ভাত
৩১ আগস্ট ২০২২ ১৫:৫০
লোকটা আসলেই আমরা তাকে দেখতে ভীড় করতাম। বড় ফজলি আমের গাছটির পাশে আঁতা গাছের তলায় পুকুর বরাবর যে সিঁড়িগুলো জ্যামিতিকমাপে নেমে গেছে তারই উপরের ভাঙা সিঁড়িতে বসতো সে, এই সিঁড়ির সবচেয়ে বড় সিঁড়ির ভাঙা গর্তে বাস করতো এক জোড়া শঙ্খিনী।
পরনের ছেড়া লুঙ্গির সাথে একটা কিছু থাকতো সাথে বড় একটা চাদর, শীত গরম বারোমাসে।
আমরা তার খুব কাছাকাছি যেতাম না, আবার দূরেও না; সে আমাদের দিকে তাকাতো না। তবে যেদিন আসতো সেদিন অনেকসময় থাকতো সে। জেঠা তারে খেতে দিতো, জেঠিমা পুরাতন চালের ডেকচিতে অনেকগুলো ভাত রান্না করতেন। ভাতের গন্ধ পেলে সে নিজেই কলাপাতা কেটে আনতো, প্লাস্টিকের যে গ্লাসটায় পাখির জন্য জল রাখা হতো, সেটা সে নিজেই নামাতো। তার চোখগুলো কী দেখতো বুঝতাম না, তবে সাদা ভাত গামলায় এলে সে চোখ চকচক করতো।
তার নাম পাঁচসেইরা। সে নাকি পাঁচ সের ভাত খেতো বলে আমরা শুনতাম। পাঁচ সের জানিনা, তবে গামলার ভাত সে সব খেতো, যেকয়টা ভাত মাটিতে পড়ে থাকতো, সেটাও তুলে নিতো। আবার কয়েকমাস পর ফিরে আসতো।
আমাদের মাও তিনবেলা ভাত রান্না করতেন, পাওরুটি জেলি আমাদের জন্য ছিলো বছরে একবার। ঢেঁড়স ভাজি ডিমের ঝোল আর চালতার ডাল ছিলো অমৃত। বাবার মিল বন্ধের সময় আমরা রিলিফের চালও খেয়েছি। ভাত সাদা ফুলগুলো যেন তখন। মার চুলার পাশে আমরা বসে থাকতাম।
হলে এসে দেখলাম মেয়েরা এত কম ভাত খায়, আমার লজ্জা লাগলো। সেই থেকে কম খাওয়া শুরু করেছি। তবুও সাদা ভাতের গন্ধে আমার নাক পিলপিল করে, মনে হয় নাভি থেকে উঠে আসে এক ভয়ংকর লালা। শেকড় উপড়ে ফেলা খুব কষ্টের। তাই তো!
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি