অন্তরীণ
২ জুন ২০২০ ২৩:২২
আমি আমার বাবাকে খুন করবো!
তবে নিজের হাতে না।
কারণ মিলনের মতো বন্ধু থাকলে নিজ হাতে খুন করা লাগে না।
মিলন এই লাইনের পেশাদার। দাপুটে। দক্ষ! পুলিশের খাতায় টাইটেলও আছে- মুরগি! মুরগি মিলন নামে ‘খ্যাত’ সে। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই নামটাম ছাপা হয়। অনেক খুনের মামলায় আসামি মিলন। ওয়ান্টেড। কত টাকার পুরস্কার আছে যেন ওর নামে। অবশ্য তাতে নাকি ‘কিস্যু’ ছেঁড়া যায় না মিলনের! নিজেই এই কথা বলে বেড়ায়। পুলিশের সঙ্গেও খুব দহরম-মহরম তার।
মিলন ওস্তাদ লোক। কাজ করে গ্যারান্টি সহকারে! বিফলে মূল্য ফেরত। এখন পর্যন্ত ব্যর্থতার কোনো রেকর্ড তার নামে শোনা যায়নি। পেমেন্ট নিয়ে নো ধুনফুন। অ্যাডভান্স দিতে হয়। কয়েক মাস আগে শিডিউল নিয়ে রাখা লাগে অ্যাডভান্স দিয়ে।
লোকে সমীহ করে মিলনকে। চাহিদা ভালো তার। সেই চাহিদাসম্পন্ন মিলন আমার বাবাকে খুন করবে বলে নিজের টাইট এবং অ্যাডভান্স শিডিউল ভেঙে ফেলল। অথচ এই খুন করার জন্য সে আমার কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিকও নেবে না!
কারণ?
আগেই বলেছি- মিলন বন্ধু আমার।
বন্ধু আমি মুরগি মিলনের।
মিলনের সঙ্গে পরিচয় রমনা পার্কের সামনে। সাত-আট বছর আগে, রাত গভীরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি মাত্র। প্রথম বর্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না, তবে টিএসসিতে নিয়মিত আড্ডা মারা হয়। ছবির হাটে গাঁজা! সেই তখনকার সময়! আশ্চর্য। ঘোরলাগা। ময়ূরাক্ষী জল মানে পিকক বারের মদ! রাত-বিরেতে পুরান ঢাকার রাস্তায় ঘুরপাক, দল বেঁধে। কারণ ছাড়া। বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। মা রাগ করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। রাতে দরজা খোলেন ঘুমভারী চোখ নিয়ে। কিন্তু মুখে রা নেই। অভিমানে। ছেলেরা মায়েদের এইসব অভিমান বোঝে?
বাবা তো বাবা-ই! ভাবনাহীন চিরদিন। কিচ্ছু নিয়ে কোনো ভাবনাই নেই তার। একটুও না।
সেই আশ্চর্য সময়ের ঘোরলাগা রাত নিঝুম। ফিরছি বাড়ি। জলে-ঘাসে ঝাপসা সময়। শাহবাগ মোড় থেকে রিকশা ঢাকা ক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে উড়িয়ে নিচ্ছে!
বৃষ্টি ঝরছে তখন।
ঝিরঝির।
ঝিরঝির।
রাতবেলার ভবঘুরেগুলোও উধাও। রাস্তা খালি। ল্যাম্পপোস্টগুলোর নিচে নিচে গভীর হলুদ। এমন আলোয় অন্ধকার কাটে না। গভীর হয়। রহস্য-বিষাদে। হুড ফেলেই বসে আছি। বৃষ্টির পানি জমে পাপড়িতে। চোখ ভারী হয়ে আসে। ঘোলা ঘোলা দেখি সব। যতবার পলক ফেলি, জমে থাকা পানি গাল বেয়ে নেমে আসে। কান্নার মতো।
সত্যি সত্যি কাঁদছি না, তবু বিষন্ন লাগে। রিকশাওয়ালা একটা পলিথিনে নিজেকে প্যাকেট করেছে। বৃষ্টি থেকে বাঁচবে বলে। পলিথিনে বৃষ্টি পড়ছে, পুটপুট করে শব্দ হচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ মনে হচ্ছে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ আসছে।
রমনা পার্কের ফুটওভার ব্রিজটার গোড়ায় জমাট অন্ধকার। রিকশা ব্রিজের নিচে ঢুকলো, অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো তিন না চার ছায়ামূর্তি। পথ আটকে দাঁড়াল। চেহারা অবশ্য দেখা যায় না। কোথাকার আলো ঝিলিক দিয়ে উঠলো একজনের হাতের কিছু একটায়। রিকশাওয়ালা চমকে গিয়ে ব্রেক কষে দেয় জোরে। ঝাঁকুনি খেয়ে রিকশা থামলো। আমি তখনও কিছু বুঝে উঠিনি। তিন ছায়ামহৃর্তি রিকশার দু’পাশ থেকে ঘিরে ফেলল আমাকে। তিনটার একটা ছিল মিলন। তখনও সে ‘মুরগি’ টাইটেল প্রাপ্ত না। হাতে ছিল ক্ষুর সে রাতে। অন্য একজনের পাতলা চকচকে চাপাতি এবং একজনের পিস্তল। নকল নাকি কে জানে!
ঘোরলাগা চোখের পাতা খুলি টেনে। এদিক-সেদিক তাকাই। ছায়ামূর্তিদের মুখের দিকে তাকাই। চার ছায়ার বাকিটা রিকশাওয়ালার পেটে কিছু চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যস্ত ভঙ্গিতে চারপাশে দেখছে। চাপা গলায় তাড়া দিচ্ছে। রিকশাওয়ালা ঘাড় ফেরানোর চেষ্টা করে গালে চড় খেল। তিনজনের তিন হাত তখন আমার প্যান্ট-শার্টের পকেট হাতড়াচ্ছে!
কাঁপা কাঁপা হাত।
কারও মুখে কথা নেই।
ওরা হাড়তায়, আমি দেখি।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বুঝে উঠি- ছিনতাই হয়ে যাচ্ছি!
কিভাবে কি ঘটেছিল এখনো জানি না। ঝিমুনি কাটলো না বাড়লো এখন আর মনে নেই। না ভেবেই বাম হাতের এক ঝটকায় ছিটকে ফেললাম চাপাতিঅলাকে। পিস্তলঅলা কিছু বোঝার আগেই চোয়ালে কিল খেল আমার ডান হাতের। ডান পাশে পায়ের সামনে মিলন, লাথি কষাতে গিয়ে হুড়মুড় করে উল্টে পড়ি নিজেই, মিলনের শরীরের ওপর। তাল হারিয়ে সে চিৎপটাং রাস্তায়। ভেজা রাস্তা।
রিকশাওয়ালার পেটে চাপাতি ধরেছিল যে, সেই ছেলেটা হিরুঞ্চি! সম্ভবত। কিংবা ট্যাবলেটখোর। কাঁপছে থরথর করে। কাঁপা হাতে ছেলেটা কোপ বসানোর চেষ্টা করল আমার পিঠে। আমি কিছু না দেখেই গড়িয়ে একপাশে সরে গেছি। মিলনের ওপর থেকে। মিলন সামলে ওঠার সুযোগ পায় না একটুও। কোপ লাগল তার বুকে, বাম পাশে। বিকট চিৎকার করল মিলন। কোপ দিয়েছে যে, তার কাঁপুনি বেড়ে গেছে। ধাক্কা আর কিল খাওয়া দু’জন ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে, কিছুটা পাথর হয়ে গেছে। মিলনের অবস্থা দেখে দিশেহারা। এমন কিছু তো আশা করেনি ওরা। কি করণীয় এখন বুঝতে পারছে না। আমিও পারছি না।
রিকশাওয়ালা ততক্ষণে হুশ করে রিকশা টেনে মৎস্যভবনের দিকে হাওয়া।
কাছেপিঠে কোথাও বাঁশি বাজল।
টহল পুলিশের বাঁশি যে!
কিল খাওয়াজনও খেয়াল করেছে। চিৎকার করল চাপা গলায়, ‘পুলিশ! পুলিশ!’
তিনজন দৌড়ে মৎস্যভবনের দিকে গেল। বায়ে মোড় নিয়ে পালালো কাকরাইল মসজিদের দিকে। মিলনের কথা ভুলে গেছে যেন। মিলন উঠে বসার চেষ্টা করল। পারলো না। চাপা আর্তনাদ করে আবার রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল।
আমি হতভম্ব। মিলনকে দেখছি। রক্তে বুক ভেসে যাচ্ছে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। ক্ষুর পড়ে আছে মিলনের পাশে।
খুব কাছে বাঁশি বাজল এবার।
মিলন আবার চেষ্টা করল। এবারও পারল না।
তারপর তিনজন পুলিশ যুক্ত হলেন ঘটনায়। নিরাপদ দূরত্ব থেকে তারা সতর্কতার সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করলেন। তিনজনের মধ্যে দুইজনের হাতে লাঠি। একজনের থ্রি নট থ্রি রাইফেল। তাক করে আছে মিলন-আমার দিকে। আমি নিশ্চিত এই রাইফেল থেকে গুলি বের হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
‘ঘটনা কি এইখানে?’
আমি জবাব খুঁজে পাই না। মিলনের দিকে তাকাই। জবাই করা গরুর নিষ্প্রাণ চোখে যেমন মায়া মাখা থাকে, তেমন মিলনের চোখেও!
পুলিশরা এগিয়ে আসেন। মিলন এবং আমাকে দেখেন। পরখ করেন। তারপর আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘ওই, মুখে কি ঢুকায়া রাখসো? কথা নাই মুখে। কেস কি?’
এই ছেলে একটু আগেই তো ছিনতাই করতে চাইছিল আমাকে। একে পুলিশেই দেওয়া উচিত। এমন ভাবলাম। কিন্তু হয়ে গেল অন্য কিছু। পুলিশকে বললাম, ‘আসলে…আমরা…মানে আসলে ছিনতাইকারী ধরছিল আমাদের।’
পুলিশ তিনজন আরেকবার মিলন এবং আমাকে খুঁটিয়ে দেখেন। নিজেরা চোখাচোখি করেন। একজন ক্ষুর নেড়ে দেখেন লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে । তারপর মিলনের দিকে লাঠি তাক করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এইটা কেডা? রাস্তায় শুইয়া রইসে ক্যা?’
‘আমার বন্ধু’ আমি বলি নির্বিকার কণ্ঠে।
মিলন নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারে না যেন। আমার দিকে তাকিয়ে থাকে ড্যাবড্যাব করে। ব্যথা বোধহয় ভুলে গেছে।
‘ছিনতাইকারী কই?’
পুলিশরা এদিক-সেদিক তাকিয়ে ছিনতাইকারী খোঁজেন!
‘পালিয়ে গেছে। বাঁশি শুনে।’
‘এতো রাইতে এইখানে আইসো কি করতে? নাম কি? থাকো কই? কি করো?’
আমি বৃত্তান্ত জানাই। একটু সত্য, বাকিটা বানিয়ে।
‘এইটা? এর নাম কি?’
‘আমার বন্ধু। আমরা একসাথে পড়ি। সেলিম ওর নাম। ’
মিলন কিছু বলে না।
তারপর আমি একটা গল্প ফেঁদে শোনাই পুলিশদের- পুরান ঢাকার বৌ-ভাত থেকে ফিরছি। ছিনতাইকারী পথরোধ করল। কেড়ে নিতে চাইলো। সেলিম, মানে মিলন বাধা দেয়। তাকে কোপ দিয়ে পালায় ছিনতাইকারী।
গল্পটা বিশ্বাসযোগ্য হয় পুলিশের কাছে। এমন ঘটনায় হয়তো অভ্যস্ত তারা। কিংবা ক্লান্ত। একজন উপদেশ দিলেন, ‘মালের চাইতে জানের দাম বেশি। সাহস দেখাইতে গেলে কোপ খাওন লাগে।’
অন্যজন নির্বিকার গলায় বললেন, ‘বন্ধুরে হাসপাতাল নিয়া যাও। রক্ত বেশি পড়লে কিন্তু মইরা যাইবো। রমনা থানাত জিডি লেইখো গিয়া।’
অন্যজন সোজাসাপ্টা বললেন, ‘পকেটে ট্যাকা আছে না? পঞ্চাশটা ট্যাকা দিয়া যাও। রাস্তায় কোনো ঝামেলা হইলে আমগো কথা কইও।’
বৃষ্টি বাড়ছে। বহুক্ষণ পর রিকশার ঘণ্টি শুনি। মৎস্যভবনের দিক থেকে তুমুল গতিতে একটা খালি রিকশা যাচ্ছে শাহবাগের দিকে। রাস্তার অন্যপাশ দিয়ে। হঠাৎ পুলিশ, রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষ দেখে ভড়কে গেল রিকশাওয়ালা। গতি বাড়াতে যাচ্ছিলো, একজন পুলিশ চেঁচিয়ে ডাকলেন, ‘ওই, এই দিক আয়।’
রিকশাওয়ালা ভড়কেছে, তবু পুলিশের নির্দেশ অমান্য করার সাহস পায় না। মিলন সব দেখছে, রাস্তায় পড়ে থেকে। রিকশাওয়ালার সহযোগিতায় তাকে রিকশায় তোলা হলো। সোজা বসতে পারছে না মিলন। আমার শরীরে এলিয়ে পড়তে পড়তে নিচু গলায় বলল সে, ‘আমার নাম সেলিম না, মিলন।’
আমি মিলনকে আঁকড়ে ধরলাম। রিকশা চলল ঢাকা মেডিকেল অভিমুখে। পেছনে পুলিশ তিনজন দাঁড়িয়ে রইলেন বৃষ্টিতে। নিজেরা কথা বলছেন।
রাত কয়টা বাজে?
পকেটে মোবাইল আছে। কিন্তু বের করা যাচ্ছে না। মিলন জ্ঞান হারিয়েছে। আরও এলিয়ে পড়েছে। আমিও শক্ত করে আঁকড়ে ধরি। রিকশা উড়ছে। রিকশাওয়ালা বারবার পিছু ফিরে দেখছে। চোখে এখনও আতঙ্ক বেচারার।
আমার টি-শার্ট ভিজে যাচ্ছে মিলনের রক্তে।
তারপর মিলন তো বন্ধু হয়ে গেল! মাস্টার্স শেষে প্রাইভেট ভার্সিটিতে লেকচারার হলাম। এই দিনগুলোতেই মিলন ‘মুরগি মিলন’ হয়ে গেল! লাইন দু’জনের আলাদা, কিন্তু বন্ধুত্ব টিকে থাকলো। আমি বরাবর তন্ধা-সুবোধ ধরনের। এলাকার বাইরে জল-ঘাস সব চলে, এলাকায় কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা পান করতেও দেখে না আমায়। এমন আমার সঙ্গে খুনি মিলনের বন্ধুত্ব হওয়া অস্বাভাবিক যতোটা, বন্ধুত্ব টিকে থাকা তারচেয়েও বেশি। মিলন বিশ্বাস করে, আমার জন্যই সেদিন জীবন বেঁচেছিল ওর। হয়তো কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখে। জীবন বাঁচানোর শোধ দিতে চায় মিলন, যে কোনোভাবে। গত ছয়-সাত বছরে সুযোগ আসেনি। এবার এসেছে। আমার বাবাকে মেরে মিলন তার জীবন রক্ষার দায় শোধ করবে!
ছেলের হাতে বাবা খুন- এমন ঘটনা বিরল না, তবে বিস্ময়কর। সেই বিস্ময়কর সিদ্ধান্তটা আমাকে নিতে হলো। আর উপায় কি! বাবা প্রেমে পড়েছেন। মেয়েটা বয়সে আমার চেয়েও ছোট। প্রেম খারাপ কিছু না। তাতে আমার কোনো সমস্যাও নেই। বরং বাবা আর ওই মেয়ের সম্পর্কের খবর অন্য অনেকের আগে জানি আমি।
চাকরি শুরুর পর ছবির হাটে নিয়মিত যাওয়ার সময় হয় না। সেদিন বিকেলের ক্লাস ক্যানসেল। আমি আগেভাগে ছুটি পেয়ে বিকেলের মরা রোদ নিয়ে ছবির হাটে হাজির। পরিচিতরা তখনো এসে জড়ো হয়নি। উদ্যানের লেকের পেছনে টুটুলের গাঁজার আখড়া। দুটো পুরিয়া কিনে নিজেই সিগারেট বানাই। ধরিয়ে একটা টান দিয়ে পিছন ফিরতেই মুখোমুখি হই বাবার।
বাবার সঙ্গে কম বয়সী মেয়ে একটা। দু’জন ঘনিষ্ঠভাবে হাত ধরাধরি করে হাঁটছিলেন। এমন অবস্থায় নিজের ছেলের সামনে পড়ে গেলে যেকোনো বাবারই চমকানোর কথা। আমার বাবা চমকালেন না কিংবা চমক চাপা দিলেন।
আমিও চমকাই না। অথচ আমারও নিশ্চয় চমকানোর কথা। ছেলেবেলা থেকে বাবা মাতাল, জুয়াড়ি, দায়িত্ব এবং কান্ডজ্ঞানহীন একজন মানুষ। তার অপরিণামদর্শিতার ধকল আমাকেও পোহাতে হয়েছে। মা শক্ত হাতে না ধরে রাখলে, আমাদের পরিবার ভেসে যেত!
বাবার নানা অপকর্মের প্রায় পুরো বৃত্তান্ত জানলেও নারীঘটিত বিষয়ে তার সম্পর্কে কিছু আগে শুনিনি। গাঁজার নেশাতেই হোক বা অন্য কোনো কারণে, আমার মনে হয়, এটাও তো স্বাভাবিক। আমার হাতে যে গাঁজা মেশানো সিগারেট জ্বলছে, তা নিয়েও বেশি চিন্তা হয় না। বাবা যে হাতে মেয়েটার হাত ধরে, আমি সেই হাতের দিকে তাকাই একবার। আরেকবার বাবার চোখে। বাবার চোখ আমার হাতের দিকে, যে হাতে সিগারেট।
আমি সিগারেট ফেলি না।
বাবাও হাত ছাড়েন না।
কয়েক মুহুর্ত কাটে অবশ অনুভূতিতে। তারপর পাশ কাটিয়ে গেলাম। কোনো কথা বলিনি আমি। বাবাও না!
এমনকি তারপর এই ঘটনা নিয়ে কোনো কথাই বলিনি। চেপে গিয়েছি।
আগুন আর প্রেম তো চাপা থাকে না! বাবার প্রেমলীলা প্রকাশ্য হয়েছে। এই নিয়ে সংসারে অশান্তি এখন। মা-বোনেরা পথে বের হয় না, লোকে নানা কথা বলে। একদিন মা কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘এমন একটা লোকের সাথে এতোগুলো দিন সংসার করলাম। ভাবলেও ঘেন্না হয়। তোর বাবা কিভাবে এমন হলো রে?’
আমি কিভাবে বলবো! বাবা নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে পরামর্শ করে এমন হননি। তবু মায়ের মাথায় হাত বুলাই। বলি, ‘কেঁদো না। কে কি দেখেছে! গুজব মনে হয়।’
মা হঠাৎ ক্ষেপে ওঠেন, ‘বাজে বকবি না। বাপের ওকালতি আমার কাছে করবি না। তোর বাপ বদলে গেছে। সে সারাদিন মোবাইলে কথা বলে কানিজের (বাবার প্রেমিকার নাম কানিজ) সঙ্গে। রাতেও বারান্দায় গিয়ে কথা বলে। আমি কয়েক দিন দেখেছি। দোকানেও যায় না ঠিকমতো। নানা জায়গায় পরিচিত লোকজন ওই মেয়ের সঙ্গে তোর বাবাকে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াতে দেখে।’
আমি এবারও উত্তর পাই না। চুপ থাকি। মা আবার গুমরে কাঁদেন, ‘মেয়ে দুটো বড় হচ্ছে, দু’দিন পর বিয়ে দিতে হবে। মেয়ের বাপের চরিত্র নিয়ে এমন কথা শুনলে মেয়েগুলোকে কোনো ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে পারবি?’
মায়ের কান্নার গতি বাড়ে। কান্নার দমকে শরীর কেঁপে কেঁপে ওঠে। মা যেন একটা অভিমানী ছোট্ট রাজকন্যা হয়ে যায়। আর আমি হই কন্যার পিতা- রাজা! রাজা হয়ে আমি আমার রাজকন্যা মা’কে কাঁদানোর অপরাধে নিজের বাবাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। একদম হুট করে। খুব চিন্তাভাবনা করে নেওয়া সিদ্ধান্ত না বটে, তবে রাগের মাথায় নেওয়াও নয়।
জীবনের যতো আনন্দ, সবকিছুতেই মা। বাবা অনুপস্থিত তো বটেই, বরং তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভোগান্তি, অসন্তুষ্টি আর বালকবেলার আফসোসের দীর্ঘশ্বাস শুধু। আমি বাবাকে ভালোও বাসি না। তার ওপর কখনোই কোনো বিরক্তি আমার ছিল না। মায়ের কান্না আমাকে এলোমেলো করে দেয়।
বাবাকে খুন করতেই হবে!
কিভাবে? আমি তো খুন করতে জানি না। মিলন যে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একজন পেশাদার খুনি; সে কথা শুরুতে মাথায় আসেনি। অনেকক্ষণ ভাবার পর খেয়াল হলো। অথচ সেই রাতের পর থেকে মিলনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নিয়মিত। নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য ছিনতাই করতে নামা মিলন, আমার চোখের সামনেই মুরগি মিলন হয়ে গেল! মিলনের একান্ত আস্তানায় মদ্য পান করতে করতে ওর মুখে ভয়ংকর সব খুনের কাহিনীও শুনেছি। কিভাবে একটা লোকের কপালে, দুই চোখের মধ্যখান বরাবর, মাত্র দু’হাত দূর থেকে গুলি ছুড়লো সে। আর একদলা মগজ ছিটকে এসে পড়ল তার চেহারায়- এমন সব গল্প।
সেহেতু মিলনই এই দায়িত্ব পালন করতে পারে।
বুকে ষোলোটা সেলাই লেগেছিল মিলনের। সে রাতে হাসপাতালে নিয়ে নিজ খরচে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। রক্ত ঝরেছিল খুব। রক্তও দিয়েছি। মিলন ও আমার রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ। রীতিমতো বাংলা সিনেমার মতো কাহিনী। তাহলে সিনেমার মতো জীবনেও ঘটে!
খুনের বিষয়টা সিনেমায় যতো সহজ, বাস্তবে তা না। একেকটা খুন করতে মাস খানেকেরও প্রস্তুতি লাগে। মিলন বলেছে। কাউকে খুন করার আগে মিলনের প্রস্তুতি পর্ব দেখেছিও। অনেক লোকের মৃত্যুর আগে থেকেই জানি, লোকটা এই দিন মরে যাবে! মুরগি মিলন তাকে খুন করবে। এতো কিছু জানি, তবু মিলনের নামের আগে মুরগি কোথা থেকে এলো, তা এখনও জানি না। জানতে ইচ্ছেও হয়নি।
ফোন করলাম মিলনকে। রিসিভ করলো নবাব, ‘হ্যালো। কেডা?’
মানুষ যতো বড়ো হয় ততো আত্মনির্ভরশীলতা হারায়! মুরগি মিলন বছর তিনেক ধরে অ্যাসিসটেন্ট পোষে! লাইনের ভাষায়, ডান হাত। মনিবের গরমে সহকারী নিজেকে ক্যাডারজ্ঞান করে। নবাব আমিন নাম, মিলনের ডান হাতের। আমাকে ঠিক সহজভাবে নিতে পারে না। পারার কথাও না। মিলনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা অন্য যে কারো জন্যই খটমট। তবে আমাদের জন্য না।
এমনিতে নবাবকে ঘাটানোর ইচ্ছে হয় না। আজ শীতলগলায় বললাম, ‘নবাব, আমার জানা মতে তুমিও কিছু পড়াশোনা জানো। এবং যেহেতু মিলনের মোবাইলে আমার নাম্বারটা সেভ করা, ডিসপ্লেতে নিশ্চয়ই আমার নামটাও দেখাচ্ছে।’
নবাব আমার গলা শুনে টাশকি খায় বোধহয় । তর্ক করার সাহস পায় না। না-জবাব থাকে।
‘মিলনকে ফোন দাও,’ আমি বললাম।
নবাব চুপ। একটু খচমচ শব্দ শুনি। তারপর গলা শুনি মিলনের, ‘বন্ধু, আছো কেমন?’
এসব আলাপে এখন মন নেই। সরাসরি কাজের কথায় যাই, ‘একটা খুন করতে হবে, মিলন।’
খুনখারাবি যার নৈমিত্তিক পেশা, সেও আমার মুখে খুনের কথা শুনে যেন একটু চমকায়। শারীরিক চমক না দেখা গেলেও, কণ্ঠের বিষ্ময় ঠিকই অনুভব করা গেল। সে আমতা আমতা করে, ‘মানে…বুঝলাম না বিষয়টা…মানে…তুমি আসলে…’
উত্তরের জন্য এতো লম্বা অপেক্ষা ভালো লাগছে না। জিজ্ঞেস করি, ‘মিলন, পারবা কাজটা করতে?’
মিলনের পেশাদারি আঁতে ঘাঁ লাগল হয়তো। কঠিন গলায় উল্টা প্রশ্ন, ‘কেন? তোমার কি মনে হয় পারবো না?’
‘না, তেমন কিছু মিন করি নাই আমি…’
‘এইসব ফোনের কথা না। চইলা আসো সন্ধ্যায়। আলাপ হবে।’
‘আচ্ছা।’
‘পরশু দিন-ই ঘটনা ঘটায়া দিমু,’ নিজস্ব ভঙ্গিতে বলল মিলন।
কেন, কি হয়েছে, মাথা ঠান্ডা কর- এমন কোনো কচলাকচলিতেও গেল না সে। আমি শুধু বলেছি, ‘বাপকে খুন করতে হবে।’
‘কার বাপ?’
‘আমার।’
‘ও, আচ্ছা। ঠিক আছে।’
আর কিচ্ছু জিজ্ঞেস করল না মিলন। ছেলে বাবাকে খুন করাতে এসেছে তাতেও বিকার নেই তার। এমনিতে মদ পরিবেশনের দায়িত্ব নবাব পালন করে। কিন্তু আমি আর মিলন বসলে, মিলন নিজেই দায়িত্ব নেয়। আমাকে একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। আমি গুরুত্ব অনুভব না করলেও গ্রহণ করি। গ্লাস এগিয়ে দিল মিলন। গ্লাস নিলাম। চিয়ার্স করলাম। চুমুক দিয়ে গলা ভিজিয়ে একটা সিগারেট ধরালো মিলন। তারপর-ই জানালো ঘটনা ঘটানোর সময়টা। আমি কিছু বলার আগেই পাশ থেকে কাবাবে হাড্ডি হলো নবাব, ‘পরশু তো শিডুল খালি নাই।’
মিলন কথা বলে না। নবাবের দিকে তাকায়। সিগারেটে আরও একটা টান দেয়।
‘পার্টির চাপ আছে। গাবতলীর ওয়ার্ড কমিশনারের কেসটা পরশু এন্তেজাম করার।’
‘বাতিল কর।’
‘এইটা একটা কথা কইলেন?’
‘পরের সপ্তাহে ফেল নিয়া।’
‘এমনে তো আসলে হইবো না,’ এইটুকু কথা বিড়বিড় করে বলল নবাব।
মিলন বিদ্যুৎ গতিতে উঠে দাঁড়ালো। নবাব কঠিন এক চড় খেয়ে তব্দা।
‘শুয়োরের বাচ্চা! ক্যামনে কি হইবো তোর কাছ থেইকা শিখা লাগবো? এক কথা একশবার কইতে লাগে ক্যা? লাথি দিয়া মাজার হাড্ডি ছুটায়া ফালামু!’ বলতে বলতে নবাবের শার্টের কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল মিলন।
আমি চুপচাপ মদপানে। এই পরিস্থিতিতে কোনো ভুমিকা গ্রহণের প্রয়োজন বোধ করি না। বসে আছি একটা ষোলতলা অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে। কুতুব মিনার রিয়েলস্টেট কোম্পানির বিল্ডিং। কোম্পানির মালিক মিলনের ক্লায়েন্ট। কৃতজ্ঞতা স্বরুপ ছাদের ওপর একটা স্টেক্সশাল ফ্ল্যাট বানিয়ে দিয়েছে সেই লোক। মিলন অবশ্য রেগুলার থাকে না। ঢাকা শহরে তার বেশ কিছু জায়গা আছে থাকার। পালাক্রমে একেকটায় থাকে একেক সময়। এক জায়গায় থিতু হওয়া তার পেশাগত অবস্থান থেকে স্বাস্থ্যকর নয়।
চড় খেয়ে নবাব ছাদের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিলন স্বাভাবিক। যেন কিচ্ছু হয় নাই, এমন ভাব। চুপচাপ-ই বয়ে গেল কয়েক পেগ। আমি কেন বাবাকে খুন করতে চাই, এই বিষয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করি মিলনকে। কারণ দর্শাতে না, শুধু বিষয়টা শেয়ার করার জন্য। মিলন শোনে, কোনো মন্তব্য করে না। আমিও কোনো মন্তব্য আশা করি না সম্ভবত।
জিজ্ঞেস করি, ‘মিলন, তোমার পেমেন্টের হিসাব-নিকাশ তো আমি ঠিক জানি না। কিভাবে কি…’
মিলন খুব আহত চোখে তাকায়। বলে, ‘এইটা কি কইলা বন্ধু? তোমার-আমার ট্যাকার সম্পর্ক?’
‘যা-ই হোক, বিষয়টা প্রফেশনাল…’
‘দূর মিয়া, তোমার হিসাব আলাদা। এমন পরপর ভাবো কেন?’
‘তারপরও…’
মিলন চেয়ার থেকে একটু উঠে আমার কাঁধ চাপড়ে দেয়, ‘থাামো মিয়া, থামো। দেনা-পাওনার হিসাবে আমি-ই বেশি ঋণী। শোধ করার সুযোগ তো দিবা।’
আমার বুকটা কেঁপে উঠল। ভয়-আতঙ্কে না, ভাইব্রেশনে। শার্টের পকেটে মোবাইল বাজছে।
মা কলিং…
রাত কয়টা বাজে! এখন মা ফোন করে কেন?
‘হ্যালো…’
হাউমাউ কান্না ছাড়া শুনি না কিছু। আমার আবার বুক কাঁপল। এবার ভেতর থেকে! নিজের গলাই অচেনা লাগল, খুব সতর্কভাবে বললাম, ‘কান্না থামাও। কি হইসে? হ্যালো!’
‘তোর বাবা,’ এইটুকু বোঝা গেল। বাকি কথা কান্নায় মিলিয়ে গেল। তারপরও আমার বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায়। হু হু করে আমার।
বাকি বৃত্তান্ত জানা গেল তিশা; আমার ছোটবোনটার কাছে। বাবা অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। মোটরসাইকেলে। কদিন আগে একটা সেকেন্ডহ্যান্ড মোটরসাইকেল জুটিয়েছেন। হয়তো তার প্রেমিকা মেয়েটি মোটরসাইকেল চড়তে ভালোবাসে। অ্যাক্সিডেন্টে মেয়েটা মরে গেছে। ঘটনাস্পষ্টই। বাবার সিরিয়াস কন্ডিশন। মাথায় ফ্র্যাকচার। অপরাশেন চলছে, ডাক্তার নাকি আশাবাদী হতে পারছে না। হাসপাতালের ফাঁপা গ্যালারীতে বিলাপ ছড়াতে মা-বোনেরা হাজির হয়ে গেছে। সঙ্গে আরও অনেকে। এসব খবর শুনি আর বুকের ভেতর হু হু বেড়ে যায়। ফাঁকা ফাঁকা লাগে আরও।
মিলন ঘটনা শুনে মুচকি হাসলো। গ্লাসে চুমুক দিলো একটা। লম্বা। তারপর আমুদে গলায় বলল, ‘ভালো তো। ভালো না!
হঠাৎ কেমন মেজাজ খারাপ লাগে। কিছুটা ধমকের সুরে বলি, ‘ভালো মানে?’
গলা শুনে মিলন চমকায় বুঝি। অবাক চোখে তাকায়। বোঝার চেষ্টা করে পরিস্থিতি। গালে চুমুক দেয়; লম্বা। তারপর বলে, ‘ভালো মানে.. এই যে তোমার বাবা মরে যাচ্ছে, নিজে নিজেই। ভালো না বিষয়টা?’
আমার বাবা মরে যাচ্ছে। বিষয়টা ভালো? আমার কাছে ভালো লাগে না। কান্না কান্না লাগে। কেন যেন মিলনের ওপর মেজাজ খারাপ হয়। শুয়োরের বাচ্চা, আমার বাবা মরে যায়- এই বিষয়টা ভালো! কিছু না ভেবেই ঘুষি বসিয়ে দিলাম। চোয়ালে। মিলন চেয়ার থেকে ছিটকে পড়ল মেঝেতে। নবাব মুহুর্তেই সামনে চলে এলো। কোমর থেকে হাতে উঠে এলো চকচকে কালো একটা রিভলবার। তা নিয়ে একটুও আতঙ্ক বোধ হলো না আমার। নবাব তাক করেছিল বটে, তবে গুলি চালাতো কিনা বোঝা গেল না। মিলন হাত উঁচু করতেই রিভলবার নামিয়ে নিল সে। উঠে চেয়ারে বসলো মিলন। ঘুষি লেগেছে ভালোই। ঠোঁটের একটা কোনা কেটে গেছে। মিলন আঙুলে একটু রক্ত ছুঁয়ে দেখল। ক্ষতস্থানে জিভ বের করে চাটতে চাটতে আমার দিকে তাকালো। নির্বিকার দৃষ্টি। শীতল। সাপের মতো হিম। সেই চাহনী উপেক্ষা করা অসম্ভব মনে হয়। তাও উঠে দাঁড়াই। একটা কথাও বলি না। দ্রুত পায়ে হেঁটে যাই লিফটের কাছে।
লিফট ওপর দিকে উঠছে। বাটন চেপে কল দেই।
খালি লিফট। ভেতরে পা রাখলাম। গ্রাউন্ড ফ্লোর প্রেস করেছি, দরজা বন্ধ হচ্ছে। হঠাৎ ছুটে এসে দুই দরজার মাঝখানে হাত ঢুকিয়ে দিল নবাব। হাতে রিভলবার নেই। আমি তবু সতর্ক হই। নবাব খিটখিটে গলায় বলল, ‘নিচে গাড়ি আছে, নিয়া যাইয়েন। আর হাসপাতালে কোনো দরকার লাগলে বস ফোন দিতে কইসে।’
আমি জবাব দেই না। নবাব হাত সরিয়ে নেয়। দরজা বন্ধ হয়। লিফটের গতি ভালো না। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। সিঁড়ি দিয়েও আগে নামা যেত মনে হয়।
বাবা কেমন আছে!
বাবা কেমন আছে!
আমার কান্না পাচ্ছে।
আশ্চর্য! আমি না বাবাকে খুন করাতে এলাম! আমার তো খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু কান্না পাচ্ছে কেন?
জানি না।
কিচ্ছু জানি না।
বুঝি না।
কিচ্ছু বুঝি না।
শুধু জানি, বাবাকে বাঁচাতে হবে।
শুধু বুঝি, বাবাকে বাঁচাতে হবে।
বাবাকে মরতে দেওয়া যাবে না। কিছুতেই না।
কেন বাঁচাবো? কিভাবে বাঁচাবো আমি?
জানি না।
শুধু জানি, বাঁচাতে হবে, বাবাকে। আমার বাবা।
বাবাকে কোন হাসপাতালে যেন নিয়ে গেছে?
জিজ্ঞেস করা হয়নি, ধ্যাৎ!
ফোন বের করি। নো নেটওয়ার্ক।
নিচে নেমে কল দিতে হবে।
কিন্তু নিচে নামতে এতো সময় লাগছে কেন? এই ষোলোতলা কি আকাশে নাকি! এতো সময় লাগে নামতে?
বালের লিফট!