জয়শ্রী দাস-এর গল্প ‘চরিত্রহীন’
৩ মে ২০২২ ১৫:৩৭
শ্রাবণ মাস। আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমতলী নামের গ্রামটিতে এখনো বিদ্যুতের সংযোগ নেই। চাঁদ সুলতানা বাড়ির পেছনে ঘন জঙ্গলে একা একা দাঁড়িয়ে আছেন। তার সমস্ত শরীর বৃষ্টির জলে ভিজে একাকার। সেগুন গাছটা জোয়ান পুরুষের মতো লকলকিয়ে উঠেছে। সে আবার গা ঝাড়া দিয়ে জল ছড়িয়ে দিচ্ছে সুন্দরী চাঁদ সুলতানার গায়ে।
চাঁদ সুলতানা পঁচিশ বছরের তরুণী। তার রূপের সুনাম ছড়িয়ে আছে সারা গ্রামজুড়ে। কোনরকম লাজশরম ছাড়াই সে সব পুরুষের সঙ্গে একটু হাসিতামসা করে বেড়ায়। তবে তার রূপের অহংকার শতভাগ। চাঁদ সুলতানাকে তার মা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন কোটিপতি অথচ আধপাগল এক লোকের সাথে। সেই থেকে চাঁদ সুলতানার গায়ে যেন রাগের আগুন জ্বলে সব সময়। সংসার চলছিল ভালোই। স্বামী বেচারা তার সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ করছিলেন। কিন্তু আব্দুল হাকিম নামের ননদের স্বামী যখন তাদের বাড়িতে উপস্থিত হলেন, তখনই শুরু হল বিপর্যয়। হাকিম সুপুরুষ। কলাবতী গাছের কয়েকটি হলুদ ফুল এনে হাকিম বললেন, ‘ফুল নেন ভাবী, খোপায় দেন’।
চাঁদ সুলতানা তখন ঘরের দাওয়ায় বসে উঠোনে দুটো পাখির প্রেমের মিলন মনোযোগ দিয়ে দেখছিল আর কণ্ঠে ছিল গুন গুন করে গীত। হঠাৎ করে হাকিম মিয়ার এমন প্রস্তাবে সে হকচকিয়ে গেলেন। সে তার দীর্ঘ ভ্রমর কালো চোখ দুটোতে আবেশ এনে, অপলক চোখে হাকিম মিয়ার সাথে চোখাচোখি করল। হাকিম মিয়া নিজেও মধ্যম মানের চরিত্রহীন। সে অতি দ্রুত চাঁদ সুলতানার চোখের ভাষা পড়ে ফেলল। চাঁদ সুলতানা বলল, ‘হাকিম ভাই, পাঁচ দিন হলো আপনি আসছেন। যাওয়ার নামটি নাই। শুনেছি গঞ্জে আপনার বড় দোকান তাহলে কিসের লোভে এখানে পড়ে আছেন।’
-ফুলের গন্ধ পেয়েছি গো ভাবী!
-মরা আমার।
মুখে ঝামটা মেরে চাঁদ সুলতানা উঠে ঘরের মধ্যে চলে গেল। এই শুরু হল পিরিতি। আর থামছে না। হাকিম মিয়া বড় ব্যবসায়ী মানুষ। তার ঘরে সুন্দরী স্ত্রী আছে। তার আড়তে কাজ করে অনেক মহিলা-পুরুষ। কিন্তু হাকিমের মনে শুধু ওই এক চাঁদ সুলতানার মুখ। সম্পর্ক কন্ডেন্স মিল্ক এর মতো ঘন হয়ে গেল। মাস যায় বছর যায় কিন্তু কাপলা গাছের আঠার মত পিরিতের আঠা আর ছুটেনা।
দশ দিন হলো হাকিম মিয়া বাড়ি আর ছাড়ছে না। চাঁদ সুলতানার স্বামী দিনে দিনে মনের মধ্যে চরম বৈরীভাব বজায় রাখছিল। মুখ ফুটে কিছুই বলেনি। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। মাঝ রাত্তিরে ঘুম ভেঙে সে দেখলো স্ত্রী বিছানায় নেই। স্ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে ছোট বারান্দায় হাকিম মিয়ার বিছানায় চাঁদ সুলতানাকে আবিষ্কার করল। স্বামী নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমায়। এই ঝুম বৃষ্টিতে কি করে স্বামীর ঘুম ভাঙলো, সে কথা চাঁদ সুলতানার মাথায় আসলো না। আসলে অন্ধকারে আজ ঘুমের ওষুধ না খেয়ে স্বামী ভুল করে পেট খারাপের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিলেন।
-এই বেটি, তোর স্বামীরে রাইখা, এইখানে কি করস। ওট, ওট কইতেছি।
চাঁদ সুলতানা ভয়ে চুপসে গেল। তার স্বামী দরজায় রাখা ছাতা দিয়ে চাঁদ সুলতানাকে বেধড়ক মারতে লাগলো। চারিদিকে বৃষ্টির শব্দ। ঝগড়ার শব্দ ঘরের বাইরে গেল না। হাকিম মিয়া তার পিরিতের মানুষটাকে এভাবে মারা তেমন সহ্য করতে পারলো না।
-আপনি তাড়িয়ে দেন, ছেড়ে দেন, কিন্তু গায়ে হাত তুলছেন কেন?
চাঁদ সুলতানার স্বামী হুংকার দিয়ে বললেন, সে আমার স্ত্রী তুমি বলার কে?
একপর্যায়ে চাঁদ সুলতানার স্বামী ও পিরিতের লোকটার মধ্যে লড়াই লেগে গেল। হাকিম মিয়া এবং চাঁদ সুলতানা দুজন গলাচেপে চাঁদ সুলতানার স্বামীকে হত্যা করল। মাঝরাত্তিরে কোদাল খুঁজে না পেয়ে স্বামীর লাশ হাকিমের পাহারায় রেখে চাঁদ সুলতানা ঘরের পেছনে ঘন জঙ্গলের ধারে গোয়ালঘরে কোদাল খুঁজতে গেল। দুজন মিলে শোবার ঘরের মেঝেতে মাটি চাপা দিল চাঁদ সুলতানার স্বামীকে। স্বামী বেচারার মাঝেমধ্যে দুই এক মাসের জন্য এদিক সেদিক হারিয়ে যাওয়া রোগ ছিল। পরদিন নাকের ফুলটা শক্ত করে রূপবতী চাঁদ সুলতানা তার স্বামীর পুনরায় নিরুদ্দেশ হবার গল্পটা সকলের নিকট ফেঁদে বসল।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
ইদ ২০২২ ইদ আয়োজন ২০২২ ইদ সংখ্যা ২০২২ ইদুল ফিতর ২০২২ গল্প চরিত্রহীন জয়শ্রী দাস জয়শ্রী দাস-এর গল্প ‘চরিত্রহীন’ সারাবাংলা ইদ আয়োজন ২০২২