ভাষাতরী একটি বাস্তবিকই সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রকৃত তরী। সাধারণত আর পাঁচটা গড়পড়তা সাহিত্য পত্রিকার সাথে এর মূল পার্থক্য হলো, পত্রিকার বৈচিত্র্যময় বিভাগ! সামগ্রিক একটি মাসিক পত্রিকা। পত্রিকায় ব্যবহৃত কাগজ, প্রিন্ট, অলংকরণ দেখে মুগ্ধ হলাম। মাত্র আট মাসে একটি পত্রিকা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে তার প্রমাণ রাখলেন প্রকাশক ও সম্পাদক উমর ফারুক।
যেহেতু এই সংখ্যাটি আগস্ট মাসের; তাই বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর পাশবিক হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন তথ্যের ওপর। এই মাসটি বাঙালির দুঃখের মাস, কষ্টের মাস, নারকীয় আতঙ্কের মাস, অশ্রুধারায় সিক্ত হওয়ার মাস। তাই আপামর বাঙালি তথা বিশ্ববাসী ভুলতে পারে না এই নির্মম হত্যালীলার রক্তাক্ত অধ্যায়। ফিরে ফিরে আসে নীরবে নিভৃতে কান্নার ধ্বনি আগস্ট মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মর্মস্পর্শী অনুভবের পাহাড় হয়ে।
এই প্রাসঙ্গিকতাকে অসামান্য লেখনীর স্পর্শে পাঠকের মনে রেখাপাত করালো হারুন হাবীবের লেখা ‘আগস্টের রক্তপাত গণহত্যা ও ষড়যন্ত্রের খতিয়ান’, জাফর ওয়াজেদের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর ঋণ যেন স্বীকার করি’ প্রবন্ধে।
একটি পত্রিকার মূল্যায়ন বিশেষভাবে প্রতিভাত হয় তার প্রবন্ধমালার সম্ভার ঘিরে। আর সেই স্বাদ ও গন্ধ উপলব্ধি করলাম জনাব রকিবুল হাসানের লেখা ‘নজরুলের ট্রাজেডি’, উমর ফারুকের অনবদ্য তথ্যভিত্তিক লেখা ‘সিংহভাগ মানুষের কবি: জসীম উদ্দীন’। নতুনভাবে আমার মননে রেখাপাত করল কবি উমরের অনন্য সৃজনশীলতায়। কবি জসীম উদ্দীনের অনন্য কীর্তি কী দারুণভাবে তুলে ধরলেন লেখক!
সোনালির গল্প ‘সাত মহলা’ তে তুলে ধরলেন পুরাতনী ধ্যান ধারণার আড়ালে মেয়েদের বিশেষ করে বিধবাদের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের জীবনকথা। আর বর্তমানের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের অত্যাধুনিকার হালহকিকত! এই দুই বৈপরীত্যের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটালেন লেখিকা।
অলিপা বসুর ‘রংপোতে রঙ্গোলি’ পড়ে আমি মুগ্ধ হলাম। গল্পের মধ্যে অনুসন্ধানীর কথোপকথন ও তথ্যভিত্তিক পরিসংখ্যানের উপস্থিতি সমৃদ্ধ করেছে লেখার উৎকর্ষতা। এছাড়া চিত্রকলা বিভাগে অভ্র বড়ুয়ার লেখা, চলচ্চিত্র বিভাগে মোনায়েম সরকারের লেখার মধ্যে যথাযথ কিছু প্রাসঙ্গিক কথার অনুরণন ধ্বনিত হয়েছে বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত।
কবিতার পাতায় দৃষ্টি রাখলেই বোঝা যায় কত সুপ্ত প্রতিভাকে উন্মোচিত করে চলেছে ভাষাতরী। আলাদা করে এখানে কারো নাম উল্লেখ আবশ্যক মনে করলাম না, কারণ কবিতার মান সম্পূর্ণভাবে বোঝার উপায় আমার জানা নেই! সবটাই আপেক্ষিক একেক জন পাঠকের মাপকাঠিতে একেকটি কবিতা ভালো আবার অপর পাঠকের মতামত ঠিক উল্টো! তবে এইটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায় সকলের কবিতাই আকৃষ্ট করবে পাঠকদের।
এই অসামান্য পত্রিকাটি সংগ্রহ করে পড়ুন, ভালো লাগবে আপনাদের। মাসিক ভাষাতরী। প্রকাশক ও সম্পাদক: উমর ফারুক। মুল্য: ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা। প্রকাশকাল: আগষ্ট ২০২২ ১ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা। মৌচাক টাওয়ার, মালিবাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত।