Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উড়াও শতাবতী (৮) মূল: জর্জ অরওয়েল, অনুবাদ: মাহমুদ মেনন


৩ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:৪০

<<শুরু থেকে পড়তে>>

রসটসটসা ও ঝালঝালে রমণীদ্বয় ততক্ষণে কুকুর নিয়ে তর্কে জড়িয়েছেন। একটি কুকুর বিষয়ক বইয়ে ছবিগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলেন রসকণ্ঠী। পিকে জাতীয় কুকুরের ছবি দেখে তা নিয়ে প্রশংসা জুড়ে দিলেন তিনি। চোখদুটো কী সুন্দর, কালো নাকটিও অসাধারণ, আর এদের ঘেউ ঘেউটাও বেশ ভালো লাগে শুনতে।

কিন্তু ঝালকণ্ঠীর, হ্যাঁ কোনো কর্নেলের বিধবা পত্নীই হবেন, নিঃসন্দেহে তা ভালো লাগলো না। তিনি বললেন, পিকেগুলো ছিচকাঁদুনে ধরনের হয়। কুকুর হবে সাহসী, লড়াকু, মত তার। এইসব কোলে চড়া ভাবপ্রবণ কুকুর তার মোটেই পছন্দ নয়।

‘তোমার মায়া বলতে কিছু নেই, বেডেলিয়া, এতটুকু মায়াও নেই তোমার মনে,’ বিলাপের সুর রসালোমুখীর স্বরে। ওদিকে দরোজাঘন্টি ফের বাজলো। কেমিস্ট কন্যার হাতে সেভেন স্কারলেট নাইটস ধরিয়ে দিয়ে সেটি তার টিকিটে টুকে নিলো গর্ডন। ওভারঅলের পকেট থেকে একটা ছেঁড়াখোড়া চামড়ার পার্স বের করে এনে দুই পেনি দাম শোধ করে সটকে পড়লো মেয়েটি।

এরপর সামনের কামরায় এগুলো গর্ডন। লুতুপুতু বালক ভুল তাকে বইটি তুলে রেখে আলগোছে বেড়িয়ে গেছে সেই কখনই। সামনের কামরায় পা ফেলতেই গর্ডনের চোখে পড়লো ভেতরে ঢুকছেন হালকা-পাতলা গড়নের খাড়ানেকো এক সতেজিনী। মানানসই বসন, সোনালি ফ্রেমের পিন্স-নেজ চশমা-স্কুলশিক্ষিকা হবেন হয়তো, তবে নারীবাদী যে তাতে সন্দেহমাত্র নেই। ওয়ার্টন বেভার্লির হিস্ট্রি অব দ্য সাফরেজ মুভমেন্ট’র একটা কপি চাইলেন। বইটি তাদের কাছে নেই, এমন একটা কথা বলতে বেশ গোপনানন্দ বোধ করছিলো গর্ডন। আর সে যে এক অধম পুরুষ সে বাক্যের ধারালো ছুরিখানা স্রেফ চোখের দৃষ্টি হেনে বুকে বিঁধিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন নারীটি। হ্যাংলা যুবক তখনও নতজানু ভঙ্গিমায় এক কোণায় দাঁড়িয়ে, মুখখানা ডিএইচ লরেন্সের সংগৃহীত কবিতা গ্রন্থে চুবিয়ে রাখা। বড় ঠ্যাঙওয়ালা পাখিরা ঠোঁটসমেত মাথাটা নিজেরই পালকের গভীরে যেমন করে লুকিয়ে রাখে, ঠিক তেমন।

বিজ্ঞাপন

দরোজায় দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি গর্ডনের। মলিন বেশ-ভুষার এক বৃদ্ধ সিক্সপেনি বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে বইগুলো নাড়াচাড়া করছেন। ঠাণ্ডায় তার নাকখানা স্ট্রবেরি রঙ ধরেছে, গলায় খাকি রঙের মাফলার প্যাঁচানো। দুই উচ্চ-মধ্যবিত্তা গাদাখানেক বই টেবিলের ওপর খোলা এবরো-থেবরো ফেলে রেখেই হঠাৎ চলে যেতে উদ্যত। যেতে যেতে রসমুখী একবার শেষবারের মতো কুকুর বিষয়ক বইগুলোর ওপর ঘাড় ঘুরিয়ে দৃষ্টি ফেললেন বটে, কিন্তু ঝালমুখী তাকে টান দিয়ে নিয়ে এগুলেন, মানে কিছুই কিনছেন না এরা। দরজাটি খুলে ধরে রাখলো গর্ডন। আর দুই নারী ফের কলকল করতে করতেই বাইরে বেরিয়ে গেলেন, তাকে সামান্য পাত্তাটুকুও দিলেন না। পশমি কোটে দুই উচ্চ-মধ্যবিত্তার গমন দৃশ্যটি দেখলো গর্ডন। স্ট্রবেরি-নেকো তখনও বই নাড়াচাড়ায় ন্যস্ত আর আপনমনে বকবকানি চলছে। মনে হচ্ছে, মাথায় সামান্য গোলমাল আছে। চোখে চোখে না রাখলে, বুড়োর হয়তো কিছু একটা ধান্ধাও ছিলো, মনে হলো গর্ডনের। বাতাস আরও হিম হয়ে বইছে। তাতে রাস্তার আলগা কাদাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। আলোগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে। বাতাসের ঘুর্ণিতে কিউ.টি সসের বিজ্ঞাপনের ছিঁড়ে যাওয়া কাগজের অংশটি তীব্র ঝাপটাচ্ছে। আহা! তার মগজে ঘুরছে সেই লাইন-

তীব্র ভীতির বাতাসে সদ্য ন্যাড়া গাছগুলো হয়ে গ্যাছে নত
চিমনি থেকে ওঠা কালো ধোঁয়ার ফিতেরা নিম্নমুখী
পোস্টারের ছেঁড়া কোণা ঘুর্ণি চাবুকে ঘুরছে অবিরত

[শার্পলি দ্য মেনাসিং উইন্ড সুইপস ওভার দ্য বেন্ডিং পপলারস, নিউলি বেয়ার, অ্যান্ড দ্য ডার্ক রিবনস অব দ্য চিমনিজ ভির ডাউনওয়ার্ড; ফ্লিকড বাই হুইপস অব এয়ার টর্ন পোস্টার ফ্লাটার।]

বিজ্ঞাপন

খারাপ না, একেবারেই খারাপ না। কিন্তু এরপর আর এগুতে মন চাইলো না… বস্তুত এগুতে পারলো না। পকেটের ভেতরে ক’টা কয়েন আঙ্গুলের খোঁচায় নাড়াচ্ছে, তবে শব্দ করাচ্ছে না, পাছে লাজুক যুবকের কান পর্যন্ত পৌঁছে যায় সে শব্দ। দুই পেন্স-হাপ পেনি। কাল সারাদিনে কোনো তামাক মিলবে না। সে ভাবনায় হাড্ডি পর্যন্ত ব্যথা ধরে ওঠে।

প্রিন্স অব ওয়েলসে আলো জ্বলার সময় হয়ে এসেছে। তাতে আলোকিত হয়ে উঠবে বারগুলোর দরজাপথ। স্ট্রবেরিনেকো তখন দুই পেনির বইয়ের বাক্সের সামনে দাঁড়িয়ে এডগার ওয়ালেসে যেন তার গভীর আগ্রহ। দূরে হুইসেল তুলে ছুটছে ট্রাম। উপরে নিজের কক্ষে মিস্টার ম্যাকেচনি, কদাচই নিচে নামেন, গ্যাস-আগুনের পাশে বসে ঝিমুচ্ছেন, সাদা চুল, সাদা দাড়ি, হাতে মিডলটনের ট্রাভেলস ইন দ্য লেভান্ট-এ বুদ হয়ে আছেন।

হ্যাংলা যুবকের হঠাৎই খেয়াল হলো দোকানে খদ্দের সে একা, আর সেটা ভেবে দোষী দোষী মুখ করে তাকালো। বইয়ের দোকানে সময় কাটানোয় তার অভ্যাস আছে। কিন্তু কোনো দোকানেই দশ মিনিটের বেশি থাকে না। সত্যিকার অর্থেই এক বইপোকা, তবে ফালতু কিছু করে না বসে সে জ্ঞান টনটনে। যেকোনো দোকানেই দশ মিনিট কাটিয়ে দিলে কেমন অস্বস্তিতে ভুগতে থাকে। নিজেকে তখন অপাংতেয় মনে হয়, আর আস্তে করে বেরিয়ে যায়। তবে এক ধরনের স্নায়ুবিক চাপ থেকে কিছু একটা কিনেও ফেলে, না কিনলে পাছে দোকানি কিছু বলে বসে এই ভয়। মুখে রা-টি না কেড়ে হাতে একটি লরেন্সের কবিতার বই তুলে আনলো আর বেখেয়ালিভাবে পকেট থেকে বের করে আনলো তিনটি ফ্লোরিন। সেগুলো গর্ডনের হাতে তুলে দিতে গিয়ে একটি আবার মেঝেতে ফেলেও দিলো। সেটা তুলতে দুজনেই একযোগে মাথা নোয়ালো আর তাতে মাথায় মাথায় টক্কর লাগলো। হ্যাংলা যুবা দ্রুত দাঁড়িয়ে পিছে সরলো, তার চোখে মুখে লজ্জিত হওয়ার অভিব্যক্তি।

‘বইটি আমি মোড়কে পুড়ে দিচ্ছি,’ বললো গর্ডন।

কিন্তু যুবা তার মাথা নাড়লো-বাধ্য না হলে তার মুখ থেকে কথা বের হয় না। বইটি হাতে তুলে দ্রুত বেরিয়ে গেলো, এমনই ভঙ্গি যে বড় অন্যায় করে ফেলেছে এখন সটকে পড়তে পারলে বাঁচে।

পরের অংশ…

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩১

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর