Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পড়াগুলো হারিয়ে যায় বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে


২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৩৯

বইটা আর বই নেই। বইয়ের পাতাগুলোও নেই। একটা বিশাল গাছ হয়ে গেছে। না, গাছটা দাঁড়িয়ে নেই। একদম আরাম করে বসে আছে। গাছের পাতাগুলোও বিশাল।

গাছের ডালে আর পাতায় বসে আছে পাখি। ডানা ঝাপটাচ্ছে। গান গাচ্ছে। কিচিরমিচির, কিচিরমিচির। এ ডাল থেকে ও ডালে যাচ্ছে। কত্ত পাখি! দোয়েল, শালিক, ময়না, মাছরাঙা, কোকিল, হাঁড়িচাচা, বক, টিয়া, বউ কথা কও, বাবুই, চড়ুই। আরও যে কত পাখি, তার হিসাবই নেই। ছোট-বড়। তাদের গায়ে কত রং। আবার কোনওটা সাদা-কালো। পাশেই দলে দলে বসে আছে ফুল। গোলাপ, জবা, বেলী, হাসনাহেনা, কদম, টগর, রজনীগন্ধা, ঘাসফুল। সবাই যে বসে আছে তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ আবার দৌড়াচ্ছে। চারপাশটা ফুলের সুবাসে ভরপুর। এ একেবারে অন্য এক জগত!

বিজ্ঞাপন

কত্ত প্রজাপতি এসেছে। সারা গায়ে তাদের রঙের বাহার। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনি, গোলাপি, কমলা, সোনালি কত রং। যেন এক রঙের মেলা। এত এত রং দেখে কয়েকটা পাখির মন খারাপ হল। এদের গায়ের রং সাদা তো, তাই। কিন্তু মন খারাপ তো এখানে কেউ করে না। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকে। বন্ধুর মতো। কারও কোনও সমস্যা নেই। প্রজাপতিগুলো তখন তাদের রঙের ডালা মেলে দিল। ঘাসফড়িংয়ের দলটা দৌড়ে এল। রং করতে কার না ভাল লাগে! ওরা সাদা-কালো পাখির গায়ে রং মেশাতে লাগল। এসব দেখে একদল পুঁচকে টুনটুনি হেসেই গড়াগড়ি খেতে লাগল। পাখিগুলো অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়াল। একটু লজ্জা পেল বটে।

পুঁচকে টুনটুনিগুলোরও ইচ্ছে হল- রং করবে। কিন্তু ওদের কাছে রং তো নেই। ওরা যে হাসাহাসি করল, তাতে তো পাখিগুলোর গায়ে রং করতেই দেবে না। পুঁচকেগুলো তখন দৌড়াল। পাশেই একটা ঘরের দেওয়াল। সাদা। পুরো দেওয়ালটাই সাদা। শুরু করল আঁকাআঁকি। কে কী আঁকতে পারে, তার যেন এক প্রতিযোগিতা। যার যা ইচ্ছে হল, তাই আঁকল। আঁকা তো শেষ। রং কোথায়? আর তুলিগুলোর যা ওজন। কেউ তুলতেই পারবে না। এত শক্তি কোথায়? হঠাৎ খুশিতে ওদের মুখটা উজ্জল হয়ে গেল। ওরা আবার দৌড়াল। উড়ল। একটু পর ফিরে আসলো। ওরা রং করা শুরু করল। মুহূর্তেই রঙিন হয়ে উঠল দেওয়ালটা। পুঁচকেদের আঁকা দেওয়ালের ছবিগুলো। পুঁচকের দলটা রং পেল কোথায়? কয়েকটা ঘাসফড়িং একবার চিন্তা করল। আর মৌমাছির একটা পুঁচকে দল সেই খবরটা ছড়িয়ে দিল চারদিকে। ওরা সেগুন গাছের কচি পাতা এনে ঘষে দিল, আর লাল হয়ে গেল কিছুটা। আরেকজন আনল পুঁইশাকের বিচি। সঙ্গে সঙ্গে বেগুনি হয়ে গেল। আবার কেউ সবুজ রং লাগাল কচুর সবুজ পাতা ঘষে। এভাবেই দেওয়ালটা রঙিন ছবিতে ভরে উঠল।

বিজ্ঞাপন

এবার ওরা নাচতে শুরু করল। নাচের সঙ্গে সঙ্গে গান গাইতে লাগল কয়েকটা পুঁচকে দোয়েল। দোয়েল পাখিদের অবশ্য দুঃখ নেই। ওরা বাংলাদেশের জাতীয় পাখি। গায়ের রং সাদা-কালোতেই ওরা বরং একটু গর্ব করে। ওরা বাংলাদেশের জাতীয় পাখি তাই ওদের গায়ে রং করার প্রশ্নই আসে না। মৌমাছি, ঝিঁঝিঁ পোকা, জোনাকি সবাই চলে এসেছে। কেউ বাদ নেই। কেউ না। ছোট-বড় বলে ওদের মাঝে কোনও ভেদাভেদ নেই। সবাই একসঙ্গে থাকে। এখানে কোনও বিপদ এলে সবাই একসঙ্গে মোকাবিলা করে। কখনও মিথ্যা কথা বলে না। সবসময় সত্য কথা বলে। পুঁচকেগুলোর কোনও ইচ্ছে হলে বড়রা মানা করে না। কখনও না। বরং পারলে আরও ইচ্ছেটা পূরণ করে দেয়।

একপাশে একদল পুঁচকে খরগোশ ছানা চা পান করছে! কাঁঠাল পাতার তৈরি কাপে গরম চা! একপাশে বসে আছে মায়েদের একটা দল। ছেলেমেয়েদের এমন মজার কাণ্ড দেখে হাসতে থাকে মায়েরা। ছেলেমেয়েদের মজার মজার কাণ্ড দেখতে তো সব মায়েদেরই ভাল লাগে। এখানে সবার মা-ই এসেছে। পাখির মা, ফুলের মা, প্রজাপতির মা, ঘাসফড়িংয়ের মা, সবার মা-ই এসেছে। মজার বিষয় হল, এখানে একজনের মাকে সবাই মা বলে ডাকে। মাকে তো মা-ই ডাকা উচিত। যার মা নেই। এখানে তার কোনও দুঃখও নেই। কত্ত মা এখানে। মায়েরাও সবাইকে সমানভাবেই আদর-যত্ন করে। মা বলে কথা। মা কী কোনও সন্তানকে আদর না করে থাকতে পারে? একদম পারে না। কোনও কোনও পুঁচকে মাঝে মাঝে মায়ের কাছে যাচ্ছে। একটু পরপর। আর মায়েরা তাদের আদরের ছেলেমেয়েদের খাইয়ে দিচ্ছে। ওমা, এ দেখি দুধভাত! আমারও ইচ্ছে হল দুধভাত খেতে। আমিও উড়তে লাগলাম। অবাক কাণ্ড, দুটি রঙিন ডানা যোগ হয়েছে হাতের পাশে! নিমিষেই পৌঁছলাম ওদের রাজ্যে। একজন মায়ের কাছে। আমাকে দেখেই মা বেশ বকতে লাগল! আমি কোথায় ছিলাম এত দিন? কেন আসি না এখানে? এসব কারণে। আবার কাছে টেনে নিল আমায়। দুধমাখা ভাত আমার মুখে তুলে দিলো। কপালে একটা চুমো এঁকে দিলো।

একদম তোমার মতো আম্মু। তুমি যেভাবে আমাকে খাইয়ে দাও। শেষ কবে খাইয়ে দিয়েছ, মনে আছে তোমার? কত দিন মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না। সেই কবে ঢাকায় চলে এসেছি। ছয় মাসের বেশি হয়ে গেল। এই পড়াশোনা আর ভাল্লাগে না। পড়তে গেলেই তোমার কথা মনে পড়ে। তখন বইটা আর বই থাকে না। বইটা গাছ হয়ে যায়। আর বইয়ের পাতাগুলো গাছের ডাল-পাতা। টেবিলটা হয়ে যায় একটা ছোট্ট রাজ্য। যেখানে সবাই রাজা। বইয়ের শব্দগুলো আর শব্দ থাকে না। ওরা রাজা হয়ে উড়ে যায়। একেকটা শব্দ একেকটা রাজা! একেকটা শব্দ ফুল, পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং, মৌমাছি হয়ে যায়। বইয়ে আর কোনও শব্দই খুঁজে পাই না। কেন এমন হয়? তুমি বিশ্বাস করো। পড়তে বসলেই চোখের সামনে এই রাজ্যটা তৈরি হয়। আর বইয়ের পড়াগুলো পাখি হয়ে উড়ে যায়। ফুল হয়ে উড়ে যায়।

ঢাকায় কত্ত কিছু। কিন্তু আমার কিচ্ছু ভাল লাগে না। শুধু বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে। তোমার কাছে। আমিও যদি তোমার কাছে উড়ে যেতে পারতাম। ইচ্ছে হলেই। ওই রাজ্যের মতো। ইস্ কী মজাই না হতো! প্রতিদিন উড়ে যেতাম। প্রতিদিন।

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ ছোটদের গল্প তানজিল রিমন তানজিল রিমনের ছোটদের গল্প 'পড়াগুলো হারিয়ে যায় বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে' পড়াগুলো হারিয়ে যায় বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর