Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বেদনা যত বেশি তার ভাষা তত কম’


১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৩৩

জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হইলো নিজের ইচ্ছারে ঠিক করা/ আমি খুব ঘুরতে ছিলাম, বেচাইন হয়ে আন্ধার মতো বইসা ছিলাম/ একগাদা অন্ধকার নিয়া/ কিন্তু আমি আমার ইচ্ছা জানতে পারলাম/ যখন তোমার ইচ্ছা জানতে পারলাম/ আর তুমি ছাড়া অন্যসব সংযোগ বেখেয়ালি বাতাসের মতো উইড়া গেল

দুনিয়ায় জীবনের নোঙর ফেলা নিয়ে, তার দিক-গতি ঠিক করা নিয়ে উপরোক্ত পঙক্তিগুলো প্রায় ১৩শ বছর আগে আরবি ভাষায় রচিত। আর এর রচয়িতা মধ্যপ্রাচ্যের প্রখ্যাত সুফি কবি হযরত রাবেয়া বসরী (রহঃ)। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে এই নাম সুবিদিত। খোদার সত্তায় নিজেকে বিলীন করে দেওয়া এই নারীর দর্শন-চিন্তা আর তার আলাপগুলো নিয়ে লিখেছেন আরেক বিশ্বখ্যাত সুফি কবি ফরিদউদ্দীন আত্তার (রহঃ)। ফার্সি ভাষায় লেখা প্রাচীন ওই গ্রন্থের পাতা বাংলা ভাষায় মেলে ধরছেন কবি ও অনুবাদক হাসসান আতিক।

বিজ্ঞাপন

রাবেয়া তার আলাপে কথা ও ভাবের মুক্তোদানা ছড়িয়েছেন। যেমন তিনি বলছেন— ঘর চাই না, ঘরের মালিকরে চাই, মাংস কাটার ছুরি যেন প্রেমরে কাইটা না ফেলে, লোকেরা শুধু ফুলটাই দেখে গাছটা দেখে না, বেদনা যত বেশি তার ভাষা তত কম।

শুধু রাবেয়া বসরী নয়, হাজার বছর আগের লেখা আত্তারের ওই কেতাব ‘তাজকিরাতুল আউলিয়া’ থেকে হাসসান তর্জমা করেছেন ‘সুলতানুল আরেফিন’ উপাধি পাওয়া হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর (রহঃ) জীবনীও।

‘সে এক নুকতাবিহীন আলিফের মতো’  এবং ‘কিছু জিব্বা তো এমন কান যার ভাষা জানে না’ শিরোনামে রাবেয়া বসরী ও বায়েজিদ বোস্তামীকে নিয়ে রচিত গ্রন্থ দুটি নিয়ে গত ২৭ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা হয় ঢাকার পরীবাগে অবস্থিত সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে। প্রকাশনা সংস্থা বাছবিচার ও প্রিন্ট পোয়েট্রি ‘রাইটার্স মিট’ নামে এই প্রোগ্রামের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে লেখকদের পাশাপাশি অংশ নেন বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, চিন্তকরা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন তরুণ লেখক ও দীক্ষিত পাঠকগণ।

বিজ্ঞাপন

এতে আলোচনা হয় সম্প্রতি বাছবিচার ও প্রিন্ট পোয়েট্রি প্রকাশিত আরও কয়েকটি বই নিয়ে। তার মধ্যে রয়েছে— কবিতা বিষয়ক আলাপ নিয়ে কবি ও চিন্তক ইমরুল হাসানের ‘কবি’, খাস বাংলার ভাষা ও দর্শন নিয়ে বিপুল কর্মযজ্ঞের আয়োজক রক মনুর ‘কবুল কবুল: কবুলিয়াতের শাসন’  এবং নারী বিষয়ক আলাপ নিয়ে কবি ইব্রাকর ঝিল্লীর ‘তিনখানা নারীবাদ’।

হযরত বায়েজিদ বোস্তামী ও হযরত রাবেয়া বসরীকে নিয়ে অনূদিত গ্রন্থ দুটির অংশ বিশেষ পাঠ করে আলোচকরা বলেন, মূল ফার্সি ভাষা থেকে অনূদিত হওয়ায় বই দুটি আনকোরা হয়ে উঠেছে। অনুবাদক ছুঁতে পেরেছেন ফরিদউদ্দীন আত্তারের টোনকে, তার এরাদাকে। এছাড়া এই তর্জমায় যে কোমলতা, আর্দ্রতা আর সরলতার সুর দেখা যাচ্ছে, বাংলা ভাষা-সাহিত্যে এটি অবশ্যই নতুন কিছু।

তারা বলেন, ফরিদউদ্দীন আত্তার উপমহাদেশের এক বিশেষ সম্পদ। তার রচনা সব সময় একপাক্ষিক বোঝাপড়ার সংস্কৃতিকে প্রশ্ন করে এবং তার উত্তর খুঁজতে সহায়তা করে। আত্তারের উদারতা, সবার কথা শোনার ও জানার প্রবণতা মানুষের সামাজিক হয়ে বেঁচে থাকার দারুণ এক পাথেয়।

অনুষ্ঠানে বই দুটির ভাষা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হয়। অনেকেই প্রমিত মানভাষার বাইরে গিয়ে করা এমন অনুবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তাদের উত্তরে অনুবাদক বলেন, ‘বায়েজিদ ও রাবেয়া বসরী এলিটিজম ত্যাগ করে, ওই সময়ের আমির-উমারাদের থেকে দূরে সরে গিয়ে ঝুপড়ি ঘরে থেকেছেন। উনারা কথা বলছেন ব্রাত্যজনের ভাষায়। উনাদের আবেগ আর বলার দরদ বুঝতে হলে তাই খোলস পরানো ভাষা ত্যাগ করতে হবে। আমরা দিনকার অনুভূতি প্রকাশে যেভাবে ভাষার ব্যবহার করি, তার কাছাকাছি টোনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো জোর-জবরদস্তিও করা হয়নি। তাছাড়া ভাষা একটি সদা-পরিবর্তনশীল বিষয়। এটি বহতা নদীর মতো, কিন্তু সবসময় একই স্রোতে চলে না। বাঁক বদল করে এবং নতুন ঢেউয়ে সঞ্চারিত হয়।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর