Tuesday 19 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লুকুন্ডু


২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৩

মূল: এডওয়ার্ড লুকাস হোয়াইট, অনুবাদ: হিল্লোল দত্ত

[এডওয়ার্ড লুকাস হোয়াইট (১১ মে, ১৮৬৬-৩০ মার্চ, ১৯৩৪) একজন মার্কিন কবি ও লেখক। নিউ জার্সির বের্গেন কাউন্টিতে তার জন্ম। বাল্টিমোরের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনো শেষ করে আমৃত্যু সেই শহরটিতেই তিনি কাটিয়েছেন। বাল্টিমোরে নিজের বাসায় তিনি আত্মহত্যা করেন। একাধিক উপন্যাস লিখলেও তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তার ছোটোগল্প দ্য হাউজ অব দ্য নাইটমেয়ার এবং লুকুন্ডুর জন্যে। লুকুন্ডু তার সবচে বেশি সংকলনবদ্ধ গল্পও বটে। দূর আফ্রিকায় সংঘটিত সাদা অভিযাত্রী দলের অবিশ্বাস্য ঘটনা নিয়ে এই গল্পটি।]

বিজ্ঞাপন

“যুক্তিতে এটাই বলে,” টোম্বলি বলে চলে, “যে নিজের চোখে দেখা প্রমাণ মেনে নিতেই হয়, আর যখন চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন হয়, তখন সেখানে কোনো সন্দেহ থাকা উচিতই না। যা শুনেছে আর দেখেছে মানুষের সেটাই বিশ্বাস করা উচিত।”
“সবসময় না,” সিঙ্গলটন মৃদু গলায় যোগ দেয়।
ঘরের প্রতিটি লোকের মুখ সিঙ্গলটনের দিকে। টোম্বলি দাঁড়িয়ে আছে ফায়ারপ্লেসের সামনে-রাখা পাপোশটার ওপর, আগুনের দিকে তার পিঠ, পা দু’টো ছড়ানো, ঘরের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তারের সচরাচর ভঙ্গি তার। আর সিঙ্গলটন যথারীতি এক কোনায় চুপচাপ। কিন্তু সে যখন মুখ খোলে তখন কিছু সে বলে বটে। আমরা আশাময় নৈঃশব্দের উৎসাহভরা স্বতঃস্ফূর্ততায় তার দিকে তাকালাম, আমরা চাইছি শব্দেরা বেরিয়ে আসুক।
“ভাবছি,” কিছু সময় পর তার কথা, “আফ্রিকায় দেখেছি আর শুনেছি এমন কিছু তোমাদের বলবো।”
ব্যাপার হচ্ছে যে সিঙ্গলটনের কাছ থেকে তার আফ্রিকার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে পেটে বোমা মারলেও কিছু বের করতে পারা সম্ভব ছিল না। সেই যে গল্পে আছে আল্পস পর্বতে উঠেছে এমন একজনকে জিজ্ঞেস করায় যে বলেছিল সে উঠেছে আর নেমেছে তেমনি সিঙ্গলটনের কাছ থেকে শুধু এটুকুই জানা যেতো যে সে আফ্রিকায় গিয়েছে আর ফিরে এসেছে। তাই তার কথা এখন আমাদের একেবারে গেঁথে ফেলল। টোম্বলি পাপোশের ওপর থেকে একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেল, কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ মনে করতে পারবে না কখন উবে গেল ও। ঘরটা এখন একেবারে পাল্টে গেছে, সিঙ্গলটনের দিকে সবার মনোযোগ, আর কিছু সিগার জ্বলল, কিছু দ্রুতহাতে এবং কিছু লুকিয়ে লুকিয়ে। সিঙ্গলটনও জ্বালালো একটা, কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই ওটা নিভে গেল, এবং সে আর ওটা জ্বালায়নি একবারও।

বিজ্ঞাপন

১.
আমরা গহিন অরণ্যে, ব্যস্ত আছি পিগমিদের সন্ধানে। ভ্যান রিটেনের একটা থিওরি ছিল যে স্ট্যানলি কিংবা অন্যেরা যে বামনদের খুঁজে পেয়েছেন তারা স্রেফ সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ আর আসল পিগমিদের বর্ণসঙ্কর। তার আশা একটা জাত খুঁজে বের করবে যারা সর্বোচ্চ তিন ফুট, কিংবা আরও খাটো। এমনকিছুর অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাইনি।
দেহাতি লোক কম, শিকারও অপর্যাপ্ত; খাবার বলতে শিকার করা জন্তু ছাড়া আর কিছু নেই; আর চারপাশে প্রচণ্ড ঘন, স্যাঁতসেঁতে, ঠান্ডা আর ভেজা জঙ্গল। সে মুল্লুকে আমরা নেহাৎ নতুন, এমন লোক পাইনি যারা এর আগে আর কোনো সাদা চামড়ার দর্শন পেয়েছে। আচমকাই আমাদের তাঁবুতে উদয় হলো এক ইংরেজের, এবং সে-ও দারুণ বিধ্বস্ত। তার কোনো দূরতম গুজবও শুনিনি; আর সে শুধু আমাদের কথা শোনেইনি, বরং নিদারুণ পাঁচদিনের একটা মার্চ করে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। তার গাইড আর দু’জন কুলিও তার মতোই হা-ক্লান্ত। যদিও তার কাপড় ছেঁড়াখোঁড়া আর আর মুখে পাঁচদিনের না কামানো দাড়ি, তারপরও দেখেই বোঝা যায় যে সে বেশ ছিমছাম আর ফিটফাট আর প্রতিদিনই দাড়ি কামাতে অভ্যস্ত। ছোটোখাটো সে, কিন্তু গড়ন শক্তপোক্ত। তার মুখে সেধরনের ব্রিটিশ চেহারা যেখান থেকে আবেগ এমন নিখুঁতভাবে মুছে ফেলা হয়েছে যে বাইরের যে কেউ ভাবতে বাধ্য ওই চেহারার মালিকের আদৌ কোনো অনুভূতি নেই; সেধরনের চেহারা, যদি আদৌ তাতে কোনো ভাব ফোটে, তবে তা হবে পৃথিবীর পথে বিনীতভাবে চলার শপথ, যাতে কারওর কোনো বিঘ্ন বা বিরক্তি না ঘটে।
নাম তার এশাম। বিনয়ের সাথে সে নিজের পরিচয় দিলো, আর এতো স্বাভাবিকভাবে খেলো যে যদি আমাদের কুলিরা তার কুলিদের সাথে আলাপ না করতো তাহলে আমাদের কখনওই সন্দেহ হতো না যে এই পাঁচদিনে সে খেয়েছে মাত্র তিনবার, আর তা-ও স্বল্প পরিমাণে। খাবার পরে যখন আগুন জ্বালালাম তখন সে জানালো তার আসার কারণ।
“আমার সাহেব খুব অসুস্থ,” দম ফেলতে ফেলতে সে বলল। “এভাবে চললে উনি আর বাঁচবেন না। ভাবছিলাম যদি…”
নরম, একটানা গলায় সে কথা বলে যাচ্ছিল, কিন্তু দেখছিলাম তার ঠোঁটের ওপর না-কামানো গোঁফের নিচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, তার গলায় একটা যেন চাপা আবেগের ছোঁয়া, চোখে চেপে-রাখা আকুলতা, আর তার পুরো আচরণে এমন এক আন্তরিক স্পন্দিত উদ্বেগ, সব মিলিয়ে ব্যাপারটা তক্ষুনি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। ভ্যান রিটেনের কোনো সহানুভূতি দেখলাম না; যদি তার বুকে কোনো দাগও পড়ে অন্তত মুখে কোনো চিহ্ন নেই। কিন্তু সে শুনছিল। ব্যাপারটা অবাক করল আমায়। সে যেরকম মানুষ তাতে মুখের ওপরেই ‘না’ বলে দেওয়ার কথা। কিন্তু সে শুনছে এশামের আধো আধো উচ্চারণে লাজুক, ইঙ্গিতপূর্ণ কথা। এমনকি প্রশ্নও করছে সে।
“তোমার দলনেতা কে?”
“স্টোন,” এশামের উচ্চারণ।
আমরা দুজনেই চমকে উঠলাম যেন বাজ পড়েছে আমাদের ওপর।
“র‍্যালফ স্টোন?” দু’জনেই একসাথে।
মাথা ঝোঁকালো এশাম।
কয়েক মিনিট ভ্যান রিটেন আর আমি চুপ করে বসে রইলাম। ভ্যান রিটেন তাকে দেখেনি কখনও, কিন্তু স্টোনের সাথে আমি একই ক্লাসে পড়েছি, আর অনেক ক্যাম্পফায়ারে আমি আর ভ্যান রিটেন আলোচনা করেছি তার কথা। দুবছর আগে শেষ তার কথা শুনি, লুয়েবোর দক্ষিণে বালুন্দায় সে এক বালুন্দা ওঝার সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে, ফলাফল ওঝার সম্পূর্ণ নাকানিচুবানি আর স্টোনের কাছে তার গোত্রের পরাজয়। তারা ওই ওঝার বাঁশি ভেঙ্গে টুকরোগুলো তুলে দেয় স্টোনের হাতে। বাল নগরীর পুরোহিতদের বিপক্ষে এলাইশার জয়ের সাথে এর মিল বেশ।
স্টোন সম্পর্কে অনেক ভেবেছি, আদৌ সে আফ্রিকায় আছে কি নেই, আর এখানে সে আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে আর হয়তো থামিয়ে দিয়েছে আমাদের অভিযান।
২.
এশাম যখন স্টোনের নাম নিল তখন আমাদের সবারই মনে পড়ে গেল তার অসাধারণ জীবনকাহিনী; তার চমকপ্রদ মা-বাবা, তাদের করুণ মৃত্যু; তার কলেজ জীবনে প্রতিভার বিকাশ; তার অর্থের ঝলমলানি; তার যৌবনের প্রতিজ্ঞা; তার বিখ্যাত কুখ্যাতি, যা আসল খ্যাতির প্রায় কাছাকাছি; ধূমকেতুর মতো যে-লেখিকার উত্থান তার সাথে রোমান্টিক ঘরছাড়া, সে-রমণীর লেখালেখি তাকে তুলে দিয়েছিল খ্যাতির চূড়ায়, যার সৌন্দর্য আর আকর্ষণ নিয়েও কত যে রটনা; এরপরে তার নামে সেই ভয়ঙ্কর প্রতিজ্ঞাভঙ্গের মামলা; তার প্রতি কনের অনুরাগ; সব কিছু মিটে যাওয়ার পরও তাদের হঠাৎ কলহ; তাদের ডিভোর্স; প্রতিজ্ঞাভঙ্গের মামলায় বাদিনীর কাছে তার বহুল বিজ্ঞাপিত আসন্ন বিয়ের উন্মুক্ত ঘোষণা; তার ডিভোর্সড স্ত্রীর সাথে তার পুনর্বিবাহ; তাদের দ্বিতীয় কলহ এবং দ্বিতীয় ডিভোর্স; স্বদেশত্যাগ; অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশে তার পদার্পণ। ঝড়ের মতোই সব স্মৃতি আমার ওপর বয়ে গেল এবং আমার বিশ্বাস ভ্যান রিটেনেরও একই দশা, যদিও সে বসে আছে মুখ বুজে।
তারপর সে জিজ্ঞেস করে, “ওয়ার্নার কোথায়?”
“মারা গেছে,” এশাম জানায়। “স্টোনের সাথে আমি যোগ দেবার আগেই।”
“লুয়েবোর আগে স্টোনের সাথে তুমি ছিলে না?”
“না,” এশাম বলে, “আমি স্ট্যানলি প্রপাতে ওর সাথে জুটে যাই।”
“ওর সাথে কে ছিল তখন?” ভ্যান রিটেনের প্রশ্ন।
“শুধু ওর জাঞ্জিবারের চাকর আর কুলিরা,” এশামের উত্তর।
“কোন জাতের কুলি?” ভ্যান রিটেনের তালাশ।
“মাং-বাট্টুর লোক,” এশাম সংক্ষেপে জানায়।
এবার ভ্যান রিটেন আর আমার দুজনের তাজ্জব বনে যাওয়ার পালা। এতেই বোঝা যায় নেতা হিসেবে স্টোনের ক্ষমতা কেমন ছিল। সেসময় অব্দি মাং-বাট্টুর লোকদের তাদের নিজের এলাকার বাইরে কুলি হিসেবে কিংবা কোনো লম্বা বা কঠিন অভিযানে কেউ কাজে লাগাতে পারেনি।
“মাং-বাট্টুতে অনেকদিন ছিলে?” ভ্যান রিটেনের দ্বিতীয় প্রশ্ন।
“সপ্তাখানেক,” এশাম বলে। “ওদের ব্যাপারে তার আগ্রহ ছিল, ওদের শব্দ আর বাগধারার বেশ ভালো একটা সংগ্রহ ছিল তার কাছে। তার একটা থিওরি ছিল যে ওরা বালুন্দার একটা শাখা এবং ওদের রীতিনীতিতে এর প্রচুর প্রমাণও তিনি সংগ্রহ করেছিলেন।”
“কী খেতে তোমরা?” ভ্যান রিটেনের প্রশ্ন।
“প্রায়ই শিকার করতাম,” এশাম বলে।
“স্টোন কদিন ধরে পড়ে আছে?” পরবর্তী অনুসন্ধান ভ্যান রিটেনের।
“মাসখানেকের ওপর হবে,” এশাম জানায়।
“আর ক্যাম্পের জন্যে তোমরা শিকার করতে?” ভ্যান রিটেন জানতে চায়।
এশামের পোড়া আর কর্কশ চামড়া লালচে হয়ে ওঠে।
“কয়েকটা সহজ শিকার মিস করেছি,” দুঃখ তার গলায়। “আমার নিজের শরীরটাও ঠিক ভালো ছিল না।”
“তোমার সাহেবের হয়েছেটা কী?”
“কার্বাঙ্কল জাতীয় কিছু।”
“দু’একটা কার্বাঙ্কলে তো ওর সেরে ওঠার কথা।” ভ্যান রিটেনের মতামত।
“ওগুলো আসলে ঠিক কার্বাঙ্কল না,” এশাম ব্যাখ্যা করে। “আর একটা দুটোও নয়। প্রায় ডজনখানেক হবে, কখনও কখনও একসঙ্গে পাঁচটা। ওগুলো কার্বাঙ্কল হলে অনেকদিন আগেই তিনি মারা যেতেন। কিছু কিছু দিকে ওগুলো অত খারাপ না, আর কিছু কিছু দিকে আরওই বাজে।”
“মানে?” ভ্যান রিটেনের কৌতূহল।
“মানে,” এশাম ইতস্তত করে, “কার্বাঙ্কলের মতো ওগুলো এতো গভীরে যন্ত্রণা সৃষ্টি করে না, আর অতোটা কষ্টও দেয় না, আর অতোটা জ্বরও হয় না। কিন্তু রোগটার একটা বড় দিক হচ্ছে তার মনের ওপর খুব খারাপ প্রভাব পড়েছে। প্রথম প্রথম ক্ষতগুলোতে পট্টি লাগাতে আমার সাহায্য নিতেন তিনি, কিন্তু পরে দেখলাম আমার আর অন্য সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখছেন। যখন ওগুলো ফুলে ওঠে তখন নিজের তাঁবুতেই থাকেন, আর পট্টি পাল্টানো বা তার সাথে থাকার কোনো সুযোগই আমায় দেন না।”
“তোমাদের পট্টি কি অনেকগুলো ছিল?” ভ্যান রিটেনের প্রশ্ন।
“অল্প কিছু ছিল,” এশাম অনিশ্চিতভাবে বলল, “কিন্তু উনি ওগুলো ছুঁতেনও না, নিজেই পট্টিগুলো ধুয়ে বারবার লাগাতেন।”
“ওই ফোলাগুলোর চিকিৎসা কিভাবে করতো সে?” ভ্যান রিটেন জানতে চায়।
“একেবারে ওই জায়গার মাংসটাসহ নিজের ক্ষুর দিয়ে কেটে ফেলতেন।”
“কী?” চেঁচিয়ে উঠেছে ভ্যান রিটেন।
কোনো উত্তর দিলো না এশাম, তাকিয়ে আছে সোজা তার চোখের দিকে।
“সরি,” দ্রুত গলায় ভ্যান রিটেন সামলে নেয়, “চমকে দিয়েছিলে একেবারে। ওগুলো কার্বাঙ্কল হতেই পারে না। সেরকম হলে অনেক আগেই সে মারা যেতো।”
“মনে হয় কথাটা আপনাকে আগেই বলেছিলাম।” আধো আধো স্বরে এশামের কথা।
“কিন্তু লোকটার মাথা তো এক্কেবারে গেছে!” বিস্ময় ভ্যান রিটেনের।
“ঠিক তাই,” এশামের বক্তব্য। “উনি আমার উপদেশ বা নিয়ন্ত্রণের একেবারে বাইরে।”
“এভাবে ক’টার ওপর চালিয়েছে?” ভ্যান রিটেন জানার দাবি করে।
“আমার জানামতে দুটো,” এশামের চটজলদি জবাব।
“দুটো?” প্রশ্নবোধক ভ্যান রিটেন।
আবারো লজ্জা পেলো এশাম।
“আমি ওকে,” ওর স্বীকারোক্তি, “কুঁড়ের ফাঁক দিয়ে দেখেছি। ওর ওপর নজর রাখতে বাধ্য হচ্ছিলাম। যেহেতু নিজের কোনো খেয়াল উনি রাখছেন না।”
“তাই তো মনে হচ্ছে,” একমত হলো ভ্যান রিটেন। “আর তুমি দুবার ওকে কাজটা করতে দেখেছো?”
“আমার তো মনে হয়,” এশাম বলে, “বাকিগুলো নিয়েও উনি একই কাণ্ড করেছেন।”
“কটা আছে বললে?” ভ্যান রিটেনের প্রশ্ন।
“প্রায় ডজনখানেক,” আবারো আধো গলায় উত্তর।
“খাওয়াদাওয়া আছে তো?” অনুসন্ধিৎসা ভ্যান রিটেনের।
“নেকড়ের মতো খান,” এশাম জানায়, “যে কোনো দুজন কুলির চাইতে বেশি।”
“হাঁটতে পারে?” জানতে চায় ভ্যান রিটেন।
“একটু একটু হামাগুড়ি দেওয়ার মতো, গোঙাতে থাকেন,” সহজভাবে বলে এশাম।
“অল্প জ্বর হয়, তুমি বলেছিলে,” স্মৃতি টেনে আনে ভ্যান রিটেন।
“যথেষ্ট এবং বেশি,” এশাম ঘোষণা দেয়।
“বিকারের ঘোরে কিছু বলে?” আবার প্রশ্ন ভ্যান রিটেনের।
“শুধু দু’বার,” এশামের উত্তর, “একবার যখন প্রথম ফোলাটা ফেটে যায়, আর একবার পরে। সেসময় উনি কাউকে কাছে ঘেঁষতেই দেন নি। কিন্তু আমরা শুনছিলাম উনি কথা বলছেন, বলেই যাচ্ছেন ক্রমাগত, আর দেহাতি কুলিরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল।”
“ও কি বিকারের ঘোরে ওদের ভাষায় কথা বলছিল?” জিজ্ঞাসু ভ্যান রিটেন।
“না,” এশাম বলে, “কিন্তু উনি প্রায়ই একইরকম ভাষায় কথা বলছিলেন। হামেদ বার্ঘাশ বলছিল উনি নাকি বালুন্দা ভাষায় কথা বলছিলেন। আমি বালুন্দা খুব কমই জানি। ভাষা শেখার কাজে আমার দক্ষতা বেশি না। আমি এক বছরে যতটুকু মাং-বাট্টুদের ভাষা শিখতে পারতাম সাহেব এক সপ্তাতেই তার চাইতে বেশি শিখে নিয়েছিলেন। কিন্তু আমারও মনে হয়েছে যেন মাং-বাট্টুদের ভাষা শুনছি। আর এদিকে মাং-বাট্টু কুলিরা তো ভয়েই কাবু।”
“ভয়ে?” ভ্যান রিটেন পুনরাবৃত্তি করল প্রশ্নের সুরে।
“জাঞ্জিবারের কুলিগুলোও ভয় পেয়েছিল, এমনকি হামেদ বার্ঘাশ, আর আমিও পেয়েছিলাম,” এশাম বলল, “অবশ্য কারণটা আলাদা। উনি দুটো গলায় কথা বলছিলেন।”
“দুটো গলায়,” ভাবছে ভ্যান রিটেন।
“হ্যাঁ,” এতক্ষণ যে-গলায় কথা বলছিল এশাম, এবার তার চাইতে অনেক বেশি সে উত্তেজিত। “দুটো গলায়, কথাবার্তা বলার সময় যেমন শোনা যায়। একটা তার, আরেকটা ছোট, হালকা, রিনরিনে গলা, ওরকম কণ্ঠ কোনোদিন শুনিনি। বোঝার চেষ্টা করলাম, ভারি গলাটার করা দুএকটা মাং-বাট্টু শব্দ জানি, যেমন ‘নেড্রু’, ‘মেটাবারা’ আর ‘নেডু’, ওদের ভাষায় এর অর্থ ‘মাথা’, ‘ঘাড়’, উরু’ আর মনে হয় ‘কুদরা’-ও শুনেছি আর ‘নেকেরে’ (‘কথা-বলা’ আর ‘শিস্-দেওয়া’); আর সরু গলাটার করা শব্দের মধ্যে ‘মাটোমিপা’, ‘আনগুঞ্জি’ আর ‘কামোমামি’ (‘হত্যা’, ‘মৃত্যু’ আর ‘ঘৃণা’)। হামেদ বার্ঘাশ বলছিল সেও নাকি একই শব্দ শুনেছে। আমার চাইতে সে অনেক ভালো মাং-বাট্টু জানে।”
“আর কুলিগুলো কী বলল?” ভ্যান রিটেন জানতে চায়।
“ওরা বলছিল, ‘লুকুন্ডু’, ‘লুকুন্ডু’!” উত্তর দেয় এশাম। “শব্দটা আমার জানা ছিল না; হামেদ বার্ঘাশ বলল মাং-বাট্টুতে ওটা নাকি ‘নেকড়ে’।”
“মাং-বাট্টুতে ওটা ‘ডাকিনীবিদ্যা’ বোঝায়,” ভ্যান রিটেন জানায়।
“মনে হয় ওরাও তাই ভেবেছিল,” এশাম বলে। “ওইরকম দুটো গলা শুনলে যে কেউ তুকতাকে বিশ্বাস করবে।”
“একটা গলা অন্যটার জবাব দিচ্ছিলো?” যন্ত্রের মতো ভ্যান রিটেন প্রশ্ন করে।
পোড়া চামড়ার নিচে এশামের মুখ ছাইরঙের হয়ে ওঠে।
“কখনও কখনও দুটোই একসাথে শোনা যাচ্ছিল,” খসখসে গলায় সে বলে।
“একসাথে দুটোই!” ভ্যান রিটেনের মুখ থেকে ছিটকে আসে।
“সবাই শুনেছে,” এশাম জানায়। “এখানেই শেষ না।”
থেমে যায় সে আর আমাদের দিকে এক লহমার জন্যে তাকিয়ে থাকে অসহায়ের ভঙ্গিতে।
“একটা লোক কি একই সাথে কথা বলতে আর শিস দিতে পারে?” সে প্রশ্ন করে।
“মানে, কী বলতে চাইছো?” অনুসন্ধান ভ্যান রিটেনের।
“আমরা শুনলাম সাহেব কথা বলছেন তার দরাজ বুক থেকে উঠে-আসা গমগমে গলায়, আর তার সাথেই শোনা যাচ্ছে একটা উঁচু, তীব্র, তীক্ষ্ণ শিস, একটা অসম্ভব অদ্ভুত, শ্বাস-টানার মতো আওয়াজ। আপনি দেখবেন একজন বয়স্ক লোক যতই তীক্ষ্ণ গলায় শিস দিক, সেটার সুরটা একটা ছেলে কিংবা মহিলা বা একটা ছোট্ট ছেলের চাইতে আলাদা হবেই। ওগুলো আরও অনেক তীক্ষ্ণ হয়। কল্পনা করুন একটা ছোট্ট মেয়ে অনবরত একটানা সুরে শিস দিচ্ছে, ওটা অনেকটা সেরকমই, শুধু আরও বেশি কান-ফাটানো, আর ওটা শোনা যাচ্ছিল তার ভারি গলার সাথে সাথেই।”
“আর তোমরা ওকে দেখতে গেলে না?” চিৎকার করে উঠেছে ভ্যান রিটেন।
“উনি সাধারণত হুমকি দেন না,” এশাম ঘাড় নাড়ে। “কিন্তু উনি হুমকি দিয়েছিলেন, তাড়াহুড়ো করেও না, অসুস্থ লোকের মতোও না, একদম ধীরে সুস্থে কঠিন গলায়, যদি কেউ (আমাকেও ওদের মধ্যে ধরে) তার ঝামেলার সময় কাছে আসি, তার মরণ নিশ্চিত। আর বলাটা না, তার আচরণটা ছিল দেখার মতো। যেন মৃত্যুশয্যায় কোনো সম্রাট নিরিবিলি একাকী পরিবেশ চাইছেন। ওই জায়গায় ঘাড়ত্যাড়া করবে কে?”
“হুম,” সংক্ষিপ্ত জবাব ভ্যান রিটেনের।
“উনি বড্ড অসুস্থ,” এশাম আবারো অসহায়ভাবে বলে। “মনে হয়…”
তার স্বাভাবিক অনাবেগী খোলসের ভেতর থেকে ফুটে বেরুচ্ছিলো স্টোনের জন্যে তার অসম্ভব টান, তার আন্তরিক ভালোবাসা। স্টোনের আরাধনাই তার প্রিয়তম অনুভূতি।
অনেক যোগ্যলোকের মতোই, ভ্যান রিটেনের ভেতর একটা দারুণ স্বার্থপর অংশ ছিল। এবার সেটা স্বরূপে দেখা দিলো। সে জানালো যে দিনের পর দিন আমরা স্টোনের দলের মতোই জানটা হাতে নিয়ে পথ চলেছি; সে মোটেও ভুলে যায়নি দু’জন অভিযাত্রীর ভেতর রক্তের টান আর বিপদে সাড়া-দেওয়ার সম্পর্ক, কিন্তু হয়তো সব সাহায্যের ঊর্ধ্বে চলে গেছে এমন একজনের জন্যে প্রচুর ঝামেলা করে একটা দলকে বিপদে ফেলা অর্থহীন; বলল একটা দলের জন্যে শিকার যোগাড় করাটাই যথেষ্ট ঝামেলার; বলল দুটো দল যদি এক হয়, খাবার যোগাড় করাটা হবে দ্বিগুণের চাইতেও বেশি ঝামেলার; অনাহারে থাকার ঝুঁকিটা প্রচণ্ডরকমভাবে যাবে বেড়ে। পুরো সাতদিনের একটা উল্টো পথে যাত্রা (এশামকে সে এখানে তার হাঁটার ক্ষমতার জন্যে প্রশংসা জানালো) হয়তো পুরোপুরিই ভেস্তে দিতে পারে আমাদের অভিযান।
যুক্তি ভ্যান রিটেনের পক্ষে এবং গতিপথও তার সুনির্দিষ্ট। এশাম শ্রদ্ধাভরে ক্ষমাপ্রার্থনার ভঙ্গিতে বসেই রইলো, যেন ক্লাস ফোরের একটা বাচ্চা বসে আছে হেডমাস্টারের সামনে। ভ্যান রিটেন উপসংহার টানলো।
“নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিগমিদের খুঁজে বেড়াচ্ছি, পিগমিদের পেছনেই থাকবো আমি।”
“তাহলে হয়তো জিনিসগুলো আপনাকে টানবে,” খুব শান্ত গলায় বলে এশাম।
তার জ্যাকেটের পাশ-পকেট থেকে দুটো জিনিস বার করল সে, তুলে দিলো ভ্যান রিটেনের হাতে। জিনিসগুলো গোল, সবচে বড় কুলের চাইতেও বড়, ছোটো সবচে ছোটো পিচফলটার চেয়ে, গড়পরতা হাতের ভেতর রেখে মুঠোবন্ধ করা যাবে অনায়াসে। ওগুলো কালো, আর প্রথমে দেখে ঠিক বুঝতে পারিনি জিনিসগুলো আসলে কী।
“পিগমি!” লাফিয়ে উঠলো ভ্যান রিটেন। “নির্ঘাৎ পিগমি! দু’ফুটের চাইতে উঁচু হতেই পারে না। তুমি বলতে চাও এগুলো পূর্ণবয়স্কদের মাথা?”
“আমি কিছুই বলতে চাই না,” নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলে এশাম। “নিজেই দেখে নিন।”
একটা মাথা ভ্যান রিটেন বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে। সূর্য প্রায় অস্তাচলে, তাই খুব কাছ থেকে ভালো করে লক্ষ্য করতে হয়। মাথাটা শুকানো, বেশ যত্নের সাথে সংরক্ষণ-করা, আর মাংসটা নুনে-জারানো গরুর মাংসের মতো শক্ত। যেখানে উবে-যাওয়া ঘাড়ের পেশিগুলো কুঁচকে আছে ঠিক সেখানটায় কাঁটার মতো বেরুনো একটা কশেরুকা। একচিলতে চিবুকটা একটা ঠেলে-ওঠা চোয়ালের ডগায়, খুদে দাঁতগুলো সাদা আর সরে-যাওয়া ঠোঁটের নিচে সমান সারিতে বসানো, পুঁচকে নাকটা চ্যাপ্টা, একরত্তি কপালটা পিছিয়ে গেছে, বালখিল্য খুলিটাতে এখানে সেখানে গোছা গোছা কোঁকড়ানো পশম। মাথাটা দেখলে শিশুসুলভ, বালকোচিত কিংবা এমনকি যৌবনপ্রাপ্তও মনে হয় না, প্রাপ্তবয়স্ক হতে হতে ওটা পৌঁছে গেছে শেষ সীমায়।
“এগুলো এলো কোত্থেকে?” সন্ধানী ভ্যান রিটেন।
“সেটা বলতে পারি না,” যথাযথ জবাব এশামের। “যখন সাহেবের জিনিসগুলোতে পাগলের মতো ওষুধ খুঁজছিলাম যাতে উনাকে সাহায্য করার মতো কিছু পাই, তখন ওখানেই এগুলো পাই। কোত্থেকে উনি এই চিজ যোগাড় করেছেন তার হদিস আমার কাছে নেই। তবে কসম কেটে বলতে পারবো এই এলাকায় পা দেওয়ার আগে উনার কাছে এগুলো ছিল না।”
“ঠিক জানো?” তদন্ত ভ্যান রিটেনের, তার চোখ বড় বড় এবং এশামের ওপর স্থির।
“এক্কেবারে ঠিক।” আধো আধো স্বরে এশাম।
“কিন্তু তুমি না জানলে এগুলো এলোই বা কোন রাস্তায়?” ভ্যান রিটেনের সন্দেহ।
“মাঝখানে একদিন শিকার করতে গিয়ে প্রায় দশদিন উনার কাছ থেকে আলাদা ছিলাম।” এশাম বলে। “সাহেব তো এমনিতেই চুপচাপ। কী করছেন এ ক’দিন তার কোনো হিসেব নেই, আর হামেদ বার্ঘাশ বেশ কম কথা বলে আর অন্যদের ওপর ওর ভালো দাপট।”
“মাথাগুলো ভালো করে দেখেছিলে?” প্রশ্নকর্তা ভ্যান রিটেন।
“খুব নিখুঁতভাবে,” এশাম বলে।
নোটবুক বের করে ভ্যান রিটেন। বেশ গোছালো লোক সে। একটা পাতা ছিঁড়ে নেয়, ভাঁজ করে এবং সমান তিনটে টুকরো করে ছেঁড়ে। একটা দেয় আমায় আর অন্যটা বাড়ায় এশামের দিকে।
“আমার ধারণাটা একটু পরীক্ষা করে দেখি,” সে বলে। “আমি চাই এই মাথাগুলো আমাদের যা মনে করিয়ে দিচ্ছে আমরা সবাই কাগজে ঠিক সেই জিনিসটা লিখবো। তারপর মিলিয়ে দেখবো লেখাগুলো।”
এশামের দিকে একটা পেন্সিল বাড়িয়ে দেই আর সে লেখে। তারপর পেন্সিলটা বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে, এবার লেখার পালা আমার।
“তিনটাই পড়ো,” ভ্যান রিটেন বলে, ওর টুকরোটা বাড়িয়ে দিয়েছে আমার দিকে।
ভ্যান রিটেন লিখেছে, “একটা বুড়ো বালুন্দা ওঝা।”
এশামের লেখাটা, “একটা বুড়ো মাং-বাট্টু প্রেতসিদ্ধ।”
আমার মতামত, “এক বুড়ো কাটুঙ্গা জাদুকর।”
“এই যে পেয়েছি!” উচ্ছ্বাস ভ্যান রিটেনের। “দ্যাখো এবার! ওই মাথাগুলোতে ওয়াগাবি কিংবা বাটওয়া অথবা ওয়ামবুটু বা ওয়াবুটুর কোনো ছাপ নেই। এবং এগুলো পিগমিও না।”
“আমিও তাই ভেবেছিলাম,” এশাম বলে।
“এবং তুমি বলছো যে এগুলো তার কাছে আগে ছিল না?”
“একদম নিশ্চিত হয়ে বলছি,” এশাম জোর দেয়।
“ব্যাপারটা দেখা উচিত,” ভ্যান রিটেনের সিদ্ধান্ত। “তোমার সাথে আমি যাচ্ছি। তবে সবার আগে স্টোনকে বাঁচাতে যা দরকার সব করবো।”
হাত বাড়িয়ে দেয় সে এবং নিঃশব্দে তা আঁকড়ে ধরে নেয় এশাম। তার সারা শরীর জুড়ে কৃতজ্ঞতা।


এই রাস্তা পেরুতে এশামের উদ্বেগের তাড়াতেই আসলে সময় লেগেছে পাঁচদিন। পথ জেনে আর আমাদের দলের সাহায্য নিয়েও তার এবার লাগলো আট দিন। সাত দিনেও আমাদের পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব হতো না, একটা উদ্বেগের চাপা আতঙ্ক থেকে আমাদের তাড়া দিয়ে নিয়ে চললো এশাম, নেতার প্রতি তার দায়িত্ব পালনের আকুল আবেগ থেকে নয়, বরং ভক্তির এক প্রকৃত আগ্রহ থেকে, স্টোনের প্রতি তার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার আলো থেকে, যা তার রসশূন্য স্বভাবসুলভ বহিরঙ্গ ভেদ করেও প্রকাশিত এবং দৃশ্য হয়।
পৌঁছে দেখা গেল স্টোনের যত্ন বেশ ভালোভাবেই নেওয়া হচ্ছে। তাঁবুর চারপাশে এশামের নির্দেশে তৈরি বেশ মজবুত, উঁচু কাঁটা-ওয়ালা জারিবা, কুঁড়েগুলো মজবুতভাবে তৈরি আর ছাওয়া আর তাদের সামর্থ্যে যতটুকু কুলায় স্টোনকে তারা ততটুকু ভালো রেখেছে। হামেদ বার্ঘাশের নাম দু’জন সৈয়দের নামে এমনি এমনি রাখা হয়নি। সুলতানের চরিত্র তার মধ্যে একদম স্পষ্ট। সে মাং-বাট্টুদের একত্রে রেখেছে, একজনও ছিটকে যায়নি, আর শৃঙ্খলাটাও সে ভালোই ধরে রেখেছে। সে দক্ষ নার্স আর বিশ্বস্ত সেবকও বটে।
বাকি দুজন জাঞ্জিবারিও ভালোই শিকার যোগাড় করেছে। খিদে আছে বৈকি, কিন্তু উপোস থেকে তাদের ক্যাম্প এখনও ঢের দূরে।
একটা ক্যানভাসের খাটিয়ায় শোয়ানো স্টোন আর পাশে একটা কলাপসিবল ক্যাম্প-টুল-টেবিল, অনেকটা তুর্কি টুলের মতো। ওখানটায় একটা জলের বোতল আর কয়েকটা ভায়াল রাখা, স্টোনের ঘড়ি আর ক্ষুরটাও ওখানেই।
স্টোন ধোপদুরস্ত আর খুব শুকিয়েও যায়নি সে, কিন্তু জীবন ফেলে অনেক দূরের পথে, অচেতন নয়, ঘোরের মধ্যে সে এখন। কাউকে হুকুম করার কি বাধা-দেওয়ার অনেক ওপরে। মনে হলো না আমাদের ঢুকতে দেখেছে কিংবা বুঝতে পেরেছে আমরা সেখানে আছি। ওকে যে কোনো জায়গায় দেখলেই চিনতে পারতাম। ওর ছেলেবেলার সাহস আর সৌন্দর্য অবশ্য উবে গেছে অনেকটাই। কিন্তু মাথাটা তার সিংহের মতোই; একরাশ চুল তার মাথায়, হলদে আর ঢেউ খেলানো; রোগশয্যায় গজানো ঘন, কোঁকড়ানো সোনালি দাড়িও তাকে বিশেষ পাল্টে দেয়নি। এখনও সে বিশালদেহী, সুপ্রশস্ত তার বক্ষদেশ। চোখগুলো ঘোলাটে আর বিড়বিড় করে সে আওড়াচ্ছে শব্দ নয়, অক্ষর।
স্টোনের কাপড় সরিয়ে তাকে পুরোপুরি দেখানোর কাজে ভ্যান রিটেনকে সাহায্য করল এশাম। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকার পরও পেশিগুলো তার তুলনামূলকভাবে বেশ পোক্ত। হাঁটু, কাঁধ আর বুক ছাড়া কোথাও আঁচড়টি নেই। প্রতি হাঁটুতে এবং তার ঠিক ওপরে একজোড়া গোলাকৃতি শুকনো ক্ষতের ছাপ, প্রতি কাঁধে এমনি ডজনখানেক কি আরও বেশি, আর সবই সামনের দিকে। দুতিনটে ক্ষতের মুখ খোলা আর চার-পাঁচটা প্রায় ভরে এসেছে। ওর বুকের দুপাশেই একটা করে মোট দুটো বাদে নতুন কোনো ফোলা নেই, বাঁদিকেরটা অন্য দিকেরটার চাইতে উঁচু আর বড়। ফোঁড়া বা কার্বাঙ্কলজাতীয় কিছু মনে হচ্ছে না ওগুলো দেখে, বরং মনে হচ্ছে যেন দিব্যি সুস্থ মাংসের ভেতর থেকে ভোঁতা আর শক্ত কিছু ঠেলে বের হতে চাইছে, জ্বালাপোড়া হচ্ছে বলেও মনে হলো না।
“আমি হলে ওগুলোতে ছুরি চালাতাম না,” জানায় ভ্যান রিটেন, সম্মতি দেয় এশাম।
সাধ্যমত স্টোনকে তারা দুজন মিলে আরামে রাখার চেষ্টা করে, আর সূর্যাস্তের ঠিক আগেই ওকে আমরা আবার দেখতে যাই। সে চিত-হয়ে শোওয়া, বুক তার এখনও বিশাল আর প্রশস্ত দেখায়, কিন্তু সে যেন বাহ্যজ্ঞানশূন্য। এশামকে ওর কাছে রেখে আমরা গেলাম পাশের কুঁড়েটাতেই, যেটা এশাম আমাদের জন্যে ছেড়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসের রাতের জঙ্গলে যেসব শব্দ শুনে আসছি, এখানেও তা-ই এবং দ্রুত আমি ঘুমের কোলে ঢলে পড়ি।

৫.
পিচকালো আঁধারে কোনো একটা সময় আবিষ্কার করি আমি জেগে আছি আর শুনছি কান পেতে। দুটো গলা শুনতে পাচ্ছি, একটা স্টোনের, অন্যটা হিসহিসানি আর টানা শ্বাসের মতো। শেষবার স্টোনের গলা শুনেছি বেশ দেরি হলো, তা-ও অনায়াসে চিনতে পারি। অন্যটার মতো জীবনে কখনও কিছু শুনেছি বলে মনে পড়ে না। নবজাতকের কান্না থেকে এর আওয়াজটা কম, কিন্তু একটানা স্বরটা বয়েই চলেছে পোকামাকড়ের আওয়াজের মতো। কান খাড়া করে শুনলাম আমার পাশেই অন্ধকারে ভ্যান রিটেনের শ্বাস পড়ছে, তারপরে সে শুনলো আর বুঝলো যে আমিও শুনছি। এশামের মতো আমারও বালুন্দা’র জ্ঞান বেশ সীমিত, কিন্তু দু’টো একটা শব্দ আমিও বুঝছিলাম। নৈঃশব্দ্যের মাঝখানে গলা দুটো একাদিক্রমে পালাবদল করছে।
তারপর হঠাৎই দু’টো গলা একসাথে আর দ্রুতলয়ে। স্টোনের মন্দ্রগম্ভীর গলা, সুস্থ অবস্থায় যেমন ছিল আর ঐ অবিশ্বাস্য ক্যানকেনে কণ্ঠ, দুটোই যেন একসাথে ঝগড়া করছে আর চাইছে গলার জোরে অন্যটাকে দাবিয়ে দিতে।
“আর তো সহ্য হয় না,” ভ্যান রিটেন বলে। “চলো তো ওকে দেখে আসি।”
ওর কাছে সিলিন্ডারের মতো দেখতে ইলেক্ট্রিক রাতবাতি ছিল। অন্ধকারে সে ওটার জন্যে হাতড়ায় কিছুক্ষণ, খুঁজে পায় অবশেষে বাটনটা আর আমাকে ডাকে ওর সাথে যেতে।
কুঁড়ের বাইরে সে আমায় দাঁড়িয়ে থাকার সঙ্কেত দিয়ে চট করে আলোটা নিভিয়ে দেয়, ভাবটা এমন যেন দেখা গেলে শোনা মুস্কিল হয়ে যাবে।
কুলিদের আগুনের নিভু নিভু আধো আলো ছাড়া আমরা পুরো অন্ধকারে, গাছের ফাঁক দিয়ে তারার অল্প আলো বেশ কষ্ট করছে ঢোকার জন্যে, শোনা যাচ্ছে নদীর মৃদু কুলুকুল। দুটো গলাই এখন একত্রে শোনা যাচ্ছে আর তারপর হঠাৎ করেই তীক্ষ্ণ গলাটা পাল্টে গেল ক্ষুরধার ফালিফালি শিসে, অবর্ণনীয়ভাবে যেন কেটে কেটে যাচ্ছে, যাচ্ছে স্টোনের রাগী গোঙানোর মাঝ দিয়েই।
“হায় ঈশ্বর!” ভ্যান রিটেনের গলা।
হঠাৎ করেই সে জ্বেলে দিলো আলোটা।
দেখি এশাম গভীরভাবে ঘুমন্ত, গোটা দিনের হাঁটাহাঁটিতে ক্লান্তশ্রান্ত আর নিশ্চিতও বটে, কারণ বোঝাটা সে এখন চাপিয়েছে ভ্যান রিটেনের কাঁধে। মুখের ওপর আলো-পড়ার পরও তার ঘুম ভাঙলো না।
থেমে গেছে শিসটা এবং দুটো গলা এখন একসাথেই শব্দ করছে। দুটোই আসছে স্টোনের খাটিয়া থেকে। জমাট আলোতে দেখছি যেরকম তাকে রেখে গেছি সেরকমই সে আছে এখনও, শুধু হাতগুলো তোলা মাথার ওপর আর বুক থেকে ছিঁড়ে ফেলেছে গায়ের কাপড় আর পট্টিগুলো।
তার বুকের ওপরের ডান দিকের ফোলাটা ভেঙ্গে গেছে। ভ্যান রিটেন আলোর মাঝদিকটা তাক করে ওটার দিকে, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ওটা এখন। ওর মাংসের ভেতর থেকে একটা মাথা বেরিয়ে এসেছে যার শুকনো নমুনা এশাম আমাদের দেখিয়েছে, বালুন্দা ওঝাদের মাথার একটা খুদে সংস্করণ যেন ওটা। কালো রং মাথাটার, কৃষ্ণতম আফ্রিকি ত্বকের মতোই চকচকে কালো; ঘোরাচ্ছে তার শয়তানি, খুদে চোখের সাদাটা আর এতো ছোট্ট মাথাতেও কৃষ্ণাঙ্গসুলভ লাল ঠোঁটের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে আণুবীক্ষণিক দাঁত। পিচ্চি খুলিটাতে কোঁকড়ানো, ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পশম। অশুভ ভঙ্গিতে ঘুরছে ওটা এদিক-সেদিক আর সেই অবোধ্য তারস্বরে অনবরত চেঁচিয়েই যাচ্ছে। তার বকবকানির মাঝে মাঝে টুকরো টুকরোভাবে স্টোন বিড়বিড় করে যাচ্ছে।
স্টোনের দিক থেকে ফিরে ভ্যান রিটেন এশামকে জাগালো, একটু কষ্টই হলো। এশাম জেগে যখন দেখলো সবটা, চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল তার, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরুলো না।
“ওকে দুটো ফোলা কেটে ফেলতে দেখেছিলে?” ভ্যান রিটেন জানতে চায়।
মাথা নাড়ে এশাম, দম আটকে গেছে তার।
“বেশি রক্ত পড়েছিল?” আবারো ভ্যান রিটেনের প্রশ্ন।
“একদম অল্প,” এশামের উত্তর।
“ওর হাতগুলো ধরো,” এশামকে নির্দেশ দেয় ভ্যান রিটেন।
স্টোনের ক্ষুরটা হাতে নেয় সে আর আমায় দেয় আলোটা। আলো চোখে-পড়ার কিংবা আমরা যে ওখানে আছি, তা বোঝার কোনো লক্ষণই স্টোন দেখায়নি। কিন্তু পুঁচকে মাথাটা আমাদের দিকে তাকিয়ে সরুগলায় গোঙাতে আর চ্যাঁচাতে থাকে।
হাত কাঁপছে না ভ্যান রিটেনের। ক্ষুরের আঘাতটা জায়গামত আর নিখুঁত। অবিশ্বাস্য কম রক্ত পড়ল স্টোনের গা থেকে আর ওটা যেন কালশিরে কি আঁচড় এমনিভাবে ক্ষতটা ড্রেসিং করে দেয় ভ্যান রিটেন।
কুৎসিত মাথাটা কাটার মুহূর্ত থেকেই স্টোন কথা বলা থামিয়ে দিয়েছিল। স্টোনের জন্যে যথাসাধ্য করল ভ্যান রিটেন আর তারপর শক্ত হাতে আমার হাত থেকে নিয়ে নিল আলোটা। একটা বন্দুক হাতে নিয়ে খাটিয়ার চারপাশের জমি তল্লাশি করল সে আর হিংস্রভাবে বন্দুকের কুঁদোটা নামিয়ে আনলো একবার আর দু’বার।
ফিরে এলাম তাঁবুতে কিন্তু ঘুমিয়েছি বলে মনে হয় না।

৬.
পরদিন প্রায় দুপুরে ঝকঝকে সূর্যের আলোয়, স্টোনের কুঁড়ে থেকে শুনতে পেলাম দুটো গলা। গিয়ে দেখি এশাম তার পাশে গভীর ঘুমে মগ্ন। বাঁদিকের ফোলাটাও ভেঙে গেছে, ঠিক তেমনি আরেকটা মাথা সেখানে সরু গলায় চেঁচামেচি করছে। এশাম জেগে গেল আর আমরা তিনজনেই সেখানে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ওই অশুভ গলার রিঙটিঙে বকুনির মাঝখানে স্টোন ছুঁড়ে দিচ্ছিলো কর্কশ শব্দ।
সামনে এগুলো ভ্যান রিটেন, হাতে তুলে নিল স্টোনের ক্ষুরটা আর হাঁটু গেড়ে বসলো খাটিয়ার সামনে। একরত্তি মাথাটা তার দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে ঘড়ঘড়ে গলায় চেঁচিয়ে উঠলো।
আর তারপর হঠাৎ ইংরেজি বলে উঠলো স্টোন, “আমার ক্ষুর নিয়ে আপনি কী করছেন?”
ভ্যান রিটেন পিছিয়ে আসে আর উঠে দাঁড়ায়।
স্টোনের চোখগুলো এখন স্পষ্ট আর উজ্জ্বল, ঘুরে বেড়াচ্ছে কুঁড়ের চারদিকে।
“শেষ সময়,” সে বলে; “বুঝতে পারছি আমার শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে। এশামকে দেখছি যেন জীবন্ত। কিন্তু সিঙ্গলটন! আহ, সিঙ্গলটন! ছোটোবেলার ভূতগুলো আমার মরণ দেখতে এসেছে! আর তুমি, কালো দাড়ি আর আমার ক্ষুর হাতে অদ্ভুত ভূত! এরাই কী সবাই!”
“আমি ভূত না স্টোন,” কষ্টে স্বর ফোটাই। “আমি বেঁচে আছি। এশাম আর ভ্যান রিটেনও তাই। আমরা এখানে এসেছি তোমাকে সাহায্য করতে।”
“ভ্যান রিটেন!” উত্তেজনা তার গলায়। “আমার কাজ সেরা লোকের হাতেই পড়েছে। সৌভাগ্য তোমার সঙ্গী হোক, ভ্যান রিটেন।”
ভ্যান রিটেন তার কাছে এগিয়ে আসে।
“এক মিনিট, ওল্ড ম্যান,” সে সান্ত্বনার গলায় বলে। “একটু শুধু ব্যথা লাগবে।”
“ওরকম কতটা ব্যথার জন্যে যে অপেক্ষা করেছি,” বেশ স্পষ্ট গলায় জবাব দেয় স্টোন। “ছেড়ে দাও, নিজের মতো করে মরতে দাও। হাইড্রাও এর কাছে কিছু না। দশটা, একশোটা, হাজারটা মাথা কাটো, কিন্তু অভিশাপটা তুমি কাটাতেও পারবে না, মুক্তও হতে পারবে না। হাড়ের ভেতর যেটা ঢুকে গেছে মাংস থেকে তো আর সেটা বের করা যাবে না। ওখানেই জন্ম, ওখানেই থাকবে। আমায় আর কাটাকুটি করো না। কথা দাও!”
কম বয়েসের সেই পুরনো হুকুমের সুর এখনও তার গলায় আর অন্য সবাইকে যেভাবে নাড়া দিতো, সেভাবে নাড়া দিলো ভ্যান রিটেনকেও।
“দিলাম,” জানালো ভ্যান রিটেন।
কথাটা বলতে না বলতেই আবারো ঘোলাটে হয়ে এলো স্টোনের চোখজোড়া।
তারপর তিনজন বসলাম স্টোনের কাছাকাছি আর দেখতে লাগলাম সেই গা-ঘিনঘিনে, বকুনে খুদে মানুষটা স্টোনের মাংস ঠেলে উঠছে, উঠছেই যতক্ষণ না জড়ানো কালো হাতদুটো শেষমেষ নিজেদের মুক্ত করল।
সূক্ষ্ণ নখগুলোর গোড়ায় নজরে প্রায় না-পড়া আধখানা চাঁদটাও নিখুঁত, হাতের তালুর গোলাপি দাগ ভয়ঙ্করভাবে বাস্তবঘেঁষা। হাতগুলো নড়ে উঠেছে আর ডান হাতটা তাক করেছে স্টোনের সোনালি দাড়ির দিকে।
“আর সহ্য হচ্ছে না,” ভ্যান রিটেন বলে উঠলো আর ক্ষুরটা আবার তুলে নিল হাতে।
তক্ষুনি খুলে গেল স্টোনের চোখ, কঠিন, জ্বলছে।
“ভ্যান রিটেন কথা ভাঙবে?” আস্তে আস্তে সে বলল। “কখনও না!”
“কিন্তু তোমায় সাহায্য করতে তো হবেই,” ভ্যান রিটেন ঢোক গেলে।
“সব সাহায্য আর সংঘাতের উপরে চলে গেছি,” স্টোন বলে। “আমার সময় ফুরিয়ে এলো। এই অভিশাপ আমার ওপরে ছুঁড়ে ফেলা হয়নি; আমার ভেতর থেকেই এর জন্ম, যেমন এই বিভীষিকাটা জন্মেছে। যাই তাহলে।”
ওর চোখগুলো আবার বন্ধ হয়ে গেল আর অসহায় আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। আটকানো কালো শরীরটা তীক্ষ্ণ গলায় চেঁচিয়েই চলেছে।
এক মুহূর্ত পরে স্টোন আবার কথা বলে উঠলো।
“সব ভাষায় কথা বলতে পারো?” চট করে জিজ্ঞেস করল সে। আর উঠে-আসা মানবকটি চটজলদি ইংরেজিতে জবাব দিলো, “হ্যাঁ, অবশ্যই, যেসব ভাষা তুমি জানো,” কথা বলতে বলতে সে বের করছে আণুবীক্ষণিক জিভ, মোচড়াচ্ছে ঠোঁট, আর মাথা ঘোরাচ্ছে এপাশ-ওপাশ। যখন ওটা নিশ্বাস নিল ছোট্ট বুকের দুপাশে সুতোর মতো পাঁজরগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম আমরা।
“সে কি ক্ষমা করেছে আমায়?” দম-আটকানো চাপা গলায় বলে ওঠে স্টোন।
“সাইপ্রেস গাছ থেকে যতদিন শ্যাওলা ঝুলবে ততদিন তিনি ক্ষমা করবেন না,” কিচকিচ করে ওঠে মাথাটা। “যতদিন তারা ঝলমলাবে পোন্টচারট্রেন হ্রদের ওপর ততদিন সে নারীর ক্ষমা পাবে না তুমি।”
আর তারপর স্টোন এক হঠাৎ গতিতে নিজেকে উলটে ফেলল একপাশে। পরমুহূর্তেই তার দেহ ছেড়ে গেল শেষ শ্বাস।
সিঙ্গলটনের গলা যখন থেমে গেল, ঘরটা তখন এক মুহূর্তের জন্যে চুপ। সবাই শুনতে পাচ্ছি সবার শ্বাসের শব্দ। মাথামোটা টোম্বলিই নীরবতা ভাঙলো।
“আমার ধারণা,” সে বলে, “ঐ ছোট্ট মানুষটাকে কেটে এ্যালকোহলে চুবিয়ে তোমরা দেশে নিয়ে এসেছিলে।”
সিঙ্গলটন তার দিকে কঠিন একটা চাউনি হানলো।
“আমরা স্টোনকে মরার পরে,” সে বলে, “কাটাছেঁড়া না করেই কবর দিয়েছি।”
“কিন্তু,” বিবেচনাহীন টোম্বলি বলে ওঠে, “পুরো ব্যাপারটাই তো অবিশ্বাস্য।”
“আশাও করিনি যে তোমরা বিশ্বাস করবে,” সে বলে; “কথাটা তো শুরুতেই বলেছিলাম যে যদিও ঘটনাটা দেখেছি আর শুনেছি, পেছন ফিরে যখন তাকাই তখন নিজেকেই আমি বিশ্বাস করতে পারি না।”

সারাবাংলা/এসবিডিই

অনুবাদ গল্প ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ লুকুন্ডু সাহিত্য হিল্লোল দত্ত হিল্লোল দত্তের অনুবাদ গল্প 'লুকুন্ডু'

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর