মিশেল ফুকো: ‘ক্ষমতা’ ও ‘পাগলামি’র কথকতা
১৮ আগস্ট ২০২০ ২৩:৫৬
একবার কনফুসিয়াস থাই পাহাড়ের পাশ দিয়ে তার শিষ্যদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখেন একজন নারী পাহাড়ের পাশে বসে কাঁদছেন। কনফুসিয়াস জুলু নামে তার এক সঙ্গিকে বললেন, ‘দেখে এসো, নারীটি কেন কাঁদছে।’ জুলু তাকে জিজ্ঞেস করার পর তিনি উত্তরে বলেন, ‘একবার এক হিংস্র বাঘ এই জায়গায় তার শ্বশুরকে হত্যা করেছিল, তার কিছুদিন আগে তার স্বামীকেও হত্যা করেছে, আজ সেই একই বাঘ তার নিজের ছেলেকেও একই জায়গায় হত্যা করেছে।’ জুলু তখন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে কেন এই জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন না?’ বিলাপরত নারী তখন উত্তর দিলেন, ‘এখানে কোন অত্যাচারী সরকার নেই তো, তাই এ জায়গাটা আমি বেছে নিয়েছি।’ কথাটা শুনে কনফুসিয়াস তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘মনে রাখবে, অত্যাচারি সরকার হিংস্র বাঘ থেকেও ভয়ঙ্কর।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্বালে ১৯৩৮ সালে বাট্রান্ড রাসেল Power বইয়ের শেষ অধ্যায়ে এই গল্পটি লিখেছিলেন। রাসেল মনে করতেন ক্ষমতার হিংস্র থাবা থেকে মুক্তি পেতে দরকার নৈতিকতা; দরকার এমন এক ধরনের রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ যা ক্ষমতার উদগ্রতাকে নিস্তেজ করে। ক্ষমতার নানা প্রকরণ ও তার বৈশ্বিক ও ঐতিহাসিক ব্যাপকতা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বইটা রাসেল যে সময় রচনা করেন ঠিক তখনই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বলার অপেক্ষা রাখে না জড়বস্তুর ভেতর যে অসীম শক্তি লুকিয়ে আছে তাকে ব্যবহারের ভেতর দিয়ে প্রযুক্তির ক্ষমতা কত সাঙ্ঘাতিকভাবে প্রকাশ করা যায় সেটা মানুষ দেখেছিল ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে পারমানবিক বোমা বিস্ফোরনের মধ্য দিয়ে। তবে রাজকীয় ক্ষমতা, যাজকীয় ক্ষমতা, অর্থনৈতিক ক্ষমতা, গণতান্ত্রিক ক্ষমতা ইত্যাদি ইতিহাসের বাঁক থেকে তুলে এনে রাসেল দেখিয়েছেন সব ধরনের ক্ষমতার ব্যবহার মানুষের মনস্তাত্বিক প্রবৃত্তির মূল চাবিকাঠি।
সত্যি বলতে কি, মানুষের চিন্তার প্রবল আক্ষেপন ফ্রয়েড যেখানে খুঁজেছেন ‘যৌনতার’ মধ্যে, মার্কস যেখানে খুঁজেছেন ‘সম্পদের’ মধ্যে সেখানে রাসেল তা অনুভব করেছেন ‘ক্ষমতার’ মধ্যে। তাই ক্ষমতা সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মানুষের মনস্তাত্বিক প্রত্যয়ের ছোট্ট সীমানা ডিঙিয়ে বেরিয়ে পড়েছে মানব-চেতনার সকল অংশে। সত্যিই তাই, ফেডরিক নিটসে তাঁর দ্যা উইল টু পাওয়ার-এ লিখেছেন, ‘The higher man is distinguished from the lower by his fearlessness and his readiness to challenge misfortune.’ অর্থাৎ নিটসে ভাবতেন একমাত্র ক্ষমতাবান মানুষরাই বেঁচে থাকতে পারে সব দুর্যোগ-দুর্ভাবনাকে পেছনে ফেলে। কাজেই ক্ষমতা হচ্ছে সর্বহারী, সর্বাতিশায়ী, এবং সর্বানুভূত। দুর্যোধন যেমন ধৃতরাষ্ট্রকে বলছেন, ‘একা সকলের ঊর্ধ্বে মস্তক আপন/যদি না রাখিবে রাজা, যদি বহুজন/বহুদূর হতে তার সমুদ্ধত শির/নিত্য না দেখিতে পায় অব্যাহত স্থির,/তবে বহুজন- ‘পরে বহুদূরে তাঁর/কেমনে শাসন দৃষ্টি রহিবে প্রচার?(গান্ধারীর আবেদন, রবীন্দ্রনাথ)’। ক্ষমতা প্রকাশের এর থেকে কাব্যিক মন্থন আর কী হতে পারে?
উত্তর-আধুনিক সমাজ দর্শনের সবচেয়ে নামকরা, আলোচিত, সমালোচিত এবং বহুল দূর-ব্যখ্যাত দার্শনিক পল-মিশেল ফুকো (১৯২৬-১৯৮৪) কিন্তু ক্ষমতাকে ব্যখ্যা করেছেন ভিন্নভাবে। জন গ্যাভেন্ডা Power after Lukes (2003) গ্রন্থে ফুকো সম্বন্ধে লিখছেন, ‘তাঁর ভাবনা ছিল পূর্ববর্তী সব দার্শনিক থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন যা কিছুতেই আগের ধারণাগুলোর সাথে মেলে না। যেমন ক্ষমতাকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কেন্দ্রীভূতকরণের বিপরীতে পরিব্যপ্তিকরণ, নিয়ন্ত্রিতকরণ বা বিধিবদ্ধকরণের পরিবর্তে অন্তর্ভুক্তিকরণ, নিপীড়নের উপায় হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে বরং সেটা ব্যবহৃত হয় বিশ্লিষ্টকরণ হিসেবে’। ক্ষমতা যে শুধু ‘কাহিনীমূলক’ বা ‘স্বাধীন ও স্বতন্ত্র’ হিসেবে নির্যাতন বা দমনের অস্ত্র সেটি কিন্তু ফুকো মানেননি বরং তিনি মনে করতেন ক্ষমতা হল সর্বাংশের কেন্দ্রমূল তথা সব কিছুর উৎস। ফুকো নিজের কথায়, ‘ক্ষমতা সর্বত্র’ এবং ‘তা সর্বমুখী’ (Power is everywhere’ and ‘comes from everywhere’)। তাই এটি কোন এজেন্সি বা কাঠামো নয়; বরং এটি হলো একধরনের ‘মেটা-পাওয়ার’ বা “রেজুম অব ট্রুথ” যা সমাজকে ভীষণভাবে পরিব্যপ্ত করে। ক্ষমতা চলমান এবং সমঝতার ভেতর দিয়ে সামনে অগ্রসরমান। ফুকো অবশ্য ক্ষমতা শব্দটিকে জ্ঞানের বিপরীতে ব্যবহার করেছেন ঠিক এই অর্থে যে, মানুষের জ্ঞানের স্বীকৃত কাঠামো, বৈজ্ঞানিক উপলদ্ধি, সত্য, ইত্যাদির ভেতর দিয়ে ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। সত্য হচ্ছে এই বিশ্বজগতের এমন এক বিষয় যা কেবলমাত্র গড়ে ওঠে বহুধা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে। এবং ক্ষমতার নিয়মিত পরিণতির ভেতর দিয়ে এটা উৎসারিত হয়। তাঁর নিজের কথায়, ‘সত্য হচ্ছে এক ধরনের ক্ষমতা।’
বিশ শতকের নামকরা এই মনোবিজ্ঞানী প্রথমেই চিন্তা করেন ক্ষমতার সাথে জ্ঞানের সম্পর্ক কী; বিশেষ করে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কীভাবে এই সম্পর্কের ভিত্তিতে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ করা হয় তা নিয়ে। সমাজ ও চিন্তার সাথে সাথে ক্ষমতার কাঠামোগত পদ্ধতি ও প্রকরণের এক নতুন ব্যাখ্যা দেন তিনি ঠিক রাসেলের মতো তবে, ভিন্নভাবে। ক্ষমতা মানুষের জীবনের সাথে কেমন ভীষণভাবে জড়িয়ে আছে এবং সেটা যে ‘স্বাধীন’ বা ‘স্বতন্ত্র’ কিছু নয়, তার মনো-দার্শনিক গভীর বিশ্লেষণ পাওয়া যায় ফুকোর লেখায়। দমনের অন্যতম এক হাতিয়ার হিসেবে ক্ষমতাকে ব্যবহার করা না- করা এবং সাথে সাথে ক্ষমতার ব্যাপকায়ন নিয়ে তিনি দার্শনিক ভাষ্য রচনা করেন। আমরা কীভাবে নিজেদের ক্ষমতায়িত করি, এবং সেটা আমরা কেমন করে ব্যবহার করি এ নিয়ে অন্যান্য দার্শনিক তত্ত্ব থেকে আলাদা মূল্যায়ন পাওয়া যায় তাঁর কাছে। তবে অতি অসরল আর দুর্ভেদ্য ফুকো খুব বেশি মানুষের কাছে পৌছাতে পারেননি। তাঁর দুর্বোধ্যতার বিশেষ কারণ হলো তিনি সেসময়কার কন্টিনেন্টাল ফিলসফি দিয়ে মারাত্মক প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাঁর রচনায় জটিল বাক্যরীতি, উপমা, হেঁয়ালির ব্যবহার সাংঘাতিক দুর্বোধ্য করে তোলে। তার থেকেও বড় কথা হলো ফুকো যে মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোবৈকল্য নিয়ে গবেষণা করেছেন দীর্ঘকাল তা কিন্তু মোটেও সাধারণের কাছে সহজবোধ্য নয়। এডওয়ার্ড সায়িদ বলেছিলেন, মিশেল ফুকোর চিন্তাভাবনা বিচিত্র রকমের হওয়ার পরও সবখানে তা পৌছাতে পারেনি। ক্ষমতার মনোবৈজ্ঞানিক কারণ ও তার বিস্তৃতির নানা বিষয় তিনি হয় উপেক্ষা করেছেন না হয় বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
একটি কথা প্রথমেই বলে রাখা ভালো আর তা হলো, ফুকো বিশেষভাবে বুৎপত্তি অর্জন করেন মনোবিজ্ঞান আর ইতিহাসে যার প্রেক্ষিতে তাঁকে দার্শনিক বলা যায় কিনা তা নিয়ে কিঞ্চিত দ্বন্দ্ব আছে। তবে অনেকেই বলেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে তিনি যেসব বিশ্লেষণ করেছেন তাতে তাঁকে দার্শনিক তো বলতেই হবে বরং বলতে হবে বিশ শতকের উত্তর-আধুনিক মতবাদের বিশেষ একজন স্ট্রাকচারালিস্ট এবং পোষ্ট-স্ট্রাকচারালিস্ট আন্দোলনের পুরাধা। পরে আসছি স্ট্রাকচারালিস্ট এবং পোষ্ট-স্ট্রাকচারালিস্ট শব্দগুলো দিয়ে আমরা কি বুঝি তা নিয়ে।
১৯২৬ সালের ১৫ অক্টোবর ফ্রান্সের পয়েটিয়ারস–এ জন্ম গ্রহণ করেন ফুকো। ছাত্র হিসেবে ভীষণ মেধাবী হলেও ফুকো ছিলেন মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত একজন মানুষ। বেশ কয়েকবার তিনি আত্মহত্যা করতে উদ্দত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ফ্রান্সের সাথে জার্মানির যুদ্ধ বেঁধে গেলে সমগ্র ফ্রান্সের মানুষ যখন বিপর্যস্ত তার উত্তাপ ফুকোর ওপরেও পড়ে। ছোটবেলায় তিনি দেখেছেন কীভাবে হিটলারের বাহিনী একের পর এক মানুষগুলোকে ধরে নিয়ে গুম করে ফেলছে, এমনকি তাঁর নামকরা স্কুল শিক্ষককেও। ১৯৪২ সালে দর্শন পড়ানো স্কুল শিক্ষক শানোয়ান দ্যুরেকে হিটলারের গেস্টাপোবাহিনী তুলে নিয়ে মেরে ফেলে। ৪৩/৪৪ সালে ফ্রান্সের দুর্ভিক্ষকালে সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগের উত্তাপও ফুকোর জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। কৈশোরের দিনগুলোতে তিনি ভয়ঙ্কর বেসামাল হয়ে পড়েন।
তবে ফ্রান্সের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি অর্জন করেন। কলেজ দ্য ফ্রান্সের হিষ্ট্রি অব সিস্টেম অব থটের প্রফেসর হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন ফুকো। সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য তাঁর প্রাণ কাঁদত সবসময়। ১৯৭০ থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ফ্রান্সের বাইরেও ফুকো নানা জায়গায় বক্তৃতা করতেন বিশেষ করে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে তিনি বাৎসরিক বক্তৃতায় অংশ নিতেন। ১৯৮৪ সালে ফুকো এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
ফ্রান্সে যখন অস্তিত্ববাদের জোয়ার চলছে তখন ১৯৪৬ সালে তিনি প্যারিসের সবচেয়ে নামকরা গ্র্যাজুয়েট স্কুল École Normale Supérieure-এ ভর্তি হন। ফরাসি নামকরা দার্শনিক আর সাহিত্যিকদের অনেকেই এই স্কুলে পড়তেন। রোম্যাঁ রোলা, জ্যাঁ-পল-সার্ত্র, জঁ জোরেস, লেয়ঁ ব্লুম, সিমন দ্য ব্যুভর সহ অনেকেই এই স্কুলে পড়েছেন। নরম্যাল স্কুলে সে সময় হেগেল-মার্ক্সের ওপর পড়াশুনা করার সুযোগ পান তিনি। তাছাড়া মার্লে-পঁতির অনেক লেকচারে তিনি যোগ দেন এবং এসময় লুইস পিয়েরে আলথোসারের মার্ক্সীয় দর্শনের ব্যখ্যা তাঁকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করে। আলথোসার ছিলেন বিখ্যাত ফরাসি মার্কসিস্ট এবং École Normale-এর প্রফেসর।
জ্যাঁ-পল-সার্ত্র সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকলেও তাঁর একটি প্রচ্ছন্ন ছায়া সেসময়কার সব ধরনের চিন্তাবিদদের পেছনে ছিল। সার্ত্রের মতো ফুকোও বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থা ও সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন, এবং সমাজের প্রান্তিক ও অবহেলিত মানুষদের কাছে টানেন বিশেষ করে পাগল, সমকামী, এবং সংশোধনাগারের মানুষগুলোর প্রতি তার ছিল বিশেষ মমতা। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কমিয়ে তিনি দর্শন ও মনোবিজ্ঞানের প্রতি একান্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে দিন দিন তিনি সার্ত্রের দর্শনের বিরাট সমালোচনা করতে শুরু করেন। সার্ত্রের মাথায় একধরনের আত্মরতি আছে বলে মনে করতেন তিনি আর এজন্য উপহাস করে সার্ত্রকে একজন অতীন্দ্রিয় আত্মকামী (transcendental narcissist) বলে ডাকতেন। Narcissism বা আত্মকামীতা হলো এক বিশেষ ধরনের মনস্তাত্বিক প্রবণতা যারা নিজেদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট মনে করে এবং সবসময় একটি ভাবের ঘোরে বসবাস করেন। ব্যক্তিগতভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে ফুকো সার্ত্রের চিন্তাভাবনাকে পুরোপুরি বাতিল করে দেন (পূর্ববর্তী এক লেখায় আমি সার্ত্রের দর্শনের একটি নাতিদীর্ঘ মূল্যায়ন করেছি)।
রাসেল ও সার্ত্র: বিশ্বশান্তির পথে দু’জন নির্ভীক যোদ্ধা
তবে ফুকোর দার্শনিক চিন্তা দারুণভাবে প্রভাবিত হয় ফরাসি দার্শনিক ও চিকিৎসক জর্জ ক্যানিংহাম (১৯০৪-১৯৯৫)-এর বিজ্ঞানের দর্শন, পাগলামির ইতিহাস ও জীববিজ্ঞানের ওপর তাঁর গবেষণা দ্বারা। কানিংহাম ফুকোর পিএইচডির কাজে সহায়তা করেন। বিশেষ করে পাগলামির ইতিহাসের ওপর ফুকোর অভিসন্দর্ভ লেখার কাজ সহজ করে তোলেন। তবে আরেকটা বিষয় উল্লেখ না করলে অসম্পূর্ণ থাকবে সেটি হলো, বিজ্ঞানের ইতিহাস যে একটি প্যারাডাইমের ওপর ভিত্তি করে অগ্রসর সেটি আমেরিকান দার্শনিক টমাস কুন (১৯২২-১৯৯৬) প্রথমে উল্লেখ করেন। কুনের এই উপলব্ধির সাথে ফুকো সহমত পোষণ করেন। টমাস কুনের বিজ্ঞানের ইতিহাস ব্যখ্যা নিয়ে দারুণ এক বই The Structure of Scientific Revolutions বোদ্ধা সমাজে দারুণ সাড়া ফেলেছিল ১৯৬০ এর দশকে (আমি পরে কোন একদিন হয়তো টমাস কুনের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি লেখায় জানাবো)। শুধু বলে রাখি বিজ্ঞানের লম্বা ইতিহাস এগিয়েছে এক একটি ছোট ছোট বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে, সেটি কিছুকাল মানুষের চিন্তার সমাধান করে আবার পরিবর্তনের পথ ধরে নতুনের সন্ধানে পথ পাড়ি দেয়। বিজ্ঞানের ইতিহাসের এই ডিসকটিনিউটি ফুকোকে সে সময় মারাত্মকভাবে ভাবিয়েছিল।
ফুকোর বিশেষ বিশেষ রচনার মধ্যে ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয় Mental Illness and Psychology, ১৯৬১ সালে Madness and Civilization: A History of Insanity in the Age of Reason, History of Madness, ১৯৬৬ সালে The Order of Things: An Archaeology of the Human Sciences, এ ছাড়া চার খণ্ডের The History of Sexuality প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে। এবাদেও তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। বিপুল পরিমাণ আর্টিকেল লেখেন দার্শনিক-মনোবিজ্ঞানের ওপর।
ক্ষমতার বাতাবরণ
ফুকোর ক্ষমতার ধারণার দুটো দিক আছে: একটি ব্যবহারিক, অন্যটি তাত্বিক। তাঁর ব্যবহারিক ধারণা আবার তিন ভাগে প্রকাশিত হয়েছে, স্বাধীন বা স্বতন্ত্র ক্ষমতা, সুশৃঙ্খল ক্ষমতা ও জৈব ক্ষমতা। আগেই উল্লেখ করেছিলাম ফুকোর ক্ষমতার ধারণা তাঁর পূর্ববর্তীদের থেকে আলাদা। সাধারণত মনে করা হয় ক্ষমতা মানে অন্যকে নির্যাতন বা নিপীড়নের অস্ত্র; ক্ষমতা মানে এক বিশেষ ধরনের অস্ত্র যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনগণকে কৌশলে আইন মানতে বাধ্য করানো হয়। কিন্তু তিনি মনে করেননা যে এ ধরনের ব্যাখ্যার ভেতর দিয়ে ক্ষমতার বিষয়টাকে পুরোপুরি বোঝানো সম্ভব। তাহলে ক্ষমতা কী? ফুকো বলেন এটি সত্যিকারের একটি মাইক্রো ধারণা যার মধ্য দিয়ে মানুষ কোন কাজে উদ্দীপ্ত হয়। এজন্য এর নাম দেয়া হয়েছে ‘শক্তি সম্পর্ক’। তাঁর মতে ক্ষমতা হচ্ছে শক্তির এক অতি জটিল সমন্বয় যা সব দিক দিয়ে কাজ করে। স্বাধীন ক্ষমতা বোঝাতে তিনি পিরামিডের উদাহরণ দেন; পিরামিডের চুড়ায় থাকে ব্যক্তি বা গ্রুপ আর মাঝে থাকে জনগণ যারা ক্ষমতার প্রভাবক। অন্যদিকে সবচেয়ে নিচে থাকে নির্যাতিত বা নিপীড়িত মানুষ। সুশৃঙ্খল ক্ষমতা বলতে ফুকো বোঝান একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ের মধ্য দিয়ে মানুষের দক্ষতাকে যতদূর সম্ভব ব্যবহার করা, আর জৈব ক্ষমতা হলো জীবন বা মানুষের ওপর ক্ষমতার প্রয়োগ। জৈব ক্ষমতা এমন এক বিষয় যা মানুষের জন্ম, জীবনকাল, জনস্বাস্থ্য, অপরাধ, স্থানান্তর, গৃহায়ন ইত্যাদি নিয়ে অধ্যয়ন করে।
সম্ভবত ১৯৮০ দশকের শুরুর দিকে নোয়াম চমস্কির সাথে ফুকোর এক বিতর্ক প্রচারিত হয় ডাচ টেলিভিশনে। বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিল, Human Nature: Justice versus Power। দু’জন বিশ্বখ্যাত দার্শনিকের এই বিতর্ক ছিল অত্যন্ত চমৎকার আর উত্তেজনাপূর্ণ। দু’জনেই প্রচলিত সমাজ ও রাজনীতির প্রতি বিরক্ত ছিলেন তবু চমস্কির সাথে স্বভাবতই ফুকো ভিন্ন অবস্থান থেকে বিতর্ক করেন। চমস্কি বলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত মানুষের চারিত্রিক কাঠামোর একটি স্থায়ী আকার পাওয়া যায়, ততক্ষণ একটি বৈজ্ঞানিক বিধি নিশ্চিত করা অসম্ভব। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আংশিক ও বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে যেকোন সংস্কৃতির একজন ব্যক্তি শুধু নিজের ভাষায়ই শিখে থাকে না, তা দিয়ে কীভাবে সে সৃজনশীল উপায়ে কাজ করে থাকে, সেটি আমাদের জানতে হবে। এ প্রশ্নের উত্তরে চমস্কি নিজেই বলেন, নিশ্চয় মানুষের মনের গভীরে একটি বায়ো-ফিজিক্যাল কাঠামো আছে যার মাধ্যমে ব্যক্তি মানুষ তথা সামাজিক প্রজাতি তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে একটি সমন্বিত ভাষা শিখে থাকে। আসলে চমস্কি মনের একটি গাণিতিক তত্ব আবিষ্কার করতে চেয়েছেন অনেকটা কার্তেসীয় বুদ্ধিবৃত্তিক (Cartesian rationality) ঢঙে।
কিন্তু ফুকো সরাসরি মানুষের স্বভাব ও বিজ্ঞান এ দুটো বিষয় নিয়ে চমস্কির ভাবনাগুলো বাতিল করে দেন। মানুষের স্বভাব বলতে কি কিছু আছে? এধরনের প্রশ্ন না করে বরং ফুকো প্রশ্ন করেন, আমাদের সমাজে মানুষের স্বভাব বলতে যা বুঝি সেটা আসলে কীভাবে কাজ করে? তিনি সর্বজনীন সত্য বলে কিছু থাকতে পারে এটা স্বীকার করেননা। ঠিক সেরকমভাবে প্রশ্নকর্তা দু’জনকেই জিজ্ঞাসা করেন রাজনীতি নিয়ে তাদের ধারণা কী? সেখানেও চমস্কির সাথে ফুকোর বিস্তর মতপার্থক্য দেখা দেয়। চমস্কি মনে করেন মানুষের ভেতর যে সৃজনশীলতা আর যে বিপুল অনুসন্ধিৎসা আছে তার সঠিক বাস্তবায়নের জন্য দরকার একটি সমাজ তথা রাষ্ট্র। আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের বর্ণনাতীত কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারে, সেজন্য তার বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে দরকার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংগঠন। মোটকথা, সর্বজনীন বৈদ্ধিক আর ন্যায়বিচারিক দাবির সাথে যেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভীষণ মিল দেখা দেয়।
অন্যদিকে ফুকো মনে করেন রাজনীতির প্রতি তার আগ্রহের ব্যাপারটা ‘কেন’ নয় বরং ‘কীভাবে’। এই কেন এবং কীভাবের ভেতর তিনি পার্থক্য করেন। ফুকো মনে করেন আমাদের খুঁজতে হবে কীভাবে ক্ষমতা সামাজিক কর্মকাণ্ডের পেছনে কাজ করে। তিনি এর ব্যাখ্যা দেন এভাবে, ‘আমাদের মতো একটি সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে রাজনীতির প্রকৃত কাজ হবে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বলে মনে হয় সেগুলোর সমালোচনা করা; এমনভাবে সমালোচনা করা যে, এগুলোর ভেতর দিয়ে যে রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটে থাকে তার কারণ উদঘাটন করতে হবে যাতে করে একজন এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।’ (that the real political task in a society such as ours is to criticize the working of institutions which appear to be both neutral and independent; to criticize them in such a manner that the political violence which has always exercised itself obscurely through them will be unmasked, so that one can fight them, Foucault, “Human Nature,” p. 171)। রাজনৈতিক সহিংসতা কেন বন্ধ করা দরকার, এ প্রশ্নের উত্তরে যথারীতি চমস্কি ও ফুকো দ্বিমত পোষণ করেন। চমস্কি বলেন, আমাদের সমাজের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে একটি ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে এবং তা হল, ‘ন্যায়’। চমস্কি আরও বলেন, এজন্য আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট মানে পৌছাতে হবে। ফুকো যথারীতি এর বিরোধিতা করে কিছুটা নিটসিয়ান ভাষায় বলেন, ন্যায়ের ধারনাটা এসেছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা অর্জন বা সে ধরনের ক্ষমতা ব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে।
উল্লেখ করার মতো বিষয় যে, ক্ষমতা সম্পর্কে ফুকোর প্রথম দিকের ধারণার সাথে পরবর্তী ধারণার একটি পার্থক্য চোখে পড়ে। প্রথম দিকে পাগলামি ও সভ্যতা নিয়ে যে ধারণা পোষণ করতেন পরবর্তীতে যৌনতার ব্যখ্যা দিতে গিয়ে তা থেকে সরে আসেন। প্রথমে ভাবতেন, ক্ষমতা ব্যক্তিগত ভাবে না বরং প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকেই গড়ে ওঠে যার মধ্য দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে। আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা ও নিয়মনীতি ফিরিয়ে আনতে অর্থাৎ সামাজিক নিয়ন্ত্রণ করতে ক্ষমতার অ-ব্যক্তিয়ান (disindividualize) দরকার। ফুকোর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের এই মডেলকে বলে প্যানপ্টিকন (Panopticon) যা মূলত অষ্টাদশ শতকে ইংরেজ দার্শনিক জেরমী বেন্থামের চিন্তায় আসে। আসলে ফুকোর প্রথম দিকে মনে করতেন ক্ষমতা থাকে যন্ত্রের, কিন্তু পরে তিনি মত পাল্টিয়ে বলেন যন্ত্র না, বরং ক্ষমতা আসে যে যন্ত্র চালায় তার কাছ থেকে। অর্থাৎ আগে যা ডি- ইন্ডিভিউজ্যাল ছিল পরে তা ইন্ডিভিউজ্যাল হয়ে ওঠে।
পাগলামির কথকতা
নব্বই দশকের শুরুর দিকে আমাদের দেশে একটি নামকরা বাংলা দৈনিক খবরের কাগজে উপ-সম্পাদকীয় লেখার মাঝে ছোট ছোট ছড়া ছাপাত। আমার মনে আছে, এক জরিপে দেশে পাগলের সংখ্যা দেখা গিয়েছিল ১২ লাখ। ছড়াকার (নাম মনে নেই) ছোট্ট একটি ছড়া লিখেছিলেন, ‘দেশে নাকি পাগল বার লাখ, গণনাতে মিলবে আরও ত্রুটি/আমরা কি আর সবাই পাগল নই, গুনলে হবে হয়তো বারো কোটি’। সম্ভবত সেসময়ে দেশে মানুষ ছিল বার কোটি। খুব তাৎপর্যপূর্ণ কথাটা আমি তখন বুঝিনি, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমেই মিশেল ফুকোর নাম শুনেছিলাম এক ইঁচড়ে পাকা বন্ধুর কাছে। আমরা পাগল বা বাতুল কিম্বা অপ্রকৃতস্থ মানুষ বলি তাদেরই যারা সমাজের প্রচলিত আইন, অনুশাসন, মূল্যবোধ ও আচরণ অনুযায়ী চলতে ব্যর্থ হয়। প্রাচীন গ্রিসে সক্রেটিসসহ অনেককে পাগল বলা হতো, ডায়াজিনাস নাকি একটি পাইপের ভেতর ঘুমাতেন, সাথে ছিল পানি খাওয়ার ছোট্ট একটি মগ। একদিন দেখেন দূরে কিছু ছেলেরা পানি খাচ্ছে হাত দিয়ে। ঠিক তখনই তিনি মগটা ফেলে দিলেন। অর্থাৎ কত কম জিনিসে একটি জীবন চালানো সম্ভব ডায়াজিনাস সেটা অভ্যাস করতেন। গ্রীসের লোকেরা তাঁকে পাগল বলতো। আমাদের দেশের স্কুল কলেজের যেসব শিক্ষক একটু পড়াশুনা নিয়ে মেতে থাকেন, টাকা পয়সার দিকে নজর কম তাদেরকেও কিন্তু লোকে পাগল বলে। ফুকো পাগলামির একটি মনস্তাত্বিক ব্যবচ্ছেদ করেছেন ইতিহাস থেকে।
পাগলামি সম্পর্কে মানুষের মনোভাবের ইতিহাসকে ফুকো তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন, রেনেসাঁ, ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক। রেনেসাঁর সময় পাগলামী চিত্রায়িত হতো শিল্পকলার ভেতর দিয়ে যা ছিল সবচেয়ে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের বহিঃপ্রকাশ। রেনেসাঁকালের সাহিত্য ও শিল্পবোধের ভেতর দিয়ে পাগলামিকে প্রকাশ করা হয়েছে যাকে মনে করা হত একটি মহাবৈশ্বিক বিয়োগাত্মক দুর্ঘটনা। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে যখন ‘এইজ অব রিজন’ বা জ্ঞানের নতুন উন্মেষ শুরু হলো তখন পাগলদেরকে ধরে নিয়ে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভবঘুরে, পতিতা, ভিক্ষুক, বেকার, নিঃস্ব, অলস, ধর্মদ্রোহী আর হাবিজাবি লোকদের সাথে প্যারিসের জেনারেল হসপিটালে পুরে দেয়া হল, এমনকি সারা ইউরোপেও। এই অবস্থাকে ফুকো বলছেন ‘দ্যা গ্রেট কনফাইনমেন্ট’। এই শ্রেণীচ্যুতিকে দেখা হতো এক ধরনের নৈতিক স্খলন হিসেবে। ধীরে ধীরে এভাবে পাগলামির বিষয়টা চলে আসে মনোবিজ্ঞান তথা মনোচিকিৎসার বিষয়বস্তু হিসেবে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে। ফুকো যুক্তি দেখান এধরনের কর্মকাণ্ডের দুটো বিশেষ উদ্দেশ্য ছিলঃ প্রথমত, বাড়িতে রেখে তাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া, দ্বিতীয়ত, এসব মানুষের সামাজিক বৈকল্য থেকে সমাজকে সুস্থ্য রাখা। অবশ্য ফুকোর এমনতর ব্যখ্যা সে সময় খ্রিস্টীয় নৈতিকতার সাথে না মেলায় ভীষণ প্রতিরোধের মুখোমুখি পড়তে হয়েছে।
ফরাসি দেশের জ্ঞানের ইতিহাসের একটি ছোট্ট উপাদান মিশেল ফুকো। অষ্টাদশ শতকের নামকরা দার্শনিক ভলতেয়ার, রুশো, দিদেরো প্রমুখের হাত ধরে প্রজ্বলিত দর্শনের মশাল এগিয়েছে হাল আমলে সার্ত্র, সিমন দ্যা বুভ্যর, কামু, লাকা, বার্থ, ফুকোর কাছে। চিন্তার বহুত্ববাদ এবং অ-প্রথাসিদ্ধ ভাবনার জন্য কাউকে কাউকে অবাঞ্ছিত মনে হয়েছে প্রথম দিকে, কাল গড়ালে তাকেই মানুষ কোলে তুলে নিয়েছে আদরে। ফুকো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের নানারকম ঘটনার যে ব্যখ্যা দিয়েছেন তাতে তাঁকে বলা হয়েছে স্ট্রাকচারালিস্ট। কেউ সমুদ্র-অভিজ্ঞতার পর যেমন বলে বিশাল, কেও রোমাঞ্চকর, আবার কেউ বলে খুব লবণাক্ত, মানুষের চিন্তার এই বহুদর্শিতা আধুনিক যুগের ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। ফুকো ছিলেন এমনই এক নিঃসঙ্গ আলো হাতে আঁধারের যাত্রী।
লেখক- অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
লেখকের আরও লেখা পড়ুন-
আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের দার্শনিক ও সামাজিক ভিত্তি
মহাবিশ্বের কি সবই পূর্ব নির্ধারিত?
অস্তিত্ববাদ মানুষের জীবনের কতো গভীরে?
স্টিফেন হকিংয়ের ব্রিফ হিষ্ট্রি অব টাইম: জানা অজানা
কনফুসিয়াস বেন্থাম মিশেল ফুঁকো মিশেল ফুকোর দর্শন সার্ত্র সিদ্ধার্থ শংকর জোয়ার্দ্দার