ফারাহ জাবিন শাম্মীর কবিতা ‘নিখোঁজ হওয়ার গল্প’
২০ এপ্রিল ২০২৩ ১২:২৮
উদ্ভ্রান্ত নাবিকের মতোই
দিক ভুলে একদিন হারিয়ে যাব ভৌগলিক মানচিত্রের বাইরের কোন স্থানে,
ঠিকানাবিহীন সেই জায়গায় থাকবেনা আমার আফসোসের শেষ চিহ্নটুকুও।
ততোটাই দূরে হারাব, যতটুকু দূরে গেলে আর ফেরা হয় না।
অথবা চাইলেও ফিরতে পারেনা, ক্লান্ত পথিক।
গুণমুগ্ধ পাঠক নেই জেনেও অযুত নিযুত বাক্য ব্যয়ে যে উপাখ্যান রচিত হয়েছে তা অপ্রকাশিত থাক বরং। আমি হারানোর বহুবছর পর কোন এক উছিলায় গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচিত হবে।
অবহেলার পাঠক প্রতিটি শব্দ বাক্যে খুঁজে পাবে নিজেকে ঠিক আয়নায় যেমন নিজের প্রতিচ্ছবি ভাসে। সমর্পণের যে ভাষা বা গল্প পড়া হয়নি আমি হারানোর পর সেই গল্পের গুণমুগ্ধ পাঠক হবে তুমি।
আমি এমন একটি গল্প প্রকাশিত হবার লোভেই একদিন হারিয়ে যাব ঠিক।
তারপর আসবে সেই একদিন, যেদিন…. দিন নেই, রাত নেই হারিয়ে যাওয়া আমার খোঁজেই কেটে যাবে তোমার আট প্রহর।
ক্লান্ত চোখে ঘুম নেই, চোখের নীচে কালি, মুখেও অরুচি।
সকালের খাবার দুপুরে আর দুপুরের খাওয়া গিয়ে ঠেকবে মাঝরাতে।
এভাবে মাস যাবে, বছর পেরোবে কাঁচাপাকা উস্কুখুস্কো চুলে জট বাধবে।
লোকে বলবে উন্মাদ তুমি ?
এসবকিছুর পরোয়া না করেই, নাওয়া খাওয়া শিকেয় তুলে একদিন আমার খোঁজেই নিরুদ্দেশ হবে ঠিক।
এরপর, অনেক অনেকগুলো বছর পর… পৃথিবীতে তখন রোগশোকের বালাই নেই।
দেশও উন্নত হয়েছে, শহরের সব মেট্রোরেল আর উড়ালসেতুও উদ্বোধন হয়ে গেছে সেই কবে।
মানুষ মুহূর্তের মধ্যেই চলে যাচ্ছে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্তপ্রান্তে।
সংবাদমাধ্যমে আর মারামারি কাটাকাটির খবর নেই বললেই চলে।
নারীদের একা পথ চলতে গিয়েও এখন আর আগের মতো উত্ত্যক্তের শিকার হতে হয় না।
গাছে গাছে সবুজ পাতারা নেচে উঠে নিজেদের খেয়ালে, ফুলে ফুলে রঙিন প্রকৃতি, পাখিরা গেয়ে চলে আপন মনে।
উত্তরাধিকেরা আমাদের সেই গল্পে এখনও তর্কে তুফান।
ঠিক এমন সময়ের কোন এক তৃষ্ণার্থ প্রহরে শতবর্ষী একটি বটবৃক্ষে দুটো শালিক মুখোমুখি।
মুখে শব্দ নেই, অথচ তারা অনুভব করল
পূর্বজন্মে তারা একে অপরের ভালোবাসায় নিখোঁজ হয়েছিল।
পরজন্মে আমরা এমন দুটি পাখি হব
সেই সুখেই একদিন এ জন্মের পাঠ চুকাবো ঠিক।
সারাবাংলা/এসবিডিই
ঈদসংখ্যা ২০২৩ কবিতা নিখোঁজ হওয়ার গল্প ফারাহ জাবিন শাম্মী সাহিত্য