Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কথোপকথনে জীবনের বিচিত্র সিলেবাস!

সুমিত বণিক
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫০

কবিতা: তোমাকে না আমার মাঝে মাঝে খুব অচেনা মনে হয়। এতোদিন ধরে যে মানুষটাকে নিয়ে একটা স্বপ্ন বুনে চলছি, সেই মানুষটাই যখন ভুল বুঝে, তখন আসলে এগিয়ে যাবার আত্মবিশ্বাসটাকে বড্ড ঠুনকো মনে হয়।

অনন্ত: কেন?

কবিতা: এতো কিছু বলার পরও বলছো কেন? তুমি কিছু বুঝো না নাকি?

অনন্ত: আসলে আমি যা বুঝি, সেটা তুমি বুঝো না। রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন, সাম্রাজ্যবাদ, মৌলবাদ, পুঁজিবাদ আরো কত কি!

কবিতা: আসলে, তুমি অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞ। অনেক বিষয়ে তোমার মেধা, প্রজ্ঞা, চিন্তা-চেতনা বেশ প্রখর ও অসাধারণ। কিন্তু তুমি আসল জিনিসটাই বুঝো না!

অনন্ত: কোনটা সেটা?

কবিতা: কিভাবে জীবনের অসম যুদ্ধে টিকে থাকতে হয়! কিভাবে চাকরি-বাকরি করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়! কিভাবে সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাতে হয়! সেটাই তুমি এখনো আত্মস্থ করতে পারো নি।

অনন্ত: বুঝলে কবিতা! তোমার আর আমার মধ্যে একটা সুদীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকলেও, দুজনের জীবনের সিলেবাসটাকে যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মনে হয়! মোটকথা আমি জীবনে যে বিষয়গুলোকে কখনো গুরুত্ব দেই নি, কখনো মূখ্য বলে মনে করিনি, আজ সেগুলোর জন্যেই আমাকে তুমি ‘বুঝো না’ বলে অপবাদ দিলে?

কবিতা: ‘অপবাদ’! আমি আবার কখন তোমাকে অপবাদ দিলাম? আমি তো শুধুমাত্র তোমাকে জগৎ সংসারে টিকে থাকার বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিলাম।

অনন্ত: মানুষ না আজকাল যেন বড্ড কঠিন প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। কাউকে মন থেকে কিছু বোঝাতে গেলে আরও উল্টো বুঝে। কারো কাছে কিছু ধার চাইতে গেলে, উল্টো অভাবের কথা শুনিয়ে দেয়। অবশেষে যে আশা নিয়ে কথাটা বলতে চেয়েছিলাম, সেটি আর আলোর মুখ দেখে না।

কবিতা: এই কথাগুলো কি তুমি আমায় শোনালে?

বিজ্ঞাপন

অনন্ত: আচ্ছা কবিতা! মানুষের একজীবনে কতখানি অর্থ-বিত্ত দরকার? আমার কাছে তো খোলা আকাশের নিচে বসে পূর্ণিমার চাঁদের আলো উপভোগ করা কিংবা পাহাড়ের কাছে বসে উদাস নয়নে প্রকৃতি উপভোগের মতো বিষয়গুলোকেই অকৃত্রিম সুখের অনুষঙ্গ বলে মনে হয়। কখনো ফ্ল্যাট, এসি, বাড়ি-গাড়ি, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, দামী ঝলমলে আলোর মাঝে সুখ খুঁজে পাই না। এমনকি আমার লেখা একটা কবিতাকে আমি জীবনের যতখানি প্রাপ্তি মনে করি, আমার কাছে সুউচ্চ প্রাসাদের অধিকারী হওয়াকে কখনোই জীবনের প্রাপ্তি মনে করি না।

কবিতা: অনন্ত, তুমি এখনো জীবনের বাস্তবতাকে হয়তো খুব কাছ থেকে দেখোনি, তাই তোমার জগৎ আর আমার জগৎটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেদিন জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হবে, সেদিন এসব সৃষ্টিশীল ও নান্দনিক ভাবনাকে শুধুই নিরর্থক আর জীবনের একটা বড় বাধা মনে হবে। কথাটা মনে রেখো।

অনন্ত: আমি জানি কবিতা, তোমার কথা না শোনার জন্য আমাকে একদিন হয়তো কড়া মাশুল দিতে হবে। কিন্তু কি করবো বলো? জন্মের পর থেকে যে চিন্তা-চেতনা আর সৃজনশীলতার মাঝে জীবনের মানে খুঁজে পেয়ে অভ্যস্থ, হঠাৎ করেই কি জীবনের সেই লালিত দর্শনটাকে পাল্টে ফেলা সম্ভব?

কবিতা: আমি না মাঝে মাঝে ভেবে কূল পাই না, বিধাতা কেমন করে তোমার মতো মানুষের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো! যার সাথে জীবন দর্শনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এতো বিপরীত অবস্থান!, তাকে নিয়ে কেমন করে আমৃত্যু সংসার করবো!

অনন্ত: কবিতা ছোট বেলা থেকেই আমি রক, ব্যান্ডের গানের বদলে শুনেছি বিচ্ছেদ, দেহতত্ত্ব আর লোকগান। যে গানে খুঁজে পেয়েছি জীবনের মানে ও মায়ার সংসারের নিগুঢ় তত্ত্বকথা। এইগানগুলো শুনে শুনে মনের ভাবখানাও হয়তো এমন হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

কবিতা: অনন্ত, আমি তোমার মতো আধ্যাত্বিক ভাবনায় জীবন কাটাতে চাই না। প্লিজ তুমি একটু সিরিয়াস হও। আমার জীবনটাকে তুমি পুতুল খেলার মতো অল্পতেই নষ্ট করে দিও না। আমি অনেক আশা নিয়ে তোমার হাতটা ধরেছি। আমার স্বপ্নটাকে তুমি এভাবে অবহেলায় মরে যেতে দিও না।

অনন্ত: কবিতা তোমার জীবনটা নষ্ট হোক, এটা আমি স্বপ্নেও কখনো ভাবি না। তোমার আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। কিন্তু পার্থক্য শুধু আমাদের লালিত জীবন দর্শনে আর জীবনের বিচিত্র সিলেবাসে!

সারাবাংলা/এসবিডিই

কথোপকথনে জীবনের বিচিত্র সিলেবাস! গল্প সাহিত্য সুমিত বণিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর