ভয়ংকর
৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৫৫
কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি শেষ হয়েছে। আকাশটা পরিষ্কার হয়ে আসছে।
সুনয়না একটা ছাউনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। বৃষ্টির শেষ হতেই নেমে পরল রাস্তায়। তার আজ মন ভাল নেই। পায়ের চটি জুতার দিকে তাকাতেই সে একটু ভয় পেলো। কারণ যেকোনও সময়ে জুতোটা ছিড়ে যেতে পারে। তার স্বামী তার স্বামী পাপন তাকে খুব ভালবাসে। কিন্তু তার ব্যবসায়িক অবস্থা ভাল না। ছোটখাটো একটা মুদির দোকান তার। সুনয়না একটি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করে। সে ছোটখাটো তবে তার চেহারাটি ভারি মিষ্টি।
মুচির দোকানে গিয়ে জুতোটা ঠিক করে, সুনয়না অফিসে এলো। তার বস ইমরান মিয়া, একজন মিথ্যাবাদী।
তিনি জন্মগ্রহণ করার পর থেকেই হয়তো কোনদিন সত্য কথা বলেননি। এর সাথে তার আরেকটি খারাপ গুণ আছে তিনি যতক্ষণে চোখ খোলা রাখবেন অর্থাৎ ঘুমাবেন না ততক্ষণ পরনিন্দা করে থাকেন। সামনাসামনি সব সময় ভাল ব্যবহার করলেও উন্নয়নের বস পিছনে পিছনে সারাক্ষণ তার সমালোচনা করে, অফিসের বিভিন্ন মানুষের কাছে।
সে মনে খুব ব্যথা পায়। স্বামীকে বিষয়গুলো সে শেয়ার করতে পারেনা। কারণ তার স্বামীর আর্থিক অবস্থা ভাল না, সে কারণে মনে কষ্ট আছে।
সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা কাজ করছিল সুনয়না। তাকে অফিসের বিভিন্ন মিটিংয়ে ডাকা হয়। ঠিক তেমন একটা মিটিংয়ে গিয়ে উপস্থিত হল সে। খুব কাজের চাপ ছিল। হঠাৎ করে তাদের অফিসের এইচআর এর হেড বলে উঠলো-
-মিটিংয়ে দেরি করে এলেন কেন? আর আপনার মত মহারথী মিটিংয়ে থাকলে আমার তো কোন প্রয়োজনই নেই।
-স্যার আমাকে তো কেউ ডাকেনি, এখন ডাকলো তাই এলাম।
-সব মিটিংয়ে থাকেন, কী কারণে কোন কাজ তো করেন না! আপনার বস তো অনেক কাজ করে। আপনি কোন কাজ করেন না।
সারাদিন কাজ করার পরও এত বড় পুরস্কারটা মেনে নিতে পারলো না, সুনায়না। তার চোখে জল এলো।
এরপর এইচআরের হেড আবার শুরু করলেন-
-দেব নাকি বদলি করে? যেখান থেকে এখানে এসেছিলেন সেখানে আবার পাঠিয়ে দেই। আপনাকে মিটিংয়ে কেন ডাকা হয় কোন ইনপুট নেই।
চোখের কোনায় জল চিকচিক করছে ওর। এরপর তার পাশে থাকা আর এক বস্তা তার সঙ্গে গলা মিলাতে শুরু করল।
সুনয়না অফিসের নিজের রুমে এসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। কোন বিষয় শেয়ার করার মতো তার কেউ নেই। সে বুঝতে পারলো এটি ইমরান হাসানের কাজ। তিনি প্রতিনিয়ত অফিসের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তার সম্পর্কে এমন কুৎসা রটনা করে আসে। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। সুনয়না কাজ ভালবাসে, আকাশ ভালবাসা, পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর সবই ভালবাসা তবে ভালবাসা না শুধু মিথ্যা আর সমালোচনা করা।
এভাবেই চলতে থাকে। তার বস হয়তো তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে।
সে সিদ্ধান্ত নেয় আর চাকরি করবে না। তার বসের অত্যাচারে সেখানে টিকতে পারছে না। কিন্তু সে যাবে কোথায়!
-তোমার মন খারাপ?
-পাপন, চলো আমরা দুইজন মরে যাই!
কিছুক্ষণ পৃথিবীর বাতাস ভারী হয়ে আসে।
-তাই হোক। যারা এই পৃথিবীতে মিথ্যা বলতে পারে না, তেলবাজি করতে পারে না তাদের বাঁচার কোন অধিকার নেই।
একটা বার, আমার মায়ের সাথে কথা বলি।
তাদের দুজনার মা গ্রামে থাকেন। পাপন তার মাকে ফোন করতে ওপাশ থেকে মিহি গলায়, মা বললেন।
-তোমার কি মন খারাপ?
-হ্যাঁ মা, মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
-ফালতু কথা বন্ধ কর গ্রামে আসো জমি চাষ কর। বৌমাকে শক্তভাবে কাজ করতে বল, এত নরম হলে হয়!
জীবনটা তো যুদ্ধক্ষেত্র।
সেদিন থেকে সুনয়না এবং পাবলু, ঘুরে দাঁড়ালো। মৃত্যুর হাতছানি থেকে রক্ষা করলে নিজেদের।
সারাবাংলা/এসবিডিই