জয়শ্রী দাসের অনুগল্প ‘অনুরাধার প্রেম’
১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:১৭
অনুরাধার বয়স চল্লিশ ছুঁয়েছে। রাত ও দিন মিলিয়ে প্রায় আঠারো ঘণ্টা কাজ করে অনুরাধা। চাকরি, বাড়ির সামলানো। কিন্তু তার এতসব কাজে কোন ধন্যবাদ জ্ঞাপন নেই। অনুরাধা একটি শিক্ষিত ও সাম্যবাদী পরিবার থেকে এসেছে। তার স্বামী বজলুর রহমান। তেমন কোন কাজ করে না।
ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা একটু দেখে দেয়। অনুরাধা তার অর্থকড়ি সর্বস্ব স্বামীকে প্রদান করে। অফিসের একটি বিষয়ে অনুরাধার খুব মন খারাপ হয়। সে কাকে বলবে বুঝে উঠতে পারে না।
অবশেষে সে তার স্বামীকে বলে, ‘শোনো না আমার আজকে খুব মন খারাপ’
মৃদুমন্দ নাসিকা গর্জন করতে করতে ঘুমের মধ্যে বজলুর রহমান বলে,
‘সে কথা পরে শুনবো এখন ঘুমানোর সময় ঘুমাও’।
অনুরাধার ভারী মন খারাপ হয়। মাত্র একুশ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল। সেই থেকেই তার মানসিক এবং শারীরিক দুই সম্পর্কই অবহেলিত। বাইরে মৃদু শৈত্য প্রবাহ হচ্ছে। অনুরাধা স্বামীর গায়ে কম্বল খানি টেনে দিয়ে, ছোট ছেলের কম্বলের মধ্যে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ে। অনুরাধা তার স্বামীর এমন উদাসীনতা আর মেনে নিতে পারে না। এভাবেই কেটে যায় দিনগুলো। অফিস শেষে অনুরাধা পার্কে হাঁটতে যায়। চৈত্র মাস এলোমেলো বাতাস বইছে। দূরে কোথাও বসন্তের কোকিল ডাকছে। হঠাৎ করে এক ব্যক্তি পার্কে অজ্ঞান হয়ে যায়।
অনুরাধা তার পাশে দাঁড়ায়, সন্ধ্যার আলোটি প্রায় নিভে এসেছে। অনুরাধা আশেপাশে সকলের সহযোগিতায় তাকে তার গাড়িতে উঠিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসে।
-আপনার নাম কি?
জ্ঞান ফিরছে অল্প অল্প, অনুরাধার বাড়ি থেকে বারবার ফোন। তার ছোট ছেলেটি তাকে বারবার বাসায় ফেরার অনুরোধ করছে। অনেক কষ্টে ওই লোক উত্তর দিল তার নাম আজাদ। অনুরাধার স্বামী দুবার ফোন দিল কিন্তু সেটাতে কোন আগ্রহ প্রকাশের লক্ষণ নেই। সেটা কেবল এখনো বাড়ি ফেরেনি এ কারণটি জানার জন্য। অনুরাধার স্বামীর তার প্রতি কোন আবেগ কাজ করে না। অনুরাধা স্বামীর প্রতি ক্লান্ত বোধ করছে। সংসার এবং সন্তানের জন্য অনুরাধা এই উদাসীনতা সহ্য করে আসছে। একটু সুস্থ বোধ করার পর অনুরাধা আজাদ সাহেবকে তার বাড়ি পৌঁছে দিলো। তার বাড়িতে প্রবেশ করে একটু অবাক হলো অনুরাধা, আজাদ সাহেবের দুই ছেলে দেশের বাইরে থাকে, তার স্ত্রী বেঁচে নেই। একজন মহিলা ও একজন পুরুষ আছে যারা বাড়ির সব কাজ করে। অনুরাধা বাড়ি ফিরে কোন রকম দুটো খেয়ে শুয়ে পরলো। দিন যায় রাত যায় সংসারের দ্বন্দ আর শেষ হয় না। অনেক দিন পর শীতের এক সকালে পার্কে হাঁটতে গিয়ে আজাদ সাহেবের সাথে দেখা হয় অনুরাধার। সুখ দুঃখের গল্প করতে করতে দুজন ঘুরে বেড়াতে থাকে। এভাবেই চলছিল তাদের ভালো লাগা। এক বছর পর অনুরাধা অনুভব করে তার আজাদ সাহেবকে ভালো লাগে। স্বামী বজলুর রহমানের সঙ্গে অনুরাধার সম্পর্কটা আবেগের নয় সুতরাং ভেঙে যাবার ছিল। আবেগবিহীন কোন সম্পর্ক এবং তার স্থায়িত্ব সত্যিকার অর্থে বেশিদিন থাকে না।
অনুরাধা তার স্বামীর কাছে গিয়ে বলে, ‘আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাব।’
-যাও, কে মানা করেছে? সঙ্গে করে তোমার সন্তানদের নিয়ে যেও।
-এ বাড়ি তো আমার।
অনুরাধার স্বামী বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলে, ‘এ বাড়ির অধিকার আমি ছাড়বো না।’
অনুরাধা যখন আজাদ সাহেবের কাছে সবকিছু শেয়ার করে, তখন সে বলে ‘তুমি বাড়ি ছেড়ে দাও, আমার কাছে চলে আসো।’
অনুরাধা স্বামীকে ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে আজাদ সাহেবের কাছে চলে আসে। অনুরাধা ভালো আছে। এখানে কোন উদাসীনতা নেই।
সারাবাংলা/এসবিডিই
অনুগল্প গল্প-উপন্যাস জয়শ্রী দাস জয়শ্রী দাসের অনুগল্প ‘অনুরাধার প্রেম’ বৈশাখী আয়োজন বৈশাখী আয়োজন ১৪৩০ সাহিত্য