বাংলা সাহিত্যে নজরুলের প্রেমের দ্যুতি
২৫ মে ২০২৩ ১৪:৩৩
কাজী নজরুল ইসলাম! অবিসংবাদিতভাবেই যিনি বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কবির বিদ্রোহ ছিল মানব কল্যাণে। এজন্য তিনি বিদ্রোহী কবি যতটা, মানবতার কবিও ঠিক ততটা! তবে সব ছাপিয়ে আমার কাছে তিনি প্রেমের কবি। বিদ্রোহ বলুন আর মানবতাই বলুন, প্রেমের কাছে সবই নস্যি। হৃদয়ে প্রেম না থাকলে, না উড়ে মানবতার পতাকা, না জ্বলে বিদ্রোহের আগুন। তাই তো কবি লিখেছেন, “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তূর্য;”
কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর হৃদয় ছিল প্রেমে পূর্ণ। এর প্রকাশ আমারা যেমন তাঁর সাহিত্যে দেখতে পাই। তেমনই দেখতে পাই তাঁর ব্যাক্তি জীবনে। সাহিত্য থেকেও তাঁর ব্যাক্তি জীবনের প্রেম বড় বেশী রোমাঞ্চকর, আবেগময়। “আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফাস গেয়ি” শুধু সাহিত্যে না ব্যাক্তি জীবনেও তিনি এই ফাঁস পরেছেন। একবার নয়, বারবার। তিনি প্রেম দিয়ে বিশ্ব জয় করেছেন।
বিদ্রোহী কবি নজ্রুল যেমন বিদ্রোহ করে খোদার আসন ‘আরশ’ কে কাঁপিয়ে দিয়েছেন, তেমন করেই আরাধনার মতো করে প্রেমের পূজা করেছেন।
‘জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে
মাখাব তোমার গায়,
রামধনু হতে লাল রং ছানি,
আলতা পড়াব পায় “
কিংবা,
“আঁখি-জল হয়ে আঁখিতে আসিয়ো,
বেণুকার সুর হয়ে শ্রবণে ভাসিয়ো’
অথবা,
“আমার বাণী জয়মাল্য, রাণি! তোমার সবি।।
তুমি আমায় ভালোবাস তাই তো আমি কবি।“
এমন করেই অসংখ্য কবিতায়-গানে তিনি প্রেমের জয়গান গেয়েছেন।
প্রেমে যেমন মধুময়, মুগ্ধতা ছড়ায়, তেমন করেই আবার বাঁজায় বিচ্ছেদের সুর। হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছরিয়ে দেয় বিষাদময়তা। তোলে বিরহ সঙ্গীতের ঝংকার। এ এক আশ্চর্য দুঃখ। মানুষ যে দুঃখ কে হৃদয় দিয়ে উপভোগ করে। খুঁজে পায় প্রেমের পূর্ণতা। প্রেমের এই আশ্চর্য দিকটিও কবি তাঁর কবিতায় তুলে ধরেছেন।
“তখন মোদের কিশোর বয়স যেদিন হঠাৎ টুটল বাঁধন,
সেই হতে কার বিদায়-বেণুর জগৎ জুড়ে শুনছি কাঁদন।
সেই কিশোরীর হারা মায়া
ভুবন ভরে নিল কায়া,
দুলে আজও তারই ছায়া আমার সকল পথে আসি।“
কিংবা,
“বইছে আবার চৈতী হাওয়া গুম্রে ওঠে মন,
পেয়েছিলাম এম্নি হাওয়ায় তোমার পরশন।“
অথবা,
“জনম জনম গেল আশা-পথ চাহি।
মরু-মুসাফির চলি, পার নাহি নাহি॥“
এমন করেই প্রাণের কবি নজরুল তাঁর কবিতায় গানে প্রেম-বিরহ কে এনেছেন শত রুপে, বারে বারে।
মানব প্রেমে নরুল যেমন ছড়িয়েছেন অনন্ত সুধা, তেমন করেই স্রষ্টার প্রেমে নিবেদন করেছেন অসংখ্য প্রেমাঞ্জলী। নজরুলের প্রেমের কাছে জাত-পাত,ধর্ম-বর্ণ সব মুখ থুবরে পড়েছে। তাই তিনি যে কলমে লিখেছেন হামদ নাত, আবার সেই কলমেই লিখেছেন ভজন সঙ্গীত।
“নাম মোহাম্মদ বোল রে মন নাম আহমদ বোল” যেমন লিখেছেন, তেমন করেই লিখেছেন, ‘হে গোবিন্দ রাখ চরণে”।
তিনি নিজেকে ভৌগলিক সীমারেখা দিয়ে কখনোই আটকে রাখেননি, “আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশের, এই সমাজেরই নই, আমি সকল দেশের সকল মানুষের।
হ্যাঁ! কবি সকল দেশের, সকল মানুষের। তিনি বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে বিদ্রোহী প্রমিথিউস। মনবতার ফেরিওয়ালা। প্রেমের পূজারী। সাক্ষাত তিনি, দেবদূত!
সারাবাংলা/এসবিডিই
প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে নজরুলের প্রেমের দ্যুতি শুভজিত বিশ্বাস সাহিত্য