বেলার প্রতিশোধ
৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩৭
এক সময় উইলিয়াম নামে একজন মানুষ ছিলেন। কাছের মানুষেরা তাকে উইল বলে ডাকতেন। তিনি একজন ব্যাংকার ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি এলাকে বিয়ে করেছিলেন। একটি কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন এলা। ১৯৯০ সালের ৮ নভেম্বর যখন তার প্রথম ছেলে জন জন্মায়, তখন এলা তার চাকরিটা ছেড়ে দেন। দুই বছর পর ১৯ মে বেলা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তার নাম রাখা হলো বেলা।
উইলের পরিবারের সবাই খুব খুশি ছিল। জন বেলার কাছে খুব দায়িত্বশীল ভাই হয়ে ওঠে। সে তার বোনকে খুব ভালবাসত। উইল এবং এলাও তাদের সন্তানদের নিয়ে চমৎকার দিন কাটাচ্ছিলেন। বাচ্চারা আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে।
কিন্তু ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর জন বেলাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল। বোনকে সে বলল, ‘তুমি কি জানো, গ্রিঞ্চ ক্রিসমাসে বাচ্চাদের খায়?’
বেলা বলল, ‘না, আমি জানি না’।
ভাই-বোনের কথা কানে আসতেই এলা জন কে বলল, ‘যদি তুমি আবার বেলাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা কর তাহলে তোমাকে সারাজীবনের জন্য গ্রাউন্ডেড করা হবে। তখন তুমি স্কুলের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় নিজের রুমে কাটাবে। তোমাকে কোনো ডিভাইসও ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না’।
জন বেলাকে ভয় দেখানো বন্ধ করে ঘুমাতে গেল। কিন্তু শুয়ে শুয়েও সে বেলাকে ভয় দেখাচ্ছিল। ভয় পেয়ে বেলা কাঁদতে শুরু করে। মেয়ের কান্না শুনে এলা ঘরে এসে জনকে আবারও ধমক দেয়। তারপর জন বেলাকে ভয় দেখানো বন্ধ করে এবং তারা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন সকালে তারা ক্রিসমাসের আনন্দে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে নেয়। বেলা খাওয়ার সময় উইলকে বলল, ‘বাবা, তুমি কি জানো কাল রাতে জন আমাকে ভয় দেখাচ্ছিল?’ মেয়ের কথা শুনে উইল হেসে বেলাকে আদর করে অফিসে চলে যায়।
বাবা অফিসে যাওয়ার পর জন আর বেলা মায়ের কাছে যায় ক্রিসমাসের উপহার নিতে। মায়ের কাছ থেকে জন এবং বেলা উপহার নিয়ে প্যাকেট খুলতে শুরু করে। বেলা একটি বার্বি পেয়েছে এবং সে খুব খুশি ছিল। জন পেয়েছে একটি পিএস টু। সেও খুব খুশি হলো। তারা দুজনেই মাকে ধন্যবাদ দেয়। এলা বাচ্চাদের বললেন, ‘তোমরা আমার সূর্য ও চাঁদ। তোমাদের অনেক ভালোবাসি।’ মায়ের আদর নিয়ে তারা তাদের রুমে চলে গেল।
রাতে এলা বাচ্চাদের বলেছিল, ‘দুঃখিত বাচ্চারা, তোমাদের বাবা আজ বাসায় ফিরতে দেরি করবেন’।
বাবার দেরি হওয়ার কথা শুনে তাদের মন খারাপ হলেও কিছু বলল না। মায়ের সাথে গল্প করে তারা ঘুমাতে গেল। নিজেদের রুমে গিয়ে জন আবারও বেলাকে ভয় দেখাতে শুরু করল। বলল, ‘গ্রিঞ্চ তোমাকে খেয়ে ফেলবে’। বেলা কিন্তু এবার ভয় পেল না।
কিন্তু পেছন থেকে গ্রিঞ্চের মতো দেখতে কেউ একজন এগিয়ে এলো। সেই মুখটা দেখে বেলা চিৎকার করে ওঠে। বেলার চিৎকারে এলা নিজের রুম থেকেই জনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তুমি যদি বেলাকে ভয় দেখাও আমি তোমার কনসোল নিয়ে যাব’। জন বললেন, ‘ঠিক আছে মা, দুঃখিত’।
জন বেলাকে ভয় দেখানো বন্ধ করলো। বেলা বলল, ‘জন, আমাকে ভয় দেখাবে না’। ঠিক তখনই বেলা একটা সবুজ হাত দেখতে পেল। হাতের পিছনে আরও একজনকে নীচে থেকে আসতে দেখলো, যার রঙ সবুজ এবং দেখতে অনেকটা গ্রিঞ্চের মতো। সে কুঁকড়ে যায় আর চিৎকার করে মাকে ডাকে। মেয়ের চিৎকারে এলা রুমের ভিতরে আসেন। এলা রুমে ঢুকতেই গ্রিঞ্চ তাকে আক্রমণ করে। গ্রিঞ্চ এলা ও জনকে মেরে ফেলে। শুধু বেলা একা বেঁচে ছিল।
মা ও ভাইকে হারিয়ে বেলা কাঁদছিল। এমন সময় উইল বাড়িতে আসেন এবং বেলা উইলকে টেনে বাইরে নিয়ে যায়।
বেলা তার বাবাকে বলল, “বাবা, বাড়িতে গ্রিঞ্চ আছে”। কিন্তু উইল বলেছিলেন, ‘হানি, যদি বাড়িতে খারাপ লোক থাকে তবে তোমার মা এবং জনকে বাঁচাতে হবে’। বেলা উইলকে বলল, ‘না বাবা, সে একজন দানব গ্রিঞ্চ’। কিন্তু উইল মেয়ের কথা বিশ্বাস করলেন না। বাড়ির ভিতরে কে আছে দেখার জন্য ভিতরে গেলেন এবং ভিতরে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। এরপর তাদের এক প্রতিবেশী বেলাকে দত্তক নেন।
কয়েক বছর পর… ২৫ ডিসেম্বর, ২০১২। বেলার বয়স এখন ২০ বছর। ক্রিসমাসের রাত। বেলা গ্রিঞ্চকে গুলি করার জন্য বন্দুক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। ঘণ্টাখানেক পর, যখন সে বাড়ি যাচ্ছিল, গ্রিঞ্চকে দেখতে পেল। বেলা আনমনে বলছে, ‘এটি আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ’। তারপরে সে তার বন্দুক লোড করে। কিন্তু গ্রিঞ্চ তাকে দেখে ফেলে। বেলাকে দেখে গ্রিঞ্চ বেলার দিকে ছুটে আসে। কিন্তু ঠিক সময়েই বেলা গ্রিঞ্চকে গুলি করে নিজের জীবন বাঁচায় এবং বলে, ‘আমার মতো কেউ আর তাদের পরিবারকে হারাবে না’।
* আনান মুস্তাফিজ-এর লেখা Bella Revenged on Grinch গল্পের অনুবাদ
সারাবাংলা/এসবিডিই