Monday 18 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমি কি রকমভাবে বেঁচে আছি (তৃতীয় পর্ব)


৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৩

প্রাক্তন

শেলীর সাথে দেখা করতে যাবে কি যাবে না এই দ্বিধাদ্বন্ধে গোটা এক সপ্তাহ কেটে গেল। এবং এই এক সপ্তাহে সে কোন কাজে লেখায় মন বসাতে পারেনি দেখে জহির বলল, ‘এভাবে মর্মে মর্মে মরে থাকার চেয়ে দেখা করে একটা হেস্তনেস্ত করে আয়। হয় প্রেম আরো বাড়বে না হলে পুরোপুরি উবে যাবে, এর বেশি কিছু তো আর হবে না।’
এই সপ্তাহে বিজ্ঞাপন সম্পাদক প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় সাহিত্য পাতায় তার একটা নাতিদীর্ঘ কবিতা ছেপে বিজ্ঞাপন রিন শোধ করেছে। কবিতাটা ছাপা হওয়ার পরেই সামিউল কেমন যেন দেখা করতে যাওয়ার জন্য মনে বল পেল। কবিতাটা প্রেম অপ্রেমের কবিতা হলেও অর্ন্তনিহিতভাবে শেলীই লুকিয়ে আছে।
গত এক সপ্তাহে শেলীর সেভ করা নাম্বারটা বার কয়েক ডায়ালে নিয়ে এসে মুর্তির মতো চেয়ে রইলেই কল করার সৎসাহস দেখাতে পারেনি। আর আশ্চর্যের শেলীর কাছেও তার নাম্বার থাকার পরও শেলীও আর একবারও কল দেয়নি, কোন টেক্সট ম্যাসেজও করেনি। দেখা করতে যাওয়ার ইচ্ছেতে সে বাধ্য হয়ে কল দিল। শেলী জানাল মেয়েটা একটু অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে যোগাযোগ করতে পারেনি, এমনকি অফিস থেকে দুদিনের ছুটি নিয়ে বাসায় কাটিয়েছে। তবে এই সপ্তাহে অফিস করবে এবং দুপুর টাইমেই অফিসে আশেপাশে দেখা করলে ভাল হয়। তখন লাঞ্চ ব্রেকের জন্য ঘন্টাখানিক সময় পাওয়া যায়। শেলী একবার তা বাসা কোথায় তা যেমন বলেনি তেমন বাসায় আমন্ত্রণ জানায়নি। হয়তো সে এখন বাসায় নিয়ে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা আপনজন হয়ে ওঠেনি অথবা প্রাক্তন প্রেমিককে বাসায় নিয়ে তুললে পুরানো প্রেম উৎলে উঠতে পারে এই ভয়েও হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

প্রাক্তনের সাথে দেখা করার মত অদ্ভুত ব্যাপার বোধ হয় পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। সে মানুষটি সাত বছর আগেই সে ছেড়ে দিয়েছে বা ছেড়ে চলে গেছে, এই দীর্ঘ সাত বছর পরে তার সাথে দেখা হবে ব্যাপারটা সামিউলের কাছে কিছুটা গোলমেলে ঠেকে। কিন্তু জহিরের বলা কথাটা তার মাথায় থাকে প্রেমিকারা হলো সম্পাদকের মতোই, কাজেই সম্পাদকের সাথে দেখা করার মতো ভাবেই সামিউল ক্লিন শেভড হয়ে মাঞ্জামোঞ্জা মেরে ইনটিন করে পলিশ সু-এ এরকম ভাবে বেরুলো যেন সে প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে না, বিসিএসের ভাইভা দিতে যাচ্ছে। শেলীর অফিস পর্যন্ত বাস গেলেই কেন জানি টাকা খরচ করে একটা ট্যাক্সিক্যাবই ডেকে নিল সে।
অফিসের বাইরে এসে অস্থিরভাবে অপেক্ষা করতে করতে দুটো সিগারেট শেষ করে তৃতীয়টা ধরানোর সময়ই শেলীকে দেখল সামিউল। তাড়াতাড়ি হাতের সিগারেটটা পেলে জুতো দিয়ে পিষে দিল। শেলী চলে যাওয়ার পরে আর কোনদিন সে শেলীকে দেখেনি, শেলীর বিয়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি এই ফেসবুকের যুগেও সে কখনও শেলীকে ফেসবুকে খুজে বের করেনি। কমন ফ্রেন্ড পলাশের মাধ্যমে বিয়ে বাচ্চা স্বামী এসব খোঁজ পেলেও কখনও কোন আগ্রহ দেখায়নি। মাঝে মাঝে তার মনে হয় সে আসলে কখনও শেলীর প্রেমে পড়েনি। একজীবনে শুধু লেখালেখির প্রেমেই পড়েছিল, শুধু লেখক হতে চেয়েছিল সে, প্রেমিক হতে চায়নি।
শেলীকে দেখ সামিউল হঠাৎ করে যেন হতভম্ব হয়ে গেল। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসা সেই ছিপছিপে তন্বী তরুণী ছোটখাট মেয়েটিকেই দেখবে এরকমটি তার চোখের অগোচরে ছিল। কিন্তু এখন তার দিকে এগিয়ে আসছে যে মেয়েটি তাকে আর কোনমতেই মেয়ে বলা যাচ্ছে না, পুরোদস্তর গিন্নীবান্নি মহিলা সে, যার হ্যান্ডব্যাগের মধ্যে বাজারের ব্যাগ ভাজ করা আছে, অফিস শেষে রাস্তার পাশে টাটকা ঢ্যাড়স পেলে আধা কিলো উবু হয়ে বসে বেছে বেছে নেবে। অথচ ঢ্যাড়স, কুচুরমুখিী, পুইশাক এরকম পিছলা জাতীয় সবজি সামিউল একবারেই দুচোখে দেখতে পারে না।
দূর থেকে যাকে গিন্নীবান্নি লাগছিল কাছে আসতেই চোখে ভারী পাওয়ারের লেন্সে তাকে অবিকল মাস্টারনীর মতোই লাগছে। শেলী ক্লাসমেট ছিল বলেই বয়সটা জানাই ছিল সামিউলের। তার থেকে মাত্র চার মাসের ছোট শেলী। অথচ এখন শেলীকে তার পাশে দেখলে যে কেউ শেলীকে বয়সে তার চেয়ে বড় বলবে। গায়ে গতরে ভারিক্কী ভাব তো এসেছে, শরীরের মেদের আধিক্য আর বিশাল বপুই শুধু নয়, কেমন যেন গোটা ফিগারের মধ্যেই ম্যাচিওরড ওম্যান খালাম্মা খালাম্মা ভাব এসেছে। এই সাত বছরে একজন মানুষের শরীরে এতো পরিবর্তন হতে পারে?
শেলী সামিউলের পাশে এসে একটা চওড়া হাসি দিল, ‘তুমি তো দেখি একদম বদলাওনি। আগের মতো আছে। না ভুল বললাম আরো হ্যান্ডস্যাম আর ড্যাশিং হয়েছো। ব্যাপার কি, শরীর এরকম ট্রিম রেখেছো কি করে? জিমটিম করো নাকি?’
সামিউল দুদিকে মাথা নাড়ল, আস্তে করে বলল, ‘না, এতো বছর ধরে মাকে ওঠানো নামানো করেছি যে, ওতেও আমার ব্যায়াম হয়ে গেছে!’
‘খালাম্মার খবরটা শুনেছি। আমার খুব খারাপ লেগেছে। এক সময় তোমাদের বাড়িতে গিয়ে খালাম্মার হাতের বানানো আচার খেয়েছি।’
সামিউল কিছু বলল না, ভাবল শুধু আচারই খাওনি, আমার মাথাটাও খেয়েছিল, না হলে এরকম এক মহিলার সাথে ওই সময় প্রেমে পড়েছিলাম কিভাবে?
‘বাইরে রোদ্দুর চড়েছে খুব। চলো, ওই ফুডকোর্ডটাতে গিয়ে বসি। একটু পরেই লাঞ্চ আওয়ার শুরু হবে, তখন আর জায়গা পাওয়া যাবে না। তুমি এসেছে বলে আমি লাঞ্চ আওয়ারের আগেই বেরিয়ে এসেছি।’
সামিউল র‌্যাপিং করা চকলেটের বক্সটা শেলীর হাতে দিয়ে বলল, ‘চকলেট। তোমার মেয়ের জন্য।’
‘থ্যাঙ্কস।’ তারপর একটু ভ্রকুটি করে বলল, ‘তুমি এতোটা সামাজিক হয়ে উঠলে কবে থেকে?’
‘মায়ের জন্যই অসামাজিক হতে হয়েছিল আমাকে।’ সামিউল কাটা কাটা স্বরে বলল, পুরানো প্রেম নয় পুরানো রাগটাই যেন আবার উৎলে উঠতে শুরু করেছে, ‘তবে এই সামাজিকতটুকু জহিরের বুদ্ধিতে।’
‘তাই বলো। চলো, চলো।’ বলেই শেলী সামিউলের হাত ধরে টান দিল। এতো এতোগুলো বছর পর প্রিয়তমর স্পর্শ পেয়েও কোন বিদ্যুৎ স্পর্শ খেলে গেল না তার শরীরে, মনে হলো অফিসের কম্পিউটারে টাইপ করা একটা কর্কশ রুক্ষ্ম হাত।

বিজ্ঞাপন

দুজনে মুখোমুখি বসতে চেয়েছিল, মুখোমুখিই বসল। এখানে খাবারের ধরণটরণ সামিউল জানে না বলেই অর্ডারের দায়িত্ব শেলীই নিল। ফ্রেন্স ফ্রাই, ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, কোক এসব অর্ডার দিয়ে টোকেন নিয়ে এসে বসল শেলী। ‘তারপর বলো, ঢাকার জীবন কেমন কাটছে?’
‘অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। দিনের পর দিন মাকে নিয়ে ঘরকুনো হয়ে পড়ে থেকে হঠাৎ করে ঢাকার জীবনে অভ্যস্ত হতে সময় লাগছে। তবে হয়ে যাবে।’ সামিউল আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল।
‘তোমাদের যে বেড়বাড়ি, আবাদী জমিটমি ছিল না সেগুলো কি করছো?’
‘বন্ধক রেখে এসেছে। তবে মনে হয় না ওই বন্ধকী কখনও ছুটাতে পারব।’ শেলীর বৈষয়িক কথায় একটু সচেতন হলো, প্রথম দেখাতেই জমিজিরাতের খোঁজখবর কেন? পাত্র খুজছে নাকি?
‘চাকরিবাকরি কিছু করছো?’ শেলীর দ্বিতীয় বৈষয়িক প্রশ্ন।
‘নাহ, আপাতত লেখালেখিই করছি। লেখালেখির জন্যই ঢাকায় এসেছি।’
‘কেন? গ্রামে বসে লেখালেখি করা যায় না?’ শেলী ফুড কাউন্টারের দিকে তাকাল, ওখানে নিয়ন আলো জ্বলে নাম্বার ওঠে। মেরা নাম্বার কব আয়েগী? ‘আগে তো শুনতাম লোকজন নির্জন গ্রামীন পরিবেশে যায় শান্তিতে লেখালেখি করবে বলে।’
‘লেখালেখি হয়তো করা যায়, কিন্তু সেই লেখা প্রকাশ করা যায় না। লেখা প্রকাশ করতে গেলে রাজধানীতে আসতে হয়। দেখ না, আমি ঢাকায় এসেছি একমাসও হয়নি, আমার দুটি কবিতা একটা গল্প অলরেডি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়ে গেছে, তাও যে সে দৈনিক নয়, একেবারে প্রথম সারির।’
‘হ্যা দেখেছি। সদ্য ছাপা হওয়া কবিতাটাও পড়েছি। তেমন কিছু বুঝতে পারিনি। আর বুঝতে পারিনি বলেই বুঝেছি ভাল কবিতা হয়েছে।’ শেলী উঠে পড়ল, কাউন্টারের নিয়ন স্ক্রিণে তার নাম্বার উঠেছে, সেই সাথে মুখে নাম্বার ধরে ডেকেছে। ্ এখানে পয়সা দিয়ে খাবার কিনলেও তা নিজেই গিয়ে নিয়ে আসতে হয়।
খাবার প্রীতি কখনই ছিল না সামিউলের। মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আরো অভক্তি চলে এসেছিল। মায়ের জন্য গুরুপাক খাবার নিষিদ্ধ ছিল, নিষিদ্ধ ছিল মশলা জাতীয় খাবার, তাতে নাকি মস্তিস্ক আরো উত্তেজিত হয়ে পড়তো। গ্রামের বয়সী আয়েশা চাচি এসে টুকটাক রান্না করে দিয়ে গেলেও বেশিরভাগ সময় সেই রান্না করতো। আর রান্না করতে বলেই খাবারে অরুচি এসে যেতো, জীবন বাচানোর জন্য যতটুকু খাবার দরকার মায়ে পুতে ততটুকুই খেতো। শেলীর কাছে যে সামিকে হ্যান্ডস্যাম ড্যাশিং মেদহীন ট্রিমড লেগেছে তার একটা কারণ হয়তো এই পরিমিত আহার, যে কারণে পয়ত্রিশোর্ধ শরীরে এক ফোটা চর্বি জমেনি, মেদবিহীন ঝরঝরে শরীর।
সামিউল নাড়াচাড়া করে ফ্রাইড রাইস খেতে লাগল, ফ্রাইড রাইসের পরিমাণও আহামরি বেশি নয়। যখন শেলী বলল, এক্সট্রা আর রাইস নিবে কিনা, সামিউল এতো জোরে মাথা নেড়ে না না বলল যে শেলী একটু অবাকই হলো। একটা পূর্ণবয়স্ক মানুষের এতো অল্প খাবারে চলবে কেন?
চুপচাপ খেয়ে যাওয়াই সামিউলের স্বভাব। মায়ের সাথে যখন খেতো কেউ কোন কথা বলতো না, শুধু খাবার গলাধধরণের অদ্ভুত চপাচপ শব্দ ভেসে আসতো, শেষের দিকে মাকে গালে তুলে খাইয়ে দিতে হতো, তখন আর নিজের খাওয়ার রুচি থাকতো না। কিছু না বললে খারাপ দেখায় ভেবেই বোধ হয় সামিউল জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার মেয়ে কেমন আছে? কত বয়স হলো ওর? ও কি স্কুলে যায়? কি নাম ওর?’
শেলী হেসে ফেলল, এক সাথে এতগুলো প্রশ্ন! ‘মেয়ে ভালই আছে। ওর নাম সুপ্তি। ওর বাবা সুপান্তর নামের সাথে মিলিয়েই নাম রাখা। বয়স পাচে পড়ল। স্কুলে যাওয়া আসা করে। নার্সারীতে ভর্তি করেছি। মা থাকে সাথে। সুপ্তির দেখভাল করে। এজন্যই তো ওকে বাসায় রেখে আসি অফিস করতে পারছি।’ সামির প্রশ্নর উত্তর ছাড়াও শেলী কয়েকটা যোগ করল।
সামিউলের ইচ্ছে হলো জিজ্ঞেস করে বাসা কোথায়? কিন্তু সে তা জিজ্ঞেস করল না। ঠান্ডা কোকে চুমুক দিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, এক সময় শেলীকে এক নজর দেখা, শেলীর সাথে একটু সময় কাটানোর জন্য তীব্র আকাঙ্খা বিরাজ করতো মনে। কিন্তু এখন কেন জানি মনে হচ্ছে, খাওয়া শেষ হয়ে শেলী অফিসে ঢুকে গেলেই সে বাচে। বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরাবে সে, ফুডকোর্ট ধুমপান মুক্ত।
অফিসের লাঞ্চ টাইম শুরু হয়েছে বোধ হয়। মুহুর্তের মধ্যে ফুডকোর্ট ভরে গেল। আর একটা চেয়ারও খালি রইল না। দ্এুকজন অর্ডার দিয়ে দাড়িয়ে রইল। কাউন্টারের ওপাশের কর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে গেল। শাড়ি পড়া লম্বাটে গোছের লম্বাটে মুখের একটা মেয়ে এগিয়ে এলো শেলীর টেবিলের দিকে। ‘আপু, আপনি আগেই বেরিয়ে গেছেন। আপনাকে খুজতে তিনতলায় গিয়ে দেখি ডেস্ক খালি।’
‘হ্যা, একটু কাজেই বেরিয়ে এসেছিলাম। তোমাকে জানাতে পারিনি।’ শেলীকে কিছুটা বিব্রত মনে হলো।
সামিউল কৌতুহলের চোখে ওদের দুজনের দিকে তাকাল। দেখি, শেলী তাকে কি বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। নাকি, কোন পরিচয়ই করিয়ে দেবে না।
শেলী টেবিলের পাশে দাড়ানো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার ক্লাসমেট। স্কুলে একসাথে পড়েছি। ওর সাথেই দেখা করতেই আগে বেরিয়েছি।’
মেয়েটি সামিউলের দিকে তাকিয়ে একটু হাত উুচ করল কি করল না বলল, ‘স্লামালুকুম ভাইয়া।’
শেলী এবার সামিউলের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার জুনিয়র কলিগ, রেবা।’
রেবা তাড়াতাড়ি কাবাব মে হাড্ডি না হতে ‘আপু, তোমরা কথা বলো, আমি খাবার নিয়ে অফিসে যাচ্ছি। বাই, ভাইয়া।’ রেবা কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল। শেলী সামিউলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার যাওয়ার তাড়া নেই তো? আমারে লাঞ্চ আওয়ার কেবল শুরু হলো বলে।’
সামিউল দুদিকে মাথা নাড়ল, টিসু দিয়ে ভালভাবে হাত মুছে ট্রেটা একপাশে সরিয়ে রাখতে রাখতে বলল, ‘বেকার মানুষের আবার কিসের তাড়া? তবে মাথায় যখন কবিতা ভর করে তখন মনে হয় অনেক তাড়ায় আছি।’
শেলী হেসে ফেলল, ‘এখন মাথার মধ্যে কোন কবিতা ভর করে নেই তো? শেষে দেখা যাবে আমি তোমার সামনে বসে আছি ঠিকই কিন্তু তুমি আছো কবিতার তাড়ায়।’
‘না, এখন আসলে কাজের কথাই ভাবছিলাম। জমিজিরাত বন্ধকী রেখে বেশ কিছু টাকা এনেছি। ওটাই ব্যাংকে রেখে ওই টাকা দিয়েই চলছি। কিন্তু তুমি তো জানোই, বসে খেলে রাজার ধনও ফুরায়। ভাবছি, একটু চাকরির জন্য ট্রাই করতে শুরু করব।’
শেলী যেন একটু নড়েচড়ে বসল, ঢাকা শহরের বেকার সংখ্যা কম নয়, তাতে প্রতিনিয়তই বেকারের সংখ্যা বাড়ে। এখন চাকরির বাজার মন্দা। যতই ফিলোসফিতে মাস্টার্স ডিগ্রী থাকুক না কেন, চাইলেই চাকরি হয় না, সেই সাথে অভিজ্ঞতাও লাগে। সামিউলের যে কোন অভিজ্ঞতা নেই শেলী জানে, শুধু মাকে সেবা করার বারোর বছরের অভিজ্ঞতাকে যদি অভিজ্ঞতার মধ্যে ধরা হয়! ‘তুমি কোন লাইনে চাকরির চেষ্টা করছ?’ আপদমস্তক চাকুরিজীবী শেলী জানতে চাইল।
‘এখনও কোন লাইনে চেষ্টা চালাইনি। তবে লেখালেখির সুবিধার জন্য সাংবাদিকতা লাইনেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চেষ্টা করব, না হলে অন্য সম্মানজনক যেকোন চাকুরি।’
শেলী একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘বেস্ট অফ লাক। শোন, আমি আরেকটা কোক নেব, তোমার জন্যও কি আনব?’
সামিউল দুদিকে মাথা নাড়ল। ‘একটাই আমার জন্য যথেষ্ট।’
ভারী শরীরটা টেনে শেলী চেয়ার ছেড়ে উঠল। পেছন দিক থেকে শেলীর বিশাল বপুর দিকে তাকিয়ে সামিউল বুঝতে পারল ওর এরকম বিশালদেহী হওয়ার রহস্য কি। এরকম ফাস্টফুড, জাংকফুড আর কোক গিললে যেকোন মানুষ মোটা হতে বাধ্য।
শেলী টেবিলে বসে বলল, ‘শোন, তুমি তোমার মতো সাংবাদিকতা লাইনে চেষ্টা করো। পাশাপাশি আমাকে একটা সিভি মেইলে পাঠিয়ে দিয়ে রেখো। আমি যে প্রতিষ্টানে কাজ করি এদের একটা লিয়াজো প্রতিষ্ঠান আছে। মূল প্রতিষ্ঠানটা জাপানি একটা প্রতিষ্ঠানের শাখা বলতে পারো। ওদের কর্মকান্ড সমন্ধে আমি খুব একটা ভালমতো কিছু জানিনে। শুধু শুনেছিলাম বিভিন্ন বয়স্ক মানুষদের ওরা নাকি কিসব সেবা দিয়ে থাকে। তোমার তো তোমার মায়ের সেবা করার অভিজ্ঞতা আছে। তোমার ছাপা হওয়া গল্পটাও হয়তো খুব কাজ দেবে।’ শেলী কোকে চুমুক দিল, ‘ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার সাথে আমার ভাল খাতির আছে, আমি রিকমেন্ড করে দিলে হয়তো সহজে হয়ে যাবে।’
কোন মেয়েমানুষের কোন পুরুষ মানুষের সাথে খাতির আছে শুনলেই মনে হয় সেই খাতিরটা বিছানার খাতির। ডিভোর্সী শেলী কি বিছানার খাতিরের জোরে তার জন্য চাকরির সুপারিশ করবে? সামিউল একটু চুপসে যাওয়া গলায় বলল, ‘দেখি আগে পত্রিকা লাইনে কিছু করতে পারি কিনা। না হলে তুমি তো আছোই। তখন তোমাকে বলব। আমি সিভি দিয়ে রাখব তোমার কাছে। তোমার রিকমেন্ডেশনে কাজ হবে তো?’
শেলী হেসে তরল গলায় বলল, ‘মেয়েমানুষের রিকমন্ডেশনে কাজ না হলে আর কার সুপারিশে কাজ হবে? মেয়েরা কারোর জন্য সুপারিশ করলে বুঝতে হবে তার যোগ্যতা আছে। মেয়েরা সহজে কারোর সুপারিশ করে না!

চলবে…

সারাবাংলা/এসবিডিই

আমি কি রকমভাবে বেঁচে আছি (তৃতীয় পর্ব) ঈদুল ফিতর ২০২৪ উপন্যাস প্রিন্স আশরাফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর