Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রথম দেখা


৮ মে ২০১৮ ১০:২৪

আনোয়ার দিল রচিত গ্রন্থ Rabindranath Tagore and Victoria Ocampo : The Creative Touch অবলম্বনে আন্দালিব রাশদী’র অনুসৃতি

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর জন্ম ১৭ এপিল ১৮৯০ আর্জেটিনার বুয়েনোস আইরিসে (রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেছেন ২৯ বছর আগে)। স্পেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ১৮১৬ সালে আর্জেন্টিনা স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময় থেকেই তাঁদের পরিবার ধনাঢ্য এবং অভিজাত ভূমিমালিক। তাঁর পূর্বপুরুষের অনেকেই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও ইতিহাসের সাথে রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তাঁর পিতামহীর প্রপিতামহের ভাই হুয়ান মার্টিন দে পেরিডন, যিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, তখন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর আত্মীয় ও ঘনিষ্ট বন্ধু জেনারেল সান মার্টিন। এ পরিবারে সদস্যদের ক’জন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ছাড়াও রয়েছেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী প্রিলিদিয়ানো পেরিডন।

বিজ্ঞাপন

দৃঢ় স্পেনিয় ঔপনিবেশিক অনুশাসন ও ক্যাথলিক ঐতিহ্যের মধ্যে ভিক্টোরিয়া বড় হয়েছেন- এতে নারীর শিক্ষার্জনের সুযোগ ছিল অতি সামান্য- অনেকেই এমনকি পড়তে লিখতেও জানতেন না। জীবনযাপনের জন্য যতোটা সামাজিক জ্ঞান অর্জন করা দরকার এবং গান গাওয়া এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানোর দক্ষতার মধ্যে শিক্ষা সীমিত ছিল। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া ছাড়া তারা কদাচিৎ বাড়ি থেকে বের হতেন। চারদেয়ালের ভেতর সাংসারিক গৃহকর্ম এবং পারিবারিক জমায়েতের ভেতরই তাদের জীবনের গণ্ডি নির্ধারিত ছিল।

বিজ্ঞাপন

ভিক্টোরিয়া যখন খুবই ছোটো তাঁর মা রোমানা একুইয়ারে এসব সামাজিক বিধিনিষেধ যে মানতে হবে তা মেয়েকে বলতে ভুললেন না। ওদিকে ভিক্টোরিয়া ভালোবাসেন ছেলেদের মতো খেলাধূলা করতে, কিন্তু যখন তাকে মেয়েদের মতো আচরণ করতে হুকুম দেওয়া হলো তিনি আতঙ্কিত হলেন। ভিক্টোরিয়ার বাবা মিগুয়েল ওকাম্পো যথেষ্ট সম্মানিত স্থাপত্য প্রকৌশলবিদ ছিলেন, তবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত রক্ষণশীল এবং পিতৃতান্ত্রিকতার প্রতিভূ। তিনি তার ছয় কন্যার (ভিক্টোরিয়া সবার বড়) সুখ ও মঙ্গলের জন্য নিবেদিত ছিলেন। ভিক্টোরিয়া খুব সুন্দর এবং বুদ্ধিমতী- এ নিয়ে মিগুয়েল ওকাম্পো খুব গর্ববোধ করতেন। ভিক্টোরিয়ার মনে আছে বাবা বলেছেন, কী আফসোস! এটা যদি ছেলে হতো তা হলো একটা ভালো পেশায় যেতে পারতো।

অবশ্য স্কুলের শৃঙ্খলা এবং রুটিনবাধা পড়াশোনা ভিক্টোরিয়া নিজেও পছন্দ করেননি। পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে একজন ফ্রেঞ্চ গভর্নেস তাকে পড়াতেন ফ্রেঞ্চ, ল্যাটিন, ধর্মগ্রন্থ, ইতিহাস, গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কিছু বিষয়। এমনকি বাড়িতে পড়ার সময়ও ভিক্টোরিয়া বিদ্রোহী হয়ে উঠতেন, কারণ তিনি সাহিত্য ও পুরান ছাড়া অন্য কোনো বিষয় পড়তে চাইতেন না। তঁকে পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন দু’জন অ্যান্ট ভিক্টোরিয়া ও পাঞ্চা এবং তাদের একজন বন্ধু; তারা বিশ্বাস করতেন ভাষা ও সঙ্গীত শিক্ষাই হবে সুশিক্ষা ও সুন্দর ভবিষ্যতের চাবি। কাজেই তাঁকে পৃথকভাবে ইংলিশ, স্পেনিশ, ইতালিয়ান এবং সঙ্গীত শেখারবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। একজন ফ্রেঞ্চ শিক্ষক তাকে বহুসংখ্যক ফ্রেঞ্চ ধ্রুপদ গ্রন্থ পড়তে সাহায্য করেন। ফেঞ্চ-এ তিনি এতোটাই নিবেদিত হয়ে পড়েন যে, এটিই তাঁর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার কেন্দ্রস্থলে চলে আসে। তার ইংরেজি শিক্ষক তাকে শেকসপিয়ারের নাটক ও চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস পড়তে উৎসাহিত করেন।

পরিবারটি এতো ঘন ঘন ফ্রান্সে যাওয়া আসা করত এবং কয়েক মাস ধরে অবস্থান করতো যে মাতৃভাষা স্পেনিশের বদলে ফ্রেঞ্চই হয়ে ওঠে তাঁর প্রধান ভাষা। নিজেকে প্রকাশের, বিদ্রোহী উত্তেজনা অবমুক্ত করার এবং মনের কথা খোলাখুলি বলার জন্য তিনি লেখালেখির আশ্রয় নিলেন। আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস তাঁর প্রিয় পাঠ হলেও জীবন ও মৃত্যুর রহস্য অনুসন্ধান তাঁকে ক্রমেই আকৃষ্ট করল। তাঁর ভালো লাগলো জুর্ল ভার্নের ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাসকে, যিনি উত্তর মেরুর প্রেমে পড়ে সেখানে একটি পতাকা উড়াবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য সব ধরণের আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন চরিত্র লরেন্স অব অ্যরাবিয়া, দ্য সেভেন পিলার্স অব উইজডম পড়ার পর তিনিই হয়ে ওঠেন ভিক্টোরিয়ার নায়ক।

১৯১২-র নভেম্বরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর লুই বার্নাদো দে এস্ত্রাদাকে বিয়ে করেন। এটা ছিল একটা ভুল বিয়ে, কয়েক মাসের মধ্যে একই ছাদের নিচে হলেও বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন শুরু করলেন। ক্যাথোলিক পরিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী তালাক সম্ভব ছিল না। তাই ভিক্টোরিয়া অনুভব করলেন সারা জীবনের জন্য ফাঁদে পড়েছেন। এই অবস্থায় এক কাজিনের সাথে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা স্বামীর সাথে সম্পর্ককে আরো জটিল করে তোলে। ভিক্টোরিয়া তাঁর স্বামীর সাথে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রহ নিয়ে কিছুই আলোচনা করতে পারেননি। ১৯১৬ সালে বিখ্যাত স্পেনিশ লেখক ওর্তেগা গ্যানসেত মাদ্রিত থেকে বুয়েনোস আইরেস-এ বক্তৃতা দিতে এলেন। ওর্তেগা ভিক্টোরিয়ার আলোচনা এবং ভিক্টোরিয়ার লেখা দান্তে ও রিয়াত্রিচের উপর প্রবন্ধ পাঠ তাঁর মধ্যে এ প্রতীতীর জন্ম দেয় ভিক্টোরিয়া একজন মেধাবী লেখক; তাঁর সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তিনি ভালোবাসার প্রস্তাবও দেন, কিন্তু ভিক্টোরিয়া তাকে উৎসাহিত করেননি কারণ এর মধ্যেই তাঁর নিজের জীবনে অনেক বিভ্রান্তি ঘটে গেছে। ১৯২২ সালে তিনি বিচ্ছিন্ন স্বামী থেকে সরে নিজে নিজে বাঁচার জন্য ছোট একটি অ্যাপার্টমেন্টে এসে উঠেন। এ ধরণের ঘটনা তাঁর পরিবারে কিংবা তার সামাজিক বৃত্তে কখনো ঘটেনি এখান থেকে তাঁর জীবনের আরো কিছু গুরুতর সমস্যার শুরু। সেই সময়গুলোতে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন কিন্তু তিনি করতে যাননি কারণ তিনি ছিলেন পূর্ণ জীবনের একজন মানুষ এবং তাঁর ভেতরটা ছিল আনন্দমুখর।

তিনি এবার আরো বই পড়ার দিকে ঝুঁকলেন এবং সম্ভব হলে প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে লিখতে শুরু করলেন। দান্তের ডিভাইন কমেডি তাঁকে নিজের ভেতরের অন্তর্গত বিশ্বের গভীরতা আবিস্কার করতে সাহায্য করল। ‘আমি এই মহান কবির একজন নবীণ শিক্ষার্থী হিসেবে একটি স্থান দখল করে নিলাম।’ তাঁর লেখা প্রকাশিত হলো বুয়েনোস আইরেসের নাম করা সংবাদপত্র লা নেশন-এ। যে সব বিষয়ে খোলামেলা বিশ্লেষণ একজন নারীর জন্য নিষিদ্ধ, তাঁর রচনায় একজন নারী কী ভাবেন তা লিখে এবং প্রকাশ করে তিনি আরো সমস্যা সৃষ্টি করলেন। যেহেতু তিনি ফ্রেঞ্চ ভাষায় লিখেছেন এবং এটি কখনো আর্জেন্টাইনদের মুখের ভাষা নয়, তাঁর পাঠকরা তাঁর ভাবনাকে ফরাসি থেকে নিজেদের মতো করে স্পেনিশ ভাষায় অনুবাদ করে তাদের গোড়ামিপূর্ণ ব্যাখা ও বিশ্লেষণ প্রচার করতে থাকলে তিনি অত্যন্ত রুষ্ট হন। এতে তাঁর প্রকাশ ভঙ্গি ও শৈলী নিয়ে নিজের মধ্যেই বিরোধ সৃষ্টি হয় কারণ তিনি তাঁর আর্জেন্টাইন পরিচিতি ভালোবাসতেন এবং একই সঙ্গে ইউরোপিয় সংস্কৃতি ও ফ্রেঞ্চভাষা তার জন্য অনেক বেশি ঘরোয়া এবং স্বস্তিকর। তাঁর মনে পড়ে বালিকা বয়সে যখন পরিবারের সদস্যদের সাথে প্যারিসে এসেছিলেন, সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক তাকে স্থায়ীভাবে ফ্রান্সে বসবাস করার এবং ফ্রেঞ্চ ভাষায় পড়াশোনা ও লেখালেখি করার পরামর্শ দিয়েছিল। তিনি তাকে বলেছিলেন যে তিনি ফ্রেঞ্চ নারী নন, আর্জেন্টাইন। ‘আমি অনেকটা অনিচ্ছায় মেনে নিলাম ভাষার প্রশ্নে আমি হবো ব্যাঙের মতো; আমি উভচর হয়ে উঠা অভ্যাস করে নিলাম, একটা থেকে লাফিয়ে অন্যটাতে চলে যাবো।

তিনি বিশেষভাবে ভার্জিনিয়া ওলফ ও গ্যাব্রিয়েল মিস্ত্রাল-এর ভক্ত হয়ে উঠলেন, তাদের লেখায় অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেকে নারী লেখক হিসেবে প্রকাশ করতে শুরু করলেন এবং নিজের নারীত্ব নিয়ে গৌরব বোধ করলেন। দান্তের ডিভাইন কমেডি এবং তাঁর হাতে রূপায়িত বিয়াত্রিচেকে নিয়ে যখন লিখতে গেলেন ভিক্টোরিয়ার নিজের প্রেমজীবন তখন বিভিন্ন সংঘাতে উত্তাল। তিনি তাঁর নিজের জীবন দান্তে দ্বারা অনেক প্রভাবিত বলে মনে করেন।

দুই

একই সময়ে ১৯১৩ সালে তিনি একটি খবরের কাগজে পড়লেন ‘গীতাঞ্জলি’ ও ‘দ্য গার্ডেনার’-এ প্রকাশিত ‘মিস্টিক’ প্রেমের কবিতা এবং চিত্তাকর্ষক শিরোনাম ‘সাধনা: দ্য রিয়েলাইজেশন অব লাইফ’ শিরোনামে হার্ভাড বিশ^বিদ্যালয়ে দেওয়া বক্তৃতাসমূহের জন্য ভারতীয় লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন, সবগুলোই ১৯১২ সালে প্রকাশিত।

নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হবার আগে বুয়েনোস আইরিস-এর ২৩ বছর বয়সী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো আদৌ রবীন্দ্রনাথের নাম জানতেন কিনা, সন্দেহ আছে। ভিক্টোরিয়া গীতাঞ্জলীর ইংরেজি অনুবাদ এবং আঁদ্রে জিদ-এর ফ্রেঞ্চ অনুবাদ সংগ্রহ করলেন। কাব্য সঙ্কলনের পাতা উল্টেই দেখেন চোখের সামনে রোদেনস্টাইনের আঁকা রবীন্দ্রনাথের স্কেচ- চক্ষুবন্ধ, বুদ্ধের অবয়ব, হাতে বই, গভীর ধ্যানমগ্ন। তার আলখেল্লা, তার চুল ও দাড়ি তাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে যা কবির কাব্যসত্তার সাথে মিলে গেছে।

গীতাঞ্জলীর পাতা উল্টাতে উল্টাতে খানিক থেমে গিয়ে তিনি ইংরেজি অনুবাদে যা পড়লেন রবি ঠাকুরের নিজের ভাষায়, মাতৃভাষায় তা হচ্ছে-
যেদিন ফুটল কমল কিছুই জানি নাই
আমি ছিলাম অন্য মনে।
আমার সাজিয়ে সাজি তারে আনি নাই
সে যে রইল সঙ্গোপনে।
হিয়া মাঝে হিয়া আকুল প্রায়
স্বপন দেখে চমকে উঠে চায়
মন্দ মধুর গন্ধ আসে গায়
কোথায় দখিন সমীরণে

ভিক্টোরিয়া পড়তে পড়তে শেষে মিস্টিক পঙক্তিমালা পাঠ করলেন
ঘন শ্রাবণ মেঘের মতো
রসের ভারে নম্র নত
একটি নমস্কারে প্রভু
একটি নমস্কারে
সমস্ত মন পড়িয়া থাক
তব ভবন দ্বারে

নানা সুখের আকুলধারা
মিলিয়ে দিয়ে আত্মহারা
একটি নমস্কারে প্রভু
একটি নমস্কারে
সমস্ত গান সমাপ্ত হোক
নীরব পারাপারে

… ভিক্টোরিয়া তাঁর চারপাশের পৃথিবীর দরজা বন্ধ করে গীতাঞ্জলি পাঠ করলেন। তারপর পুনঃপাঠ, পুনঃপাঠ।

আমি বহু বাসনায় প্রাণপনে চাই
বঞ্চিত করে বাঁচালে মোরে
এ কৃপা কঠোর সঞ্চিত মোর
জীবন ভ’রে।
না চাহিতে মোরে যা করেছ দান
আকাশ আলোক তনু মন প্রাণ
দিতে দিতে তুমি নিতেছ আমায়
সে মহা দানেরই যোগ্য করে
অতি ইচ্ছায় সন্তুষ্ট হতে
বাঁচালে মোরে।

ভিক্টোরিয়া জানতেন (তাঁর গীতাঞ্জলীতে) ঠাকুর যা উদযাপন করছেন তা সেই ভালোবাসা নয় যা তাঁকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। তিনি খুঁজে পেলেন ঠাকুরের ঈশ্বর হচ্ছেন এমন কেউ যে ভালোবাসা আমাদের পৃথিবীমুখী করে, সেই ভালোবাসা নিয়েও তার সাথে কথা বলা যায়। অনেক বছর পর সেই স্মৃতি মনে করে তিনি লিখেছেন।

‘… যদিও কবিতাগুলো অনেক দূর থেকে এসেছে, আমার কাছে সে কবিতার ধ্বনি অপরিচিত মনে হয়নি। সে কবিতা পড়ে আমি আনন্দ ও কৃতজ্ঞতায় কেঁদে ফেলেছি। আমি নিজেকে শুনিয়েছি, হে ঠাকুরের ঈশ্বর, যিনি আমাকে কোনো কিছু থেকে আশ্রয় দিতে চাননি, আপনার এই বিস্মৃতি আমি কিছু মনে করিনি আপনি আমাকে কতটা ভালো করে চেনেন! লুকায়িত ঈশ্বর জানেন আমি সব সময় তাঁর খোঁজেই আছি, করুণাময় ঈশ্বর জানেন তাঁর কাছে যাবার পথই হচ্ছে মুক্তির পথ। (১৯৬১ সালে বুয়েনোস আইরেস থেকে প্রকাশিত ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’)।

গীতাঞ্জলীতে ঠাকুরের মহাবৈশ্বিক সচেতনতা, বিশেষ করে ৮৭ নম্বর কবিতা তাঁকে মুগ্ধ করল-
দাঁড়ালেম তব সন্ধ্যা-নাগনের তলে
চাহিলাম তোমা পানে নয়নের জলে
কোনো মুখ কোনো সুখ … তৃষা কোনো
যেথা হতে হারাইতে পারে না কখনো
সেথায় এনেছি মোর পীড়িত এ হিয়া
দাও তারে দাও তারে দাও ডুবাইয়া
ঘরে মোর নাহি আর যে অমৃতরস
বিশ^মাঝে পাই সেই হারানো পরশ

তিন

১৯২৪ এর সেপ্টেম্বরে ভিক্টোরিয়া লা নেশন পত্রিকায় পড়লেন, পেরুর জাতীয় উৎসবে যোগদানের জন্য আর্জেন্টিনা হয়ে পেরুতে যাবার পথে তিনি কয়েকদিন বুয়েনোস আইরেসে থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। লা নেশন পত্রিকায় কিছু প্রবন্ধ লিখে ভিক্টোরিয়া সম্প্রতি সাহিত্যের লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেছেন। সেখানে তিনি দান্তে, রাসকিন ও গান্ধীকে নিয়ে লিখেছেন- এই তিনজন সম্পর্কে তার অসীম শ্রদ্ধা। তিনি লিখেছেন, প্লাতা নদীর তীরে ঠাকুর এবং ঠাকুরের আগমন সংবাদ শুনে তার সে সময়কার স্মৃতি স্মরণ করলেন-

১৯২৪ এর সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হল পেরুতে যাবার পথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুয়েনস আইরেস হয়ে যাবেন, সেই মুহুর্ত থেকে আঁন্দ্রে জিদ ফ্রেঞ্চ ভাষায় তার কবিতা অনুবাদ করছেন, তার নিজের করা ইংরেজি অনুবাদ (ডব্লিউ বি) ইয়েটস-এর ভূমিকাসহ প্রকাশিত হয়েছে। জেনোবিয়া ক্যাম্প্রুবির (হুয়ান র‌্যামন হিমেনেথের স্ত্রী) স্পেনিশ অনুবাদ আছে। আমরা সাগ্রহে কবির আগমনের অপেক্ষা করছি এটাই হবে আমাদের জন্য ঈশ্বরের সেরা ঘটনা। আর আমার জন্য জীবনের শ্রেষ্টতম একটি ঘটনা।

‘সেই বসন্তে সান ইসিদ্রো স্বচ্ছ এবং উষ্ণ, গোলাপের অস্বাভাবিক আধিক্য। সব জানালা খুলে ফুলের গন্ধ শুঁকে, ঠাকুরের লেখা পড়ে, ঠাকুরের কথা ভেবে, ঠাকুরকে নিয়ে লিখে সকালটা আমি আমার রুমেই কাটাতাম। এই পাঠ, ভাবনা, লেখা ও অপেক্ষাই পরবর্তী সময় লা নেশনের পাতায় প্রতিফলিত হয়। সেই প্রত্যাশার দিনগুলোতে কখনো আমার মনে হয়নি সান ইসিদ্রোর উঁচু খাড়া পাহাড়ে কবি আমার অতিথি হবেন।

আমি প্রত্যাশা করার মতো সাহসও পাইনি। বুয়োনস আইরেসে তাঁর সংক্ষিপ্ত সফরকালে তিনি তার নিবেদিত ভক্তদের সাথে- আমার সাথে দেখা করার সময় পাবেন।

ডরিস মেয়ারের ভাষায়, ‘ভিক্টোরিয়া উদ্দীপনায় বিদ্যুতায়িত হলেন। তিনি নিজেকে বইয়ের ভেতর ডুবিয়ে দিলেন। তিনি নিজেকে রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করানোর জন্য যতটা প্রস্তুত করা সম্ভব ততটাই করলেন। রীতিমতো ধর্মীয় নিষ্ঠার সাথে তিনি যখন সুযোগ হয়েছে বলে মনে করতেন, কবির কাছে কল্পিত চিঠি লিখতে বসে যেতেন। যে চিঠিতে থাকতো রবীন্দ্রনাথের কাজের ব্যাখ্যা এবং প্রতিক্রিয়া। তারপর এ চিঠিকে নিবন্ধের চেহারা দিয়ে লা নেশনে পাঠালেন (নভেম্বর ১৯২৪)। যে লেখার শিরোনাম, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঠের আনন্দ’।

চার
১৯২৩-এ রবীন্দ্রনাথ যখন জাপান সফর করছেন, ১৯২৪-এর ডিসেম্বরে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্পেনিশ ঔপনিবেশিক শক্তিকে পরাজিত করার শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি নিমন্ত্রণ পেলেন। পেরু এবং মেক্সিকোর প্রতিনিধি তাঁর কাছে আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা বিশ্বভারতীকে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার প্রচেষ্টাকে সফল করতে এক লক্ষ ডলার অনুদানের ব্যবস্থা করে দেবেন।

৬ নভেম্বর ১৯২৪ বৃহস্পতিবার এসএম হারুনা মারু জাহাজ বুয়েনোস আইরেস ডকে ভিড়ল। (প্যারিস থেকে তিনি ১৮ আগস্ট রওয়ানা হয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তিন সপ্তাহ পর তিনি যখন বুয়েনোস আইরেসের কাছাকাছি, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হন। জাহাজ যখন প্লাতা নদীপথে ঢুকে, ডাক্তার জানালেন, পেরুর লিমায় যাবার জন্য রওয়ানা হবার আগে তাঁকে পূর্ণ শারিরীক সুস্থতা ফিরে পেতে হবে।)

ডক থেকে রবীন্দ্রনাথকে হোটেলে নেওয়া হলো। ডাক্তাররা এবার তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে এবং পেরু সফর বাতিল করতে পরামর্শ দিলেন।

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো জানলেন তিনি হোটেল প্লাজাতে অবস্থান করছেন; একজন বন্ধুকে নিয়ে তিনি কবিকে দেখতে গেলেন। ঠাকুরের সেক্রেটারি (লিওনাদ) এলমহার্স্ট তাঁদের বললেন, তিনি ঠাকুরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে খুব চিন্তিত, ডাক্তাররা তাকে পরিপুর্ণ বিশ্রামে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কারণ তাঁর হৃদযন্ত্রের অবস্থা ভালো নয়, পেরুর জাতীয় উৎসবে যোগদান করার মতো অবস্থায় তিনি নেই। তাঁকে সম্ভবত পেরুর কর্মসূচি বাতিল করতে হবে। সেই সফরের স্মৃতি ভিক্টোরিয়া স্মরণ করেছেন।

আমি তাৎক্ষণিকভাবে এলমহার্স্টকে একটা ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দিলাম। ঠাকুরের জন্য এমন একটা আশ্রয়স্থল দরকার যেখানে শহরের কোলাহল থেকে দূরে রোগমুক্ত হবার সময়টা তিনি কাটাবেন- এ ধরণের আশ্রয়ের খোঁজে আমি স্বর্গ-মর্ত্য একাকার করে ফেললাম, আমার কী অবিশ্বাস্য সৌভাগ্য কবির কাজে লাগার মতো এমন একটা মুহুর্তে আমি সেখানেই ছিলাম। এলমহাস্টের সাথে এ ধরণের প্রাথমিক আলোচনার পর আমরা ঠাকুরের স্যুটে প্রবেশ করলাম। তাঁর সেক্রেটারি আমাদের পাশের সিটিং রুমে বসিয়ে চলে গেলেন। কবির সাথে কথা বলার ফলাফল কী দাঁড়াবে তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমি এতোটাই লজ্জা বোধ করেছি যে দৃশ্যপটে কবির উপস্থিতি এড়াতে এক সময় পালিয়ে যাবার কথাই ভেবেছি।

এক সময় রবীন্দ্রনাথ এলেন তাঁর সামনে দেবতার বেশে। ভিক্টোরিয়ার আবেগময় বর্ণনা ঠাকুরের চোখের ভ্রু থেকে হাতের আঙুল কিছুই তার দৃষ্টির আগোচরে থেকে যায়নি। ভিক্টোরিয়ার বর্ণনা যে কোনো পাঠককেই স্পর্শ করবে।

‘আমি আমার মা-বাবার কাছে ছুটলাম আমাদের সান ইসিদ্রোর ভিলা ঠাকুরের জন্য চাই; কিন্তু তাদের কথায় আতঙ্কিত হলাম- এটা তারা দিতে পারবেন না। কাছাকাছি একটা জায়গা মিরালরিওতে আমার কাজিনের একটা ছোট্ট সুন্দর গ্রামীণ বাড়ি আছে। তিনি আমাকে এই বাড়িটি দিতে রাজি হলেন, আমার মনে হলো তিনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন।

(ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর জীবনীকার লিখেছেন এই বাড়ির খরচ মেটাতে তাকে তার হীরের টায়রা বিক্রি করতে হয়েছে। এ বাড়ি থেকে দু-এক কিলোমিটার দূরে বাবার বাড়িতে তিনি থেকেছেন এবং ফ্যামিলিসহ তার সব গৃহকর্মী ভিক্টোরিয়ার শহরের বাসা ছেড়ে ঠাকুরের সেবা করার জন্য মিরালরিও-তে চলে এসেছে।)

আমি পারি তো উড়ে গিয়ে হোটেলে পৌঁছি। এলমহার্স্টকে বলি দুদিনের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে রুমগুলো পরিস্কার করা, আসবাব পালিশ করা, বিছানাপত্র হাড়িপাতিল এবং আমার ভৃত্যদের নিয়ে আসা, দুদিন যথেষ্ট সময়। সে ক’টা দিন ছিল ভীষণ ব্যস্ততার। বারবার বুয়েনেস আইরেস ও সান ইসদ্রির মধ্যে যাওয়া আর আসা। বাড়িটি বেশ বড় এবং নতুন, বাস্ক আবাসনের মতো করে তৈরি, হোয়াইট ওয়াশ করা, সবুজ শাটার। বাগানটাও বেশ বড়; চূড়া থেকে প্লাতে নদীর মনোহর শোভা। আর এটাই ছিল সবচেয়ে মিষ্টিগন্ধী বিভিন্ন ধবণের ফুল, গোলপের মওসুম। অন্তত ফুলগুলো অতিথির জন্য উপযুক্ত।

ভিক্টোরিয়া আরো লিখলেন- সে সময় তার মন গান্ধী আর ঠাকুরে পরিপুর্ণ। এ দুজনই ভারতের শ্রেষ্ঠতম হিসেবে তিনি রোমা রোঁলার বই মহাত্মা গান্ধী পড়ে জেনেছেন এবং লা ন্যাশন-এ প্রকাশিত তাঁর দুটি প্রবন্ধে তাঁদের সম্পর্কে লিখেছেন-

ঠাকুরের সাথে প্রথম দেখার মুহুর্তে দুটো কারণে তিনি খুব বিব্রত ছিলেন একটি তার নিজস্ব লজ্জাশীলতা, অন্যটি নিজে কথা না বলে তাঁর বন্ধুকে কথা বলতে দেওয়া।

৮ নভেম্বর লজ্জিত ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো কম্পিত হাতে ঠাকুরকে লিখলেন- ‘আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে আর পারছিনা, আমি কি যে ভয়ঙ্কর লজ্জা, বিব্রতকর অবস্থায় ছিলাম, যখন আমি আপনার রুমে এসে বসি আমি কিছু কথা বলেছিলাম যা আমি আদৌ বলতে চাইনি। কিন্তু পরম আগ্রহ ভরে যে কথাগুলো আমি আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম, বলার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম আমি তা বলতে পারিনি। আমি জানতাম তখন সে কথা বলার চেষ্টা করলেও কাজ হতো না। আপনি অনুগ্রহ করে আমার লজ্জা ও ব্রিবতদশাকে ক্ষমা করবেন। আপনাকে দেখে আমি কতো যে খুশী হয়েছি, আমি আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। আমার হৃদয়ে যাতনা হচ্ছিল কারণ আপনাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা আমি খুঁজে পাইনি। সম্ভবত আমি আবার অধিকার প্রয়োগ করছি কিন্তু আমার যে কোনো উপায় নেই। আপনার কাছে ফুল পাঠিয়ে আমি নিজের বোঝাটা কমাবো কারণ আপনি তো এটা ভালো করেই জানেন ফুল মানে শুধু রঙ আর সুগন্ধ নয়।

ফুল মানে আরো অনেক কিছু। ঠাকুর তার এই ভক্তের কাতরতা বুঝতে সময় নেননি। কেবল তাঁর উপস্থিতিই যে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে কতোটা সুখী করেছে তাঁর বিবরণ ভিক্টোরিয়ার লেখার ছত্রে ছত্রে। এরপর ঠাকুর ও ভিক্টোরিয়ার নীরব প্রেমের একটি অধ্যায়।

রবীন্দ্রনাথও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে ঘিরে অনেক লিখেছেন, তাঁকে দিয়েছেন বিজয়া নাম, বিজয়াকে উৎসর্গ করেছেন নিজের কাব্যগ্রন্থ।

টীকা ১. আনোয়ার দিল একটা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন : Rabindranath Tagore and Victoria Ocampo : The Creative Touch. দুজনকে নিয়ে এতো বিস্তৃত বিবরণ দ্বিতীয় কোনো গ্রন্থে নেই। আনোয়ার দিলের জন্ম পাঞ্জাবের জলন্ধরে, পরবতী সময়ে পাকিস্তানের নাগরিক। ক্যালিফোর্নিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বাংলা ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের জন্ম নিয়েও একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

টীকা ২. একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো আর্জেন্টিনার বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল ১১ জুন ১৯৭১ সালে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুই মারিয়া দ্য পাবলো পার্দোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকপত্র প্রকাশ করেন এবং ভারতে অবস্থানরত পূর্ববাংলার শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ-সহায়তাসহ তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আর্জেন্টিনার সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এই স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেছেন আর্জেন্টিনার শীর্ষস্থানীয় লেখক, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, আইনজীবী প্রমুখ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমানদের মধ্যে রয়েছেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ও হোর্হে লুই বোর্হেস ।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত স্মারকপত্রের ভাষ্য-
পূর্ববাংলার সাম্প্রতিক ট্র্যাজিক ঘটনায় অবিশ্বাস্যসংখ্যক মানুষ-পুরুষ, মহিলা ও শিশু নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক সমস্যা। ঐতিহ্যের প্রতি অনুরক্ত থেকে ভারত শান্তি, সহাবস্থান ও সহমর্মিতার প্রতি নিবেদিত হতভাগ্য শরণার্থী যাদের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, তাদের খাওয়াতে-পড়াতে ও বাসস্থান দিতে ভারত হিমশিম খাচ্ছে। ভারত যখন নিজেই জাতি গঠনের কাজে নিয়োজিত, তখন এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার একা বহন করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়।

মানুষের ট্র্যাজেডি জাতীয়তা ও সীমান্তের বাধা মানে না; পৃথিবীর যেকোনো স্থানে ভোগান্তি, মৃত্যু ও বিপন্নতা সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের কারণ। তার পরও এটা দুর্ভাগ্যজনক যে পূর্ববাংলায় যা ঘটেছে, তার পরও বিশ্ববিবেক ঠিকভাবে জেগে ওঠেনি। এমনকি অন্য দেশের দায়ভার, যার সৃষ্টিতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই, তা প্রশমনের মাধ্যমে মানবিক সমস্যা কমাতে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকারগুলোর কিছু সাহায্য তহবিল থেকে থাকে কিন্তু সংকটের যে আকার, তাতে পরিস্থিতির দাবি, বিশ্বমানবতা এগিয়ে আসুক, এই সমস্যার ভার বহনে অংশী হোক এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, জাতীয় নয়।

এই বিশেষ ক্ষেত্রে জবাব কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে একাত্মতা ঘোষণা করা নয়, কিংবা কেবল অনুধাবনের সাক্ষ্য নয় এটা হতে হবে ধনাত্মক এবং সরাসরি সাহায্য হতে হবে নগদ সাহায্য কিংবা দ্রব্যসামগ্রী; সেই সঙ্গে বিশ্ববিবেক জাগানো এবং এই সংকটকে সমষ্টিগত দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা তো রয়েছেই।

আশা করা যায়, আমাদের সরকার বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সংহতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকে পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাড়া দেবে এবং ভারতের ওপর আরোপিত দুর্দশা লাঘব করবে।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর