Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য-এর কবিতা


১ মে ২০২২ ১৯:১৬

আমার মৃত্যুর পর

 

প্রথম দিনটা আমি ফেসবুক পোস্ট হবো, ভেজা ভেজা পোস্ট, কখনো নাতিশীতোষ্ণ তাপানুকূল পোস্ট। অন্তত কুড়ি জন আমার স্মৃতির তৃণ জিরাফের মতো রোমন্থন করবে অন্তত আট ঘণ্টা। এদের মধ্যে কেউ আমার প্রেমিকা, বা সম্ভাব্য প্রেমিকা, কেউ প্রেমিক, কেউ ভক্ত, কেউ কন্যা, কেউ কাকা, কেউ কেকা, কেউ খালা, কেউ শালা, কেউ বন্ধু, কেউ শিক্ষক, কেউ বা ছাত্র, আবার কেউবা ক্লাসমেট।

কতিপয় অখ্যাত, আধাখ্যাত নিউজ পোর্টাল আমার মৃত্যুর খবর প্রচার করবে। এতে তাদের অন্তত কুড়িটা ক্লিক জমা হবে মাঝরাতে। কোনো দৈনিক পত্রিকায় আমার খবর আসবে না। কারণ, তাদের আমি কখনো কবিতা দিইনি ছাপতে। কোনো টেলিভিশনে আমার খবর বলবে না, কারণ আমি তাদের কোনো টক-শোতে যাইনি মধ্যরাতে।

মৃত্যুর পরের কয়েকদিনও আমাকে কেউ কেউ স্মরণ করবে। এই কবিতাটার কথাও উল্লেখ রাখবে, ফেসবুকে লিংক শেয়ার করবে। কেউ কেউ আমাকে কবিও বলবে ভালোবেসে, বা না বুঝে নয়, ঠিকঠাক বুঝে-শুনে। কিন্তু আমি জানতে পারব না।

দুই বাংলার পাড়ার কোনো ক্লাব, বা ভালো কোনো লিটল ম্যাগাজিন কিংবা কোনো ব্যাংক বা মুদি-দোকান থেকে আমাকে মরণোত্তর সম্মাননা বা পুরস্কার দেওয়া হবে প্রতিশোধ হিসেবে। কারণ জীবদ্দশায় এই জাতীয় সম্মাননা ও পুরস্কার আমি প্রত্যাখ্যান করেছি বছর বছর।

আমার স্মরণসভায় বক্তাসহ লোক হবে বড়জোর পাঁচ। ওরা আমার লেখালেখির চেয়ে বেশি স্মরণ করবে আমি মদ খেয়ে কার ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম, বা কী মাতলামি করেছিলাম এইসব। আমার স্মরণে তারা এক বোতল ভদকা বা দুই বোতল টাকিলা শেষ করে পরস্পরের বাপান্ত করে ঘরে ফিরবে গভীর রাতে। কোনো লিটিল ম্যাগ বা গ্রুপ বড় করে আমাকে স্মরণ করবে না, কারণ আমি কখনোই তাদের আড্ডায় গ্রুপে যাই নাই, জার্নি বাই ডিজিটাল বোটে করে ঘুরে ঘুরে স্রোতের শব্দকে করাতের মতো চিরে দিই নাই একদিনও।

বিজ্ঞাপন

আমার দুয়েকজন প্রকাশক আমার দুয়েকটা বই রিপ্রিন্ট করবে, কয়েকজন উদ্যোগী হয়ে একটা রচনাসংগ্রহও প্রকাশ করবে। ভালোবেসে কেউ তার ভূমিকাও লিখে দিবে, কিন্তু খ্যাতিমান কেউ লিখবে না। কারণ আমিও জীবদ্দশায় কোনো খ্যাতিমান লেখক বা কবিকে সুখী করার জন্যে তাদের কোনো বইয়ের রিভিউ লিখি নাই, বা তাদের দিয়ে আমার কোনো বইয়ের ফ্ল্যাপ লেখাই নাই, অথবা কারও বই কিনে নিইনি তেমন কোনো জ্বলজ্বলে অটোগ্রাফ কিংবা কখনো করে দিইনি একবেলার বাজার।

বই বিক্রি হয় না দেখে প্রকাশকরা বিজয় দিবসে একাত্তর পার্সেন্ট ছাড়ে আমার বই বিক্রি করবে। তখন দুয়েকটা বিক্রি হবে। আমার কতিপয় পাঠক ভুলেভালে ভরা রচনাসংগ্রহ কিনবে সস্তায়। আর বুকশেলফে উঁচা তাকটাতে তুলে রাখবে। একদিন ঘরে বা বাহিরে বাজারে বা আর কোথাও আমার বই থাকবে না। উঁইপোকায় খাবে, বই সব টারমাইট হবে রোদ, বৃষ্টি আর শীতের দিনে। তারপর মাটি হয়ে যাবে।

বহু দূরে চলে যাওয়া আমার কোনো কোনো প্রেমিকা খুব মাঝে মধ্যে তাদের শৃঙ্গারে, হিরণ্ময় অর্গাজমে আমার মুখ মনে করবে অন্তত তিন বছর। তারপর একদিন তাদের সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যাবে আমার মুখ ও মুখশ্রী।

আমার বউ কয়েকদিন কেঁদে-কেটে শান্ত হয়ে যাবে। তারপর অন্য জীবনে যাবে বা কাজে-কর্মে ব্যস্ত হয়ে যাবে কিংবা গ্রামের বাড়ি গিয়ে একটা হাঁসের খামার করবে। সাদা সাদা সব হাঁস। দুটো রাজহাঁসও থাকবে, যারা রাতভর কনা কনা কনা স্বরে ডেকে যাবে, ডেকে যাবে।

তারপর একদিন আসবে, আমার মৃত্যুদিন ছাড়া কেউ আমাকে আর মনে করবে না। তারপর একদিন আসবে আমার মৃত্যুদিনেরও মৃত্যু হবে।

তারপর একদিন বৃষ্টি যেমন করে মুছে নিয়ে যায় হাওয়ার পেখমে লেগে থাকা ধূলিকণা দল, তেমন করে আমার নামও মুছে যাবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আমার মৃত্যুর পর ইদ ২০২২ ইদ আয়োজন ২০২২ ইদ সংখ্যা ২০২২ ইদুল ফিতর ২০২২ নির্ঝর নৈঃশব্দ্য নির্ঝর নৈঃশব্দ্য-এর কবিতা সারাবাংলা ইদ আয়োজন ২০২২

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর