আহসান হাবীব-এর রম্য
২৭ নভেম্বর ২০১৭ ১২:০৭
মাঘের শীতে নাকি বাঘ পালায় । কিন্তু মাঘ চলে আসছে শীতের বাতাস নেই। এর কারণটা কি? অতি উৎসাহী কেউ কেউ হালকা জ্যাকেট সোয়েটার ব্লেজার পড়ে শীত নামানোর চেষ্টা করছেন তাতেও কাজ হচ্ছে না। শীত আসছেই না। মাঝখানে একবার এক পশলা হুড়মুড় করে বৃষ্টি হল, আকাশে মেঘ গুড় গুড় করল , বিদ্যুৎও চমকালো দুই একঝলক … গুরুজনরা বলল এই বৃষ্টিতে শীত নামল বলে। কোথায় কি? পরদিন ফকফকা রোদের সঙ্গে সেই চিরাচরিত চিমশা গরম!
আসলে এখন আর ষড় ঋতুর বাংলাদেশ বলে কিছু নেই। এখন ঋতু মাত্র দুইটা। বর্ষা কাল আর গরম কাল। তবে বর্ষার মধ্যে তিনটা ভাগ আছে। একটা হচ্ছে ‘হাটু পানি বর্ষা ’ মানে যে বৃষ্টিতে হাটু পানি উঠে যায় দ্বিতীয়টা হচ্ছে ‘কোমড় পানি বর্ষা ’ অর্থাৎ যে বৃষ্টিতে কোমড় পানি উঠে যায়। আর দান দান তিন দান গলা পানি বা ‘পাঁচটনি নৌকা বর্ষা ,’ অর্থাৎ যে বৃষ্টিতে ঢাকার রাস্তায় ব্লু বুক লাইসেন্স ছারাই পাঁচটনি নৌকা চলতে শুরু করে ।
আর সেই একইভাবে গরম কালও তিন প্রকার। চিমসা গরম ভ্যাপসা গরম আর ঢ্যাপসা গরম। চিমসা গরম আর ভ্যাপসা গরমের ব্যাখা দেওয়া সম্ভব হলেও ঢ্যাপসা গরমের ব্যাখ্যা দেওয়া আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। তবে এটা ঠিক সেই ঋড় ঋতুই হয়ত আছে কিন্তু একটু অন্যভাবে। এই প্রসঙ্গে এক শীত বিশেষজ্ঞ এর সঙ্গে একবার কথা বলেছিলাম ঐ বাঘ পালানো নিয়েই।
– আচ্ছা মাঘের শীতে বাঘ পালায় বলে যে শোনা যায় সেই বাঘ আসলে পালিয়ে ঠিক কোথায় যায়?
তিনি আমার প্রশ্ন শুনে মনে হল আচমকা শীতে কেঁপে উঠলেন। ফিস ফিস করে বললেন ‘ভাই সত্যি দারুন প্রশ্ন করেছেন। এভাবেতো ভেবে দেখি নি। আসলেইতো বাঘ তখন পালিয়ে কই যায়? ’
– আর কোথায় যাবে এতো সোজা হিসাব। বাঘ তখন গিয়ে আশ্রয় নেয় সরকারী অফিসের সিড়ির নিচে।
পাশ থেকে আরেক বিশেষজ্ঞ বলে।
– কেন? সরকারী অফিসের সিড়ির নিচে কেন?
-কেন গল্পটা জানেন না?
– কোন গল্প?
– তাহলে শুনুন। একবার এরকম একটা বাঘ মাঘ মাসের শীতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিল এক সরকারী অফিসের সিড়ির নিচে। সেখানেই বাঘ থাকে আর প্রতিদিন টুপ করে একজন করে সরকারী কর্মচারী ধরে খায়। কেউ টের পায় না। এই করে করে বাঘ প্রায় অর্ধেক কর্মচারী কর্মকর্তা খেয়ে শেষ করে ফেলল। তারপরেও কেউ টের পায় না। কিন্তু যেদিন অফিসের চা’ওলাকে খেয়ে ফেলল সেদিন সবার টনক নড়ল।
– টের নাও পাওয়ার কারণ?
– কেন তাও বুঝলেন না? ঐ যে জনশ্রুতি আছে না সরকারী লোকজন কাজ করে না টেবিলে থাকে না। ফলে বাঘ তাদের খেলেও কেউ টের পায় না । কিন্তু চা’তো সবাই খায়। যেই চা’ওলা নেই তখন সবার হুশ হল!
তবে শেষ কথা হচ্ছে শীত পড়া জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ শীত পড়লে ঢাকা শহরটা কিন্তু বেশ পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠে। শহরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা পুড়িয়ে টোকাইয়ের দল আগুন তাপায় … তখন সত্যি শহরটাকে বেশ পরিচ্ছন্ন লাগে। কথাটা আমার না সিটি কর্পোরেশনের এক পরিচিত কর্মকর্তা একবার আমাকে বলেছিলেন। সেও অনেক কাল আগের কথা। আরবের লোকেরা তখন কি করত জানি না তবে ঢাকা শহরে ভালই হাড় কাঁপানো শীত পড়ত।
আহসান হাবীব : কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।