‘বত্রিশের ঠিকানায় বীরাঙ্গনারা’
২ আগস্ট ২০২০ ২৩:৩৩
সবাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা বানাতে চায়! একেকজন নিজেকে তারাকোভস্কি, আব্বাস কিয়রোস্তামি, ঋত্বিক ঘটক, শেখ নিয়ামত আলী ভাবে! আরে, তোরা তিন দিনের যোগী, হাভাতের চাষা, সিনেমার মত জটিল শিল্প ক্যামনে বুঝবি? বোঝার বোধ তোগো অইচে? কয়েকটা টিভি নাটক আর সিরিয়াল বানাইয়া, সস্তা প্যানপ্যানানি দেখাইয়া, সুরসুরি দিয়ে হাসাইয়া এখন আইচো সিনেমা বানাইতে… টেবিলের সামনে বসা বন্ধু ডিরেক্টর কায়েশ আলীর দিকে তাকিয়ে বলেন জগলুল পাশা।
সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে চেয়ারে শরীর ছেড়ে প্রশ্ন করেন কায়েশ আলী, কে ফোন করেছিল?
আর বলিস না, চড়ে বসেছি বাঘের পিঠে, এখন নামতেও পারিনা, ছাড়তেও পারি না। নেত্রীকে আগেই বলেছিলাম, এইসবে আমার আর কোনো খায়েশ নাই। আপনি অন্য কাউরে বসান। যারা বসার জন্য বাঘের থাবা নিয়ে অপেক্ষা করতেছে। না, নেত্রী শুনলেন না। বললেন, কাকে কোথায় বসাতে হবে আমি জানি। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা হবে, সহজ ব্যাপার নয়, অনেক কঠিন কাজ, সেই জন্যই আমি আপনাকে বেছে নিয়েছি। আমি জানি, আপনি সবাইকে ট্যাকেল করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা বানাবার ব্যবস্থা করতে পারবেন। কী আর করা, বসতে বাধ্য হলাম জাতির জনকের জন্মশত বার্ষির্কীর সিনেমা কমিটির চেয়ারম্যানের চেয়ারে। এখন চেয়ার আমাকে পোড়াচ্ছে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা। অমুক এসে বলছে, আমি আটটা প্রামান্য চিত্র বানিয়েছি, আমি কেন সুযোগ পাব না। তমুক এসে বলে, এই দেশে যখন কেউ বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে নেয়ার সাহস করে নাই, তখন আমি মিছিল করেছি… তুই বল কায়েশ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা বানানোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজপথে মিছিলের কী সর্ম্পক! এই দেশে সব কিছু করতে চায় পলিটিক্যাল পয়েন্ট থেকে, শিল্পের যোজনা থেকে কোন বেটাই কোন কিছু করতে চায় না। টেবিলের উপর রাখা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দেখে ঠান্ডা চা, দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে মুখের চা ফেলে দেন জগলুল পাশা।
বসেন চেয়ারে, কলিংবেল টেপেন।
সঙ্গে সঙ্গে ঢোকে পিওন নির্মল রায়, স্যার?
আর এক কাপ চা দাও। তাকান কায়েশ আলীর দিকে, তুই চা খাবি আর এক কাপ?
ঠোঁট উল্টান তিনি, দিতে বল এক কাপ।
এখনই দিচ্ছি স্যার, নির্মল রায় ফিরে যেতে যেতে ঘুরে টেবিলের কাছে এসে একটা কার্ড বাড়িয়ে ধরে, স্যার এই লোকটা এসেছেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে।
কার্ডের উপর চোখ বুলিয়েই হাসেন পাশা, ওই যে বললাম সব শালায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি বানাতে চায়। আরে তুই হইছোস নাটকের ডিরেক্টর, লগে বানাইছোস কয়েকটা ডকুমেন্টরি আর একটা হাফ সিনেমা। হাফ সিনেমায় পুরস্কারও একটা জোটাইছোস, হেই তুই আইছোস জাতির জনকের বিশাল ক্যানভাস লইয়া সিনেমা বানাইতে? আর যখন তখন আইসা আমার লগে দেখা করতে চাও? আমি তোমার দুলাভাই?
জগলুল পাশার কথার বিনিময়ে হাসেন কায়েশ আলী। ধরান আর একটা সিগারেট, ছাড়েন গাল ভরা ধোয়া।
পাশা তাকান নির্মলের দিকে, তুমি দু’কাপ চা দাও।
স্যার, ওনাকে চলে যেতে বলবো?
না, আসছে যখন তখন আর একটু বসতে কও। আমি ডাকবো ওকে। পিওন নির্মল রায় চলে যাবার সঙ্গে কায়েশ আলী জানতে চান, কে এসেছে দেখা করতে?
অরবিন্দ হাসান।
ও ছেলেটা কিন্তু ভালো কাজ করে, নিজের মনে মন্তব্য করেন কায়েশ।
ঠোট উল্টান জগলুল পাশা, জানি কী কাজ করে? বললাম না তোকে ফিরিস্তি! ওইসব ছাই পাশ বানিয়ে এখন খায়েশ হচ্ছে জাতির জনককে নিয়ে সিনেমা বানাবে। এটা ডাল আর চাল, মিশিয়ে একটা কিছু রান্না করলেই হলো!
তোকে ফোন করেছিল কে?
কায়েশ আলীর প্রশ্নে কপাল কুঁচকে যায় জগলুল পাশার, মন্ত্রনালয়ের সচিব ফোন করেছিল।
কেন?
কেন আবার? সুপারিশ শালার জন্য।
সচিবের শালাও সিনেমা বানাতে চায়?
চায় মানে? সে তো বড় দাবিদার। কারণ সচিবের বউয়ের চাচাতো ভাই মি. মশিউর রহমান কানাডার কোন এক ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে সিনেমার উপর ডিগ্রি নিয়েছে। ব্যাটা মশিউর রহমান আবার কানাডায় চলচ্চিত্র বানিয়ে একটা পুরষ্কারও বাগিয়েছে। ফলে বড় খায়েশ বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর একটা ছবি বানাবেন। যেহেতু সচিবের বৌয়ের দিকের আত্মীয়, মাননীয় সচিব কেবল আমাকে না, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক চলচ্চিত্র কমিটির সাতজন সদস্যর প্রায় সবাইকে ফোন দিয়ে নিজের পরিস্থিতি ব্যাখা করে শ্যালকের পক্ষে রায় দেওয়ার আবেদন করেছে। ব্যাটা সচিব আবার ঘোড়েল মাল, কোনো আদেশ নিষেধ দিচ্ছে না, ক্ষমতারও ভাব নিচ্ছে না, কিন্তু ক্ষমতায় থেকে মোলায়েম গলায় সকলের কাছে নিবেদন রাখছে। অর্থাৎ কাজটা শালায় পেলেও পেতে পারে…
কিন্তু বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে কোন পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছে?
তা দিয়েছে। সত্যিকথা বলতে কী, পান্ডুলিপিটা আমি পড়েছিও। একেবারে খারাপ না। বিষয়টা হচ্ছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হায়েনা আর্মিরা বাঙালি নারীদের উপর যে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে, ধর্ষণ করেছে, সেই বেদনাদায়ক মুমূর্ষ ঘটনার বিপরীতে জাতির জনকের কর্ম নিয়ে ভিন্ন ধরনের একটা গল্প সাজিয়েছে মশিউর কিন্তু…
আবার কিন্ত কেন?
তুইতো জানিসই, একটা সিনেমার মূল অনুষঙ্গ পাণ্ডুলিপি। ঘটনাটা ভিন্নমাত্রার তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু স্কিপ্টটা দাঁড়ায়নি। দুর্বল…
তরুণদের তো সুযোগ দিতে হবে, হবে না!
হাসেন জগললু পাশা, আমিওতো তরুণদের পক্ষে। কারণ আমিও এক সময়ে তরুণ ছিলাম। কত কষ্ট করে, অপমান সহ্য করে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। সুতরাং আমি বুঝি তরুণদের যন্ত্রনা, অপমান, বেদনা…
পাশা ভাই, একটু আসি! দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে যায় রুমকী খান। বিগত সময়ের নায়িকা। এখনও চেষ্টা করছেন নানা মসলা শরীরে মেখে শরীর অটুট রাখতে। সরকারের উচ্চ মহলে উঁচু দরের সম্পর্ক আছে, শোনা যায়। সত্যও হতে পারে, সরকারের গত টার্মে মহিলা কোটায় এমপি হয়েছিলেন। রুমকী খানের পিছনে পিছনে বিমর্ষমুখে ঢোকে পিওন নির্মল রায়। তাকায় অপরাধ মাখা চোখে, স্যার আমি নিষেধ করেছিলাম…
রুমকী খান পিছনে ফিরে নির্মল রায়ের দিকে কড়া চোখে তাকিয়েই চেয়ার টেনে বসে পড়ে, আমি জোর করে ঢুকেছি, তো কি হয়েছে? তুমি তোমার কাজে যাও। তাকায় জগলুল পাশার দিকে- পাশা ভাই, এখনও যদি আপনার রুমে ঢুকতে আমাকে অনুমতি নিতে হয়, তাহলে আর সারা জীবন কী করলাম?
অনেকটা হতাশার সঙ্গে মাথাটা নুইয়ে বসে থাকে। কায়েশ তাকায় জগলুল পাশার দিকে। পাশা খেলোয়াড়ি মানুষ, বোঝেন কখন কাকে কি অস্ত্রে ঘায়েল করতে হয়। অনেকক্ষণ পর তীব্র শব্দে হাসেন, আপনার তো বোঝা উচিৎ রুমকী।
মাথা তোলে রুমকী, কী বুঝবো?
আপনি আর আম জনতা কী এক হলো? আপনি আসবেন আমার কাছে আপনার মতো। আমি পিওন রেখেছি আম জনতা আর আম আটকানোর জন্য। সময় নেই, অসময় নেই, এসে বসে থাকে আমার টেবিলের সামনে। জুড়ে দেয় রাজ্যের গল্প, সেই কবে রাজা উজির মেরেছিল, কোন সিনেমায় কোন নায়িকা প্রেম নিবেদন করে কেঁদে-কেটে বালিশ ভিজিয়েছিল… এই বয়সে এসব শুনতে আর ভালো লাগে না। বুঝতেই পারছো, আমাকে তো কাজ করতে হয়। বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নেত্রী আমাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন… ওইসব লো প্রোফাইলের আত্মগত হোমড়া চোমড়াদের আটকানোর জন্য আমার নির্মল… তোমার জন্য তো নয়।
তাই বলুন… মুখে হাসির ফোয়ারা ফিরে আসে রুমকী খানের। তাকায় কায়েশ আলীর দিকে, বন্ধুর কাছে বসে আড্ডা দিচ্ছেন না কাজ বাগাচ্ছেন?
মৃদু হাসেন কায়েশ আলী, আমার বন্ধু আমাকে কোন কাজ দেবে না, আমি ওকে চিনি পঞ্চাশ বছর ধরে।
তাই? অবিশ্বাস্য গলা রুমকীর।
হ্যাঁ, আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিতে পারি চিন্তার সঙ্গে না মিললে জগলুল পাশাকে কখনো কেনা যায় না। আর আমিও ওর কাছে কখনো বিক্রি হতে আসি না। ফলে আমাদের বন্ধুত্ব টিকে আছে…খুব দৃঢ় গলায় বলেন কায়েশ আলী।
ওসব আপনাদের ব্যাপার ভাই, আমি নাক গলাতে চাই না। আমার সিনেমার কী খবর? সরাসরি নিজের সংলাপে ঢুকে যায় রুমকী।
বাছাই চলছে রুমকী, পোষাকী কণ্ঠে উত্তর দিচ্ছেন পাশা।
আমাকে হতাশ করলের পাশা ভাই, গলায় একটু ঝাঁঝ টের পাওয়া যাচ্ছে রুমকীর। তিন মাস ধরে আমাকে একই বাক্য বলছেন, বাছাই চলছে। আর কত দিন চলবে?
চেয়ারে মাথা হেলে দিয়ে পায়ের উপর পা রেখে মিষ্টি চোখে তাকান পাশা- রুমকী আপনার কী মনে হয়, সিনেমার স্ক্রিপ্ট কয়টা পড়েছি? প্রায় আটশ। আটশ স্ক্রিপ্ট পড়া, বাছাই করা কী চাট্টিখানি কথা? বাংলাদেশের দশজন ডিরেক্টর, নির্দেশক এসব দেখছেন… সময় তো লাগবেই।
সব, সব স্ক্রিপ্ট দেখতে হবে?
কেন নয়? যে স্ক্রিপ্ট পাঠিয়েছে, পরিশ্রম করে মেধা খরচ করেইতো পাঠিয়েছে। কাউকে বঞ্চিত করার অধিকার আমার নেই। আমরা তাড়াহুড়ো করছি না রুমকী, প্রত্যেকটি পান্ডুলিপি আমরা দেখবো। কেউ যেন বলতে না পারে, যে পান্ডুলিপিটা দেখলাম না, পড়লাম না, সেই পান্ডুলিপি নির্বাচিত পান্ডুলিপির চেয়ে অধিক ভালো ছিল না!
আমি আপনাকে বুঝতে পারি না পাশা ভাই! কারা কারা কী পান্ডুলিপি পাঠিয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাকে মিলিয়ে দেখছেন? আমার এতো বছরের ক্যরিয়ার… আপনাকে একটা বিষয়ে বলা হয়নি। হয়তো আপনি জানেন না, আমার বাবা কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কেবল মুক্তিযোদ্ধা না, তিনি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, তখন আমার বয়স আর কত, আট নয় হবে…আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। উঠলেন আমাদের বাড়ি। আমি খাবার এনে দিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমার গাল টিপে দিয়েছিলেন… কতো স্মৃতি। যুদ্ধের সময়ে আমরা যখন ইন্ডিয়ায়…
যুদ্ধের সময়ে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় সবাই আক্রান্ত ছিলাম… রুমকী খানের কথার মধ্যে ঢুকে পড়েন জগলুল পাশা। আপনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক সর্ম্পক ছিল, আপনার গাল টিপে আদর করেছেন ঠিক আছে কিন্তু এর সঙ্গে একটা ভালো শিল্প, মহৎ সিনেমার কী সম্পর্ক? আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েকটা ভালো সিনেমা তৈরী করার… রুমকী আমি সেই চেষ্টাই করছি।
কয়েক মুহুর্ত নির্বাক তাকিয়ে থেকে গোমড়া মুখে দাঁড়ায় রুমকী খান, বুঝেছি আমি।
কী বুঝেছেন?
আমাকে নেত্রীর কাছেই যেতে হবে। আমি এই সামান্য সিনেমার জন্য নেত্রীর কাছে যেতে চাইনি। আর একটা বিষয়ে বলছি, আমাদের সঙ্গে যে বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল, সেটা নেত্রী ভালো করেই জানেন। আমাকে এতোটা কাঁচা মনে করবেন না… দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করে।
চা না খেয়ে যাচ্ছেন?
ঘুরে দাঁড়ায় রুমকী, আমি আপনার কাছে চা খেতে আসিনি পাশা ভাই। আসি, বলে দ্রুত পায়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায় রুমকী খান। বন্ধ দরজার দিকে চোখ রেখে মিটি মিটি হাসেন জগলুল পাশা।
তুই হাসছিস কেন?
হাসছি বেদনায়।
মানে?
কায়েশ, তুই পৃথিবীতে খুব কম দেশ পাবি, যে দেশের সকল মানুষ প্রায় একটি ভাষায় কথা কয়। সেই বিরল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এই দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনা ও আত্মার বন্ধন তৈরি করতে সফল এবং ভালো সিনেমা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতো। কিন্তু কেন পারলো না? পারলো না এইসব আত্মঅহমিকায় পরিপূর্ণ গন্ডমূর্খদের কারণে। এদের মধ্যে শিল্পের শ নেই, এরা আসে সিনেমা বানাতে। আসলে ওরা এসেছে রাজনৈতিক ডামাডোলে কিছু টাকা বানাতে… সত্যি আমার খুব কষ্ট হয় এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতার প্রতি। তিনি জানেন না, তাকে কতভাবে এই দেশের সুবিধাবাদিরা বিক্রি করছে মুড়ি মড়কির দামে…। সত্যি আমার খুব কষ্ট হয় কায়েশ..।
রুমের মধ্যে নেমে আসে পাথরের নীরবতা। দুজনের মুখে কোন কথা নেই। নিঃশব্দে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর দাঁড়ায় কায়েশ, পাশা আমি যাই।
যাবি?
হ্যাঁ। আমার একটা কাজ আছে বেইলি রোডে। ফ্রি হলে ফোন দিস.. বের হয়ে যান বিশিষ্ট ডিরেক্টর কায়েশ আলী।
চোখ পড়ে অরবিন্দ হাসানের কার্ডের উপর। বেল টিপলেন জগলুল পাশা..।
……………..
মন খারাপ?
মাথা নাড়ায় অরবিন্দ। না।
ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?
ইচ্ছা করছিল না।
হাসে দ্রিমিক, মাথার চুলে আদর করত করতে চুমু দেয় অরবিন্দর কপালে। দুহাতে জড়িয়ে ধরে, আমাকে বলো কেনো মন খারাপ তোমার?
আমার মন খারাপ না, নিরাসক্ত গলায় জবাব দেয় ও।
আরো গভীরে জড়িয়ে ধরে, মুখ রাখে অরবিন্দর চুলে, আমার সঙ্গে কেনো মিথ্যা বলছো অরু। আমি তোমাকে আজকে চিনি? গত চার বছর ধরে তোমার যন্ত্রনা সহ্য করছি।
সহ্য করছো কেন?
ভালো লাগে তোমার দেওয়া যন্ত্রনা।
মিচকি হাসে অরবিন্দ, তাই?
হ্যাঁ, ওর কপালে নাক ঘষতে ঘষতে বলে দ্রিমিক, আমি জানি তুমি সহজে মন খারাপ কর না। কোন কিছুতে ভেঙে পড় না। সেই তুমি আমার ফোন ধরছো না, আমার কোথায় শুটিং জানতে চাইছো না…। বাসায় দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছ, নিশ্চয়ই তোমার মনে অসুখ করেছে। কি অসুখ অরু? আমাকে বলা যায় না?
তোমার আজ শুটিং আছে না?
ছিল, ক্যানসেন করেছি।
ক্যানসেল করেছো? দ্রিমিককে বুকের উপর থেকে সরিয়ে শোয়া থেকে বসে অরবিন্দ হাসান। কেনো ক্যানসেল করেছো?
বসে মুখোমুখি। তোমার খামখেয়ালীর কারণে একটা শুটিং বাতিল করলে ডিরক্টর-প্রডিউসারের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়, জানো না! একটা শুটিংয়ে কতো মানুষ, যন্ত্র ইনভল্ভ থাকে… তুমি শুটিং বাতিল করলে কেন দ্রিমিক?
তুমি ফোন ধরছো না কেন?
অবাক অরবিন্দ, এটা কোন কথা হলো? ফোন ধরছি না আমি আর শুটিংয়ে যাচ্ছো না তুমি? ওর গলায় প্রচন্ড রাগ। মুখের দিকে তাকিয়ে দ্রিমিক মাথা নীচু করে, তুমি তিন দিন ধরে আমার ফোন ধরছো না। আমাকে ফোন করছো না। তোমার কোন খবর নেই… আমি… আমি কি করবো? গলা ভারি হয়ে আসে দ্রিমিকের। এখন সব দোষ আমার? তুমি জানো না এক ঘণ্টা পর পর তোমার ফোন না পেলে… কেঁদে ফেলে দ্রিমিক। ঘটনার ঘনঘটায় স্তব্ধ অরবিন্দ। বুঝতে পারে, ভুলটা তার। হাত বাড়িয়ে নত মুখ তুলে ধরে, সঙ্গে সঙ্গে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্রিমিক। জড়িয়ে ধরে ওকে সবল আবেগ আর মমতায় অরবিন্দ হাসান।
তুমি আমার ফোন ধরছিলে না কেন? কিছুটা সময় পার করার পর প্রশ্ন করে দ্রিমিক ফালগুনী।
আমার মন খারাপ।
সেটা আমি বুঝেছি। প্রশ্ন হচ্ছে কেন মন খারাপ তোমার? তুমি তো এমন না…। উত্তর না পেয়ে দ্রিমিক নিজেকে প্রত্যাহার করে অরবিন্দের বুকের উপর থেকে। বসে মুখোমুখি, তাকায় মায়ামাখা দৃষ্টিতে, একটু হাসিও রাখে ঠোঁটে, কি হয়েছে তোমার?
আমার ছবিটা ওরা গ্রহণ করেনি।
কোন ছবিটা? বঙ্গবন্ধু…
হ্যাঁ।
এতো গবেষণা করে তুমি স্ক্রিপ্টটা করলে…। এতো পরিশ্রম করলে, বঙ্গববন্ধুকে এতো গভীর অলিন্দে তুমি ধারণ করো, তারপরও তোমার…
হয়নি। আমিও নিশ্চিত ছিলাম আমি পাবো। তুমি জানো, আমি কোনো সুপারিশে কাজ করি না। আমার ধ্যানে, আমার স্বপ্নের অভিলাষে কাজ করি। এক বছর পরিশ্রম করে লিখলাম ‘বত্রিশের ঠিকানায় বীরাঙ্গনা’। অথচ … আমার ধারণা কেউ পড়েও দেখেনি। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর চলচ্চিত্র নির্মাণ ঘিরে একটা মাফিয়া চক্র গড়ে উঠেছে দ্রিমিক। স্বাধীনতার পর আওযামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর নামে একটা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে। এরা চারপাশে দুর্ভেদ্য প্রাচীর তুলেছে, ওই প্রাচীর ভেদ করে আমার মতো কেবলমাত্র সংস্কৃতিকর্মীরা প্রবেশ করতে পারছে না। কিন্তু আমি ভরসা রেখেছিলাম জগলুল পাশার উপর। এই মানুষটা কোদালকে কোদাল বলার সাহস রাখে…, কিন্তু কি যে হল!
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা হবে অনেকগুলো। সব ছবির রেজাল্ট দিয়েছে?
প্রায় দিয়েছে। দুটো বা তিনটে ছবির অর্ডার দিতে বাকী আছে। কিন্তু আমি পাচ্ছি না, বুঝে গেছি।
তোমার স্ক্রিপ্টটা পড়ে আমি কান্না থামাতে পারিনি। অরবিন্দর ডান হাতে নিজের হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দ্রিমিক, যুদ্ধের মধ্যে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কারে এগারটা মেয়ের উপর নির্মম অত্যাচার করে। কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের মধ্যে মেয়েদের উদ্ধার করে কিন্তু পরিবারের কেউ নিতে চায় না। মেয়েগুলো পরিচয়হীন। দেশ স্বাধীন হলো, বঙ্গবন্ধু দেশে এলেন। এইসব লাঞ্ছিত ভাগ্যবিড়ম্বিত মেয়েদের পরিচয়হীনতার নির্মম ঘটনা শুনে তিনি বললেন, আজ থেকে ওইসব মেয়েদের বাপের নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহামন। আর ঠিকানা ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ি…। আমি নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম কলমি চরিত্রটা করবার জন্য। এমন একটা পান্ডুলিপি ওরা রিজেক্ট করলো?
কিন্তু আমি ছাড়বো না।
কী করবে তুমি? ব্যাকুল তাকায় দ্রিমিক ফালগুনী। ওর বুকের ভেতরটা মুচড়ে যাচ্ছে, জানে দ্রিমিক, কতো যত্নে, পরিশ্রমে বঙ্গবন্ধুর উপর সিনেমা নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কতোবার একেকটা দৃশ্যর পরিকল্পনা করেছে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে দ্রিমিকের সঙ্গে আলোচনা করেছে। অরবিন্দ হাসান কখনো শিল্প নিয়ে প্রতারণা করে না, মিথ্যা কুহক সাজায় না। ও বলে, আমি নাটক বানাতে এসেছি ভালোবেসে। নাটক বানিয়ে বানিয়ে নিজেকে তৈরী করছি সিনেমার জন্য। অরবিন্দর কষ্ট বুঝতে পারে দ্রিমিক। নাটকে অভিনয় করতে করতে একটা সম্পর্ক হয়। সেই সম্পর্কটা এখন অনেক গভীরে, নিবিড় নীলিমায়।
আমি যা কখনো করিনি, করতে পছন্দ করি না, সেই কাজ করবো।
কি সেটা?
আমি জগলুল পাশার সঙ্গে দেখা করবো।
কেন?
আমি আমার ব্যর্থতা জানতে চাইবো।
এসবের দরকার আছে? তুমিতো আবার মেজাজের খেই হারিয়ে ফেল। আমি জানি, এইসব নিয়ে তুমি খুব বিচলিত হও না।
কিন্তু বত্রিশের ঠিকানায় বীরাঙ্গনারা ছিল আমার জীবনের ধ্রুব। তুমিতো জানো, আমি এই ছবিটাকে আমার জীবেনর বাজি ধরেছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের নেতা, আমাদের ঠিকানা। তাকে নিয়ে ছবি বানানো তো আমার জীবনের চ্যালেঞ্জ। আমার নেতাকে নিয়ে আমি সিনেমার যাত্রা করতে চেয়েছিলাম দ্রিমিক।
যা হয়নি, তুমি তো সেটা নিয়ে ভাবো না। ভেঙ্গে পরো না। আজকে হয়নি, আর একদিন হবে। সরকারি অনুদানে হবে না, তুমি বিকল্প পথে ভাবো। চ্যালেঞ্জ নাও। তোমার তো বেশ কয়েকজন ভালো প্রডিউসার আছে, ওনাদের সঙ্গে কথা বলো…
একটানে বুকের মধ্যে টেনে এনে জড়িয়ে রাখে, চোখে রাখে চোখ, তুমি আমাকে এতো বোঝো কেন?
খিলখিল হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে দ্রিমিক। আসার পর এই প্রথম হাসছে। দ্রিমিকের হাসিতে যেন সমুদ্রে তরঙ্গের পর তরঙ্গ বহিয়া যায়। একের পর এক ঢেউ আছড়ে পরে হাসির। হাসি একটু থামিয়ে বলে, ভালোবাসি, তাই!
গভীর চুম্বন রাখে দ্রিমিকের ঠোঁটে। দ্রিমিকও গ্রহণ করে গভীর সুখে।
শোনো, চুম্বনের আবেগ ঠোঁটে রেখেই বলে অরিন্দম, আমি গত কয়েকটা দিন সত্যি খুব কষ্টে ছিলাম। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ গত পরশু বাদল ভাই ফোন দিলেন। জানোতো বাদল ভাই আমার কাজ কতটা পছন্দ করেন। বাদল ভাই আমার মন খারাপের খবর জেনে বললেন, তুমি চিন্তা করো না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি করবা, আমি এক কোটি টাকা দেবো।
সত্যি?
হ্যাঁ। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব ছবি নির্মাণ হবে, সেই ছবির মতো। মেকিংয়ের একটা প্রতিযোগিতা থাকতো। অনেক হোমড়া চোমড়ারা থাকতো, নানা ধরনের ধারণার জন্ম হতো, অনেকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হতো, আমি নিশ্চিত, সেই প্রতিযোগিতায় আমি বিজয়ী হতাম, আপন মনে বলে অরিন্দম হাসান।
তুমি তো জিতবেই। বাদল ভাই যদি প্রডিউস করে, সেটাই ভালো হবে। কারণ, তুমি সবার চেয়ে ভালো ছবি বানাবে। সরকারের গড্ডলিকা প্রবাহে না থেকে নিজেই একটা স্রোত তৈরী করবে… আমি জানি অরি, তুমি পারবে।
আমার উপর তোমার এতো আস্থা?
হ্যাঁ। আমি তোমাকে অনেক দিন জানি। তুমি নির্মাতা হিসেবে আপোষহীন। আর তুমি আমার ভালোবাসা। আমার ভালোবাসাতো হারতে পারে না…
আবার জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে দ্রিমিককে এক তাল তরলের মতো …।
………………………
হ্যাঁ অরবিন্দ বলুন, কী করতে পারি আপনার জন্য? ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন জগলুল পাশা। রিভলভিং চেয়ারে তিনি হালকা দুলছেন।
পাল্টা নিরাসক্ত গলায় উত্তর দেয় অরবিন্দ, আমি আমার স্ক্রিপ্টের বিষয়ে জানতে এসেছি স্যার।
আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই-
করুন।
আপনি বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যে সিনেমাগুলো তৈরী করাবো, সেই সব সিনেমায় আপনাকে কেন নেবো? অন্যান্য পরিচালকের চেয়ে আপনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
আমি অনেক পরিশ্রম করে স্ক্রিপ্টটি তৈরি করেছিলাম…
হাসেন পাশা, সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? আপনি বাংলাদেশের জাতির জনককে নিয়ে একটা সিনেমা তৈরি করবেন, সরকারের অনুদান পাবেন, স্বাভাবিকভাবেই আপনি খেটেখুঁটে, ভেবেচিন্তেই তো কাজ করবেন, না কি? আপনাদের সমস্যা কী জানেন? আপনারা যে কাজটাই করেন, মনে করেন মাস্টার পিস করেছেন। সিনেমার জগৎটা অনেক বড়… অনেক…
আপনার কী মনে হয় আমি জানি না? আমিও জানি। আমার যে দায় এবং সীমাবদ্ধতা সবটা মেনেই আমি বলছি, আমার স্ক্রিপ্টটা দেখেনইনি। নাম দেখে ফেলে দিয়েছেন!
কে বললো আপনাকে?
কেউ বলেনি। আমি বলছি।
কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
এসব যখন করা হয় ক্ষমতার মগডালে বসে কেউ কী প্রমাণ রেখে করে?
যদি প্রমাণ করে দেখাতে না পারেন, তাহলে এইসব আপত্তিকর কথা বলছেন কেন?
আপত্তি কিসের? আপনারা ইতিমধ্যে আটটি সিনেমার স্ক্রিপ্ট অনুমোদন করেছেন। পরিচালকদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। কেউ কেউ কাজও শুরু করেছে কিন্তু আমি চারজনের নাম বলতে পারি, এরা নাটক বানিয়েছে, মঞ্চের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ আছে কিন্তু তারা সিনেমার সঙ্গে কখনোই ছিল না। বলুন, জগলুল পাশা, এই চারজন পরিচালক কি যোগ্যতায় বঙ্গবন্ধুর উপর ছবি বানাবার সুযোগ পেলেন?
আপনারা সবটা না জেনেই ভাব করেন, সব জানেন। শুনুন, ওরা প্রত্যেকে সিনেমার সঙ্গে জীবনের শুরুতে ছিল। যেমন ধরুন আলতাফ হোসেন, বুঝতে পারছি আলতাফই আপনার প্রথম টার্গেট। এই আলতাফ মুক্তিযুদ্ধের আগেই সিনেমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনটি ছবিতে কাজ করেছেন…
তাই! হাসে অরিন্দম।
আপনি হাসছেন কেন?
আপনাদের জ্ঞানের বহর দেখে না হেসে উপায় আছে?
মানে? চেয়ারে সোজা হয়ে বসেন জগলুল পাশা। আপনি নিজেকে কী মনে করেন? আমি হাসির কী বললাম?
মুক্তিযুদ্ধের আগে আলতাফ হোসেন তিনটি সিনেমার সহকারী পরিচালক ছিলেন, সেটাই বঙ্গবন্ধুর উপর ছবি বানাবার যোগ্যতা! সেই সময়ে আর এই সময়ের টেকনিকের কতো পরিবর্তন হয়েছে, সেই সব টেকনিকের সঙ্গে কোন পরিচয় আছে ওনার? কেবল টেকনিক? সিনেমার জগৎটাই আমূল পাল্টে গেছে। আর আমি এই সময়ের মানুষ, যে সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি বানাবেন আপনারা। আমি সিনেমার সকল টেকনিক জানি…। কানাডা থেকে সিনেমা তৈরির উপর এক বছরের কোর্স করেছি। সেখানে একটা পনেরো মিনিটের সিনেমা বানিয়ে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পেয়েছি। আমি বাংলাদেশে স্বল্পদৈর্ঘ্য দুটি সিনেসা বানিয়েছি, একটা জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছি…। সবই আমার ফাইলে আছে কিন্তু আমি জানি, আমার সেই ফাইল আপনারা খুলেও দেখেননি। কারণ, কোন মন্ত্রী, কোন সচিব, সাংস্কৃতিক জগতের কোনো গডফাদার আমার পক্ষে আপনার কাছে ওকলাতি করেনি। তাই ফেলে দিয়েছেন ডাস্টবিনে…আপনাদের সঙ্গে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে।
দাঁড়ায় অরবিন্দ হাসান, ঝোঁকে টেবিলের উপর- কিন্তু আমি দমে যাবার মানুষ নই। আমি আমার ছবি ‘বত্রিশের ঠিকানায় বীরাঙ্গনারা’ বানাবোই বানাবো। আমি আপনার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ দিয়ে যাচ্ছি, আমার ছবি আপনাদের অনুদানের ছবির চেয়ে অনেক শিল্পসম্মত ছবি হবে এবং বঙ্গবন্ধু আমার ছবিতে আলাদা এবং শ্রেষ্ঠতর চেতনায় উদ্ভাসিত হবেন। আসি! চেয়ারটাকে ঠেলে ঘুরে দাঁড়ায়।
উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে যান জগলুল পাশাও। জীবনে কখনো এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হননি। ছেলেটার স্পিড আবেগ এবং বলার শ্রেষ্ঠত্বে মুগ্ধ। হাত বাড়িয়ে বলেন, তুমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি বানাবে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে তুমি কিভাবে ধারণ কর, এক লাইনে আমাকে বলো।
উত্তেজনায় কাঁপছে অরবিন্দ হাসান। পিঠের উপরের ব্যাগটা খুলে পাশার টেবিলের উপর রেখে কিছুক্ষণ আগে ত্যাগ করা কাঠের চেয়ারের উপর পলকে সটান দাঁড়িয়ে যায়। হতম্ভব পাশা। ছেলেটা কী করতে চায়? আক্রমন করে বসবে নাকি?
ডান হাতটা উঁচুতে তুলে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে উচ্চারণ করে অরবিন্দ হাসান, ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’।