Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোদেলার প্রজাপতি


২২ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:১৩

প্রজাপতির রঙবেরঙের ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো দেখতে অনেক ভালো লাগে আমার।
আর ভালো লাগে রোদে ঘুরে ঘুরে প্রজাপতির পেছনে ছুটতে।
ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে…
কত যে ছুটি, কিছুতেই কখনও ক্লান্তি আসে না আমার।
বরং ইচ্ছে করে প্রজাপতির মতো নিজের শরীরে রঙিন পাখা লাগিয়ে উড়ে বেড়াতে।
ফুলে ফুলে বসে মধু খেতে আর ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি সেখানে যেতে।
কিন্তু আম্মু এসে এই সময় বকাবকি করবেনই করবেন।
এজন্য রোজ মনটা খারাপ হয়ে যায় আমার।
আম্মু যে কেন বুঝতে চায় না, পিচ্চি এত্তটুকুন একটা মেয়ে আমি;
আমার কি এত্ত এত্ত নিয়ম মানতে ইচ্ছে করে!
আমার তো খালি রোদে রোদে ঘুরে বেড়াতে মন চায়।
মন চায় সবুজ ঘাসে পা ছড়িয়ে, নীল আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াতে।
আর; আর ভাইয়ার সঙ্গে মারামারি করতে।

বিজ্ঞাপন

আমার ভাইয়াটা না ভীষণ পাজি!
ও মা! পাজি কথাটা শুনলে না ভাইয়া আবার রাগ করবে।
ভাইয়াকে পাজি না বলে বরং দুষ্টু বলা যায়।
এতে সে ততটা রাগ করে না।
ভাইয়াটা দুষ্টু এইজন্য যে, সে শুধু ছাদে ছাদে ঘুড়ি ওড়ায়।
মা কত্ত বলেন তারপরও সে ছাদেই ঘুড়ি ওড়াবে।
বলো তো, ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো কী ভালো!
যদি পা পিছলে ছাদ থেকে ধুপ করে পড়ে যায়। তখন কী হবে বলো তো।
পা তো ভাঙবেই; আরও কত্ত কি যে হতে পারে তখন।
শুধু কি সে ছাদে ঘুরে বেড়ায়।
গাছে গাছেও বাঁদরের মতো বেড়াতে ওস্তাদ সে।

বিজ্ঞাপন

তবে আমার সঙ্গে মেতে থাকে সারাদিন।
আমাকে কত আদর করে ও।
আমাকে রোজ দুপুরে আইসক্রিম কিনে খাওয়ায়।
হায়! হায়! আমার দুষ্টু ভাইয়াটার নামই তো তোমাদের বললাম না।
ওর নাম হলো রাহিক রিদওয়ান।
দুষ্টু হলেও আমাকে কিন্তু ও অনেক আদর করে।
তবে একটু পণ্ডিতিও করে।
মানে আমাকে পড়ায়
‘ও বগি তুই খাস কি
পান্তা ভাত চাস বি
পান্তা আমি খাই না
পুঁটি মাছ পাই না
একটা যদি পাই
অমনি ধরে
গাপুস গুপুস খাই। ’

ভাইয়াটা আমার একদম গাপুস গুপুস খেতে পারে না।
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে তার আগ্রহ অনেক কম।
আম্মুর অনেক বকাবকিতেও তার খাওয়া বাড়ে না কখনও।
তবে মজার বিষয় হলো সে অনেক কবিতা জানে।
মজার মজার সব কবিতা।
এসব কবিতা শুনলেই মনটা ভালো হয়ে যায় আমার।
কবিতাগুলোর মধ্যে একটা বেশ পছন্দ আমার।
কী যেন নাম কবির।
ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে।
কবির নাম আল মাহমুদ।
ছড়ার নাম, পাখির মতো।
ছড়াটার শেষ চার লাইন খুব পছন্দ আমার।
ভাইয়ারও ভীষণ পছন্দ এটা।
মন চায় ওই ছড়ার মতো হয়ে যেতে।
প্রায়ই আমরা দুজন এই চার লাইন পাঠ করি।
‘তোমরা যখন শিখছো পড়া
মানুষ হওয়ার জন্য
আমি না হয় পাখিই হবো
পাখির মতো বন্য। ’
কবিতাটা পড়লে নিজেকে কবির মতো ভাবতে ইচ্ছে করে।
আমি তো পাখিই হতে চাই।
আর প্রজাপতির মতো উড়তে চাই।
কবির মনের সঙ্গে আমার কত্ত মিল!
এ কারণেই বোধহয় আল মাহমুদ আমার প্রিয় কবি।
বাবা অবশ্য আমার প্রিয় কবির কথা শুনে বলেন, মামণি তোমার প্রিয় কবির অন্য একটি কবিতা বলো তো দেখি।
আমি কী অতশত বুঝি না কি?
আমি তো আসলে কবিতাটা পছন্দ করি, আমার মনের কথা কবি বলেছেন তো।
তাই বাবার এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে যাই।
বাবাকে বলি এখন তো মনে পড়ছে না, পরে মনে হলে ক্ষণ বলব তোমাকে।

আবার আমার ভাইয়ার কথা বলি।
তবে ভাইয়ার আগে আমার কথা।
আরে আমার পরিচয়টাই তো তোমাদের জানানো হয়নি।
আমার নাম রোদেলা।
পড়ি ক্লাস থ্রিতে।
প্রত্যেক দিন স্কুলে যেতে আমার একদম ইচ্ছে করে না।
মন চায় মাঠে মাঠে প্রজাপতির পেছনে ছুটতে।
প্রজাপতি ধরতে।
আর ফুল-পাখিদের বিষয়ে জানতে।
তারপরও স্কুলে যেতে হয় রোজ।
সপ্তাহের শুক্রবার আমার অনেক আনন্দের।
এই দিন স্কুলে যেতে হয় না।
বাবাও সারাদিন বাসায় থাকেন।
টিচার আসেন না।
সারাটা দিন খেলে রাতে বাবার কাছে পড়তে বসি।
পড়তে পড়তে পড়তে পড়তে হাঁপিয়ে উঠি।
এই সময় রাজ্যের ঘুম আমার চোখে এসে ভর করে।
বাবা যখন দেখেন ঘুম ঘুম ভাব। তখন আমাকে খাইয়ে ঘুমিয়ে দেন।

স্কুলে আমার প্রিয় বন্ধু নম্রতা, হেমা আর শুভ।
ওদের সঙ্গে স্কুলে কত যে খেলাধুলা করি।
কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলি।
ইচিং বিচিং চিচিং ছা খেলি।
এসব খেলতে ভীষণ ভালো লাগে আমার।
কখনও কখনও ভাইয়াও আমাদের সঙ্গে খেলে।
বেশ আনন্দেই কাটছে আমাদের দিনগুলো।

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ কাদের বাবু কাদের বাবুর ছোটদের গল্প 'রোদেলার প্রজাপতি' ছোটদের গল্প রোদেলার প্রজাপতি সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর