Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অন্য এক আঁধার (দ্বিতীয় পর্ব)


৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪৩

। তিন।

সময় গড়াতে থাকে।
খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে আসে রনির।
কিন্তু সে দুঃসংবাদটা শোনায় না।

এদিকে সুমি অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত। এর মধ্যে দু-তিনবার তাগাদাও দিয়ে ফেলেছে বলার জন্য। কিন্তু সে শুধু খেয়েছেই। দুঃসংবাদটা শোনানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার যেটা, তার চেহারায় দুঃখ বা বিষন্নতার কোনও ছাপ দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে আনন্দেই আছে। আনন্দে না থাকলে বাসায় ঢোকার আগে দুষ্টুমিটা করলো কীভাবে? এত নিশ্চিন্তে খাচ্ছেই বা কীভাবে? বুক ভেঙে যাওয়ার মতো কোনও দুঃসংবাদ যে পেটে থাকবে, সে পেটে তো ভাত যাওয়ার কথা না?

রনি খাওয়া শেষ করে। তারপর বেসিনে যায় হাত ধোয়ার জন্য। সুমিও যায় তার পেছন পেছন। হ্যান্ডওয়াশটা এগিয়ে দেয়। এরপর হাত ধোয়া হয়ে গেলে এগিয়ে দেয় গামছাটা। রনি মুখ মুছে বলে- সেবার মান অত্যন্ত পছন্দ হয়েছে। এখন বলো বকশিশ কতো চাও। যা চাইবে, তাই পাবে। চাও, চাও, চেয়ে ফেলো। চক্ষুলজ্জার কারণে বকশিশ নেওয়ার এত বড় সুযোগ হেলায় হারাবে না। তাহলে কিন্তু আফসোস করতে হবে।
: দুঃসংবাদটা কি আমাদের বাড়ির? প্রচ- মনমরা হয়ে প্রশ্নটা করে সুমি।
: জি?
: কেউ কি মারা গেছে? কে মারা গেছে? বলো, আমি মন খারাপ করবো না। মানুষ মরণশীল। অতএব কারো মৃত্যুর সংবাদ শুনলে মন খারাপ করার কিছু নেই।
: তোমার কথার আগা-মাথা কিছুই কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।
: কেন শুধু শুধু রহস্য করছো? দুঃসংবাদটা দিয়ে ফেললে কী হয়?
: দুঃসংবাদ থাকলে তো দেবো?
: মানে?
: মানে আমার স্টকে কোনও দুঃসংবাদ নেই। তবে ফার্স্টক্লাস একটা সুসংবাদ আছে। বলবো?
: দেখো, ফান করার মতো বহু বিষয় আছে। দয়া করে একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে ফান করো না। এটা ঠিক না। প্লিজ।

বিজ্ঞাপন

রনি এবার সুমিকে নিয়ে বেডরুমে যায়। খাটে বসায়। তারপর তার সামনে বসে বলে- আসলেই আমার স্টকে কোনও দুঃসংবাদ নেই। যা যা বলেছি, মজা করার জন্য বলেছি। আর মজা মানুষ কখন করে? যখন মন অনেক বেশি ভাল থাকে। আর মন অনেক বেশি ভাল এমনি এমনি থাকে না। পেছনে কারণ থাকতে হয়। এই মুহূর্তে কারণ হচ্ছে সুসংবাদটা। বললাম না স্টকে ফার্স্টক্লাস একটা সুসংবাদ আছে?

সুমির বিশ্বাস হয় না সত্যিই সুসংবাদ আছে বা থাকতে পারে। আবার অবিশ্বাসও হয় না। তাই সে তাকিয়ে থাকে কিছুটা আগ্রহ আর কিছুটা অনাগ্রহ নিয়ে। রনি তার উরুতে চিমটি কাটে। বলে- আরে এত মন খারাপ করে থেকো না তো! সুসংবাদ শোনার আগে নিজের মধ্যে হ্যাপি হ্যাপি মুড নিয়ে আসতে হয়। নইলে শুনে আরাম পাওয়া যায় না। হাসো তো, হাসো, হাসো। আরে হাসো না! না হাসলে কিন্তু বলবো না।
: বলো।
: তাহলে তুমি হাসবে না বলেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছো?
: তুমি বলো। যদি সত্যিই সুসংবাদ হয়, তাহলে বলে-কয়ে হাসাতে হবে না। হাসি এমনি এমনি চলে আসবে।
: আমরা ঘুরতে যাচ্ছি।
: সরি, এখন আর বের-টের হতে পারব না। ভাল লাগছে না।
: কী বুঝলে আর কী বললে?
: বললাম এখন ঘুরতে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। কেমন যেন ঘুমঘুম লাগছে। হয়তো আগে আগে শুয়ে পড়তে পারি।
: তুমি আসলেই একটা বোকা। বোকা না হলে আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করতে। শোনো, আমরা ঘুরতে যাচ্ছি বলতে এখনই যাচ্ছি না। আশপাশে যে কোথাও যাচ্ছি, তাও না। আমরা যাচ্ছি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে।

এবার সারা মুখ হাসিতে ভরে যায় সুমির। সে জড়িয়ে ধরে রনিকে। তারপর কাঁধে কামড় বসিয়ে দিয়ে জানতে চায় কেন দুঃসংবাদের কথা বলেছিল। কেন ভয় পাইয়ে দিয়েছিল তাকে। রনি বলে- হুটহাট সুসংবাদ দিয়ে ফেললে সুসংবাদের মজাটাই থাকে না। এই জন্য সময় নিতে হয়। সম্ভব হলে নাটক করতে হয়। আমিও তাই নাটক করার ক্ষুদ্র প্রয়াস চালালাম। আশা করা যাচ্ছে আমার প্রয়াসটা মোটামুটি ভালই সার্থকতা পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সুমি আবার কামড় বসাতে চায় রনির কাঁধে। কিন্তু এবার সে তাকে থামিয়ে দেয়। আর বলে- এখনকার মতো কামড়াকামড়ি বন্ধ। এটা অন্য সময়ের জন্য রেখে দিলাম। কোন সময়ের জন্য বুঝতে পারছো তো? আরে ওই যে লাইট নেভানোর পরের সময়টার কথা বলেছিলাম না? তখনকার জন্য। এখন কথা হতে পারে প্ল্যান-প্রোগ্রাম নিয়ে। কক্সবাজার কখন যাবো, কীভাবে যাবো, কোন হোটেলে উঠবো, কয়দিন থাকবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
: প্ল্যান-প্রোগ্রাম পরেও করা যাবে। আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও। হঠাৎ করে তোমার এই পরিবর্তন কেন? খানিকটা পিছিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে বলে সুমি।
: পরিবর্তন! পরিবর্তনের কী দেখলে? আমি তো আগের মতোই আছি। আগেও পা দিয়ে হাঁটাচলা করতাম, এখনও পা দিয়েই করছি। হাত দিয়ে না। আগেও মুখ দিয়ে কথা বলতাম, এখনও মুখ দিয়েই বলছি। নাক, কান বা মাথা দিয়ে না। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হলো?
: পরিবর্তনটা হয়েছে তোমার মনে। কাজ ছাড়া দুনিয়ার কোনও কিছুর প্রতি যার খেয়াল নেই, সে কিনা আজ আমাকে সিনেমা দেখার অফার দিয়েছে! আর এখন কিনা দিচ্ছে কক্সবাজারের অফার! ভাবা যায়? কীভাবে সম্ভব?
: এমনভাবে বলছো, যেন খারাপ কোনও অফার দিয়ে ফেলেছি। বাংলায় যেটাকে বলে কুপ্রস্তাব। অনেকটা কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলের নির্জন কক্ষে রাত কাটানোর প্রস্তাবের মতো ব্যাপার-স্যাপার আরকি।
সুমি গালে টোল ফেলে হাসে।
জানায়, তার বিস্ময় এখনও কাটছে না।
মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে।

তারপর আবারও জানতে চায় রনির মধ্যে হঠাৎ এই পরিবর্তন কেন আসলো। কিন্তু উত্তর আদায় করতে পারে না। হয়তো পারতো, যদি তার ফোন না আসতো। রনি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার। সে মোবাইলটা নিয়ে চলে যায় বারান্দায়। যেহেতু বাসার ভেতরে প্রায় সময়ই নেটওয়ার্ক ঝামেলা করে। কোনও কোনও সময় কথা প্রতিধ্বনিত হয়, কোনও কোনও সময় কেটে কেটে যায়। যে ঝামেলাগুলো বারান্দায় গেলে আর থাকে না।

মিনিট দুয়েক পরেই ফিরে আসে রনি। তাকে চিন্তিত দেখায়। সুমি জানতে চায় কে ফোন করেছিল। রনি কিছু বলে না। শুধু তার দিকে একবার তাকায়। তারপর বসে পড়ে খাটে। সুমি এগিয়ে আসে। আর তার পাশে বসে আবারও জানতে চায় কে ফোন করেছিল। এবার সে বলে- রাখাল বালকের ঘটনার মতো ঘটনা ঘটে গেল। মজা করার জন্য বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করলো। তারপর একদিন ঠিকই বাঘ চলে আসলো।
: কী হয়েছে একটু বলবে?
: মজা করে বলেছিলাম, দুঃসংবাদ আছে। এখন সত্যি সত্যি দুঃসংবাদ শুনতে হলো।
: কিসের দুঃসংবাদ? কার দুঃসংবাদ?
: খালার খুব অসুখ।
: কোন খালা? তোমার আপন খালা তো তিনজন। আবার প্রতিবেশী খালারাও আপনের মতোই।
: নাসিমা খালা।
: কী অসুখ?
: কিডনি সমস্যা। খুব ব্যথা নাকি। সম্ভবত পাথর হয়েছে। খুব সকালে ঢাকায় নিয়ে আসবে। মিরপুরের একটা হাসপাতালে ভর্তি করবে। আমাকে যেতে হবে।
রনি মন খারাপ করে বসে থাকে। সুমি তাকে সান্ত¡না দেয়। বোঝায়, বিপদ-আপদ আসতেই পারে। অধৈর্য হলে চলবে না। ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। রনির মন তবু ভাল হয় না। এর মধ্যেই আবার কেউ তাকে ফোন করে। এবার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সে চমকে ওঠে। আর দ্রুত চলে যায় বারান্দায়।

। চার।

পরদিন বিকেল।
সুমি তৈরি হচ্ছে বাইরে বের হওয়ার জন্য।
হাসপাতালে যাবে সে।

একা যাবে না, সরাসরিও যাবে না। নির্ধারিত একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে, রনি আসবে অফিস থেকে, তারপর একসঙ্গে যাবে। ইতোমধ্যে খবর পাওয়া গেছে, অপারেশনের দরকার নেই। তবে রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হবে আনুমানিক তিনদিন। কিছু টেস্ট এর মধ্যেই করানো হয়ে গেছে। আর গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল কয়েকটা টেস্ট করানো হবে কাল। এরপর জানা যাবে, ঠিক কবে মুক্তি মিলছে হাসপাতাল থেকে।

গতরাতে প্রথম ফোনটা পাওয়ার পর রনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, খালাকে দেখতে একাই যাবে। কিন্তু দ্বিতীয় ফোনটা পাওয়ার পর সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি। কারণ, তাকে নাকি জানানো হয়েছে, খালার সঙ্গে রাতে ঘুমানোর মতো কেউ আসছে না। যারা আসছে, সবাই পুরুষ। খালু, খালাত ভাই এবং তাদের এক প্রতিবেশী। তখন নাকি রনিই আগ বাড়িয়ে বলেছে- কোনও চিন্তা করবেন না, আমি সুমিকে নিয়ে আসবো। দরকার হলে সে প্রতিরাতেই খালার সঙ্গে থাকবে।
হাসপাতালে থাকার অভিজ্ঞতা নেই সুমির। তাই সে আপত্তি জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু রনির মন আরও বেশি খারাপ হয়ে যাবে- এমন শংকায় কিছু বলেনি। এরপর নিজেকে বুঝিয়েছে, হাসপাতালে থাকার অভিজ্ঞতা নেই তো কী হয়েছে? অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে না? অভিজ্ঞতার শূন্য ঝুলি নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলে চলবে? চলবে না। সে ঠিক করেছে, যতদিন থাকতে হয়, হাসপাতালে থাকবে। নিজের মায়ের মতো যত্ন নেবে খালার।

যথাসময়েই বাসা থেকে বের হয় সুমি। লিফটের কাছে যায়। কিন্তু যখন দেখে লিফট নয়তলায় আটকে আছে, তখন আর দাঁড়িয়ে থাকে না। হাঁটা দেয় সিঁড়ি ধরে। তৃতীয়তলার বাসিন্দা সে। এখান থেকে নিচতলায় নামতে কয়টা সিঁড়িই বা ভাংতে হয়! সুমি তাই লিফটের উপর ভরসা কম করে। নামার সময় তো বটেই, কোনও কোনওদিন ওঠার সময়ও উঠে যায় দৌড়ে। তার ভাল লাগে। যেহেতু ব্যায়ামটা হয়ে যায়।

সিঁড়ি থেকে গেটের দিকে এগোতে শুরু করতেই গতকালের কথা মনে পড়ে সুমির। তার হাঁটার গতি কমে যায়। সে দেখার চেষ্টার করে রাস্তার ওই জায়গাটায় আজও কেউ আছে কি না। তাকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে এগিয়ে আসে দারোয়ান। কাউকে খুঁজছে কিনা জিজ্ঞেস করে। সুমি ভ্যাবাচেকা খেতে গিয়েও সামলে নেয় নিজেকে। বলে- একটা রিকশা দরকার ছিল। বের হবো তো! আছে নাকি আশপাশে? একটু দেখেন তো!
: আইচ্ছা, দেখতেছি। ম্যাডাম, একটু কথা ছিল।
: কী?
: গতকালকা একটা পোলা ওই জায়গাটায় দাঁড়ায়া বারবার আপনাদের বাসার দিকে তাকাইতেছিল। কোন জায়গাটার কথা বলতেছি, বুঝতে পারতেছেন তো? ওই যে ওই জায়গাটায়। স্যাররে কথাটা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু উনার তাড়াহুড়ার জন্য সুযোগ পাই নাই।
: সুযোগ পেলেও বলা ঠিক হতো না। কারণ, এই বিল্ডিংয়ে শুধু আমরা থাকি না। আরও বহু ফ্যামিলি আছে, বহু বাসা আছে।
: পোলাটা আপনাদের বাসার দিকে না তাকায়া অইন্য যেইসব বাসা আছে ওইগুলার দিকে তাকাইছিল; এইটাই তো বলবেন?
: অবশ্যই।
: কিন্তু ম্যাডাম, সে আপনাদের বাসার দিকেই তাকাইতেছিল।
: আমাদের বাসার এমন কী রূপ গজিয়েছে যে, আমাদের বাসার দিকেই তাকাবে?
: তা তো জানি না ম্যাডাম। তবে এইটা ঠিক, আপনাদের বাসার দিকেই তাকাইতেছিল। কারণ, সে একবার গেইটের কাছে আসছিল। আইসা বলে কী, রনি সাবের বাসায় যাইবো। আমি তখন বললাম উনি অফিসে। সে বললো উনার ওয়াইফের সাথে কথা বললেও নাকি চলবো। আমি বললাম, এখন না; উনি বাসায় ফিরলে আইসেন। সে তখন আরও কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করলো। তারপরে চইলা গেল। তবে এমনে এমনে যায় নাই। পাড়ার আধাপাগলা কুত্তাগুলা দৌড়াদৌড়ি শুরু করছিল বইলা গেছে। যা বুঝলাম, কুত্তারে খুব ভয় পায়।

দারোয়ানের কথার প্রেক্ষিতে কী বলবে বুঝতে পারে না সুমি। কিন্তু কিছু একটা না বললেও তো সমস্যা। দারোয়ান ভাবতে পারে, সে চিন্তিত, ভীত। যা পরবর্তীতে হয়তো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সুমি তাই কোনওমতে একটা কথা যোগাড় করে ফেলে। বলেও দেয়- আপনার স্যারের অনেক বন্ধু-বান্ধব তো! তাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ হয়তো এসেছিল। এটা নিয়ে এত চিন্তা বা গবেষণা করার কিছু নেই। আপনি আপনার কাজ করেন।
সুমির কথার পিঠে দারোয়ান কিছু বলতে চায়। কিন্তু সে নিজেই গেট খুলে তড়িঘড়ি করে বাইরে বের হয়ে যায় বলে বলার সুযোগ পায় না। তবে রনির কাছে বলবে, এমন সিদ্ধান্ত মনে জিইয়ে রাখে। এদিকে সুমি রাস্তায় নেমেই রিকশা পেয়ে যায়। আর উঠে বসেও পড়ে ঝটপট। তবে স্বাভাবিক হতে পারে না। একটা ভয়, একটা দুশ্চিন্তা তাকে তাড়া করতে থাকে। সে বাধ্য হয় বারবার ডানে-বামে তাকাতে। যদিও রাস্তাভরা মানুষ। কোনও বিপদে পড়ে সাহায্য চাইলে সাহায্যকারীর অভাব হওয়ার কথা না।
: আফায় কি কাউরে খুঁজতাছেন? পেছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্নটা করে রিকশাওয়ালা। আর এতে থতমত খেয়ে যায় সুমি।
: না তো! কাকে খুঁজবো?
: তাইলে বারেবারে এইদিক সেইদিক তাকাইতাছেন কী জন্য?
: আমি আসলে হুডটা ওঠানোর চেষ্টা করছি। হুড না উঠিয়ে বসার অভ্যাস নেই তো!
: হুড কিন্তু টান দিলেই উইঠা যায়। এত তাকাতাকির কিছু নাই। আমি যা বুঝলাম, আপনে তাকাইতাছেন অইন্য কারণে।
: অন্য কারণে মানে! কী বলতে চাচ্ছেন আপনি?
রিকশাওয়ালা তার পান-খাওয়া দাঁত বের করে হাসে। বলে- কিছু মনে কইরেন না আফা। রিকশা চালাইলেও এক্কেবারে গ-মূর্খ না। লেহাপড়া কিছু করছি। এই জন্য দুনিয়ার আউভাউ কিছুডা বুঝি। আইজ কাইল এইরকম ঘটনা প্রায় প্রায়ই ঘটতাছে। বিয়া হইতাছে একজনের সাথে, ঘোরাঘুরি করতাছে আরেকজনের সাথে। আমরা তো আর কানা না! যেই কারণে এইসব ঘটনা চোখে পইড়া যায় আরকি। কী করমু কন! কানা হইলেই মনে হয় ভাল হইতো।

সুমি ধমক দেয় রিকশাওয়ালাকে। নিষেধ করে ফালতু প্যাঁচাল পাড়তে। রিকশাওয়ালা আবার হাসে। তবে দাঁত বের করা হাসি না। বিদ্রুপ ছড়ানো হাসি। আর বলে- হাচা কথা কইলেই আপনেরার শইল জ¦লে। পারলে আমাগোরে ধইরা মারেন। এইটা তো ঠিক না আফা। তারপরেও ধইরা নিলাম, এইটাই ঠিক। কিন্তু আজকা আমি যা দেখলাম, কালকা যখন এইটা আপনের জামাই দেখবো, তখন কী করবেন? তখন কি তারেও দাবড়ানি দিবেন?
: কী বলতে চাচ্ছেন আপনি? রাগে গা জ¦লে গেলেও শীতল গলায়ই প্রশ্নটা করে সুমি।
: না, তেমন কিছু না।
: যা বলতে চাচ্ছেন, পরিষ্কার করে বলেন।
: আফা, যত পরিষ্কার কইরাই বলি, আপনেরার মিজাজ খারাপ হইবোই। কারণ, এইসব ঘটনা জানাজানি হোক, এইটা কেউ চায় না। এরপরেও যখন জানাজানি হইয়া যায়, তখন তারা উল্টা গরম দেখায়। কিন্তু এইসব গরম ঠান্ডা হইতেও সময় লাগে না। জীবনে কত দেখলাম! বয়স তো আর কম হয় নাই। চুল কি হুদাহুদি পাকছে?
: আপনি যা বলতে চান, নির্ভয়ে বলতে পারেন। আমি কিচ্ছু মনে করবো না।
: পোলাডা আপনের কী হয়?

সুমির বুক ধক করে ওঠে। তবু সে স্বাভাবিকভাবেই জানতে চায় কার কথা বলা হচ্ছে। রিকশাওয়ালা বলে- কার কথা বলতেছি, আপনে বুঝতে পারছেন। তারপরেও বলি, আপনে যেমন ডাইনে-বাঁয়ে তাকায়া পোলাডারে খুঁজতেছিলেন, পোলাডাও চিপাগলির মুখে দাঁড়ায়া আপনের দিকে তাকায়া ছিল। বুঝছি, আপনেরা দুইজন দুইজনরে পছন্দ করেন। কিন্তু এক রিকশায় উঠতে শরমাইতাছেন। শরমের কী আছে? উনারে ডাক দেন। কন আপনের পাশে যাতে আইসা বসে। ভয়ের কিছু নাই। আমি কাউরে বলমুও না, ভাড়াও বেশি নিমু না।
রিকশাওয়ালা সিট থেকে নেমে পড়ে। আর সুমি আতংকিত চোখে তাকায় পেছন দিকে।

চলবে….

সারাবাংলা/এসবিডিই

অন্য এক আঁধার (দ্বিতীয় পর্ব) ইকবাল খন্দকার ঈদুল ফিতর ২০২৪ উপন্যাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর