Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলার তেল বাংলার ঘি পুণ্য হোক পুণ্য হোক…


১২ এপ্রিল ২০১৮ ১০:৫৯

মর্দনের জন্য তৈল উত্তম। কিন্তু খাবার জন্য অবশ্যই ঘি।

তৈল প্রসঙ্গ এলে সবার আগে স্মরণে আসেন পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তিনি লিখেছেন:

তৈল যে কী পদার্থ তাহা সংস্কৃত কবিরা কতক বুঝিয়াছিলেন, তাহাদের মতে তৈলের অপর নাম স্নেহ বাস্তবিক স্নেহ ও তৈল একই পদার্থ। আমি তোমায় স্নেহ করি, তুমি আমায় স্নেহ কর, অর্থাৎ আমরা পরস্পরকে তৈল দিয়া থাকি। স্নেহ কী? যাহা স্নিগ্ধ বা ঠান্ডা করে তাহার নাম স্নেহ। তৈলের ন্যায় ঠান্ডা করিতে আর কিসে পারে!

যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘কাজের ছেলে’র মায়ের নির্দেশে কেনার কথা ছিল:
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
                    দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।

কিন্তু পথ চলতে চলতে সব গুলিয়ে গেল:
এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;
                  মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
                  দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
                  চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।

‘পদ্মার ইলিশ আর পাবনার ঘি/ জামাইয়ের পাতে দিলে আর লাগে কি?’
সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না। ঘি তুলতে আঙুলকে বাঁকাতে হয়।
ঘি কুকুরের পেটে হজম হয় না।

সাদাত হাসান মান্টো ‘কুত্তে কি মউত’- এ কুত্তার পেটে ঘি হজম না হওয়ায় ক্ষুব্ধ জমাদার কুকুরকে গুলি করেন। তবে অকৃপণ ঘি বর্ষিত প্রকৃত মোগলাই খাবার একালের মানুষকেও মেরে ফেলার কথা।

সেকালের পণ্ডিতগণ ঘিকে ঘি বলতেন না। ‘ঘি বলিলে তাঁহাদের রসনা অশুদ্ধ হইত, ‘আজ্য’ই বলিতেন, কদাচিৎ কেহ ঘৃতে নামিতেন।’

শাস্ত্র পবিত্র ঘি ভক্ষণের অনুশাসন দিয়েছে। যুধিষ্ঠির যদিও বলেছেন, সুখী ব্যক্তি তিনিই, যিনি ঋণগ্রস্ত নন, বাঙালির পছন্দ লোকায়ত বা চার্বাক দার্শনিকের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: ‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেত্’ ঋণ করে হলেও ঘি খেতে হবে। তাহলেই                                   ‘যাবজ্জীবেত্ সুখং জীবেত্।
                   নাস্তি মৃত্যোরগোচরঃ।
                   ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতঃ ।

বিজ্ঞাপন

মৃত্যু থেকে নিষ্কৃতি নেই। মরদেহ পুড়িয়ে ফেললে তা কেমন করে ফিরে আসবে?

নজরুলের জাতের নামে বজ্জাতিতে ভস্মে ঘি ঢালার উপমা:
ভস্মে ঘৃত ঢালা সে যে বাছুর মেরে গাভী দোওয়া
                বলতে পারিস বিশ্ব-পিতা ভগবানের কোন সে জাত?
               কোন ছেলের তাঁর লাগলে ছোঁওয়া অশুচি হন জগন্নাথ?
               নারায়ণের জাত যদি নাই,
               তাদের কেন জাতের বালাই?

বীজ নিষ্পেষণে তেল পাওয়া যায় আর দধি মন্থনে ঘি।
এক পয়সার তৈল
              কিসে খরচ হৈল
             তোমার দাড়ি আমার পায়
              আরো দিলাম ছেলের গায়
              ছেলেমেয়ের বিয়ে হল,
              সাতরাত গান হল
             কোন অভাগী ঘরে এল
             বাকি তেলটা ঢেলে নিল।

অবন ঠাকুরের বর্ণনাটি মনে পড়ে, যখনই তেলের দাম বাড়ে। তেলের ঘানি, কলু এসব এখন গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। যন্ত্রযুগ যান্ত্রিক ঘানি এনেছে, কলুর প্রয়োজন নেই, বলদেরও না। ঠুলি এখন মানুষের চোখে। এ নিবন্ধটিতে তেলের কিঞ্চিত্ উল্লেখ রয়েছে, বাকীটা ঘি নিয়ে। ধারকর্জ করেও ঘি খাওয়ার দর্শন থেকেই তো আজ আমাদের পকেটে পকেটে ক্রেডিট কার্ড। সে কালের কাবুলিওয়ালা এখন প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা পেয়ে ব্যাংক নামধারণ করেছে।
আমাদের শৈশবে পড়া রওশন ইজদানির ছড়ার পঙ্ক্তি
গঙগারামের বৌ নারে–
              গঙগারামের ঝি,
              শিকায় ভরে তুলে রাখে
              ভাণ্ডা ভরা ঘি।
              ভাণ্ডা ভরা ঘি নারে
              ভাণ্ডা ভরা তেল
              কেমন করে একটা বিয়ের
              খরচ হয়ে গেল।

গাড়োয়ার ঘৃত
পালামৌর অন্তর্গত গাড়োয়ার হাট প্রত্যেক শনিবার ঘিয়ের সুগন্ধে ম-ম করে। গাড়োয়ার হাটের শ্রেষ্ঠ ঘি আসে দুর্গম পর্বতশ্রেণীবেষ্টিত সোরগুঁজা থেকে। গরুর পিঠে বোঝাই করে প্রায় অর্ধশত ক্রোশ পথ অতিক্রম করে সোরগুঁজার বেপারি গাড়োয়ার হাটে ঘি নিয়ে আসেন। সোরগুঁজার মানুষ শ্রী আশুতোষ রক্ষিতের ভাষায়, ‘অসভ্য বটে কিন্তু তাহারা অতিশয় নিরীহ। ইহারা যে সকল ঘৃত প্রস্তত করে তাহা সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ, কোনও রূপ কৃত্রিমতা ইহাদের মধ্যে নাই।’ ঘিতে যে ভেজাল দেয়া যায়, এ ধারণাই তাদের নেই।

বিজ্ঞাপন

কবি জসীমউদ্দীন আমেরিকা সফরের এক পর্যায়ে কান্ট্রি সাইডে এক গৃহস্থপত্নীর সঙ্গে আলাপের একপর্যায়ে বললেন, তোমাদের গরু তো অনেক দুধ দেয়, এর সাথে কিছু পানি মিশিয়ে নিলেই পারো, ওজন বাড়বে, বেশি লাভ হবে।

গৃহস্থপত্নী এ প্রস্তাব শুনে বিস্মিত হলেন। বললেন, এই অপরাধমূলক চিন্তাটা তোমার মাথায় এল কেমন করে। যে দুধ আমেরিকার শিশুরা খাবে, যে শিশুরা আগামী দিনের আমেরিকাকে গড়ে তুলবে, তুমি তাদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করতে পারো না।

এ দেশের গৃহস্থ হয়তো আগামী প্রজন্মের কথা ভাবেননি, কিন্তু কাজটা যে সঠিক নয়, এটা বেশ জানতেন।

বাংলার ঘরে ঘরে কমবেশি ঘি হতো। সোরগুঁজার গৃহস্থদের এক থেকে দেড়শ’ মহিষ ও গাভী থাকত। খাঁটি দুধ থেকে তৈরি হতো গাড়োয়ার হাটে বিক্রির ঘি।

‘মহিষের দুগ্ধ দোহন করিয়া জ্বাল দিয়া অর্থাৎ বেশ গরম করিয়া বড় বড় কলসীতে ওই জ্বাল দেয়া দুগ্ধ জমাইয়া প্রথমত দধি প্রস্তত করিয়া দধি ভালরূপে জমিলে ওই সকল দধির কলসীর ভেতর কাষ্ঠ নির্মিত মন্থনের সাহায্যে দধি হইতে মাখন তুলিয়া লয়। এক সপ্তাহের মাখন জমিলেই উহা সামান্য অগ্নির উত্তাপে গলাইয়া ঘৃত প্রস্তুত করে। এই বিশুদ্ধ ঘৃত ইহারা বিক্রয়ার্থ হাটে আনিয়া থাকে, কোনও রূপ উদ্ভিজ্জ তৈল কিংবা চর্বি দিয়া ইহারা ভেজাল করিতে জানে না।’

যে ঘি সাদা রঙের, তা বিশুদ্ধ মহিষদুগ্ধ থেকে তৈরি। যে ঘি কিঞ্চিত্ হরিদ্রাভ, তা গরু-মহিষের দুগ্ধের মিশ্রণে তৈরি। যে ঘি সম্পূর্ণ হরিদ্রাভ, তা সম্পূর্ণভাবে গরুর দুধেরই।

খাঁটি ঘিয়ের সার্টিফিকেট
১৩১৮ বঙ্গাব্দে, ১০৭ বছর আগে দেয়া একটি ঘি বিশ্লেষণ সার্টিফিকেট। কলকাতার অ্যানালিটিক্যাল অ্যান্ড কনসাল্টিং কেমিস্ট সি শুলটেন গাড়োয়ার ঘি বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদনটি দিয়েছেন:

Saponification value                           225.2
Reichert-Wollny value                       25.1
Iodine value                                         25.2
Spacific Gravity at 1000c                  0.865
Insoluble fatty acids                          80.4
Water                                                    Trace
Baudouin Test                                     Negative

All the above figures are well within the limits for pure Butter fat.
In my opinion and from the above data the Ghee is pure.

(Signed) C Schulten

ঘি পবিত্র- ঘৃতং পূতম ।
পবিত্র দ্রব্যকে অপবিত্র করা গোনাহের কাজ।
ঋগ্বেদ পবিত্র ঘি খাওয়ার অনুশাসনই দিয়েছে।
ভোজনবীর কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙ্গালির ঘি-কে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন:
অপরিপাকে মরণভয়
           গৌড়জনে করেছে জয়,
           তাদের লাগি কোরো না
           কেহ শোক।
           লঙ্কা আনো, সর্ষে আনো, সস্তা
           আনো ঘৃত,
           গন্ধে তার হোয়ো না শঙ্কিত।
           আঁচলে ঘেরি কোমর বাঁধো,
           ঘণ্ট আর ছেঁচকি রাঁধো,
           বৈদ্য ডাকো– তাহার পরে
           মৃত।

তেলের দ্রব্যগুণ যত বেশিই হোক না কেন, বিনিময় মূল্য কম হওয়ার কারণে ঘিয়ের ভেজালে মুখ্য উপদান তেল ও চর্বি। কম দরের ঘি মানে তেলা ঘি। যতক্ষণ না এই তেল অস্বাস্থ্যকর প্রমাণ করা যাচ্ছে, তেলের মিশেল দিতে আইনি বাধা থাকছে না।
সত্যযুগ থেকেই নাকি ঘৃতে ভেজাল মেশানো হয়ে আসছে। তাহলে ভেজাল ঘি নিয়ে আর এত হইচই কেন?

ঠিক ১০৭ বছর আগে ২০ মে ১৯১১ কলকাতার মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেট ভেজাল ঘিতে কচুরি, গজা, নিমকি ইত্যাদি ভাজার জন্য এবং জলোদুধ ও ভেজাল শর্ষের তেল বিক্রির জন্য অনেককে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন।
ভেজাল ঘির জন্য যেসব ‘ফড়িয়া’ অর্থদ- দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন:
১. পঞ্চানন দাস, লালা বাবুর বাজার, ৪০ টাকা;
               ২. গোপীনাথ ঘোষ, ৬৫ লোয়ার সার্কুলার রোড, ২৫ টাকা;
               ৩. জয়নারায়ণ, ৬৩ সিমলা স্ট্রিট, ২৫ টাকা;
               ৪. পান্নালাল, ১৪৬ বহুবাজার স্ট্রিট, ২৫ টাকা;
               ৫. মহাদেব, ১৬৮ কটন স্ট্রিট, ২০ টাকা;
               ৬. মনোহর বাজপাই, ১১৯ করপোরেশন স্ট্রিট, ২০ টাকা;
               ৭. হরিদাস দাস, ৮ ঠাকুর ক্যাসল রোড, ২০ টাকা;
                ৮. শঙ্কর, ২৬ ব্রাহ্মণপাড়া লেন, ২০ টাকা

এই আটজন ভেজাল ঘি বিক্রির জন্য দণ্ডিত। চর্বি মেশানো ঘি বিক্রির জন্য ১৬৩ কটন স্ট্রিটের মুরলীর ৩০ টাকা অর্থদণ্ড হয়েছে।

রাজশাহীর মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট নাটোরে মিষ্টান্নের দোকানে ভেজাল ঘির ব্যবহার লক্ষ করে দোকানের খাবার ফেলে দিয়েছেন এবং দোকানদারকে দণ্ড দিয়েছেন।

চর্বি মেশানো হলেও ব্যাপারটি ভেজালই, তবু চর্বিকে সেবারই প্রথম আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চর্বি নিয়ে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই ধর্মীয় দিক থেকে বিশেষ আপত্তি রয়েছে (এনফিল্ড রাইফেলের কথা মনে করা যেতে পারে। কার্তুজের আবরণে গরু ও শূকরের চর্বি থাকার সংবাদ উভয় সম্প্রদায়কে একই সঙ্গে চটিয়ে দিয়েছিল), তা সেপাহি বিদ্রোহ ঘটিয়ে দিতে পরে।

১২৯০ বঙ্গাব্দে খাঁটি ঘিয়ের মণপ্রতি দর ছিল ২৫ থেকে ২৭ টাকা। ১৩১৯ বঙ্গাব্দের হিসাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে এক মণ ঘিয়ের উৎপাদন খরচই পড়ে ৬০ টাকা, সেখানে ৩৬ টাকা দরে ঘি বিক্রি হলে তা খাঁটি হওয়ার কোনো কারণই নেই। এ ঘিয়ের ষোলো আনার নয় আনাই ভেজাল।

কাজেই এই দরে বাজারে যে ঘি বিক্রি হয় তা হয় তেলা ঘি, নয়তো চর্বি ঘি। শোনা যায় ষোলোআনা ঘিয়ের মধ্যে সাতআনা কেবল ঘি। বাকিটুকু মিশেল। তবে তেলা ঘি ও চর্বি ঘির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে উভয় ঘি বাজার থেকে তাড়াতে পারলে ‘ঘৃত সমিতির ঘীর দর ৮০-১০০ টাকা মণ হইবে বলিয়া আশা করা যায় এবং তখনই ঘৃত যথার্থ দেব-দুর্লভ হইবে। অনেককেই আর ঘৃত খাইতে হইবে না, তখন উহারা বলিবে ঘৃত নামে একটি পদার্থ ছিল, তাহা আমাদের আর্য্যেরা ভক্ষণ করিতেন।’

শতবর্ষ আগের ঘি পাইকারদের আকুতি
ভেজাল ঘি বিক্রির জন্য কিছু সংখ্যক ঘি বিক্রেতা দ-প্রাপ্ত হওয়ায় সার্বিকভাবে ঘি শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। উৎকৃষ্ট ঘি ও অপকৃষ্ট ঘি যে এক নয়, তা কোনোক্রমেই তুলনীয় নয়। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন তা বিবেচনায় না এনে সবাইকে এক পাল্লায় মাপার চেষ্টা করছে। এতে ঘি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ক্ষুব্ধ। ২৫ এপ্রিল ১৯১২ ঘি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ১৫৪ কটন স্ট্রিট কলকাতা অফিস থেকে কলকাতা করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে যে পত্র দেয়া হয়েছে, তাতে করপোরেশনের হেলথ অফিসারের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে। চিঠির একাংশ:
‘৩। যে আপনার নিকট বিনীত আবেদনকারীদের প্রধান দুঃখ এই— যে ঘি প্রাচীনকাল হইতে উৎকৃষ্ট বলিয়া বিবেচিত আছে এবং যাহা তাহারা কোন প্রকার নিন্দা নালিশের ভয়ে ভীত না হইয়া পুরুষানুক্রমে বিক্রয় করিয়া আসিতেছে, সেই ঘৃতের আমদানীর জন্য তাহাদের কাহাকেও দ- দিতে হয়।
৪। যে আপনার আবেদনকারীরা চিন্তা করিতে ও বিশ্বাস করিতে সাহস রাখে যে, তাহারা প্রমাণ করিতে পারিবে উপরি লিখিত অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটিবার প্রধান কারণ এই যে, যদিও করপোরেশনের ঘৃত বিশ্লেষণ করিবার পদ্ধতি সন্দেহজনক, তথাপি সেই পদ্ধতি কঠোরভাবে চালানো হয়।
৫। যে সমস্ত ঘৃত বিক্রেতা ব্যবসার ক্ষতি হইতে পারে যদ্যপি কোনো ধরনের ভেজাল বোঝাইতে ফরেন ফ্যাটযুক্ত বলিয়া বর্ণনা করা হয়। কারণ দেশীয় ভাষায় উহার প্রতিশব্দ চর্ব্বি, নিষ্ঠাবান হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মভাবকে আক্রমণ করিবে।
৬। আপনার আবেদনকারীরা এই মত পোষণ করে যে, মিশ্রিত ঘি সাধারণ সমক্ষে সস্তায় বিক্রীত হয় বলিয়া খাঁটি ঘি ক্রেতা প্রতিদিনই কমিয়া যাইতেছে এবং দেশ মিশ্রিত ঘির দ্বারা দূষিত হইতেছে।
৭। অতএব আপনার বিনীত আবেদনকারীরা সসম্ভ্রমে প্রার্থনা করে আমাদিগের প্রকৃত দুঃখের কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিশন বা অন্য কোনো বিশ্বস্ত তদন্তকারী নিযুক্ত করুন।…
৮। এই তদন্ত সমন্ধে যদি কোন খরচ লাগে তাহার আবশ্যকীয় অংশ এই দরখাস্তকারীরা বহন করিতে প্রস্তুত আছে।…

আপনার অনুগত ভৃত্যেরা
শ্রী সিউচরণ বাবু, শ্রীযোগেন্দ্রনাথ দত্ত, শ্রীবিশ্বেশ্বর লাল বাবু প্রমুখ
তারিখ ২৫/৪/১২’

ক’দিন পর ঘি মার্চেন্ট সমিতির পক্ষে একটি মন্তব্য করা হয়েছে:
‘দুঃখের বিষয় আজ ৯ই মে, অদ্যাপিও এ পত্রের উত্তর চেয়ারম্যান বাহাদুর প্রদান করেন নাই এবং সুখের বিষয়, আজ ৬ মাস সমিতির সদস্যদিগের ঘি ধরিয়া দ- করা হয় নাই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ৮/১০ মাস পূর্বে যে সকল ভেজাল ঘৃত বিক্রেতার দ- হইয়াছিল তাহাই এক্ষণে সংবাদপত্রে নতুন করিয়া বাহির হইতেছে।’

চর্বির ঘি- সাবধান
‘গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চর্ব্বির ঘি ভক্ষণ করিয়া কুষ্ঠরোগের সৃষ্টি করা হয়। মেদিনীপুর মানভূম প্রভৃতি স্থানে পেঁয়াজ ও চর্ব্বির ঘি চালাইয়া কুষ্ঠরোগের প্রাদুর্ভাব হিন্দুদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে। … খাদ্য-দ্রব্যের দুর্মূল্যতা যদি ইহার কারণ হয়, তাহা হইলে এই সময় কার্পাস তৈল ব্যবহার করা হউক। কারণ ইহা দামে সস্তা।’

মহাজন-বন্ধু পত্রিকার ভাদ্র ১৩১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত কার্পাস বীজের তৈল নিবন্ধে চর্বিযুক্ত ঘি খেয়ে (চর্বি যদি গরুর হয়) হিন্দুর ধর্মনাশের আশঙ্কাও করা হয়েছে।

কম দরের ঘি মানেই তেলা ঘি। আর যতক্ষণ না এই তেল অস্বাস্থ্যকর প্রমাণ করা যাচ্ছে, তেলের মিশেল দিতে কোনো আইনি বাধাও তখন থাকছে না। মহাজনবন্ধুর ১৩১৯ সনের বৈশাখ সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, “পরন্তু আমাদের মোকামে ঘৃত যাহা কলিকাতায় আসিয়া বিক্রয় হয়, তাহার গ্রাহকমাত্রেই জানেন যে, যখন উহা মুখে ফেলিয়া খাইয়া পরীক্ষা করা হয়, তখন উহা গলায় ‘কির কির’ করিতেছে বলিলেই বুঝিতে হইবে, উহাতে তেল আছে।…

                 ‘তেলা ঘী আছে বলিয়াই ভালো ঘীর দর বেশি হয় এবং ঘৃতের প্রকারভেদ হয়।’

বাংলার যেসব জেলায় চর্বি ঘি বিক্রয় হয়, মহাজনবন্ধুর অনুসন্ধান মতে, সেই ঘিয়ের কারখানা ট্রেটিবাজার, মানিকতলা ও মুরারিপুকুর রোডে। কারখানার বেতনভুক কর্মচারীরা বাংলার ঘরে ঘরে সস্তা দামের চর্বি ঘিয়ের প্রচারণা চালাচ্ছিল। যেদিন ম্যাজিস্ট্রেট সিন্থিয়ার বিভিন্ন দোকান হতে চর্বি ঘি ফেলে দিচ্ছিলেন, চর্বি ঘির প্রচারকরা সন্ত্রস্তÍ হয়ে সিন্থিয়া থেকে বোলপুরে পালিয়ে যায়। সেদিন আরও প্রকাশ পায় চর্বি ঘির সব চালানই পাঠিয়েছে ফকিরচাঁদ চক্রবর্তী।

‘মহাজনবন্ধুর প্রশ্নের জবাবে একজন চর্বি ঘির প্রচারক ও বিক্রেতা বলেন, ‘তাদের ঘি শহরে ও মফস্বলে ভালো বাজার পেয়েছে। ২৫-২৭ টাকার ঘিয়ের দর ষাটে ঠেকেছে। ‘ডাবল অপেক্ষা ঘীর দর বৃদ্ধি হইয়াছে। লোকের আয় কম, ব্যয় বৃদ্ধি, কোথায় টাকা পাইবে? কাজেই সস্তা চায়। পশ্চিমে ঘী কি ভালো? তাহাতেও বাদাম তেল, মহুয়ার তেল ভেজাল চলিতেছে। কাটতি বৃদ্ধি ফলন কম, কাজেই ভেজাল দিয়া জিনিস না বৃদ্ধি করিলে সংকুলান হইবে কোথা হইতে? পরন্তু চর্ব্বি কি মানুষের খাদ্য নহে? সাহেবরা চর্ব্বি খায়, আপনারা কি পাঁঠার চর্ব্বি খান না? আপনারা নিশ্চয়ই জানিবেন, ঘীর দর যত তেজ হইতেছে, ঘীর কাজটা ততই মরিয়া যাইতেছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যের পক্ষে চর্ব্বি কিছুতেই মন্দ নহে। হিন্দুদের পরোটার দোকানে টাটকা কাঁচা চর্ব্বি ব্যবহৃত হয়। সেই পরোটা অনেকেই খাইয়া থাকে।’

ফরাসি পর্যটক বার্নিয়েরের সফরনামা (১৬৫৬-১৬৬৮) ঘেঁটে মোগল ভারত থেকে ঘি রফতানির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন বিনয় ঘোষ। বার্নিয়ের সে সময় রফতানির প্রশ্নে প্যাকেজিংকে প্রধান বাধা হিসেবে দেখেছেন। তিনি বলেন, এত বড় বড় মাটির পাত্রে ঘি-মাখন থাকে যে বাইরে চালান দেওয়া কষ্টকর। বিনয় ঘোষ ঊনবিংশ শতকে ঘি রফতানির একটি হিসাব দিয়েছেন : এপ্রিল-জুন, তিন মাসের হিসাবপরিমাণ (পাউন্ড)১৮৮৯ ১৮৯০ ১৮৯১ সালে যথাক্রমে ৪,৬৯,৫৮১ ৫,১১,২৫৪ ৫,৩০,৫৪৩ পাউন্ড।
১৮৫২ সালে প-িত তারকানাথ বনস্পতি ঘি-র ব্যবসা মাথায় রেখে প্রতি বিঘা দুই আনা কর ধার্য করে দশ হাজার বিঘা জংলাভূমি চাষের জন্য গ্রহণ করেন এবং দুগ্ধ প্রদানক্ষম পাঁচশ গাভী ক্রয় করেন। তখনও রেল চালু না হওয়ায় মুটের সাহায্যে বীরভূম থেকে ঘি কলকাতায় এনে বিক্রির ব্যবস্থা করতেন। ভেষজ মাখন, মার্জারিন ইত্যাদির ব্যবহার ইউরোপে বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার ভারতবর্ষীয় পরিবারগুলোর মধ্যে ঘিয়ের ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে। কম দরের ঘি মানেই তেলা ঘি। তেলে দ্রব্যগুণ যত বেশিই হোক না কেন, বিনিময় মূল্য কম হওয়ার কারণে ঘিয়ের ভেজালে তেল ও চর্বিই মুখ্য ভূমিকা রাখছে।

‘ঘৃতং পূতমথ ঋগ্গ্বেদের এই অনুশাসন মানতে হলে নির্ভেজাল ঘি খাওয়াই উত্তম। তেলা ঘি বা চর্বি ঘি নয়। সে ক্ষেত্রে গৃহে প্রস্তুত ঘিয়ের পরোটার চেয়ে ভালো কিছু নেই।

‘অপরপক্ষে তেল ঘী ভাল, চর্ব্বি কিছুতেই হিন্দুর ভক্ষ্য দ্রব্য নহে এবং উহা এখনো ঘীর মূল্যেই বিক্রীত হয়, উহাকে ঘী বলিয়া ঠকাইয়া বিক্রি করে। বড় বড় ডাক্তারেরা বলিতেছেন, তেল ভাল, কিন্তু চর্ব্বি ভাল নহে।’

যারা খাঁটি ঘি ব্যবসায়ী তাদের দাবি
‘সমুদয় মোকামের ঘৃতকে রাসায়নিক পরীক্ষা করাইয়া তাহার সার্টিফিকেট পিত্তলের সরু চাদরে অঙ্কিত করিয়া প্রত্যেক কানেস্ত্রার গায়ে মারা হউক না কেন?’

শেষকৃত্যে ঘি
চিতা বহ্নিমান রাখতে দরকার ঘি। মৃতের আর্থিক সঙ্গতি বলে দেবে চিতা সাজাবে চেলাকাঠ নাকি চন্দন। চর্বিমাখা ভেজাল ঘি নাকি গাড়োয়ার স্পেশাল। সতীদাহেও ঘিয়ের ব্যবহার ছিল।
ঘৃতাহুতি – মন্ত্রপাঠ সহকারে যজ্ঞাগ্নিতে ঘৃত নিক্ষেপ।
শঙ্খ ঘোষের যমুনাবতীর কয়েকটি পঙক্তি:
দূর্বাতে তার রক্ত লেগে
            সহস্র সঙ্গী
            জাগে ধক্ ধক্, যজ্ঞে ঢালে
            সহস্র মণ ঘি।
            যমুনাবতী সরস্বতী কাল যমুনার বিয়ে
            যমুনা তার বাসর রচে বারুদ বুকে দিয়ে
            বিষের টোপর নিয়ে।
            যমুনাবতী সরস্বতী গেছে এ পথ দিয়ে
            দিয়েছে পথ, গিয়ে।
            নিভন্ত এই চুল্লীতে বোন আগুন ফলেছে।

ভেজাল ঘি
কম দামের চর্বিযুক্ত ঘি বাংলার বাজার ছেয়ে ফেলেছে। কলকাতায় মানিকতলা, টেট্টিবাজার ও মুরারিপুকুর রোডে চর্বির কারখানা বসেছে। এদের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা বাংলার সর্বত্র এই চর্বির চালান দিয়ে বেড়াচ্ছে। ফুড ইন্সপেক্টর দেখেও না দেখার ভান করছেন।

অনুসন্ধানী রিপোর্টার জানাচ্ছেন:
‘যেদিন সিন্থিয়ার দোকানগুলি হইতে চর্ব্বির ঘী ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় ফেলিয়া দিতেছেন, সেইদিন জনৈক চর্ব্বির ঘীর প্রচারক ভয় পাইয়া সিন্থিয়া হইতে পলাইয়া বোলপুরে আসিয়াছিল। অধিকন্তু সিন্থিয়াতে চর্ব্বির ঘী যাহা সকল দোকানেই ছিল তাহা কলিকাতার কাশীপুর হইতে ফকিরচাঁদ চক্রবর্তী চালান দিয়াছিল।… কিন্তু কাশীপুরে ফকিরচাঁদের সন্ধান আমরা পাই নাই।
চর্ব্বির ঘৃতের প্রস্তুুতকারক মাত্রেই মুসলমান বলিয়াই সকলের জানা ছিল, এক্ষণে তাহাদের সঙ্গে ব্রাহ্মণের সংস্রবের কথা শুনিয়া আমরা বিস্মিত হইতেছি।’

কমদরা ঘি
‘ঘৃতাত্ অষ্টগু নং তৈলং মর্দ্দনে নতু ভক্ষণে।’
অঙ্গে মর্দনের জন্য তেল ভালো, ভক্ষণের জন্য নয়। বহুগুণে গুণান্বিত ঘির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। কম দামি বিকল্প ঘি বাজারে চলে এসেছে, খাঁটি ঘি বাজার থেকে সরে যাচ্ছে। ব্যাপারটি অর্থনীতিবিদ গ্রেসামের তত্ত্বের মতোই— খারাপ টাকা ভালো টাকাকে বাজার থেকে হটিয়ে দেয়।

ভরসা ‘তৈল সম্ভুত ঘৃত’
‘কমদরা ঘী বলিলে তেলাঘী বোঝায়। একথা আবহমান কাল হইতে চলিয়া আসিতেছে। পরন্তু আমাদের মোকামে ঘৃত যাহা কলিকাতায় আসিয়া বিক্রয় হয় তাহার গ্রাহক মাত্রেই জানেন যে, উহা যখন মুখে ফেলিয়া খাইয়া পরীক্ষা করা হয়, তখন উহা গলায় কিরকির করিতেছে বলিলেই বুঝিতে হইবে উহাতে তৈল আছে।’

অবশ্য ঘি গবেষকরা খানিকটা ছাড় দিয়েছেন: অস্বাস্থ্যকর না হলে মেশানো যায়।
‘বাজারে খাদ ও খাঁটি স্বর্ণ আছে, ঘীও তাই।’

ঘিয়ের বিজ্ঞাপন
১. শ্রীঘৃত সম্পর্কে ইম্পিরিয়াল কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চের ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীযুক্ত পি.এম. খরেগট, সিআইআই, আইসিএস মহোদয়ের অভিমত:
‘আমি এই ল্যাবরেটরীতে ঘৃতের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা এবং ঘৃত তৈয়ারকালীন কোন সময়ই হস্তদ্বারা স্পৃষ্ট না করার চমত্কার ব্যবস্থাগুলি দেখিয়া বিশেষ প্রীতি লাভ করিয়াছি। অন্যান্য ঘৃত প্র¯স্তুতকারক যদি এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেন তবে ভালোই হয়। রঞ্জিত মহাশয়ের প্রচেষ্টা অভিনন্দিত হওয়ার যোগ্য।’

২. রবীন্দ্রনাথ যখন বিজ্ঞাপনের মডেল
কার্তিক ১৩৪৭, প্রবাসীতে এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত। পৌষ ১৩৪৭, প্রবাসীতে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি যথেষ্ট আগ্রহ সঞ্চার করে। বিজ্ঞাপনের ‘মডেল’ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
শ্রীঘৃত (SREEGRETA) সম্পর্কে কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথের বাণী
‘বাংলাদেশে ঘৃতের বিকারের সঙ্গে সঙ্গে যকৃতের বিকার দুর্নিবার হয়ে উঠেছে। শ্রীঘৃত এই দুঃখ দূর করে দিয়ে বাঙালীকে জীবনধারণে সহায়তা করুক এই কামনা করি।’

লক্ষাধিক লোকের অনুরোধে এক-সেরা টীনে শ্রীঘৃতের প্রচলন

‘আমরা প্রায় লক্ষাধিক লোকের নিকট হইতে শ্রীঘৃতের সমন্ধে তাঁহাদের অভিমত প্রার্থনা করিয়াছিলাম এবং তাহার উত্তরে অধিকাংশ লোকই বলিয়াছেন যে, অল্প পরিমাণ ঘৃত ক্রয় করিবার সময় তাঁহারা প্রকৃত শ্রীঘৃত পাইতেছেন কিনা নিশ্চিত হইতে পারেন না। ইহার প্রতিকারার্থে এক-সেরা টীনে শ্রীঘৃত প্রচলিত হইল। ইহাতে যে সকল সুবিধা তাহার মধ্যে কয়েকটি এই-
১। প্রকৃত শ্রীঘৃত অল্প পরিমাণেও বন্ধ টীনে পাইবেন।
২। টীনের জন্য কোনরূপ মূল্য দিতে হইবে না।
৩। পাচক, ভৃত্য প্রভৃতি ইচ্ছা করিলেও দস্তুরীর লোভে শ্রীঘৃত বলিয়া অন্য কাজে ঘৃত চালাইতে পারিবে না।’

‘বাংলার ঘি রফতানি হচ্ছে’
এশিয়া মানচিত্রে শ্রীঘৃতের একটি বিজ্ঞাপন।
সুদূর প্রাচ্যেও শ্রীঘৃতের বিজয় অভিযান।
বার্মা, স্ট্রেট সেটলমেন্ট, মালয়, শ্যাম, চীন, ফিলিপাইন, ইন্দোচীন, জাভা, সুমাত্রা, ফরমোসা, আন্দামান, ফিজি ও জাপান।
মানচিত্রের এক প্রান্তে ফিজি দ্বীপপুঞ্জকেও দেখানো হয়েছে।

কলু সম্প্রদায় বিলুপ্তির পথে
কলু তেলবীজ থেকে তেল উৎপাদনে নিয়োজিত পেশাজীবী সম্প্রদায়, ঘানিতে সরিষা, তিসি, সূর্যমুখী, ভেন্না, শুকনো নারিকেল উপাদান তেল তৈরী করে। ঘানি টানকে কলু বলদ ব্যবহার করে। কলু সম্প্রদায় বিলুপ্তির পথে।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন:
 ‘বাস্তবিকই তৈল সর্বশক্তিমান; যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যার অসাধ্য, যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের                                  অসাধ্য, তাহা কেবল একমাত্র তৈল দ্বারা সিদ্ধ হইতে পারে।…

তৈলের মহিমা অতি অপরূপ। তৈল নহিলে জগতের কোন কাজ সিদ্ধ হয় না। তৈল নহিলে কল চলে না, প্রদীপ জ্বলে না, ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয় না, চেহেরা খোলে না, হাজার গুণ থাকুক তাহার পরিচয় পাওয়া যায় না, তৈল থাকিলে তাহার কিছুরই অভাব থাকে না।’

নজরুলের দ্বীপান্তরের বন্দিনী- তে তেল ঘি কলু ঘানি নবই কুলে এনেছেন:
দ্বীপান্তরের আন্দামান,
                    বাণী যেথা ঘানি টানে নিশিদিন,
                    বন্দী সত্য ভানিছে ধান,
                    জীবন চুয়াানো সেই ঘানি হ’তে
                    আরতির তেল এনেছ কি?
                    হোমানল হ’তে বাণীর রক্ষী
                    বীর ছেলেদের চর্বি ঘি?

তবে তাই হোক। ঢাক অঞ্জলি,
                    বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ!
                    দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে
                     যুগান্তরের ঘুর্ণিপাক!

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর