বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে স্বাধীন স্বদেশ
৬ মার্চ ২০২৪ ২১:২৯
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে মহানায়ক, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা। বাঙালি জাতির পিতা তিনি। তার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের পথ ধরেই বাঙালি তাদের নিজ আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করে। তার নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি অনুপ্রাণিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ তথা পাকিস্তানি আধিপত্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করেছে আমাদের স্বদেশভূমিকে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তিনি। তিনি বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার। তিনি বাঙালি জাতির গৌরব এবং অহংকার। এদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে সাহসী মহামানব দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেন, যৌবনের একটা দীর্ঘ সময় জেলে কাটান। তিনি পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষুকে ভয় পাননি। অধিকার আদায়ে প্রতিটি সংগ্রামে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছেন এবং সফল হয়েছেন। রাজনৈতিক সহকর্মী ও সহযোদ্ধা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানের মতো মহৎ, সৎ, মহান দেশপ্রেমিকদের পেয়েছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তি সংগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে চৌকস নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ক্যারিশমেটিক লিডার ছিলেন বলেই তিনি পাকিস্তানি সামরিক চক্রের দুরভিসন্ধি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। পাকিস্তানি শাসক চক্রের বিমাতাসুলভ মনোভাব বুঝতে পেরে তিনি ৪৭-এর দেশভাগের পর থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। সেই স্বপ্ন সামনে রেখে ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অগ্রসর হন তিনি। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচি পেশ করেন। এই ৬ দফাই ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ এবং বাঁচার দাবি। বাংলার মানুষ তাকে ভূষিত করেছিল বঙ্গবন্ধু উপাধিতে।
১৯৭০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু তৎকালীন সামরিক গোষ্ঠী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা শুরু করে দেয়। সেই অবস্থা দেখে বাঙালিরা নিজেদের জোটবদ্ধ করতে থাকে স্বাধীনতার জন্য। যার বদৌলতে পূর্বঘোষণা ছাড়াই পহেলা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করা হয়। এই ঘোষণায় পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ঢাকা পরিণত হয় বিক্ষোভের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু ৫ দিন হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সারাদেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পাকিস্তান সামরিক সরকার কার্ফু জারি করে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলতে তৎপরতা চালায়। কিন্তু আপামর জনসাধারণের আন্দোলনের মুখে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়ে এবং সকল অপকর্মের নিশানা ভণ্ডুল হয়ে যায়। ২ মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বহুল ঘটনা আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। ২ মার্চ হরতাল চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তলিত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তান সরকার ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করে। কিন্তু গোপনে ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে থাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো। ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয় পল্টন ময়দানে। ঐ দিনই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় সমবেত কণ্ঠে। মার্চের ৪ তারিখ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হয়। সারাদেশে পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ জনগণের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়। চট্টগ্রামে দু’দিনে ১২০ জন নিহত এবং ৩৩৫ জন আহত হয়। খুলনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২২ জন আহত এবং ৬ জন নিহত হয়। এ রকমভাবে দেশের সব প্রান্তেই মুক্তিকামী জনগণের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের কারণেই দেশব্যাপী জনগণ মুক্তির স্বাদ নিতে বঙ্গবন্ধু আহুত হরতালকে সর্বাত্মকভাবে পালন করেন।
একাত্তরের ৭ মার্চের বিকেলটা ছিল অন্য রকম। এক পাতাঝরা বসন্তের বিকেল ঘুরিয়ে দেয় ইতিহাসের মোড়। সেদিন বেলা তিনটা বিশ মিনিটে দেওয়া উনিশ মিনিটের সেই বক্তৃতায় পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস ও বাঙালিদের অবস্থা, অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি ও বিস্তারিত কর্মসূচি, সারাবাংলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা, শত্রু মোকাবিলায় গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন ইত্যাদি তুলে ধরার পর তিনি ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ এই অসাধারণ ভাষণে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন, ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ প্রমাণ করে, দেশ জন্মের প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছে। তিনি বাঙালিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি সেটি আগেই বুঝে গিয়েছিলেন এই ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তিনি বুঝেছিলেন, জাতির মুক্তির জন্য যুদ্ধ আসন্ন। আর সে যুদ্ধে তিনি উপস্থিত নাও থাকতে পারেন। আবার গ্রেফতার করা হতে পারে তাকে। বোধ হয় সে কারণেই তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইলো। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে।.. জয় বাংলা।’ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনকের এ ভাষণটিই ছিল বজ্র কঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। এই ভাষণের ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে এক অবিসংবাদিত ক্যারিশমেটিক নেতার পরিচয়। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ‘শহিদের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে আরটিসিতে শেখ মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। অ্যাসেম্বলি কল করেছেন, আমার দাবি মানতে হবে প্রথম। সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে। তারপরে বিবেচনা করে দেখব, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না।’ বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে আরও বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ সেই অধিকার তিনি এনে দিয়েছিলেন এদেশের মানুষকে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ইতোমধ্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিশ্বে অর্জন করে নিয়েছে নিজেদের শক্তিশালী সম্মানজনক স্থান। নতুন প্রজন্ম ডিজিটাল সুবিধা পেয়েছে। ওয়াইফাই, অ্যান্ড্রয়েড গেজেট ও স্মার্টফোনে ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিও হাতের মুঠোয় দেখা ও শোনার নতুন সহজ সুবিধা পেয়েছে। ভিডিও দেখার পর মনে সত্যিই অবাক লাগে! একটি ভাষণ একটি জাতির মানসে কতো গভীর ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। একাত্তরে ৭ মার্চের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অল্পবিস্তর ধারণা যাদের রয়েছে, একমাত্র তাদের পক্ষেই বিষয়টি ভালো করে সঠিকভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হবে। ভাষণটি শুরু হওয়ার আগে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল রেসকোর্স ময়দান। যার যা কিছু ছিল তা নিয়ে দূরদূরান্ত পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে এসেছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। দেশের আনাচে-কানাচে যারা রেডিওর সামনে কান পেতে বসেছিলেন। সবাই শুধু যে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই ভাষণ শুনেছেন। শুধু তা কিন্তু নয়। পরতে পরতে অনুধাবন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হাত মুখের তেজোদৃপ্ত, চেতনাদীপ্ত নড়াচড়া, কী তার গর্জন! কী বিপুল তার শক্তিমত্তা! বাংলার নীরিহ নির্বিরোধ মানুষকে আশ্চর্য এক ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করে ফেলে সেই ভাষণ। মুক্তিযুদ্ধের চরম অনিশ্চিত সেই দিনগুলোতে জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বজ্রকন্ঠই আমাদের সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। কারণ জনতার হৃদয়ের কথা মূর্ত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে। এই ভাষণ উদ্দীপিত করে দিশেহারা বিপন্ন জাতিকে। হাজার বছরের পরাধীনতার জোয়াল ছুঁড়ে ফেলে স্বাধীনতার সোনালী সোপানে উত্তরণের পথে ভাষণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। সংগঠন ও নেতৃত্বের ক্যারিশমা তথা জাদুকরী ক্ষমতার সফল মিথস্ক্রিয়ার একটি অভূতপূর্ব প্রদর্শনী ছিল ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
এসবের মানে কী? মানে হলো, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কঠিন কাজ আগেই সাধিত হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর জাদুকরী নেতৃত্বে। আর কে না জানে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা গেলে যে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। যার প্রমাণ দেখা যায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত দিনগুলোতে। ৭ মার্চের উদ্দীপনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে এবং মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন হয়েছে। মানতেই হবে, ৭ মার্চের ভাষণে দেওয়া নির্দেশ মতো মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে জীবন বাজি রেখে। ওই ভাষণই ছিল মুক্তিযুদ্ধের নৈতিক বলের প্রধান উৎস এবং যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতি ও কৌশল। এক কথায় ৭ মার্চের ভাষণ জনগণের ঐক্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গবেষকদের মতে, প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল অত্যন্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ ও কৌশলী। বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত। ভাষণটি ছিল তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও অলিখিত। নিজের মতো করে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। চমৎকারভাবে কবিতার মতো করে বলেছেন। ভাষণের প্রতিটি শব্দ নির্বাচন করেছিলেন অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনের নিরিখে। কাব্যিক গুণ-শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাস, যা হয়ে ওঠে গীতিময় ও চতুর্দিকে অনুরণিত।
নিউজউইক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ নিবন্ধ ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিক্স’ এ উল্লেখ করা হয়েছে ‘৭ই মার্চের ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয়, একটি অনন্য কবিতা।’ সত্যিই একটি অমর কবিতার সব গুণ রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে। কাব্যগুণসম্পন্ন বলেই আজও হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুখস্থ বলতে পারে। এই ভাষণের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দেশাত্মবোধ, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির এবং লক্ষ্য অর্জনে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। সময়ের পরিসীমায় গণ্ডিবদ্ধ না থেকে তা হয় কালোত্তীর্ণ ও প্রেরণাদায়ক। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রেখেছে এ ভাষণ। এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রস্তুত করেছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যেমন প্রেরণা জুগিয়েছে। তেমনি এখনো নতুন প্রজন্মকে প্রেরণাদীপ্ত করে। যুগ যুগ ধরে আগামী দিনেও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্যারিশমেটিক একজন নেতা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ একটি ভাষণেই তিনি গোটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। একটি ভাষণে মুগ্ধ করানোর, ঐক্যবদ্ধ করানোর এমন ক্যারিশম্যাটিক নেতা, স্বপ্নের জাদুকর আগে আর কে, কখন এসেছিলেন?
স্বাধীন বাংলার এমন অপরাজেয় মহানায়ক ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু মহামানব। মহামানবের মৃত্যু নেই। তারা বেঁচে থাকেন কর্মের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু ও তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, জনগণের প্রতি ভালোবাসা আর একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। যতদিন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পৃথিবীর বুকে পরিচিত থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথিবীর বুকে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক
সারাবাংলা/এজেডএস