Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লাবণ্য লিপি-এর গল্প ‘শামুক জীবন ও নীলাঞ্জনার গল্প’


৩ মে ২০২২ ২১:২৮

আজ কাজের প্রচণ্ড চাপ। বলতে গেলে ক্লান্তিতে হেলান দেওয়ার ফুরসৎও নেই। তো আজই আসতে হলো মেয়েটাকে! রিসেপশন থেকে ফোন দিয়ে জানানোর পর প্রায় বলেই ফেলেছিলাম, আজ দেখা হবে না। চলে যেতে বলো। তারপর কী মনে করে নাম জিজ্ঞেস করতেই বলল, স্যার ওনার নাম বলেছেন নীলাঞ্জনা। মুহূর্তেই মনে পড়ে যায়। দিন পনের আগে মেয়েটা ফোন করেছিল। ওপাশ থেকে হ্যালো শুনেই কেমন যেন ধাক্কা লাগে। এত বিষাদ মাখা কেন মেয়েটার কণ্ঠ। যেন কথা নয়, তার বুক থেকে কান্না বেরিয়ে আসছে। মেয়েটা কোনও ভণিতা না করে বলল, আমি আপনার সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই। আপনি তো লেখক। আমি আপনাকে একটা গল্প বলতে চাই। বানানো নয়; আমার জীবনের গল্প। আপনি শুনবেন? হয়তো আপনার কাজে লাগবে। আর তাছাড়া আপনাকে বললে গল্পটা কোনও একজনের কাছে অন্তত থেকে যাবে। অথবা যদি আপনি লেখেন তাহলে অনেক মানুষের কাছে থাকবে। আর যদি না বলি তাহলে আমি মরে গেলে তো গল্পটা হারিয়েই যাবে!

বিজ্ঞাপন

এমন কথা শুনলে কার না কৌতুহল হয় গল্পটা শোনার। তার কাছে কী এমন গল্প আছে যা সে মরে গেলেও অন্যদের কাছে রেখে যেতে চায়! তাই সাতপাঁচ না ভেবেই আসতে বলেছিলাম। বলেছিলাম, যে কোনও মঙ্গলবার দুপুরের পর আসেন। তাই বলে আজই এলো! সামনে বিশাল এক অনুষ্ঠান। তার অনেক দায়িত্বই আমার কাঁধে। তার ওপর আছে প্রচুর লেখালেখি। যার সবগুলোই আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে। তবু একজন তরুণীকে দেখা না করেই ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে তাকে যেহেতু আমিই আসতে বলেছিলাম। তাই ফোনে বলি, ভেতরে পাঠিয়ে দাও।

বিজ্ঞাপন

আমার চোখ তখনও কম্পিউটারের স্ক্রিনে, আঙুলগুলো কিবোর্ডে। তবু বুঝতে পারলাম কেউ এসে দাঁড়িয়েছে আমার সামনে। চোখ তুলে তাকাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না ইনিই সেই নীলাঞ্জনা। নিজের নামকে সার্থক করতেই বোধহয় নীল শাড়ি পরেছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম এর চোখ সত্যিই নীল। তাই কি নাম নীলাঞ্জনা? নাকি চোখে নীল কাজল দিয়েছে? আমি কি ভুল দেখছি? নাকি আজকালকার মেয়েরা নীল কাজল পরে? কাজল নীলও হয়? আবার শুনেছি মেয়েরা আজকাল চোখের রঙ বদলাতে নানা রঙের লেন্সও পরে। এর নীল চোখের রহস্যটা কী! না, উপন্যাসের নায়িকার মতো পিঠময় ছড়ানো লম্বা চুল নয় তার। এমন মেয়ের তাই হওয়ার কথা। কিন্তু এই মেয়ের চুল ছোট। ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা। আর অবাক ব্যাপার হচ্ছে ছোট চুলেই তাকে বেশ মানিয়ে গেছে। কিন্তু এত সাজগোজ করার পরও মেয়েটার চোখে-মুখে বিষাদ ছড়িয়ে আছে। ঠিক যেমন বিষাদের সুর বেজেছিল তার কণ্ঠে। আমি বুঝতে পারলাম আশপাশের অনেকগুলো চোখই নীল শাড়িতে আটকে আছে। কেউ কেউ অবশ্য আড়চোখে দেখছে। এতে অন্যদের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বুঝেই আমি তাকে বললাম- চলুন, আমরা কোথাও বসে কথা বলি।

দুপুরের পর ক্যান্টিনটা একটু ফাঁকা থাকে। অন্তত সন্ধ্যার নাশতার সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত। দেয়াল ঘেঁষে একটা টেবিলে মুখোমুখি বসলাম আমরা। টেবিলের উল্টোপাশে বসেও আমি তার গা থেকে ভেসে আসা একটা মোহনীয় গন্ধ পাচ্ছিলাম। কীসের গন্ধ? মেয়েটা কোন ব্র্যান্ডের সুগন্ধী মেখেছে? নাকি চুলে কিছু মেখেছে? গন্ধটা চেনা আবার অচেনাও। যাই হোক গন্ধের উৎস খুঁজে সময় নষ্ট না করে আমি তাকে বললাম- বলুন, শুনি আপনার গল্প। যে গল্পটা বলতে আপনি এত দূর ছুটে এসেছেন। আমার কাছে গল্পটা জমা রাখবেন বলে।

মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। আর ওটুকু সময়েই আমি মেয়েটির নীলচোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বধ হলাম। চোখ খুব বড় না। কিন্তু বেশ টানা। কে জানে হয়তো কাজল পরার জন্য টানা মনে হচ্ছে কিনা! তবে চোখে কেমন জানি মায়া আছে। ওটা নিশ্চয়ই কাজল টেনে করা যায়নি। আর তার চোখ দুটো ছলছল করছিল। আমার ভয় হচ্ছিল, মেয়েটা না আবার কেঁদে ফেলে। তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। যে দেখবে সে-ই ভাববে মেয়েটা হয়তো আমার জন্যই কাঁদছে। এ বয়সে আমার জন্য আর কোনও তরুণি যে কাঁদবে না সে কথাটাও কারো মাথায় আসবে না। আমি মেয়েটিকে একটু স্বাভাবিক করতে আস্তে একবার কাশলাম। মানে বুঝাতে চাইলাম, এটা পাবলিক প্লেস। এখানে এমন কিছুই করা যাবে না যা লোকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবে না। মেয়েটা মনে হয় বুঝল। তাই তখনই চোখ নামিয়েই সে আমতা আমতা করে বলল, আমার গল্পটা মানে গল্পটা….।

বুঝলাম সে সহজ হতে পারছে না। আমি পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে বললাম, আপনার যদি সমস্যা না হয় তাহলে আমি এটা ধরাতে চাই। মেয়েটি জবাব দিলো, আগে সমস্যা হতো। আমি যাকে ভালোবাসতাম সে খায়। তারপর আর সমস্যা হয় না। আপনি খেতে পারেন।

বাহ! এ মেয়ে তো বেশ স্বতঃস্ফূর্ত। যা বলার তা খুব স্পষ্ট করেই বলে। বুঝলাম, আগে ভালোবাসত। এখন আর বাসে না। তাই ভালোবাসতাম বলল। তার মানে এখন একটা বিরহের গল্প সে ইনিয়ে বিনিয়ে বলবে। আর আমার সেটা খুব সিরিয়াস মুখ করে শুনতে হবে। তা না হলে সে ভাববে, আমি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আর কোনও মেয়েই এটা মানতে পারে না যে তাকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তার ওপর যদি সে হয় এমন সুন্দরী তরুণি। বললাম, আচ্ছা বেশ। এবার আপনি সব দ্বিধা- সংকোচ ঝেড়ে ফেলে গল্পটা বলুন। আমাকে আপনি অপরিচিত লেখক, সাংবাদিক না ভেবে একজন বন্ধু ভাবুন না। মানুষ তো তার বন্ধুকেই মনের কথা বলে; মন খুলে। কিছুই না লুকিয়ে। আমার এই কথায় মনে হয় কাজ হলো। মেয়েটা বলতে শুরু করল, ভাইয়া, প্রথমত আমি একজন নিষিদ্ধ নারী। কাউকে ভালোবাসার অধিকার আমার নেই। তার ওপর আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম তাকে ভালোবাসা আমার উচিত হয়নি।

আমি অবাক হয়ে বললাম, নিষিদ্ধ মানে কী? আপনি কি প্রসটিটিউট? তাহলেই বা কি। প্রসটিটিউটেরও নিশ্চয়ই ভালোবাসার অধিকার আছে। আর যাকে ভালোবেসেছিলেন তাকেই বা কেন ভালোবাসা উচিত হয়নি! উচিত অনুচিত দেখে আবার ভালোবাসা হয় নাকি! মেয়েটি ঢোক গিলে বলল, আমি একজন বিধবা নারী। আর আপনি তো জানেন, বিধবাদের জন্য অনেক কিছুই নিষিদ্ধ।
আরে ধুর! আপনি কোন যুগে বাস করছেন? সে তো বিদ্যাসাগর মশায়েরও আগের যুগ। আসল গল্পটা কী, তাই বলুন আপনি। আচ্ছা, আমরা কি একটু কফি খেতে খেতে গল্প করতে পারি? আপনি কফি খান তো?

হুম খাই। তবে কম।

আজ আমার সঙ্গে একটু খান। কফি খেতে খেতে আপনার গল্প শুনি।

মেয়েটি কফির কাপে ছোট চুমুক দিয়ে আবার শুরু করলো, আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের দু’বছরের মাথায়ই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে আমার স্বামী মারা যায়। সেও প্রায় আট বছর আগের কথা। আমি এখন চাকরি করি। যদিও আমি উপার্জন করি, তবু আমার মা-ভাইদের সঙ্গেই থাকি আমি। আমাদের সমাজে একজন নারী তো আর একা থাকতে পারে না। তার ওপর সে যদি হয় তরুণি বিধবা। এমন নারীকে বাসা ভাড়াই বা দেবে কে? যাকগে সেসব কথা। তো আমি আমার মা-ভাইদের সঙ্গে থাকলেও মূলত আমার ভুবনে আমি একাই থাকি। খুব বেশি এন্টারফেয়ার ওরা করে না আমার জীবনে। মাসের শুরুতে আমি মায়ের হাতে আমার আর মায়ের খরচ বাবদ বেশ কিছু টাকা তুলে দেই। মা ওটা ভাইদের দিয়ে দেয়। এ নিয়ে আর তেমন কোনও সমস্যা হয় না। আমার ভাইয়েরা আমাকে আবার বিয়ে দিতে খুব চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমি সব সময়ই বলেছি আমার বর ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সে মরে যাওয়ার পরেও না। কাজেই বিয়ে করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বলে বলে ক্লান্ত হয়ে ওরাও এক সময় হাল ছেড়ে দেয়। এখন আর কেউ বলে না বিয়ের কথা। তো এভাবেই চলছিল আমার জীবন। একই রুটিনে। অফিস যাই। বাসায় ফিরি। খাওয়ার সময় খেয়ে নেই। তারপরই নিজের রুমে ঢুকে যাই। ঠিক যেন একটা অন্ধকার গুহায় বন্দি হয়ে ছিলাম। হঠাৎই একজন এলো আমার জীবনে। আর আলোয় আলোয় ভরে গেল আমার অন্ধকার জীবন। আমি আবার হাসতে শিখলাম, সাজতে লাগলাম। গানও গাইতে শুরু করলাম। মোট কথা আমি আবার ভালোবাসতে শুরু করলাম। নিজেকে এবং আরও একজনকে। এমন যে আবার হতে পারে, এটা আমার কাছেও ছিল অকল্পনীয়।

এই পর্যন্ত বলে মেয়েটা একটু থামলো। আমিও ভাবলাম, আহা একটু দম নিক! বললাম, আরও এক কাপ কফি নেবেন? আমি কিন্তু নেব। কারণ আমার ধারণা আপনার গল্পটা শেষ হয়নি। সম্ভবত এতক্ষণ আমরা ভূমিকাতেই ছিলাম। এখন হয়তো ঢুকব গল্পের ভেতরে। কফি আর সিগারেট ছাড়া ঠিক জমবে না। মনে হলো যেন মেয়েটা কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। আমার কোনও কথা শুনতেই পেলো না। আবার বলতে শুরু করল, ফেসবুকেই আমাদের পরিচয় হয়। আমরা শুরুর দিকে প্রতিরাতে গল্প করতে থাকি। সে এতো সুন্দর করে কথা বলে যে কথার পিঠে কথা না বলে থাকাই যায় না। বরং এটাই যেন একটা দারুণ খেলা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের। তারপর আমাদের কথা বলা আর শুধু রাতে না, সারাদিনই চলতে থাকে। আর আমি তার কথার জালে একটু একটু করে আটকা পড়তে থাকি। নিজের অজান্তেই আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি।

তাতে সমস্যা কি? ভালোবাসা তো কোনও অপরাধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুর পর সেই নারী আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না, এমন নিষেধাজ্ঞাও মনে হয় নেই সমাজ বা সংবিধানে।

সমস্যা হলো সে বিবাহিত। তার সন্তানও আছে। এবং স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তার সংসার বেশ সুখের। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এসব কথা সে আমার কাছে কিছুই আড়াল করেনি। তারপরও আমি তাকে ভালোবেসেছি। সেও আমাকে ভালোবেসেছে বলেই মনে হয়েছে আমার। তারপর থেকে আমরা নিয়মিত দেখা করতে থাকি। এক সঙ্গে খেতে যাই, লং ড্রাইভে যাই। অফিসের ট্যুর আছে বলে আমরা দুজন ঢাকার বাইরেও যাই। সেখানে আমরা দুইদিন দুইরাত কাটিয়ে আসি। এ কথা নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দিতে হবে না যে, বেড়াতে গিয়ে আমরা শুধু পাশাপাশি বসে গল্প করেছি। সে সবই করেছি যা দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারী করে। রাত-দিন আমরা মন আর শরীর নিয়ে মেতে থেকেছি। সেই দুইদিনে সে আমার ভেতর এবং বাইরের এতো সৌন্দর্য আবিষ্কার করেছিল যা আমার ভালোবেসে বিয়ে করা স্বামী দুই বছরেও করতে পারেনি। আমার বুকের বাম পাশে একটা তিল আছে। সেটা আমি দেখেছি বটে। কিন্তু তিলেরও যে সৌন্দর্য আছে সেটা জানলাম তার কাছ থেকে। বলতে দ্বিধা নেই, সেই দুই দিনের প্রতিটিা মুহূর্ত আমরা উপভোগ করেছি। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ সময় ছিল ওই দুইদিন। তার সঙ্গ আমার এতোটাই ভালো লেগেছিল যে, কয়েক দিনের জন্য আমি যেন আমার স্বামীর স্মৃতি ভুলেই গিয়েছিলাম।

আমি আবারও বললাম, তাতেই বা সমস্যা কি! একজন মৃত মানুষের স্মৃতি সব সময় আঁকড়ে না থেকে নিজের জীবন উপভোগের অধিকার আপনার নিশ্চয়ই আছে। আপনার যা বয়স তাতে তো নিজেকে নিয়ে ভাববার যথেষ্ট সময় আছে আপনার। আপনি দেখতেও দারুণ সুন্দরী। আপনাকেও কারো ভালো লাগতেই পারে। আর নীতি নৈতিকতার কথা যদি বলেন, তাহলে আমি বলব সে দায় আপনার একার নয়। অপরপক্ষের দায় বরং অনেকটাই বেশি। তার ঘর-সংসার, স্ত্রী, পুত্র সবই আছে। সে যদি সে সব ভুলে আপনার কাছে আসে তাতে আপনার আর দোষ কী! আপনি তো একা। একটা ভালো সঙ্গ আপনি চাইতেই পারেন। কিন্তু আপনার বক্তব্যটা এখন ঠিক কী? সমস্যাটাই বা কী? মানে আপনি এই সম্পর্কের কী ধরনের পরিণতি চাইছেন?

দেখুন, আমি কখনও চাইনি সংসার ভেঙে সে আমার কাছে চলে আসুক। ভালোবেসে আমি তাকে কোনও বাঁধনে জড়াতে চাইনি। চেয়েছিলাম, তার জীবনের সব কিছু ঠিক রেখে, কাছের মানুষদের এতটুকুও বঞ্চিত না করেও তার জীবনে আমাকে একটু জায়গা দিক। ইনফ্যাক্ট সে তাই করবে বলে আমাকে প্রমিস করেছিল। কিন্তু….
এর মধ্যে আবার কিন্তু কী? দু’জন বুঝদার মানুষের বন্ধনহীন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাদের পূর্ণসম্মতিতে তাদের সম্পর্কের গন্ডি ঠিক করতেই পারেন। তারা কত দূর পর্যন্ত যাবে এটা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আবার কিন্তু এলো কেমন করে?

কিন্তু সে হঠাৎ করেই আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি তাকে কোথাও খুঁজে পাই না। এটা কি ঠিক বলুন? আমি তো তার কাছে যাইনি! সে আমার কাছে এসেছিল। আমি তো ভালোবাসতে ভুলেই গিয়েছিলাম। সে আমাকে আবার ভালোবাসতে শেখালো। দূরে থেকেও সারাজীবন আমার পাশে থাকবে বলে কথা দিয়েও কেন দূরে সরে গেল! আমার এখন আর কোনও কিছুই ভালো লাগে না। আমার মৃত স্বামীর আত্মাও নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে আমার এই পরিবর্তন দেখে!

মৃত মানুষের কষ্টের চেয়েও আপনি নিজে যে কষ্ট পাচ্ছেন, এটা ভেবে আমার খুব খারাপ লাগছে। আপনি এই সম্পর্কটা থেকে বরং বেরিয়ে আসুন। একজন বিবাহিত মানুষের নানা ধরণের চাপ থাকে। চাইলেই সে অনেক কিছুই করতে পারে না। আপনিই বরং একটু ভেবে দেখুন, যে সম্পর্কের কোনও পরিণতিই নেই, কী হবে সেই সম্পর্ককে টেনে নিয়ে। বরং তার এই দূরে সরে যাওয়া আপনার জন্য ভালোই হয়েছে। আপনি তাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করুন।

এবার যেন একটু অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে সে। অনেকটা রাগ করেই বলে , কয় বার নতুন করে শুরু করব আমি? আমি ঠিক এমন না। আজ একজনকে ভালোবাসব। কাল আবার তাকে ভুলে গিয়ে অন্য একজনকে ভালোবাসব। সবাই সব কিছু পারে না। আমি শুধু জানতে চাই সে কেন আমার সঙ্গে এমন করল। কিছুই না বলে দূরে সরে গেল? আমাকে একবার বলতে পারত তার কী এমন সমস্যা। আমি ঠিকই মেনে নিতাম। কিন্তু পালিয়ে যাওয়া কেন? আমি তার দূরে সরে যাওয়ার কারণটা জানতে চাই। আমার হয়ে আপনি কি কারণটা একবার জানার চেষ্টা করবেন?
এবার আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম, আমি? বিস্মিত হয়ে তাকে বলি, আমি তাকে কেমন করে চিনব?
আপনি তাকে চেনেন। সে আপনার আশেপাশেই থাকে। মাঝে মাঝে হয়তো দেখাও হয়, কথাও হয়।
তাই নাকি! কী নাম তার? সে কি আমার অফিসের কেউ? বন্ধু-বান্ধব কেউ? নাকি আত্মীয়দের কেউ?
সবই আমি বলে দেব? তবে আর আপনি এত বড় লেখক কেন? আপনার দায়িত্ব তাকে চিনে নেওয়া।
কিন্তু আমার পরিচিত তো এমন আছে শতাধিক অথবা তারও বেশি। আর তাছাড়া আপনি তার সম্পর্কে এত গল্প করলেন। অথচ তার চেহারার বর্ণনাটা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন।
ওটুকুই আপনার জন্য রেখেছি।
বলে আমাকে আর কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সে হনহন করে বেরিয়ে গেল। আমি তার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে মনে মনে খুঁজতে লাগলাম কে হতে পারে সে, যে এমন সুন্দর মেয়েটাকে কষ্ট দিলো!

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ইদ ২০২২ ইদ আয়োজন ২০২২ ইদ সংখ্যা ২০২২ ইদুল ফিতর ২০২২ গল্প লাবণ্য লিপি লাবণ্য লিপি-এর গল্প লাবণ্য লিপি-এর গল্প ‘শামুক জীবন ও নীলাঞ্জনার গল্প’ শামুক জীবন ও নীলাঞ্জনার গল্প সারাবাংলা ইদ আয়োজন ২০২২