কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা [দ্বিতীয় পর্ব]
২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩৫
[দ্বিতীয় পর্ব]
ঠাডা শহরের আমপুরার ওয়ার্ড কমিশনার মি. দিগ্বিজয় রায় নিজের বাড়ির চারতলায় মধুমাখা রুমে বসে শরীরে মধু মাখছিলেন। মধু মেখে দিচ্ছে মিসেস শরবতী। মধু মানে দ্রাক্ষারস। দিগ্বিজয় রায়কে ঘিরে বসেছে চারজন। ভাটারা থেকে এসেছে পুলিশ কমিশনার খাইখাই খান। উগান্ডা থেকে এসেছে মতিয়াক মারবেল। মতিয়াক মার্বেল একা আসে নাই, দুইজন বান্ধবীও এসেছে। মি. দিগ্বিজয় রায়ের অনেক দিনের শখ, আফ্রিকা মহাদেশের কালো নারীর কালো শরীর ভোগ করা। সেই ভোগের দায়িত্ব নিয়ে এসেছে উগান্ডা থেকে মতিয়াক মারবেল। সেই নারী দুজন ঘুমাচ্ছেন, মাত্র গত দুপুরে বিমানে এসে নেমেছে ঠাডা শহরে। খুবই ক্লান্ত ওরা। এক পলক দেখেছে মি. দিগ্বিজয় রায়। দুইজন দুই রকম। একজন ছোট টাইপের, ঠাডা শহরের মেয়েদের মতো, হালকা পাতলা― বুকের বর্তুলও পাতলা। মাথার চুল কম। কিন্তু অন্যজন বিশাল আকৃতির। শরীরের ওজন একশো বিশ কেজির কম না। চওড়া বক্ষ, স্তন দুটিও বিশালাকার। মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা। ওই শরীরের নীচে একবার গেলে আর ফিরে আসা যাবে কি না ভাবছে মি. দিগ্বিজয় রায়।
চতুর্থজন এসেছে আসরে যোগ দিতে পুরানা ঠাডা থেকে, মি. আম্বিয়াচরণ। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। কি ব্যবসা করে মি. আম্বিয়াচরণ কেউ জানে না কিন্তু প্রতিবছর ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ছে। দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ মেলামেশা মি. আম্বিয়াচরণের। খুবই পাওয়ারফুল লোক। এই লোককে হাতে রাখা মানে, নির্ভয়ে ঠাডা শহরে যা ইচ্ছে তাই করা। মি. আম্বিয়াচরণ আজ এসেছে পানের সঙ্গে কালো মাংসের লোভে। মি. আম্বিয়াচরণ যখন শুনছেন মি. দিগ্বিজয় রায়ের কাছে, উগান্ডা থেকে কালো মুরগী আসছে―
কালো মুরগী ফ্রম উগান্ডা? অবাক প্রশ্ন মি. আম্বিয়াচরণের।
বুঝলেন না, মোবাইলে খিক খিক হাসে মি. দিগ্বিজয় রায়―আরে বস দেশে বিদেশে প্রচুর সাদা বাদামী মাংস চেখেছেন, কিন্তু আফ্রিকা মহাদেশের মাংস চেখে দেখেছেন?
বিছানায় বসে বসে আলাপ করছিলো মি. আম্বিয়াচরণ। দিগ্বিজয় রায়ের প্রশ্নে শরীরের কোষে কোষে লোভ টগবগিয়ে ফুটতে থাকে। বসা থেকে নেমে দাঁড়ায় মি. আম্বিয়াচরণ, না তো ভাই। চাখা তো দূরের কথা, ভালো করে দেখিই নাই। মাঝে মধ্যে টিভির নিউজে আর নীল ছবিতে―
আমি ব্যবস্থা করতেছি, ডাটের সঙ্গে গম্ভীর গলায় বলে আমপুরা এলাকার নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মি. দিগ্বিজয় রায়।
মানে?
উগান্ডায় আমার এক বন্ধু আছে, মি. মতিয়াক মারবেল। মাসখানেকের ভ্রমনে আসতেছে। সঙ্গে আসবে দুটি শাঁসালো নারী।
হাচাই? মি. আম্বিয়াচরণের শরীরে নৃত্যের জোস উঠেছে। হঠাৎ অভাবনীয় সুখের সংবাদে মি. আম্বিয়াচরণের নেচে উঠতে ইচ্ছে করে। যেমন ইচ্ছে তেমন করছে― নাচছেও রুমের মধ্যে।
একশো ভাগ না, তিনশো ভাগ সত্য। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমাদের ঠাডা শহরের বিশাল এয়ারপোর্টে নামছে। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আসলো বলে―
আমি? আমি কি করবো? আমি কি এখনই আসবো?
বুঝতে পারছে মি. দিগ্বিজয় রায়, আফ্রিকার লোভে মি. আম্বিয়াচরণ অস্থির হয়ে পড়েছে। অনেকদিনের চেনা মানুষ। কতো বিচিত্র অভিজ্ঞতা দুজনের। হাসতে হাসতে বলে, এখনই আসার দরকার নাই। ওরা আমার বাসায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল। আপনি রাতের দিকে আসেন।
ওকে, বিকেলে এক তেলতেলে মন্ত্রীর সঙ্গে আমার এ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। সেটা সেরেই চলে আসবো। আমি কি বোতল নিয়ে আসবো?
বস, আপনি আমার বাসায় আসবেন, আবার বোতলও আনবেন― এটা হয় না। মাংস, বোতল সব আমিই আপনার জন্য রেখে দেব।
ওকে, ওকে…। চনমনে গলায় বলে মি. আম্বিয়াচরণ। তাহলে ওই কথাই রইলো, রাতে আসতেছি।
জি.. আসুন।
রাতের সেই আসর কেবল জমে উঠেছে। মি. আম্বিয়াচরণ স্থুলকায় টাটিয়া ট্যাম্বোকে বেছে নিয়ে ওর পাশেই বসেছে। গ্লাসের তরল মুখে ঢালছে আর টাটিয়া ট্যাম্বোর বিশাল স্তনে হাত ঘষছে। মি. দিগ্বিজয় ছোট সাইজের মেয়ে রুথিয়া ক্যামবেলকে নিয়ে বসেছে। রুমের মধ্যে বিশাল দেওয়াল জুড়ে আফ্রিকান নগ্ন নৃত্য চলছে ড্রামের তালে তালে ঠিক সেই সময়ে দরজায় এসে টোকা দেয় দারোয়ান দারনিল।
মুহুর্তে মেজাজ সপ্তমে পৌঁছে যায় মি. দিগ্বিজয় রায়ের। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে তাকায় মি. আম্বিয়াচরণের দিকে। আম্বিয়াচরণ টাটিয়া ট্যাম্বোর বুক থেকে মুখ সরিয়ে বলে, নিশ্চয় কোনোও জরুরি…
রুথিয়া ক্যামবেলকে সরিয়ে রেখে দাঁড়ায় মি. দিগ্বিজয় রায়। দরজার পাশে গিয়ে দরজা খুলে বিরক্তির সঙ্গে তাকায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। অবাক হলো দিগ্বিজয় রায়। মাথাটা নেড়ে নেয় ডানে বামে― মাত্র তো কয়েক পেগ। এমনতো হবার নয়। কেউ নেই, অথচ গোপন রুমের দরজায় টোকার শব্দ শুনেছে। এই রুমের খবর জানে অল্প কয়েকজন মানুষ। আটতলা বাড়িটার চারতলার শেষ দিকে বিশেষ ডিজাইনের রুম। কোনো দিকে দিয়ে বোঝার উপায় নেই, এখানে একটা বড় গোপন কক্ষ আছে। মি. দিগ্বিজয় রায় ডাক দেয়, দারনিল?
কোনও সাড়া নেই। আবার ডাকেন― দারনিল?
দারনিলকে আমরা বেঁধে রেখে এসেছি। চমকে শব্দের উৎস লক্ষ করে তাকায় আমপুরা এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার মি. দিগ্বিজয় রায়। তাকিয়ে চমকে ওঠে, কোনোও মানুষ নয়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে চারটে কুকুর। কুকুরগুলো অনেক বড়। গাড়িতে আসা যাওয়ার সময় গলিটার মধ্যে অনেকগুলো কুকুর দেখেছে মি. দিগ্বিজয় রায়। কুকুরগুলো গলির বাড়িগুলোর সামনে জটলা পাকিয়ে শুয়ে থাকে। মাঝরাতে বিকট ঘেউ ঘেউ চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বিরক্ত লাগে মি. দিগ্বিজয় রায়ের। সেই রাতে ভাবতো সকালে সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে অভিযোগ দিতে হবে, আমপুরার এই গলি থেকে কুকুর উচ্ছেদের। কিন্তু সকালে আর মনে থাকে না। অথচ সেই কুকুরগুলোর কয়েকটা বাসায়, একেবারে গোপন রুমের দরজায়। আবার বলে কি না― দারনিলকে বেঁধে রেখে এসেছে।
দারনিলকে বেঁধে রেখেছো কেনো?
চারটে কুকুরের সামনের কুকুরটা তিনটার চেয়ে বেশ লম্বা। আর স্বাস্থ্যবান। নাদুসনুদুসও। বাঁকানো লেজ নাড়াতে নাড়াতে বলে, ও আমাদের ঢুকতে দিতে চাইছিল না।
ঠিকই আছে, তোরা কুকুর, মানে কুত্তা। তোরা বাড়ির মধ্যে ঢুকলি কেনো? একটু তেড়ে গলায় বলে মি. দিগ্বিজয় রায়। পাওয়ার তো কম না। এলাকার নির্বাচিত কমিশনার। দেশের ক্ষমতায় নিজ দলের সরকার। মুহুর্তের ইশরায় কতো মানুষ বাড়ি গাড়ি ফানা ফানা হয়ে যায়, আর এই কুত্তা…!
মি. দিগ্বিজয় রায়, সামনের কুকুরটা গরগর গলায় বলে, আমরা আপনার এই বাড়িটা দখল নিতে এসেছি।
আমার বাড়ি দখল করতে এসেছিস? কুকুরের চেয়েও গরগর গলায় বলে মি. দিগ্বিজয় রায়। তোরা তো কুত্তা, জানিস কোথায় কার বাড়ি এসেছিস?
আমরা যে কুত্তা, আমরা ভালো করেই জানি মি. দিগ্বিজয় রায়। আপনাকে যা বলি শুনুন মনোযোগ দিয়ে। মাঝের কালো রঙের কুকুরটা বলে, এই বাড়ি আপনি দখল করেছেন আজ থেকে তেরো বছর আগে―
হাসে দিগ্বিজয় রায়, তোদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই। বাসায় আমার দেশি-বিদেশি মেহমান। তোরা আমার সর্ম্পকে জানিস না।
একেবারে পিছনের সাদা-কালো রঙের কুকুরটা বিকট জিহ্বা বের করে হাসে, আমরা তোর সর্ম্পকে সব জানি!
মুহুর্তে মি. দিগ্বিজয় রায়ের মাথায় রক্ত উঠে যায়। শালার কুত্তারা… কিন্তু বাসায়, গোপন কুঠরির মধ্যে বিদেশি মেহমান আবার সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে গভীর যোগাযোগের মানুষ বিশিষ্ট মেহমান মি. আম্বিয়াচরণ বাসায়। এইসব মেহমানদের সামনে কোনো…
তোরা এখন যা, দাঁতে দাঁত ঘষে, না গেলে পিস্তলের গুলিতে সবকটারে শোয়াইয়া ফেলবো। আমার একটা গুলিও মিস হবে না― বলতে বলতে মি. দিগ্বিজয় রায় কোমরে হাত রাখে, চোখের পলকে চারটে কুকুর একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিগ্বিজয় রায়ের উপর। দিগ্বিজয় রায় চারটে কুকুর বুকের উপর নিয়ে বিশাল রুমের বড় সোফার উপর চিৎ হয়ে পড়ে। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেবিলের উপর কয়েকটি স্ফটিকের গ্লাস, গ্লাসের মদ, কয়েকটা প্লেটে ভাজা মাংসের স্তূপ, বাদামের প্লেট, ডিমের অমলেট, ছোলাভাজার বাটি, কয়েক বোতল ঠান্ডা পানি উল্টে পড়ে ভেঙ্গে চুরে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় রুমের মধ্যে থাকা মি. আম্বিয়াচরণ, টাটিয়া ট্যাম্বো, মি. মতিয়াক মারবেল, পুলিশ কমিশনার খাইখাই খান কুকুরদের কুকুমারী দেখে ঘুরে দৌড়ে লুটোপুটি খেতে খেতে সোফার পিছনে আশ্রয় নেয়। রুমের মধ্যে লুটোপুটি খাওয়ার সময়ে ভেঙ্গে যাওয়া কাঁচের টুকরায় কনুই হাত পা কেটে লাল রক্ত ঝরছে। বিশেষ করে মি. আম্বিয়াচরণের পা কেটে মাংসের ভেতরে কাঁচের টুকরো ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে। ব্যথায় মি. আম্বিয়াচরণ মুখ বিকৃত করে কাঁদছে। অন্যরা কাঁপছে।
আপনারা উঠে আসেন, ভয় নেই।
মি. দিগ্বিজয় রায় লম্বা সোফার নরম কুশনের উপর শুয়ে আছে। কুকুর চারটে মি. দিগ্বিজয় রায়ের বুকের উপর লেজ গুটিয়ে বসেছে দারুণ আয়েশে। চারটি কুকুরের বড়টা লেজ নাড়তে নাড়তে বলে, সোফা ছেড়ে সামনে আসুন। আমরা জানি আপনারা এই বাসার মেহমান। মেহমানদের সঙ্গে আমাদের কোনোও বিবাদ নেই। আসুন, দয়া করে আসুন…
সোফার পেছনে আশ্রয় নেয়া― মি. আম্বিয়াচরণ ব্যথায় কুঁকড়ে আছে। বাকিরা কমবেশি জখম হলেও মারাত্মক না। পুলিশ সুপার মি. খাইখাই খানের নেতৃত্বে সবাই সোফার পিছনে দাঁড়ায়। প্রত্যেকের চোখে মুখে ভয়ার্ত ভয়ের চিহ্ন। চক্ষুগোলকের বাইরে চলে আসতে চাইছে। জীবনে অনেক হরর সিনেমা দেখেছে, দেখেছে মারাত্মক ফাইটিং ছবিও; কিন্তু আজকে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্য কখনও দেখেনি। উগান্ডার কালো মেয়ে দুটি আরও কালো চোখে তাকিয়ে কুকুরদের দেখছে।
সাদাকালো কুকুরটি বলে, বসুন। সোফায় বসুন আর আগের মতো পানাহার করুন। পানাহারতো মানুষের জীবনের একটা স্বাভাবিক প্রসঙ্গ। সুযোগ পেলে আমরাও পানাহার করি―
কিন্তু কেউ সোফার পিছন থেকে নড়ছে না।
সাদা কুকুরটা ডান পা দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে হাসে, আপনারা ভয়ানক ভয় পেয়েছেন। আমাদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমরা কুকুর, আমরা মানুষ কামড়ে দিই, আমরা রাস্তায় দাঁত নিয়ে বের হই কিন্তু আমাদেরকে বিরক্ত বা না মারলে আমরা কখনওই আক্রমণ করি না। কামড়েও দিই না। সুতরাং আপনারা নির্ভয়ে বসুন…। আমরা আপনাদের কোনোও ক্ষতি করবো না।
সাদা কুকুরের নরম গলার বক্তব্য শুনে একমাত্র দিগ্বিজয় রায় ছাড়া ভয়ে থরো কম্পমান অবস্থায় সোফার পিছন থেকে এসে সোফার সামনে বসে। টেবিলের উপর পরে থাকা খাবারের দিকে কারও দৃষ্টি নেই। গলা শুকিয়ে গেছে আম্বিয়াচরণের। মুখে যদিও একটা অবুঝ মুখোশ ঝুলিয়ে রেখেছে কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্রোধে ফেটে পড়ছে। আজ জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখের দিনে হালার কুত্তারা…।
সাদা কালো কুকুরটা হাই তোলে, আপনারা এখনও আমাদের ভয় পাচ্ছেন। অবশ্য কারণও আছে, পথেঘাটে পড়ে থাকা কুকুরদের এই ধরনের নৃশংস আক্রমন কখনও দেখেননি। আপনাদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, কেনো আমরা আমপুরা এলাকার কমিশনার মি. দিগ্বিজয় রায়ের বুকের উপর দাঁড়িয়ে আছি। এই দিগ্বিজয় রায় আমাদের দিকে পিস্তুলের গুলি ছুঁড়েছিল।
গুলি ছুঁড়বে না কেনো? বলে মি. আম্বিয়াচরণ। দিগ্বিজয় একজন সম্মানিত নাগরিক। এই ওয়ার্ডের জনগণের ভোটে নির্বাচিত কমিশনার। তাকে, তার বাড়িতে এসেছেন আক্রমন করতে?
না, ভুল বলছেন মি. আম্বিয়াচরণ। আমরা এসেছিলাম একটা নোটিশ দিতে।
নোটিশ? কি নোটিশ?
এই বাড়িটা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ।
ছটফট করতে করতে মাথা তোলে মি. দিগ্বিজয় রায়, বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে কেনো এসেছ?
সাদা কুকুরটা গলা বাড়ায়, এই বাড়িটা তোর না।
মানে? এই বাড়ি আমার না তোর বাপের? আমি বিশ বছর আগে কিনেছি সত্তুর লাখ টাকায়― চার চারটা দশাসই কুকুরের চাপ নিয়ে খুব কাহিল মি. দিগ্বিজয় রায়। কিন্তু রাজনীতিতে পোড় খাওয়া মি. দিগ্বিজয় রায় দমে যাওয়ার পাত্র নয়। শরীরের উপর কয়েকশ কেজির ওজন নিয়েও ঘাড় বাঁকা করে প্রশ্ন তোলে, তোরে কইছে এই বাড়ি আমার না! দলিল রেকর্ড সব আমার নামে―
সাদা-কালো কুকুরটা দাঁড়িয়েছিল মি. দিগ্বিজয় রায়ের মাথার কাছে। মি. দিগ্বিজয় রায়ের মুখের উপর ডান পা দিয়ে চট করে একটা আঁচড় কাটে, হারামজাদা মি. দিগ্বিজয় রায়। তোর দলিলও সত্য, তোর রেকর্ড পর্চাও সত্য। কিন্তু পুরোটাই মিত্যা। সেটা প্রমাণ করার জন্য তোকে নোটিশ দিয়ে যাচ্ছি, আগামী শনিবার দুপুরে আমরা আসব। তোর দলিল রেকর্ড পর্চা আমরা দেখব। আজ বিদেশি মেহমান আছে, আছে বিশিষ্ট পুলিশ অফিসার― ডিআইজি মি. খাইখাই খান। মি. খাইখাই খানের বাড়িতেও আমরা যাব। এখন আসি!
মি. দিগ্বিজয় রায়ের বুকের উপর দাঁড়িয়ে লেজ নাড়িয়ে কয়েকটা বুক ডন করে একে একে নেমে যায়। দরজার দিকে যেতে যেতে কুকুরগুলো ফিরে দাঁড়ায় এক এক লাইনে দাঁড়িয়ে জিহ্বা বের করে তাকায়। সাদা-কালো কুকুরটা ঘাড় কাৎ করে তাকায় উঠে বসা ক্লান্ত অবসন্ন মি. দিগ্বিজয় রায়ের দিকে, মি. দিগ্বিজয় রায় মনে রাখবেন আগামী শনিবার দুপুরে আমরা আসব। কোনোও ঝামেলার চেষ্টা করলে পরিণতি ভয়ানক হবে। ওকে?
চারটে কুকুর এক সঙ্গে নিমিষে চলে যায়।
চলবে …
মনি হায়দারের উপন্যাস ‘কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা’ [প্রথম পর্ব]
সারাবাংলা/এসবিডিই
ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ উপন্যাস কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা মনি হায়দার মনি হায়দারের উপন্যাস ‘কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা’ সাহিত্য