Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাপ্পু সাল্লুর অভিমানে শিল্প খুঁজি

কামরুল হাসান নাসিম
১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:১৩

দু’টো নামই আমাদের কাছে আদরের। দু’জনাই দুইটি জনপ্রিয় ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি। একজন, বিসিবি সভাপতি নাজমুল আহসান পাপন। অন্যজন, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দীন। প্রেম দেখিয়ে উষ্ণতার পরশে যেয়ে একজন কে পাপ্পু ও অন্যজনকে সাল্লু সম্বোধনে থেকে এগোন যাক।

মানুষ তার সাংস্কৃতিক পছন্দ নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতকে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে জনপ্রিয় খেলা হিসাবে ফুটবল, নাকি ক্রিকেট, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা কিংবা ব্যাখা করার দরকার নেই। ফুটবলই এগিয়ে কিন্তু যেহেতু দেশটি ক্রিকেটের মাধ্যমে অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় থাকতে পারে, তাই সব্বাই বলে থাকে, ক্রিকেটই আমাদের অহংকার। অতি অবশ্যই বিনোদন পেতে কৃষ্টিগত খড়গও।

বিজ্ঞাপন

তলোয়ার তাই আমাদের কাছেও আছে। বহুল আলোচনা ও সমালোচনাকে বধ করে একজন পাপ্পু প্রমাণ করতে পেরেছেন যে, শুধু ক্রিকেটে বাংলাদেশ সাফল্য পাওয়া দেশই নয়, বৈশ্বিক মানের অতি উন্নত একটি ক্রিকেট বোর্ডও আছে আমাদের।

অন্যদিকে একযুগের চেয়েও বেশি সময় নিয়ে বাফুফের দায়িত্বে তিনি রয়েছেন। সাল্লুর কথা বলা হচ্ছে। অথচ, তার নেতৃত্ব নিয়ে খুশী নয় দেশবাসী। ওই যে, ফুটবলে আশাতীত সাফল্য ধরা দিচ্ছে না ! কিন্তু, লোকটার সাহসী ও স্পষ্ট বক্তব্য তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা বলার ক্ষমতা, তাকে অন্য জাতের সত্তা হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয়। চাইলেই সাল্লুকে আপনি ‘অপদার্থ’ বলে বকা দিতে পারবেন না।

পাপ্পুর কথা বলার আদলটি শুরুর দিকে কেহই মেনে নিতে পারত না। কিন্তু দিনশেষে পাপ্পুর অকপটে সত্য কথা বলার অভ্যাস ও ঘটনা প্রবাহের সাথে তাল মিল রেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা—- তাকেও, সঙ্গত যুক্তিতে এখন দেশের জনশ্রেণি মেনে নিয়েছে। যখন তিনি একটু মনোকষ্ট পেয়ে ধীরে কথা বলতে থাকেন, মনে হয় এতিম একটি বাচ্চা কত কষ্ট পেয়ে কথা বলছেন ! দুনিয়ার সব কষ্ট তার গলার শ্বাসনালিতে——-অসম্ভব মায়ায় জড়িয়ে যেয়ে তখন পাপ্পুকে বলতে ইচ্ছে হয়, ভালবাসি বন্ধু !

বিজ্ঞাপন

এই পাপ্পুই যখন হুংকার দিয়ে শক্তিশালী কোন দেশের বিরুদ্ধে খেলতে যাবার আগে বাংলাদেশকে দেখে বলেন, আমাদের জেতার সামর্থ্য রয়েছে, তখন তাঁর নাকের উপরিভাগ থেকে দুই চোখ হয়ে ভ্রু পর্যন্ত লক্ষ্য করলে দেখা যায়, চেহারার মধ্যে বাঘের একটা প্রতিচ্ছবি আছে। কেহ এভাবে দেখেছে কিনা জানিনা, তবে সত্যান্বেষী হয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শর্ত পূরণ করেই বলছি, পাপ্পু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অবয়বকে প্রতিনিধিত্ব করেন তার মুখায়বের মাধ্যমে। তবে তা সব সময়ে নয়। পাপ্পু আবার যখন খেলোয়াড়দের অনৈতিক পরিক্রমা মোকাবিলাকরত আক্রমনাত্মক মেজাজে থাকেন, তখনও তার চেহারায় অভিমানের বুনো উচ্ছ্বাসে সেই বাঘ দৃশ্যমান হয়ে যায়। দিনে দিনে পাপ্পুও আমাদের মন জয় করা মানবিক অস্তিত্ব, যাকে সত্যিকার অর্থেই এখন ভালবাসা যায়।

সাল্লুর ফুটবল পেশাদারিত্ব, খেলার মাঠেও একসময় হারতে না চাওয়ার মানসিকতা, তাঁকে অন্য সকলের চেয়ে আলাদা করে রাখে। ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব —-দু’টো আলাদা রঙের মিশেলে সাল্লু চরিত্রের যে ক্যানভাস, সেখানে তিনি দরিদ্র চিত্র হিসাবে উপস্থাপিত হলেও, ধারভারে তিনি অদম্য সত্তায় পথিক হয়ে বলতে পারেন, আমার মত আর পাঁচজন সাল্লু পেলে ফুটবলে বিপ্লব করে দিতে পারতাম!

সাল্লু হালে পাপ্পুকে একহাত নিয়েছেন। কটাক্ষ করে বলতে চেয়েছেন যে, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে পাপ্পুর প্রায়শই মুঠোফোনে কথা বলার বিষয়টি কৌশলে জনগোষ্ঠীর কাছে জানানোর অহেতুক উদ্রেককে স্বাগত জানানোর কিছু নেই। এমন অনুশীলনটিকে সাল্লু নেতিবাচক হিসাবেই দেখে ‘চরিত্র’ ব্যাখা করে বলেছেন, এহেন কিছু করা আমার পক্ষে অসম্ভব।

অপরদিকে পাপ্পু পুনরায় মন খারাপ করে প্রতিউত্তরে সাল্লুর সাংগঠনিক দুর্বলতাকে সামনে এনে বলে দিয়েছেন যে, ‘ওরে ভাই তোমার আমার ফেডারেশনের পরিচালকদের তো একদিনেই বিশ লক্ষ টাকা খরচ করার বাস্তবতা আছে, তুমি চাইতে ! কেন আমাদের মেয়েরা বিদেশের মাটিতে খেলতে যেতে পারল না ? বিশ লক্ষ টাকার জন্য পারল না?’

সাল্লু পাপ্পুর শ্লেষ-রণ, দেশের রাজনৈতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দলের মুখপাত্রদের চেয়ে উৎকর্ষের ছিল। মজা দিয়েছে। যেখানে বিএনপির মত দলে থাকা চাকুরে রাজনীতিকদের কন্ঠে নতুন কিছু ভাসে না, সেখানে সাল্লু-পাপ্পুর ঢিল ছোঁড়াছোড়ির রসায়নে ক্রীড়া লেখক হিসাবে উপভোগ করেছি।

ওরা উভয়েই ফলত নেতা। নেতার মধ্যে যে সকল মৌলিকগুনাবলি থাকা দরকার, তা তাদের মধ্যে আছে। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীরও খুবই ভাল লেগেছে। অন্তত, দুই যোদ্ধার মধ্যে আগুন রয়েছে, তারা ক্রিকেট ও ফুটবল নিয়ে লড়াই করতে চায়। সাল্লুকে অবশ্যই আগামীদিনে প্রমাণ করতে হবে। তিনি যেন দেশের ফুটবলকে একটা সম্মানের জায়গায় রেখে একদিন গোল্ডেন হ্যান্ডশেক নিতে পারেন!

প্রধানমন্ত্রীর কথা হচ্ছিল। তার মজ্জাগত অভ্যাস হল, খুঁটিনাটি সব বিষয়গুলো পরখ করা। অতঃপর তিনি সিদ্ধান্ত দিতে জানেন। যদি পাপ্পু-সাল্লুর অহিংস বাকতর্ক চলতে থাকে, হয়তো পাপ্পুকে, নাকি সাল্লুকে থামতে হবে, তিনিই সময়মতো বলে দেবেন।

প্রাসঙ্গিক হবে কিনা জানিনা, তবু বলতে চাই যে, ক্ষমতাসীন দলের কোন নেতা বা কর্মীর অযাচিত ভুমিকায় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, এমন কিছুর প্রশ্রয় আজ পর্যন্ত একজন শেখ হাসিনা দেন নি। তবে তিনি অবগত কিনা জানি না যে, রাজশাহী মহানগরীর এক শীর্ষ নেতা ডাবলু সরকার সমালোচিত ভিডিওতে তার জননাঙ্গ প্রদর্শন করেও সাংগঠনিক কাজে গণভবন পর্যন্ত এসে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। এমন কিছু দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে কিনা— প্রশ্ন রেখেই বলছি, সাল্লু পাপ্পুর উক্তিগত লড়াইয়ে শিল্প ছিল। সাংস্কৃতিক সড়কে নৈতিকতার সুর ! যে সুরে তারা প্রমাণ করতে চায় যে, আমরা ফুটবল ও ক্রিকেটকে নিয়ে সঠিক কক্ষপথে আছি। কিন্তু, কথিত ওই নেতা ডাবলু সরকারের পেছনে কোন সরকার রয়েছে জানতে ইচ্ছে হয়। যদি সেই সরকার খুব শক্তিশালী হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে, তারা শেখ হাসিনার লোক নয়।

দার্শনিক ঈশ্বরমিত্র বলছেন, “সততা, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃস্থানীয় চরিত্রের কন্ঠের আওয়াজকে সময়ে সময়ে উত্তেজিত করায়।” এটি সত্য যে, রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাভাষ্য দিতে বলা যায় যে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তাঁর দক্ষতা ও সততার জন্য মাঝেমাঝে সংবাদকর্মীদেরকে ‘রাবিশ’ বলতেন। কেন এমন করে বলতেন ? কারণ, তিনি প্রশ্নকারীর অর্বাচীন, অর্থহীন প্রশ্নগুলো শুনে বিব্রত হতেন—যেখানে তিনি একজন সৎ ব্যক্তিসত্তা। ঠিক এভাবেই যদি সাল্লু ক্ষেপে উঠে রাবিশ বা এর কাছাকাছি তির্যক শব্দ ব্যবহার করেন, এতে মন খারাপ করা যাবে না গণমাধ্যমকর্মীদের।

সাল্লুর চেষ্টা আছে, দেশবাসী চায়, তুমি সাফ ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের পর এশিয়াতে বাংলাদেশকে অন্তত একটা জায়গায় নিয়ে যাও। হ্যাঁ, ফুটবল আর ক্রিকেট এক বিষয় নয়। ক্রিকেট খেলে কয়টা দেশ? দিনে দিনে কঠিনই হয়ে যাচ্ছে ফুটবলে। বাংলাদেশের খেলার মান কমছে না। বাড়ছেই। কিন্তু, অন্য দেশগুলোও খুবই দ্রুত উন্নতি করছে। যা বুঝতে হবে বাংলাদেশকে।

সাল্লু তাই এভাবেই চালিয়ে যাও। কথার ফুলঝুরি তো তোমার কাছে আছেই। মাঝেমাঝে রেগেও যাও। কিন্তু তোমার সেরাটা দাও প্রিয় বাংলাদেশের জন্য। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামালের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে তার আত্মাকে তোমার শরীরে জায়গা দিয়ে কিছু একটা করে দেখাও। দেখবে তখন পাপ্পুও বলছেন, আমার সমালোচনার সবিশেষ যোগ্যতা, অধিকার একজন সাল্লুর আছে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, ক্রীড়ালোক

সারাবাংলা/এসবিডিই

কামরুল হাসান নাসিম পাপ্পু সাল্লুর অভিমানে শিল্প খুঁজি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর