Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরে দেখা জর্জ অরওয়েলের অ্যানিমেল ফার্ম

মধুসূদন মিহির চক্রবর্তী
২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৭

জর্জ অরওয়েলের চমৎকার রূপকধৰ্মী সাড়াজাগানো রাজনৈতিক উপন্যাস অ্যানিমেল ফার্ম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। এখানে তিনি একটি পশুখামারের ভেতর একটি রাজনৈতিক পটভূমি সৃষ্টি করেছেন। এটা মূলত রাশিয়ান রেভুলেশনের স্টেনের বিদ্রোহের ওপর ভিত্তি করে লেখা। গ্রন্থটি অরওয়েলের জন্য খ্যাতি নিয়ে আসে। জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করেন।

অ্যানিমেল ফার্ম উপন্যাসের শুরুতে দেখা যায়, ‘ম্যানর ফার্ম’-এর মালিক কৃষক মিস্টার জোন্স তার ফার্মের প্রাণীদের ওপর দিনের পর দিন অবিচার করে চলে। সে তাদের কখনোই সময়মতো খাবার দেয় না। এছাড়াও প্রতিদিনই সে পানশালা থেকে মদ্যপ অবস্থায় ফিরে এসে প্রাণীদের ওপর নানারকম অত্যাচার চালায়। এভাবে চলতে থাকে অনেকদিন। একদিন ফার্মের সবচেয়ে জ্ঞানী এবং বয়স্ক শুকর ‘বৃদ্ধ মেজর’ ম্যানর ফার্মের প্রাণীদেরকে একটি সভায় আহ্বান করেন। তার ডাকে প্রাণীরা বড়ি একটি শস্যাগারে জড়োহয়। বৃদ্ধ মেজর তাদের ওপর মানুষের দ্বারা নির্যাতনের ইতিহাস শোনায়। খাদ্যাভাবে খামারের প্রায় প্রত্যেক প্রাণীরই জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। এহেন শোচনীয় অবস্থা থেকে তাদেরকে মুক্তির স্বপ্ন দেখান বৃদ্ধ মেজর। সমস্ত প্রাণীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং মনুষ্যশ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানান তিনি। তিনি তাদের বলেন যে, তিনি প্রাণীদের বিষয়ে একটি স্বপ্ন দেখেছেন যেখানে সমস্ত প্রাণী একসঙ্গে বসবাস করবে এবং তাদের ওপর মানুষেরা অত্যাচার বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এরকম একটি স্বপ্নের স্বর্গোদ্যান রচনায় তিনি প্রাণীদের যুগপৎ কাজ করতে পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি তাদেরকে ‘বিস্ট অফ ইংল্যান্ড’ নামে একটি গান শেখান। এই গানটির কথার মাধ্যমে তার স্বপ্নের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণিত হয়েছে। প্রাণীরা মেজরের উদ্দেশ্যকে সোৎসাহে অভিবাদন জানায়। সভাটি করার মাত্র তিন রাতের মধ্যে বৃদ্ধ মেজর মারা যান। কিন্তু বিপ্লবের স্বপ্ন এখানে থেমে যায় না। এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে ফার্মের সবচেয়ে বুদ্ধিমান তিনটি তরুণ শুকর। স্নোবল, নেপোলিয়ন ও স্কুয়েলার। তারা মেজরের মূল নীতিগুলোর সমন্বয়ে ‘প্রাণীবাদ’ নামক একটি দর্শন প্রণয়ন করে। একদিন সব প্রাণী ঐক্যবদ্ধ হয়ে অতর্কিত আক্রমণ করে ফার্মের অত্যাচারী মালিক মিস্টার জোন্সকে ফার্ম থেকে বিতাড়িত করে। তারপর শুরু হয় সম্পূর্ণ প্রাণীদের রাজ্য। সকল প্রাণী মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘ম্যানর ফার্ম’-এর নাম পালটে রাখা হয় ‘অ্যানিমেল ফার্ম’। আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় ঘোড়ার জিন, ঠুলি, চাবুক এবং আরও এমন সব জিনিস, যা প্রাণীশ্রেণির পরাধীনতার স্মারক বলে মনে করা হতো। স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই ‘অ্যানিমেল ফার্ম’-এর নেতারা একটি সংবিধান রচনা করে। ‘প্রাণীবাদ’ প্রতিষ্ঠার জন্য ফার্মের সকল প্রাণীর জন্য অবশ্য পালনীয় ৭টি নীতিমালা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। নীতিমালাগুলো সকল প্রাণীর সামনে ফার্মের দেয়ালে লিখে রাখে শুকরদের মধ্যে মেধাবী বলে খ্যাত ‘স্নোবল’।

বিজ্ঞাপন

১. দুই পায়ে হাঁটা প্রাণী আমাদের শত্রু।
২. যেসব প্রাণী চার পায়ে চলাফেরা করে অথবা যাদের দুটো ডানা আছে তারাই বন্ধু।
৩. কোন প্রাণী পোশাক পরবে না।
৪. কোন প্রাণী বিছানায় ঘুমাবে না।
৫. কোন প্রাণী মদ্যপান করবে না।
৬. কোনো প্রাণী অন্য কোনো প্রাণীকে হত্যা করবে না।
৭. সব প্রাণীই সমান।

কত সুন্দর গণতান্ত্রিক একটি সংবিধান। আর মানুষের প্রতি চরম ঘৃণা পোষণ করে বলে ফার্মের একটি স্লোগান ছিল —চার পা ভালো, দুই পা খারাপ’। ‘অ্যানিমেল ফার্ম’-এর নেতৃত্বদানকারী তিনটি শুকর নেপোলিয়ন, স্নোবল ও স্কুয়েলার। স্কুয়েলারের কাজ হচ্ছে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো। ওদিকে, প্রাণীরা মেজরের স্বপ্নপূরণে নিজেদের উৎসর্গ করে। পরিশ্রমী ঘোড়া বক্সার এবং ক্লোভার উপন্যাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। বক্সার বৃদ্ধ হলেও সে নেপোলিয়নের নির্দেশ মতো পশু খামারের উন্নয়নের জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করে যায়। সে-ও স্বপ্ন দেখে এমন এক অ্যানিমেল ফার্মের যে স্বপ্ন দেখিয়ে গিয়েছিলেন ‘বৃদ্ধ মেজর’। গাড়িটানা ঘোড়া বক্সার বিশেষ উদ্যমের সঙ্গে লক্ষ্য অর্জনে নিজেকে নিবেদিত করে। বক্সার ‘এনিম্যাল ফার্ম’-এর সমৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রবল শক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ‘আমি আরও কঠোর পরিশ্রম করবই’ ঘোষণাটিকে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত প্রত্যয় হিসেবে গ্রহণ করে বক্সার। পশু খামার উন্নতি লাভ করে। স্নোবল প্রাণীগুলোকে পড়তে শেখানোর দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর মধ্য থেকে নেপোলিয়ন একদল তরুণ কুকুরছানাকে ‘প্রাণীবাদ’ দর্শনে শিক্ষিত করে তোলার জন্য গুপ্তস্থানে নিয়ে যায়। মিস্টার জোন্স তার খামার ফিরিয়ে নিতে আবারও লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। প্রাণীরা সবাই মিলে তাকে আবারও পরাজিত করে। এই লড়াইটি ‘গোয়ালঘরের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। প্রাণীরা বিজয়ের স্মারক চিহ্ন হিসেবে কৃষকের পরিত্যক্ত বন্দুকটির দখল নেয়।
সময় বয়ে চলে। ওদিকে নেপোলিয়ন এবং স্নোবল উভয়েই খামারের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে ক্রমাগত কলহে লিপ্ত হয়। খামারের অন্য প্রাণীদের ওপর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি লাভের হীন মতলবে তারা উভয়েই পরস্পর দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে শুরু করে। স্নোবল একটি বিদ্যুৎ—উৎপাদনকারী বায়ুকল তৈরির প্রকল্পের পরিকল্পনা হাতে নেয়। কিন্তু নেপোলিয়ন দৃঢ়ভাবে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে। প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়ে ভোটাভুটির সভায় স্নোবল একটি আবেগপূর্ণ ভাষণ দেয়। ওদিকে নেপোলিয়ন শুধুমাত্র একটি সংক্ষিপ্ত ধারালো প্রত্যুত্তর দেয়। এর পরপরই সে একটি অদ্ভুত সাংকেতিক আওয়াজ করে। আওয়াজ শোনার সঙ্গেসঙ্গেই আগে থেকে প্রস্তুত নয়টি জঙ্গি কুকুর শস্যাগারে হুলুস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে দেয়। তারা খামার থেকে স্নোবলকে তাড়া করে। স্নোবলকে ধাওয়াকারী সেই নয়টি কুকুর ছিল নেপোলিয়নের ছাত্র যারা প্রাণীবাদে ‘শিক্ষিত’ হওয়ার জন্য নেপোলিয়নের তত্ত্বাবধানে গুপ্তস্থানে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এবার নেপোলিয়ন অ্যানিমেল ফার্মের নেতৃত্ব গ্রহণ করে এবং ঘোষণা দেয় যে আর কোনো মিটিং মিছিল হবে না। এই মুহূর্ত থেকে প্রত্যেক পশুর কল্যাণের তরে একমাত্র শুয়োরগণই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবে। নেপোলিয়ন এরপর বায়ুকল সম্পর্কে তার পূর্বের অভিমত পরিবর্তন করে। বিশেষ করে বক্সারের ন্যায় নিবেদিত প্রাণীরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। একদিন, ঝড়ের পর প্রাণীরা দেখতে পায় বায়ুকলটি ভেঙে পড়েছে। ওদিকে এলাকার মানব কৃষকেরা চোরাগুপ্তাভাবে প্রচার চালায় যে প্রাণীরা দেয়ালগুলিকে খুব পাতলা করে গড়েছিল। ওদিকে নেপোলিয়নের দাবি, স্নোবলই বায়ুকল ধ্বংস করেছে এবং এই কুমতলবে সে খামারে ফের ঢুকেছিল। তখন সে একটি দুর্ধর্ষ শুদ্ধি অভিযান চালায়। অর্থাৎ এক সময় যেসব প্রাণী স্নোবলের মহাষড়যন্ত্রের সহযোগী ছিল অর্থাৎ নেপোলিয়নের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতৃত্বের বিরুদ্ধবাদী প্রাণীগুলোকে জঙ্গি কুকুরের দংশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। নিজ নেতৃত্বকে প্রশ্নহীন করতে নেপোলিয়ন তার ক্ষমতার পূর্ণ অপব্যবহার করতে শুরু করে দেয়। স্নোবলকে খলনায়ক প্রতীয়মান করার জন্য সে ইতিহাস পুনর্লিখন করে। তার একান্ত অনুগত বক্সার এবার দ্বিতীয় ম্যাক্সিমটি গ্রহণ করে, ‘নেপোলিয়ন সর্বদা সঠিক’। নেপোলিয়নও আগের তুলনায় আরও বেশি করে মানুষের ঢংয়ে কাজ করতে শুরু করে। মানুষের মতো বিছানায় ঘুমানো, হুইস্কি পান এবং প্রতিবেশী মানব কৃষকদের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত হওয়া শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

আদি প্রাণীবাদী নীতিসমূহে এধরনের কার্যকলাপকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু নেপোলিয়নের প্রচারক স্কুয়েলার, অন্যান্য প্রাণীদের কাছে প্রতিটি কাজের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে তৎপর হয়ে উঠল। তাদের মগজধোলাই দেয়া হলো যে, নেপোলিয়ন একজন মহান নেতা এবং প্রত্যেকের জন্য জিনিসগুলিকে আরও ভাল করে তুলছেন—যদিও বাস্তবে সাধারণ প্রাণীরা, নিষ্প্রাণ, ক্ষুধার্ত এবং অত্যন্ত কর্মক্লান্ত। প্রতিবেশী জনৈক মানব কৃষক মিস্টার ফ্রেডেরিক নেপোলিয়নকে কিছু কাঠ কেনার জন্য প্রতারণা করে। তারপর খামারে আক্রমণ করার মাধ্যমে ব্যয়বহুলভাবে পুনর্নিমিত বায়ুকলটিকে ডিনামাইট দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। বায়ুকলটি ভেঙে ফেলার পর, একটি কঠিন লড়াই হয়। লড়াইয়ের সময় বক্সার আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পশুরা কৃষকদের পতন করে ঠিকই, কিন্তু বক্সারের আঘাত তাকে ক্রমশ নিস্তেজ করে দিতে থাকে। পরে যখন সে উইন্ডমিলে কাজ করার সময় পড়ে যায়, তখন সে অনুভব করে তার অন্তিম সময় আসন্ন। তারপর একদিন, বক্সারকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। স্কুইলার প্রচারণা চালায়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর বক্সার শান্তিতে মারা গেছে। শেষ নিঃশ্বাসেও সে বিপ্লবের জয়ধ্বনি করেছে। বাস্তবে ঘটনা ঘটেছিল অন্যরকম। নেপোলিয়ন হুইস্কি খাওয়ার অর্থের প্রয়োজনে তার সবচেয়ে অনুগত এবং দীর্ঘকালের কর্মীকে জনৈক আঠা প্রস্তুতকারকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। স্বাধীন খামারের মুরগিগুলো ডিম পাড়ে। আগের চেয়ে বেশি বেশি পরিশ্রম করে সবাই। শুধু শুয়োরগুলো পরিশ্রম করে না। অন্য সব প্রাণীরা পরিশ্রম বেশি করলেও তাদের ঠকানো হয়। দুধ আর আপেলগুলো খেয়ে নেয় অলস শুয়োরগুলো। অন্য প্রাণীদের খাবারের পরিমাণ সীমিত, মানুষের শাসনামলে যা জুটতো তা-ই। কোনো পরিবর্তন নেই। কিন্তু প্রাণীগুলো মানুষকে চরম ঘৃণা করে। তাই তাদের সংবিধানে মানুষ যা করতো তা নিষিদ্ধ। পশুর খামারে বছরের পর বছর কেটে যায়। শুয়োরগুলো আরও বেশি করে মানুষের মতো হয়ে ওঠে—সোজা হয়ে হাঁটে, চাবুক বহন করে এবং পোশাক পরে। অবশেষে, প্রাণীবাদের সাতটি নীতি, যা সাতটি আদেশ নামে পরিচিত এবং শস্যাগারের পাশে খোদাই করা হয়েছে সেখানে পরিবর্তন করে লেখা হয়, ‘সব প্রাণী সমান, কিন্তু কিছু প্রাণী অন্যদের চেয়ে বেশি সমান।’ নেপোলিয়ন একদিন নৈশভোজে মি. পিলকিংটন নামে একজন মানব কৃষককে আপ্যায়ন করেন। এরপর মানব ও পশু উভয় সম্প্রদায়ের শ্রমিক শ্রেণির শত্রু মানব কৃষকদের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। তিনি অ্যানিমেল ফার্মের নামটিও আবার ‘ম্যানর ফার্ম’-এ পরিবর্তন করেন এবং দাবি করেন যে এই শিরোনামটিই ‘সঠিক’। খামারবাড়ির জানালা দিয়ে অভিজাতদের পার্টির দিকে তাকালে কোনটি শুকর আর কোনটি মানুষ, বিষয়টি সাধারণ প্রাণীদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। দিন যায়, ঋতু বদলায়। অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটে অ্যানিমেল ফার্মের। কিন্তু প্রাণীদের দূরবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

এনিম্যাল ফার্মে বেশ কিছু দ্বন্দ্ব রয়েছে। যেমন, প্রাণী বনাম মিস্টার জোন্স, স্নোবল বনাম নেপোলিয়ন, সাধারণ প্রাণী বনাম শূকর, অ্যানিমেল ফার্ম বনাম প্রতিবেশী মানুষ। কিন্তু এগুলোর সবই শোষনকারী ও শোষিতদের মধ্যে অন্তর্নিহিত উত্তেজনার প্রকাশ। শ্রেণী এবং সমাজতন্ত্রের উচ্চ আদর্শ এবং কঠোর বাস্তবতার মধ্যে দ্বন্দ্ব। এনিম্যাল ফার্মের স্মরণীয় এবং কার্যকর দৃশ্যটি ছিল যখন নেপোলিয়ন উইন্ডমিল বিষয়ক সর্বশেষ বিতর্কের সময় স্নোবলকে আক্রমণ করার জন্য তার নয়টি কুকুরকে লেলিয়ে দিলেন। এটি উপন্যাসের একটি মূল টার্নিং পয়েন্ট কারণ পশু খামারের নতুন সরকারের প্রথম পদক্ষেপ হিশেবে নেপোলিয়নের জন্য এটা খুবই তাত্পর্যবপূর্ণ ছিল। এর পরিণতিতেই স্নোবলকে নেতৃত্ব থেকে উচ্ছেদ করে নেপোলিয়ন খামারের একমাত্র নেতৃত্ব দখল করে।তখন স্নোবলকে দেখানো হয় বিশ্বাসঘাতক, মিথ্যাবাদী এবং চোর হিসেবে। কোথাও কোনো ভুল হলেই দোষ গিয়ে পড়ে তার ওপর। এই অংশটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয় হওয়ার কারণ হল এটি উপন্যাসটির মূল প্রতিপাদ্য এবং উপন্যাসের বাকি অংশ এর দ্বারা প্রভাবিত।

এরপর প্রাণীরা নেপোলিয়নকে অনুসরণ করতে বাধ্য হয় কারণ সে বলে তারা তার নির্দেশ অমান্য করলে মিস্টার জোনস ফিরে আসবে । প্রাণীরা মিস্টার জোন্সকে ঘৃণা করে তাই তারা সেটাই করবে যাতে তাদের উপর মানব শাসন ফিরে না আসে। নেপোলিয়ন প্রাণীদের বলে যে, সম্প্রতি সে জেনেছে স্নোবল গোপনে মিস্টার জোন্সের জন্য কাজ করছে। স্বাভাবিকভাবেই, কিছু প্রাণী তাকে বিশ্বাস করে না, এবং তারা এই বিষয়গুলি তুলে ধরেছিল যে তিনি কীভাবে গোয়ালঘরের যুদ্ধে অসম সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছিলেন। নেপোলিয়ান তাদের বলে যে স্নোবল শুরু থেকেই মিস্টার জোন্সের সাথে কাজ করছে। নেপোলিয়ন আরও বলে সমস্ত প্রাণী সমান কিন্তু তারপরেও এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে শুধুমাত্র শূকররাই খামারের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। এই বিবৃতিটি খুবই বিদ্রূপাত্মক কারণ প্রতিটি প্রাণী সমান বলা হয় বটে কিন্তু বাস্তবে কিছু প্রাণী অন্যদের চেয়ে নিজেকে উত্তম ভাবে। এ এক অদ্ভূত ও স্বৈরাচারী মনোভাব -সমস্ত প্রাণী সমান, কিন্তু কিছু প্রাণী অন্যদের চেয়ে বেশি সমান। উপন্যাসের অরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ন ।নেপোলিয়ন জন্মের সময় তাদের মায়ের কাছ থেকে নেওয়া কুকুরছানাগুলিকে স্নোবলকে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করে। তাদের ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা হিসাবে ব্যবহার করে এবং সকলের উপর তার কর্তৃত্ব খাটানোর জন্য তাদের হিংস্রভাবে লেলিয়ে দেয়। নিষ্পাপ কুকুরছানাদেরকে জঙ্গি বানিয়ে তোলার এই রূপান্তর প্রমাণ করে যে সাধারণ লোকবলকে সুকর্ম কিংবা অপকর্মে নিয়োজিত করাটা মাসকশ্রেণির ইচ্ছাশক্তির ওপরেই নির্ভর করে। নেপোলিয়ন আরও ঘোষণা করে, এখন খামারে কাজ করার অপর নাম স্বাধীনতা যেখানে আগে তারা দাসত্ব করত। আরও ঘোষণা করে যে প্রাণীরা আর কোনো সভা করার জন্য রবিবারে মিলিত হবে না। এই বিবৃতিতে সে আসলে বোঝাতে চেয়েছে, রবিবারের সভাগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে খামারে গণতন্ত্রের শাসনেরও অবসান ঘটতে চলেছে।

সারাবাংলা/এসবিডিই

প্রবন্ধ ফিরে দেখা জর্জ অরওয়েলের অ্যানিমেল ফার্ম মধুসূদন মিহির চক্রবর্তী সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর