Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আহসান হাবীব-এর রম্য গল্প ‘সন্দেহ’


২ মে ২০২২ ১৬:২২

জগলুল চৌধুরী তার সুন্দরী স্ত্রীকে সন্দেহ করেন। বিয়ের পর থেকেই তার এই রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যদি সন্দিহান স্বামী হিসেবে অস্কার বা ঐ জাতীয় কোন বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকত। তাহলে সবার আগে সেটা বোধকরি তিনিই পেতেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি অফিসে গেলে নিয়ম করে পর পর দুবার ফোন করেন বাসায়। উদ্দেশ্য স্ত্রী বাসায় আছে কিনা। প্রথমবার করেন বেলা বারোটার দিকে।
-রেনু?
-উ
– তুমি কোথায়?
– বাসায়
– কি কর?
– রান্না করছি
– তুমি রান্নাঘরে?
– হ্যাঁ
– ব্লেন্ডারটা একটু চালু করতো।
– কোনটা চালাব ব্যাটারীতে চলে যেটা সেটা না ইলেকট্রিকে চলে যেটা সেটা?
– ব্যাটারীতে চলে যেটা সেটা চালাও।

বিজ্ঞাপন

স্ত্রী রেনু ব্লেন্ডারটা চালু করলো ‘ঘর ঘররররর ঘর ঘররররররর… হয়েছে? শুনেছ?’ স্ত্রী জানতে চাইল।
– হ্যাঁ ঠিক আছে। আচ্ছা রাখি। স্বামী আপাতত নিশ্চিত হল যাক স্ত্রী বাইরে কোথাও যায় নি। বাসাতেই আছে।

দ্বিতীয় ফোনটা লাঞ্চের পর, প্রায় সেই একই ভাঙ্গা রেকর্ড। যদি ধৈর্য্য পরীক্ষায় অস্কার বা ঐ জাতীয় কোন বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে সবার আগে সেটা বোধ করি জগলুল সাহেবের স্ত্রীই পেতেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
– রেনু?
– উ!
– হ্যালো, তুমি কোথায় ?
– বাসায়
– কি কর?
– রান্না করছি
– এখনও রান্না ঘরে?
– কি করবো, গ্যাস ছিল না। রান্না শেষ করতে পারিনি।
– ও আচ্ছা, ব্লেন্ডারটা একটু চালু করতো আবার।
– কোনটা চালাবো? ব্যাটারীতে চলে যেটা সেটা না ইলেকট্রিকে চলে যেটা সেটা?
– ব্যাটারীতে চলে যেটা সেটা চালাও।

স্ত্রী ব্লেন্ডারটা চালু করলো, ‘ঘর ঘররররর ঘর ঘররররররর… হয়েছে? শুনেছ?’ স্ত্রী জানতে চাইল।
– হ্যাঁ ঠিক আছে। আচ্ছা রাখি। স্বামী আপাতত নিশ্চিত হল যাক স্ত্রী বাইরে কোথাও যায় নি। বাসাতেই আছে।

কিন্তু তারপরও যেন জগলুল চৌধুরীর সন্দেহ যায় না। একদিন কি হল, ফোন না করে সোজা বাসায় এসে হাজির হলেন। এসে দেখেন স্ত্রী নেই। কাজের ছেলেটাকে জিজ্ঞোস করলেন।
– তোর খালাম্মা কই?
– বাইরে গেছে।
– সাথে কিছু ছিল?
– হ একটা ব্যাগ ছিল।
– ব্যাগে কি ছিল?
– ক্যামনে কমু ব্যাগে কি ছিল দেখি নাই।
– সাথে কেউ ছিল?
– না
স্বামী জগলুল চৌধুরীর কি হল ছুটে গেলেন রান্না ঘরে। গিয়ে দেখেন সব আছে জায়গা মত। মরিচের ডিব্বা মরিচের জায়গায়, তেলের বোতল তেলের জায়গায়, চিনির বয়াম চিনির জায়গায়, লবনের পোটলা লবনের জায়গায়, চালের ড্রাম ঠিক জায়গায় … ইলেকট্রিকের ব্লেন্ডারটাও তার জায়গায় শুধু ব্যাটারীতে চলে ব্লেন্ডারটা নেই।

বিজ্ঞাপন

গল্পটা এখানে শেষ হলেও চলত। কিন্তু কথায় বলে না, এক মাঘে নাকি শীত যায় না।
তারপর অনেকদিন গেছে। জগলুল চৌধুরী আছেন, তিনি এখন বড় কর্মকর্তা; তার ব্লেন্ডার ক্যারিয়ার স্ত্রীও আছেন। তাদের ছেলে মেয়েও হয়েছে। তো একদিন স্ত্রী ফোন দিলেন
– তুমি কোথায়?
– অফিসে
– কি করছ?
– কয়েকটা জরুরী পেন্ডিং ফাইলে সাইন করছি।
– তোমার রুমে?
– তো আর কোথায়?
– কিছু খেয়েছ?
– ভাত খেয়েছি, এখন একটু জুস খাব।
– ভাল, মেয়েটাকে বল ইলেকট্রিক ব্লেন্ডারে জুসটা বানাতে, আর জানালার পর্দাটা টেনে দাও। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে।
‘ ঘর ঘররররর ঘর ঘররররররর…!’ মেয়েটা জুস বানাচ্ছে বোধ হয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আহসান হাবীব আহসান হাবীব-এর রম্য গল্প ‘সন্দেহ’ ইদ ২০২২ ইদ আয়োজন ২০২২ ইদ সংখ্যা ২০২২ ইদুল ফিতর ২০২২ রম্য গল্প সন্দেহ সারাবাংলা ইদ আয়োজন ২০২২

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর