Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জানু মিঞার বিজনেস ম্যাজিক


৬ নভেম্বর ২০২০ ১৬:১৮

সন ১৯৭২-৭৪, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশীয় মিল-কারখানা এখনও উৎপাদনে যেতে পারেনি। বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের মতো করেই সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। এই সময় ইউরোপিয়ান কান্ট্রি থেকে পুরাতন কাপড় পাঠানো হতো বাংলাদেশে। ব্যবসায়ীগণ বেল (বস্তা) আকারে এই কাপড় ক্রয় করতেন। প্রত্যেকের দোকানের সামনে খুব সকালে খোলা হত বস্তাগুলো। আর হায়রে ভিড়! দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসতেন কাপড় নিতে। বেল ওপেন করার, আধা ঘন্টার মধ্যে বাছাই করা অর্ধেক কাপড় শেষ, বাকিগুলো বিক্রি হত সারাদিনব্যাপি। বিকালে লাভের অংশ রেখে, মহাজনের কাছ থেকে আবার এক বেল কাপড় আনতেন ব্যবসায়ীরা। শুধু ব্যতিক্রম ছিলেন জানু মিঞা।

বিজ্ঞাপন

মহাজনের কাছ থেকে, সকলে কিনত এক বেল কাপড় আর জানু মিঞা কিনতেন তিন বেল। আর অন্যান্য দোকানের চেয়ে তিনগুন ভিড়ও হত জানু মিঞার দোকানে। একই মার্কেট, একই ব্যবসা, রহস্যটা কি? তাহলে কি, কম দামে বিক্রি করেন জানু মিঞা, না তাও’না। তাহলে রহস্যটা কোথায়। না, কেউ কোন দিনও ধরতে পারেনি, সেই রহস্য।

কাছেই ছিল মানিকের দোকান। মানিক পারফিউমারি হাউস। সন্ধার পর পুরনো কাপড়ের ব্যবসা চলে না। সন্ধার আগেই সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়।

জানু মিঞা সন্ধার পর আসতেন মানিকের দোকানে। কিছু সময় আড্ডা দিতেন। মাঝে মধ্যে ছোটো-খাটো জিনিসও কিনতেন, এই যেমন- এক শিশি আতর কী একটা তসবিহ কিংবা পানে খাবার জন্য একটু পিপারমিন্ট (মেনথল), ইত্যাদি। তবে সপ্তাহে একদিন একটা চার আউন্সের পারফিউম কিনেতেন ২৪ টাকায়, নাম ফুলমেন্দি। এটা সাধারনত আগরবাতি কিংবা মাথায় লাগানোর সুগন্ধি তেলে ব্যবহার করা হয়।

মানিক অনেকবারই জানতে চেয়েছে ফলমেন্দি নেয়ার কারণ। কৌশলে এড়িয়ে গেছেন জানু মিঞা। মানিকের মর্নিং ওয়াকের অভ্যাস আছে। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পরই বেরিয়ে পড়ে মানিক। গ্রামের দিকেই যায় সাধারণত। ভোর বেলা গ্রামের দৃশ্য দেখতে ভালোই লাগে মানিকের।

আজ শনিবার, আবহাওয়া একটু খারাপ, গ্রামে কাদার রাস্তায় হাঁটতে সমস্যা হতে পারে, তাই শহরের দিকেই হাটতে বেরুলো মানিক। হাঁটতে হাঁটতে মার্কেটের দিকে চলে যায় মানিক। এখনও সূর্য ওঠেনি, দোকানপাট বন্ধ। মানিক দূর থেকেই দেখতে পায় একটি দোকানে আলো জ্বলছে। একটু অবাক হয় মানিক। আর একটু এগুতেই দেখে, এতো জানু মিঞার দোকান। জানু মিঞা দোকান খুলে ইতিমধ্যে ঝাড় দেওয়া শেষ করে পানি ছিটাচ্ছেন। কিছুটা সামনের রাস্তায়, কিছুটা কাপড়ের ওপর। মানিক সালাম দিয়ে জানু মিঞার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জানু মিঞা বিস্মিত! স্তম্ভিত! মানিক বুঝতে পারে, তাকে দেখে খুব একটা খুশি হতে পারেননি জানু মিঞা।

বিজ্ঞাপন

মানিক একটা পরিচিত সুগন্ধির আভাস পাচ্ছে। সে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। হ্যাঁ, নিশ্চিত এটা ফুলমেন্দির গন্ধ?

জানু মিঞা মানিকের কাছে খুবই বিনিত কন্ঠে বললেন, ‘মানিক ছোট্ট একটা কথা। এই ফুলমেন্দি রহস্য তোমার আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক। আমার কর্মচারি কিংবা পরিবারের সদস্যরাও জানবেনা এই রহস্য। আসলে কি জানো, যে কোন ব্যতিক্রমই মানুষকে আকর্ষিত করে। আমি রোজ সকালে ফুলমেন্দির সাথে এক বালতি পানি মিশিয়ে দোকানে এবং কাপড়ে ছিটাই, তাই আমার গ্রাহক সংখ্যা বেশি। হ্যাঁ, এই সুগন্ধিই মানুষকে আমার দোকানে আসতে আকর্ষিত করে।’

মানিক কথা দেয়। ‘না, এ রহস্য, রহস্যই থাকবে, তুমি নিশ্চিত থাকো, কেউ কোন দিন জানতে পারবে না তোমার ব্যবসায়িক কৌশল। আমার সাথে তোমার দেখাই হয় নি! মনে কর সবই স্বপ্ন, সন্ধায় দোকানে এসো চা খেতে।’

এভাবে জানু মিঞার গোপন বিজনেস কৌশল গোপনই থেকে যায়।

শাকিল আহমেদ সারাবাংলা সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর