক্ষরও পড়ে না। তবু প্রথম হয়। কেমন করে?

শিক্ষকরা ধরে বসলেন। ‘ঘটনা কী উপেন্দ্র? রাতে একটুও পড়াশোনা কর না। তবু প্রথম হও কী করে? ক্লাসে পড়াই বা দাও কেমন করে?’

ঘাবড়ে গেল উপেন্দ্র। শিক্ষকরা এসব জানলেন কী করে? জবাব দিল, ‘শরৎ কাকা আমার পাশের ঘরেই থাকে। রোজ সন্ধ্যায় সে চিৎকার করে করে পড়া মুখস্ত করে। ওতেই আমার পড়া হয়ে যায় যে! দুজনে পড়তে গেলে অনর্থক গন্ডগোল বাড়ে।’

আহা! কী জবাব। দুজন এক সঙ্গে গলা ফাটিয়ে পড়তে গেলে ঝামেলা হয়, তাই একজন পড়ে আর আরেকজন শোনে। আর যে জন শোনে, সে শুনে শুনেই পন্ডিত হতে বসেছে। কাজেই এ নিয়ে উপেন্দ্রকে তো আর কিছু বলা যায় না।

এর মধ্যে একদিন স্কুল পরিদর্শনে এলেন ছোটলাট। ছোটলাটের নাম স্যার অ্যাশলি ইডেন। এই অ্যাশলি ইডেন ভারতের গভর্নরও ছিলেন। তাঁর নামেই ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ। যাই হোক, ছাত্ররা ক্লাসে মন দিয়ে লাট সাহেবের কথা শুনছে। লাট সাহেব ছাত্রদের নানা প্রশ্ন করছেন, ছাত্ররাও সেসব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে। হঠাৎ ইডেন দেখলেন পিছনের বেঞ্চিতে বসা একটি ছেলে তাঁর কোনো কথাই শুনছে না। মাথা নিচু করে কিছু একটা করছে।

ক্লাসে উপস্থিত শিক্ষকদেরও নজরে পড়েছে সেটা। শঙ্কিত হয়ে উঠলেন সব শিক্ষক। এই অমনোযোগী ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেল না! না জানি সাহেব কী মনে করেন। চুপি চুপি ছেলেটির কাছে গেলেন ইডেন। দেখলেন ছেলেটি একমনে খুব মনোযোগ দিয়ে একটা প্রতিকৃতি আঁকছে। আর সেটা স্বয়ং অ্যাশলি ইডেনের প্রতিকৃতি।

বিজ্ঞাপন

নিজের প্রতিকৃতি দেখে ভীষণ খুশি হলেন ইডেন সাহেব। জানতে চাইলেন, ‘কী নাম তোমার?’ চমকে উঠল ছেলেটি। আঁকা থামিয়ে তাকাল। আরে এ যে লাট সাহেব! কিন্তু লাট হোক যাই হোক, একটুও ঘাবড়াল না ছেলেটি। শান্তস্বরে জবাব দিল, ‘উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। পিতা হরিকিশোর রায়চৌধুরী। গ্রাম…’

উপেন্দ্রকে থামিয়ে দিলেন লাট সাহেব। ‘থাক। এবার থামো।’

তারপর উপেন্দ্রর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, ‘কখনও আঁকা ছেড়ো না। চালিয়ে যেও।’

এর মধ্যেই একদিন বাড়ি ফিরে তুমুল হইচই শুরু করে দিল উপেন্দ্র। সামনে পেল গুপীকে। বলল, ‘গুপীদা, এখনই আমার জন্য একটা বেহালা কিনে আনো। একটা সুর শুনেছি, দেরি করলেই ভুলে যাব।’

উপেন্দ্রর বাবা হরিকিশোরের টাকা পয়সার কমতি নেই। একে তো ময়মনসিংহের নামকরা জমিদার। তার ওপর ওকালতি করে বেশ পয়সাও কামিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কোনো ছেলেপুলে নেই। বংশ বাঁচাবে কে? প্রথম দুই স্ত্রী নিঃসন্তান অবস্থায় পরলোকে। তৃতীয় স্ত্রী রাজলক্ষ্মী দেবীরও সন্তান হয়নি তখন পর্যন্ত। একটা ছেলে যে তাঁর চাই। দত্তক হলেও।

দত্তক যখন নিবেনই, তখন বুদ্ধিসুদ্ধি আছে এমন একটা ছেলের খোঁজ করলেন। আর হাতের কাছে পেয়েও গেলেন। ছেলেটির নাম কামদারঞ্জন রায়। জ্ঞাতী ভাই কালীনাথ রায়ের মেজ ছেলে। বয়স কেবল পাঁচ বছর হয়েছে। দত্তক নেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। সময় সুযোগ বুঝে কামদারঞ্জনকে দত্তক হিসেবে নিয়ে নিলেন হরি কিশোর।

যাগযজ্ঞ করে তুলে আনলেন ঘরে। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন নাম রাখলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। দত্তক হলেও বড় আদরের ছেলে তাঁর। আদরটা একটু বেশিই পেয়েছিল উপেন্দ্র। সেই ছোটবেলা থেকেই। একেবারে বিগড়ে যাওয়ার মতো আদর। নিজের পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টও কখনো পেতে হয়নি ওকে। কারণ নিজের বাবার বাড়ি আর দত্তক বাবার বাড়ি দুটো ছিল খুবই কাছাকাছি। হরিকিশোরের বাড়িতে কেউ যদি ওকে সামান্য বকুনি কিংবা শাসন করত, সেটাও ওর সইত না। দুষ্টুমির জন্য কেউ বকা দিলেই হলো। দুই বাড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়ে ‘ওরে আমার কেউ নেই রে!’ বলে চিৎকার করে কাঁদত।

বিজ্ঞাপন

ব্যস, আর দেখতে হতো না। দুবাড়ির লোকজনই ওর কান্না শুনে ছুটে আসত। আর উপেন্দ্রকে কী আদরটাই না করত! উপেন্দ্রকে তখন আর পায় কে! এরকমটাই চাইত সে।

হরিকিশোর কখনো গ্রামের প্রচলিত রীতিনীতি উপেন্দ্রর উপর চাপিয়ে দেননি। আর উপেন্দ্র? ছোটবেলা থেকেই এসব নিয়মনীতিকে সর্বদা বুড়ো আঙুল দেখাতেই তার ভালো লাগত। তবু হরিকিশোর খুবই ভালোবাসতেন তাঁর দত্তক পুত্রকে। তার মেধা বিকাশের জন্য সবরকম ব্যবস্থাই করে রেখেছিলেন। একটু বেশি বয়সে তাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন ময়মনসিংহ বয়েজ স্কুলে। ময়মনসিংহ শহরে হরিকিশোরের সুন্দর বাড়ি ছিল। সেখানে থেকেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল উপেন্দ্র।

প্রতিদিন বাড়ি থেকে গাড়িতে চেপেই স্কুলে যায় উপেন্দ্র। সেই উপেন্দ্র যদি একটা সামান্য বেহালার আবদার করে, কে মানা করবে? সেদিনই একটা বেহালা কিনে দেওয়া হলো উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে।

এতদিন তো কেবল ছবি আঁকা নিয়ে ব্যস্ত থাকত উপেন্দ্র। নিজের পাঠ্যবইগুলোকে নিজের অলংকরণ দিয়ে ভরিয়ে তুলত। এর মধ্যেই বাঁশি বাজানো শিখে ফেলেছে। সহজেই সুর তৈরি করতে পারে। এখন তার সঙ্গে জুড়েছে বেহালা।

ছবি আঁকা আর বেহালা বাজানো ছাড়া উপেন্দ্রর যেন আর কোনো কাজ নেই। অবশ্য বছর বছর স্কুলের ক্লাসও ডিঙোচ্ছে নিয়ম মতো। নিয়ম মতো প্রতি বছর প্রথমও হচ্ছে। সেদিক দিয়ে কোনো ফাঁকি নেই। তবু যেন উপেন্দ্রর কাজে সবার চোখে ফাঁকিটাই চোখে পড়ে। নইলে প্রবেশিকা পরীক্ষার আগে আগে এমন কান্ড ঘটবে কেন?

নাকের ডগায় চলে এলো প্রবেশিকা পরীক্ষা। উপেন্দ্রকে নিয়ে সবার খুব বড় আশা-ভরসা। পরিবারের আশা, আত্মীয়স্বজনের আশা। এর মধ্যে শরৎবাবু এসে কড়া নাড়লেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রত্নমণি গুপ্তের দরজায়। ‘কই, আপনার প্রিয় ছাত্র উপেন্দ্র কই?’

রত্নমণি গুপ্ত ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে বললেন, ‘নিশ্চয় লেখাপড়া করছে। কদিন পরে পরীক্ষা…!’ শরৎবাবু মুখ বাঁকা করে বললেন, ‘পড়ছে না ছাই। সারাদিন কেবল বেহালা বাজিয়ে বেড়াচ্ছে। আর মাঝে মাঝে রং তুলি নিয়ে ছবি আঁকছে।’

অবাক হলেন রত্নমণি গুপ্ত। চোখদুটো কপালে তুলে তাকালেন শরৎবাবুর দিকে। শরৎবাবু এবার হতাশ কণ্ঠে বললেন, ‘এখনও পড়ায় মনই দিতে পারল না।’

নাহ। এখন আর চুপ থাকা যায় না। উপেন্দ্রকে ডেকে পাঠালেন রত্নমণি গুপ্ত। তাঁর একান্ত অনুগত ছাত্র উপেন্দ্র এলে বললেন, ‘তোমার উপর আমরা অনেক আশা করে আছি। দেখো, তুমি যেন আমাদের নিরাশ কোরো না।’

প্রধান শিক্ষকের কথায় ভীষণ অনুতপ্ত হলেন উপেন্দ্র। এতটা অনুতপ্ত তিনি এর আগে কখনো হননি। এবং এতটাই অনুতপ্ত হলেন যে, সাধের বেহালাটা নিজেই ভেঙে ফেললেন। ১৮৭৯ সালে বৃত্তিসহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন উপেন্দ্রকিশোর। বৃত্তি বাবদ পেয়েছিলেন বারো টাকা। সেই টাকা আর বন্ধুদের নিয়ে ছুটলেন ‘ব্রাহ্ম দোকানে’। বৃত্তির টাকায় ভোজ দিলেন বন্ধুদের। কিন্তু বেহালা?

প্রবেশিকা পাশ করে উপেন্দ্রকিশোর চলে এলেন কলকাতা। কলকাতায় এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ব্রাহ্ম সমাজে অবাধ চলাফেরা শুরু করলেন। ব্রাহ্মদের সাহসী ধ্যানধারনার কথা শুনতেন বন্ধু গগন চন্দ্রের কাছ থেকে। তরুণ উপেন্দ্রর মনে সেগুলো স্থায়ী আসন তৈরি করে নিয়েছিল। নিজে যেমন ছিলেন উদার মনের, ব্রাহ্মদের উদার চিন্তা ভাবনা তার মনের জগতকে করেছিল আরো বিস্তৃত। ব্রাহ্মরা মূর্তি পূজায় বিশ্বাস করতেন না, বর্ণভেদ মানতেন না। বাড়ির মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেন। পর্দা প্রথাও মানতেন না।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রথম বর্ষের ক্লাসে ভর্তি হলেন উপেন্দ্রকিশোর। কলেজে তার সহপাঠী ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। আশুতোষ খুব সুন্দর নোট করতে পারতেন। তার নোটের জন্য সহপাঠীরা তাকে খুব জ্বালাতন করত। কখনো কখনো সুযোগ বুঝে নোট চুরিও করত। কিছুতেই ছেলেপুলেদের কাছ থেকে নিজের নোট সামলে রাখতে পারতেন না। শেষে একদিন চুপি চুপি উপেন্দ্রকিশোরের কাছে এলেন আশুতোষ। বললেন, ‘তুমি এসব পড় না বলেই সবাই জানে। তোমার কাছে থাকলে কেউ খোঁজ পাবে না।’ বলেই উপেন্দ্রকিশোরের হাতে নিজের নোট খাতা দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন।

আসলেই কলেজে এসেও দিনরাত কেবল পাঠ্যবই নিয়ে পড়ে থাকতেন না উপেন্দ্র কিশোর। বরং বইয়ের চেয়ে গান- বাজনা আর ছবি আঁকার দিকেই মনোযোগ বেশি দিতেন। বিশেষ করে বেহালা বাজানোর প্রতি তার ঝোঁক আরো বেড়ে গিয়েছিল।

চার বছর পর ১৮৮৪ সালে স্নাতক পাশ করেন। এর আগেই ১৮৮৩ সালে একদল বলিষ্ঠ ও নির্ভীক সমাজকর্মীর সঙ্গে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। এ দলের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, বাংলায় এমন এক উদার ও শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে নারী ও শিশুরা তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা পাবে। তারা প্রায় সবাই ছিলেন নিঃস্বার্থ ও আশাবাদী, উচ্চশিক্ষিত ও বিত্তহীন এবং প্রায় রক্ষণশীল পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। নারী শিক্ষা ও শিশুদের উপযোগী ভালো বইয়ের প্রকাশনাও ছিল তাদের লক্ষ্য। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন, রবীন্দ্রনাথের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ঠাকুর পরিবারের অন্যরা, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়।

এর মধ্যেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে খাতির জমে গেল উপেন্দ্রকিশোরের। তার চেয়ে দুবছরের বড় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু তাতে বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি। জোড়াসাঁকোর বাড়ি ছিল সংস্কৃতিময়। ওদিকে উপেন্দ্রর এমন ব্রাহ্মসাহচর্যের খবর পেয়ে হরিকিশোর বেশ শঙ্কিত ছিলেন, তার ছেলেটা না আবার ব্রাহ্ম হয়ে যায়। বিচলিত পিতা চরমপত্র দিলেন পুত্রকে- ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করলে উপেন্দ্রকিশোর তার সম্পত্তির কানাকড়িও পাবেন না।

পিতার সম্পত্তির থোড়াই কেয়ার করেন খামখেয়ালি উপেন্দ্রকিশোর। আগেই তো ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করে বসে আছেন। খবর শুনে ভীষণ রেগে গেলেন হরিকিশোর। তার সম্পত্তির মাত্র এক-চতুর্থাংশ দিলেন দত্তক পুত্রকে। কিন্তু হরিকিশোরের মৃত্যুর পর এ উইল ছিঁড়ে ফেলেন রাজলক্ষ্মী দেবী। উপেন্দ্রকে দত্তক নেওয়ার পর হরিকিশোরের এক ছেলে হয়- নরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। দুই পুত্রের মধ্যে সম্পত্তি সমান ভাগ করে দেন রাজলক্ষ্মী দেবী।

ততদিনে লিখতে শুরু করে দিয়েছেন উপেন্দ্রকিশোর। ১৮৮৩ সালে শিক্ষক প্রমদাচরণ সেনের ‘সখা’ পত্রিকায় ‘মাছি’ নামে একটা লেখা লিখলেন। ছোটদের সাহিত্যে প্রথম চলিত ভাষায় লিখলেন অনুবাদ প্রবন্ধ ‘নিয়ম ও অনিয়ম’। ১৮৮৬ সালে ব্রাহ্মসমাজের আর এক বিখ্যাত মানুষ দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা বিধুমুখীকে বিয়ে করলেন। তাদের ঘরে এলো সুখলতা, সুকুমার, পুণ্যলতা, সুবিনয়, শান্তিলতা ও সুবিমল।

উপেন্দ্রকিশোরের চিন্তা-ভাবনা সবই ছিল শিশু-কিশোরদের নিয়ে। ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত হল তাঁর প্রথম বই, ‘শিক্ষক ব্যাতিরেকে হারমোনিয়াম শিক্ষা।’ সঙ্গীত বিষয়ে তার দ্বিতীয় বইটি প্রকাশিত হয় ১৯০৪ সালে। ওই বইয়ের নাম ‘বেহালা শিক্ষা’।

লেখালেখির সঙ্গে বেহালা বাজানো চলতে লাগল তার। চলতে লাগল ছবি আঁকাও। আরো অনেক কিছুই চলতে লাগল। ১৮৯৭ সালে সিটি বুক সোসাইটি থেকে ‘ছেলেদের রামায়ণ’ নামে উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ও অলংকরণ করা সচিত্র বই প্রকাশিত হল। কিন্তু ছাপার মানে সন্তুষ্ট ছিলেন না লেখক। পৈত্রিক জমি অনেকখানি বিক্রি করে সেই টাকায় বিলেতের পেনরোজ কম্পানি থেকে বইপত্র, রাসায়নিক, ক্যামেরা, যন্ত্রপাতি আনিয়ে নিয়ে শুরু করলেন ছাপার উন্নতিসাধনের চেষ্টা। যাত্রা শুরু করল মুদ্রণসংস্থা ‘ইউ রে আর্টিস্ট’।

১৯০৩ সালে প্রাচীন পৃথিবী ও প্রাগৈতিহাসিক জীবজন্তুদের নিয়ে ছোটদের জন্য ‘সেকালের কথা’ প্রকাশিত হলো। ‘ছেলেদের রামায়ণ’ নতুন করে প্রকাশিত হলো ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে বের হল ‘ছেলেদের মহাভারত’। ১৯০৯ সালে ‘মহাভারতের গল্প’। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় গ্রামবাংলার মা ঠাকুমাদের মুখে মুখে প্রচলিত বেশ কিছু গল্প একত্রে সংগ্রহ করে লেখা ‘টুনটুনির বই।’ ১৯১০ সালে ছেলে সুকুমারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রাখলেন ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’। ১৯১১ সালে এই ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে বের হল কবিতা আকারে ‘ছোট্ট রামায়ণ’।

১৯১৩ সালের গ্রীষ্মকালে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে প্রকাশিত হল ছোটদের জন্য ঝকঝকে পত্রিকা ‘সন্দেশ।’ যা নিজস্ব মহিমায় আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে বাংলা শিশু সাহিত্যের আসরে। ১৯১৫ সালে গিরিডিতে ডায়াবেটিস রোগভোগে ওপারে পাড়ি জমানোর আগ পর্যন্ত সন্দেশের বত্রিশটা সংখ্যার সম্পাদনা করে যেতে পেরেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর। এই সন্দেশেই ১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয় উপেন্দ্রকিশোরের শেষ উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম ‘গুপিগাইন বাঘা বাইন’।

কখনো রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়াননি উপেন্দ্রকিশোর। কেবল বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও স্বদেশি আন্দোলনের প্রবল জোয়ারে ভেসেছিলেন। ১৯০৫ সালের কথা। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বিশাল এক শোভাযাত্রা যাচ্ছিল। নেতৃত্বে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। হাঁটতে হাঁটতে সবাই গাইছেন, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল।’ খোল বাজাচ্ছিলেন দীনু ঠাকুর। ঘরের জানালা দিয়ে দেখলেন উপেন্দ্র। আর দেখেই নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি। নিজের বেহালাখানা বাজাতে বাজাতে শরিক হয়ে গেলেন ওই শোভাযাত্রায়। এছাড়া টাউন হলের ঐতিহাসিক অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানের সঙ্গে বেহালা বাজিয়েছিলেন।

শুধু বেহালা বা বাঁশি নয়, নানারকম বাজনা বাজাতে পারতেন উপেন্দ্রকিশোর। সেতার, পাখোয়াজ, হারমোনিয়াম…সব। তবে সবকিছুর মধ্যে বেহালাই ছিল তাঁর প্রিয়। অসম্ভব প্রিয়। বেহালায় তাঁর হাত ছিল অসাধারণ। এতটাই অসাধারণ যে, রবীন্দ্রনাথও উপেন্দ্রকিশোরের বেহালাসুরে মুগ্ধ ছিলেন। সময় পেলেই বেহালা শুনতে হাজির হয়ে যেতেন উপেন্দ্রকিশোরের ২২ নং সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে। এ ছাড়া প্রতি বছর জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে উৎসবের সময় রবীন্দ্রনাথের নতুন গানের সঙ্গে বেহালা বাজাতেই হতো তাঁকে।

সবসময় বেহালা ছিল তাঁর সঙ্গী। যেখানেই যেতেন, সেখানেই বেহালা সঙ্গে নিতে ভুলতেন না। তা সে, হাওয়া বদলের জন্য গিরিডিই হোক, কিংবা কোনো স্কুলের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানই হোক, অথবা বিয়ে বা সভা-সমিতিই হোক। স্বজন-পরিজনদের নিয়ে বছরে অন্তত একবার ঘুরতে যেতেন। যথারীতি সঙ্গে বেহালাও থাকত। ময়মনসিংহের মসুয়ায় দেশের বাড়ি ছাড়াও কখনো পুরী, কখনো দার্জিলিং, চুনার বা মধুপুর যেতেন। এই নিয়ে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনি ‘পুরী’, ‘আবার পুরী’ ছাপা হয়েছিল শিবনাথ শাস্ত্রীর ‘মুকুল’ পত্রিকায়। বেড়াতে গিয়ে জলরঙে বা তেলরঙে ছবি এঁকেছেন। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ আর ‘চুণার দুর্গ’ ভ্রমণ-পর্বের দুটি বিখ্যাত ছবি। চুনার দুর্গ ভ্রমণ ছবিটা তিনি উপহার দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। ১৩০৭ বঙ্গাব্দে শিলাইদহে বেড়াতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের পড়ার ঘরে ছবিটি দেওয়ালে টাঙানো দেখেছিলেন যতীন্দ্রনাথ বসু। ছোটদের জন্য রবীন্দ্রনাথ যুক্তাক্ষর বর্জিত
কবিতা ‘নদী’ প্রকাশ করলে উপেন্দ্রকিশোর সাদা-কালোয় এই বইটির জন্য সাতটি ছবি এঁকে দিয়েছিলেন।

পুত্র সুবিমল রায় জানিয়েছেন, ‘ছেলেবেলায় আমরা তাঁর সঙ্গে দার্জিলিং গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম যে বাবা ছবি আঁকতে আঁকতে মধ্যে মধ্যে পিছিয়ে এসে শান্তভাবে ছবিটার দোষ-গুণ দেখছেন, আবার এগিয়ে ছবির কাছে গিয়ে দরকার বুঝে কয়েকটা দাগ বা টান বা একটু তুলির কারুকার্য জুড়ে দিয়ে ছবিটাকে আরো সুন্দর করে তুলছেন। ছবির চেয়ে বাবার সেই চেহারাটাই বেশি মনে পড়ে- কী শান্ত, সজীব আনন্দময় সে চেহারা। গিরিডিতে শালবনের দিকে তাকিয়ে তিনি যখন ছবি আঁকতেন তখন তাঁকে দেখে মনে হত যেন তপোবনের একজন মুনি।’

গিরিডিতে ব্রাহ্মসমাজের ছেলেমেয়েদের জন্য রবিবার বিকেলে নীতিশিক্ষা বিদ্যালয় চালু ছিল। ওখানে যতদিন ছিলেন, প্রত্যেক রোববার বেহালা নিয়ে হাজির হতেন উপেন্দ্র। বেহালা বাজাতে বাজাতে ছেলেমেয়েদের নীতিমূলক গল্প শোনাতেন। তারপর বেহালা বাজিয়ে গান শোনাতেন।

গিরিডি কিংবা যে কোনো জায়গায় তাঁকে পেলে শিশুরা আনন্দে মেতে উঠত। গিরিডিতে থাকার সময় রোজ বিকেলে বেড়াতে যেতেন। সঙ্গে বিশ-পঁচিশজন ছেলেমেয়ে থাকতই। বয়সের বিশাল পার্থক্য থাকার পরও মনে হতো তিনি যেন শিশুদের সমবয়সী।

একটা খেলা তাঁর খুবই প্রিয় ছিল। খেলাটার নাম তিনিই দিয়েছিলেন ‘যষ্টিহরণ’। লাঠি চুরি করা। লাঠিটা থাকত তাঁরই। কুড়ি-পঁচিশ হাতের একটা চক্র করা হত বালির উপর দাগ কেটে, তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে পুঁতে রাখা হতো তাঁর হাতের লাঠিটা। একজন হতো পাহারাওয়ালা। তিন হাত দূর থেকে পাহারাওয়ালা লাঠি পাহারা দেবে। অন্যরা সে লাঠি চুরি করার চেষ্টা করবে। লাঠি চুরি করতে গিয়ে পাহারাওয়ালা যদি চক্রের ভিতর কাউকে ছুঁয়ে দেয়, তবে সে-ই হবে নতুন পাহারাদার। আর কেউ যদি লাঠি চুরি করতে পারে, তাহলে শাস্তি পাবে পাহারাদার। এ খেলায় উপেন্দ্রকিশোর নিজেই থাকতেন বিচারক। শাস্তি কিন্তু হতো খুব মজার- ষোলবার জোরে জোরে লাফানো। আর কেউ যদি লাফাতে না চাইত, তবে গান গাইতে হতো। উপেন্দ্রকিশোর বেহালা বাজাতেন, আর শাস্তিপ্রাপ্ত শিশু- কিশোররা গান গাইত।

একবার গিরিডিতে ভয়াবহ বোলতার উৎপাত শুরু হলো। সারাদিন কানের কাছে ভনভন, খাবারের উপর ভনভন তো করেই, বোলতার কামড়ে সবাই অস্থির। একদিন সকাল বেলা একদল ছেলেপুলে এলো উপেন্দ্রকিশোরের কাছে। উপেন্দ্রকিশোর তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ ভাইপো হিতেন্দ্রকিশোরের কণ্ঠ শুনতে পেয়ে ডাক দিলেন উপেন্দ্রকিশোর। ডেকে বললেন, ‘জেঠু, একটা বোলতা তো আমায় মেরে দিতে হচ্ছে, কিন্তু দেখো ওর গায়ের কোনো অংশে যেন আঘাত লেগে কোনো রকম জখম না হয়।’

কাজটা পেয়ে হিতেন্দ্রকিশোরের নিজেকে ‘হিরো’ মনে হলো। সমবয়সী সুধীরকে নিয়ে কৌশলে একটা বোলতা ধরে ফেললেন। দেশজয়ের উৎসাহে সেই বোলতা দিলেন জেঠা উপেন্দ্রকিশোরকে। বোলতাটাকে হাতে নিয়ে পরীক্ষা করলেন উপেন্দ্রকিশোর। তারপর ‘সাবাস’ বলে হিতেন্দ্রকিশোরের পিঠ চাপড়ে দিলেন। পরের মাসে ‘সন্দেশ’ পত্রিকা উল্টাতেই অবাক হয়ে গেলেন হিতেন্দ্র। উপেন্দ্রকিশোরের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নাম ‘বোলতা’।

মিষ্টি করে কথা বলতেন উপেন্দ্রকিশোর। ছোট-বড় সবার সঙ্গেই তাঁর ব্যবহার ছিল সমান মিষ্টি। তবে কেউ অভদ্রতা করলে চমৎকার করে ভদ্রতা শিখিয়ে দিতেন। একবার একটা কাজে পোস্ট অফিসে গিয়েছেন উপেন্দ্রকিশোর। কিন্তু পোস্টমাস্টার ছিলেন বড্ড ঢিলে। কাজে যেমন ঢিলেঢালা, ব্যবহারও তেমনি তিরিক্ষি মেজাজের। সামান্য কাজে এতই দেরি করেন যে, লোকজন অধৈর্য হয়ে যায়। পোস্টমাস্টারের কাছে গিয়ে নরম সুরে তাঁর কাজ করে দেওয়ার অনুরোধ করলেন উপেন্দ্রকিশোর। ব্যস, অমনি দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠলেন পোস্টমাস্টার, ‘দেখছেন তো মশাই কাজ করছি, আমার কি চারটে হাত?’

শান্ত গলায় উপেন্দ্র বললেন, ‘কী জানি মশাই, বয়েস তো অনেক হয়েছে, অনেক দেশে ঘুরেছিও, কিন্তু চারটে হাতওয়ালা পোস্টমাস্টার তো কখনও কোত্থাও দেখিনি। তবে দুটো হাত দিয়েই তাঁরা অনেক তাড়াতাড়ি কাজ করেন।’

সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের সবাই হেসে উঠল। আর পোস্টামাস্টারও লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি কাজ করতে লাগলেন।

আরেকবার এক বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে গেছেন উপেন্দ্রকিশোর। বামুন ঠাকুরেরা খাবার পরিবেশন করছে, বাড়ির কর্তা দাঁড়িয়ে সেটা তদারক করছেন। নামী-দামী লোকরা খুব আদর পাচ্ছেন। ওদিকে নিমন্ত্রিত গরিবরা পাচ্ছেন অনাদর-অবহেলা। সদ্যভাজা গরম লুচি নিয়ে বামুন ঠাকুরেরা হাঁক দিতে দিতে যাচ্ছিলেন ‘গরম লুচি’ ‘গরম লুচি’।

হাঁক শুনে একজন বললেন, ‘ঠাকুর আমাকে দুখানা গরম লুচি দাও তো?’

এটা শুনে অমনি বাড়ির কর্তা বলে উঠলেন, ‘তা বলে পাতের ঠান্ডা লুচিগুলো ফেলে দেবেন না যেন!’ এরপর উপেন্দ্রকিশোরের কাছে এসে বাড়ির কর্তা অনুনয়-বিনয় করে বললেন, ‘আপনাকে দুখানা গরম লুচি দিক?’ উপেন্দ্রকিশোর বিনীতভাবে জবাব দিলেন, ‘কিন্তু আমার পাতের ঠান্ডা লুচি যে এখনও শেষ হয়নি!’

ভীষণ লজ্জা পেলেন গৃহকর্তা। এরপর সবাইকে সমান যত্নে খাওয়াতে লাগলেন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ একেবারেই পছন্দ করতেন না উপেন্দ্রকিশোর। কষ্ট পেতেন। সে কষ্ট ভোলার জন্য বেহালা তুলে নিতেন হাতে। যখন তখন। হাতে বেহালা থাকলে পুরো দুনিয়া ভুলে যেতেন। মানুষও মুগ্ধ হয়ে তাঁর বাজনা শুনত।

একবার বড় মেয়ে সুখলতা রায় প্রচন্ড অসুস্থ হলেন। এতটাই অসুখ যে, যন্ত্রণায় ঘুমই আসত না। ডাক্তার অবশ্য ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হতো না। এ অবস্থায় এক রাতে বেহালা হাতে নিলেন উপেন্দ্রকিশোর। মেয়ের শয্যাপাশে বসে নিবিষ্ট চিত্তে বেহালা বাজাতে শুরু করলেন। আর কী অবাক! বেহালা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লেন সুখলতা। এরপর থেকে প্রতিদিন যন্ত্রণাক্লিষ্ট মেয়েকে বেহালা বাজিয়ে ঘুম পাড়াতেন উপেন্দ্রকিশোর।

চিরজীবন এই বেহালা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। জীবনের শেষ দিকে এসে চরম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আর বেশিদিন থাকবেন না। তবে সাহসের সঙ্গে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। এর মধ্যেই বিলেতে প্রিন্টিং টেকনোলজিতে ট্রেনিং নিয়ে ডিগ্রি লাভ করেছেন পুত্র সুকুমার রায়। দেশে ফেরার পর পুত্রকে বিয়েও দিয়েছেন। ১০০ নম্বর গড়পার রোডের বাড়ি ততদিনে তৈরি হয়ে গেছে। সবাই সেখানেই বসবাস করাও শুরু করেছেন।

ছোটভাই সুবিনয় রায়ের সঙ্গে পত্রিকা আর ছাপাখানার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন সুকুমার রায়। উপেন্দ্রকিশোর যেন নিশ্চিন্ত হলেন।
কিছুদিন ধরে রোগশয্যা নিয়েছেন উপেন্দ্রকিশোর। ডায়াবেটিস রোগের শিকার হয়ে গিয়েছিলেন। তখন এ রোগের একটাই ওষুধ ছিল। ওষুধটা তৈরি হতো জার্মানিতে। ওই ওষুধ নিলে রোগটি আর বাড়ত না। কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে ওষুধ আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

১৯১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর। ঘুম থেকে উঠে বেহালা বাজাতে লাগলেন উপেন্দ্রকিশোর। হঠাৎ জানালায় চোখ পড়তেই অবাক হয়ে গেলেন। একটা পাখি ঘরের জানালায় এসে বসল এবং কিছুক্ষণ শব্দ করে উড়ে চলে গেল। পাখিটা কি তাঁর বেহালার করুণ সুর শুনতে এসেছিল? কে জানে।

বেহালা বাজানো থামিয়ে হাসিমুখে স্ত্রী বিধুমুখীর দিকে তাকালেন উপেন্দ্রকিশোর। জানতে চাইলেন, ‘পাখিটা কী বলে গেল শুনেছো?’

‘কী বলে গেল?’

‘বলল, এই পথে, এই পথে, তারপর উড়ে গেল।’

পরদিন।

১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর।

উপেন্দ্রকিশোরের শয্যার উপর পড়েছিল একটা প্রাণহীন দেহ আর সেই বেহালা। বেহালাটা তখন অসহায়। কারণ বেহালায় সুর তোলার জন্য দেহটায় তখন আর প্রাণ ছিল না। পাখির দেখানো পথেই প্রাণটা উড়ে চলে গেছে। চিরদিনের জন্য।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর