কে তুমি
১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০২
‘কে ওখানে?’
‘আমি।’
‘আমি কে?’
‘আমি তো আমিই।’
‘নাম নেই?’
‘নাম আছে। তবে আপনার মতো নামডাক নেই।’
‘নাম যেটা আছে শুনি।’
‘শোনাটা কি খুব জরুরি?’
‘আপনি তো আচ্ছা লোক।’
‘বিরক্ত হচ্ছেন?’
‘অবশ্যই।’
‘কেন?’
‘এখন আমার লেখালেখি করার সময়।’
‘আমি জানি।’
‘জানেন?’
‘হ্যাঁ, জানি। শুধু আমি না, কমবেশি সবাই জানে।’
‘কি জানে?’
‘আপনি গভীর রাতে লেখেন।’
‘আপনি কিন্তু নামটা এখনও বলেননি।’
‘বলব। অবশ্যই বলব।’
‘কখন বলবেন?’
‘একটু পরে।’
‘এখন নয় কেন?’
‘কারণ আছে। এখনও বলার মতো সময়-পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’
‘তাই নাকি!’
‘হ্যাঁ, তাই।’
‘সত্যি করে বলেন তো, আপনি কেন এসেছেন?’
‘আপনাকে সঙ্গ দিতে।’
‘আমি তো নিঃসঙ্গ বোধ করছি না।’
‘গোটা বাসায় আপনি একা। তারপরও নিঃসঙ্গ নন?’
‘কেন রামু আছে?’
‘ও ব্যাটা তো রোবট। মানুষ তো নয়।’
‘আমার উপন্যাসের চরিত্ররাও আমাকে সঙ্গ দেয়।’
‘আপনি সেটা উপভোগও করেন।’
‘হ্যাঁ, করি। আপনি কী করে জানেন?’
‘জানি। না জানার তো কোন কারণ নেই।’
‘আপনি কে বলেন তো?’
‘আমি তো আমিই। আপনি যেভাবে গুছিয়ে লেখেন, সেভাবে বলি?’
‘ঠিক আছে, বলেন।’
‘আমি হচ্ছি সেই আমি, যার মধ্যে অনেক আমি বসবাস করে।’
‘আপনাকে বেশ রহস্যময় মনে হচ্ছে।’
‘প্রতিটি জীবই রহস্যেঘেরা। কখনও আমরা সেটা আবিস্কার করতে পারি, কখনও পারি না।’
‘আবিস্কার করা বিজ্ঞানীদের ব্যাপার। আমার ওই বিষয়ে ঝোঁক কম।’
‘জানি।’
‘কী জানেন?’
‘আপনি হলেন একজন আপদমস্তক লেখক।’
‘অনেক জানেন দেখছি। ভেতরে এলেন কী করে বলেন তো?’
‘ভেতরে আসা কি কঠিন কিছু? তাছাড়া সবাই জানে আপনার ফ্ল্যাটের দরজা দিনে সব সময় খোলা থাকে। রাত বারোটার পর লিখতে বসার আগে আপনি নিজ হাতে বন্ধ করেন।’
‘তার মানে আপনি বারোটার আগেই ঢুকেছেন?’
‘না, আমি বারোটার পরে এসেছি।’
‘সেটা কী করে সম্ভব?’
‘সম্ভব, অনেক কিছুই সম্ভব।’
‘আপনার হেয়ালি কিন্তু আমার আর ভাল লাগছে না।’
‘আমার তো বেশ লাগছে।’
‘আমার অসহ্য লাগছে।’
‘সত্যি কী তাই?’
‘আমি কিন্তু এবার গার্ডকে ডাকব।’
‘ডাকুন। আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’
‘আপনি কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি করছেন।’
‘আপনি অযথা উত্তেজিত হচ্ছেন।’
‘গার্ডকে মনে হচ্ছে ডাকতেই হবে।’
‘ডেকে লাভ নেই। ওরা গভীর ঘুমে অচেতন।’
‘গর্দভগুলো ঘুমাচ্ছে!’
‘হ্যাঁ, বিশ্বাস না হলে ডেকে দেখতে পারেন।’
‘রামু কোথায়? রামু…।’
‘ওকে ডেকেও লাভ নেই।’
‘কেন?’
‘ও কাজে ব্যস্ত।’
‘কী কাজে?’
‘ও আপনার জন্য ফলের জুস করছে।’
‘আপনি কী করে এটা জানলেন?’
‘আপনি রাতে তেমন কিছু খান না। লেখার সময় দুই গ্লাস ফলের জুস খান। তাছাড়া এখান থেকেই ব্লেন্ডার মেশিনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।’
‘আমার সম্পর্কে অনেক জানেন দেখছি!’
‘অনেক না, আপনার সবকিছু আমি জানি।’
‘আর কী জানেন শুনি?’
‘ঈদে আপনার স্ত্রী দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। আপনি যাননি। কেন যাননি?’
‘নিরিবিলিতে লেখালেখি করব এজন্য।’
‘এটা তো একটা ঈদসংখ্যার সাক্ষাৎকারে বলেছেন। শুধু কি সেটাই কারণ?’
‘হ্যাঁ, এটাই কারণ।’
‘আপনি পুরোপুরি সত্য বলছেন না।’
‘মিথ্যা কেন বলব? এটাই সত্যি।’
‘না, এটাই একমাত্র সত্য নয়।’
‘কী বলতে চান আপনি?’
‘বলতে চাচ্ছি আপনার সেই তরুনী ভক্তের কথা।’
‘কোন তরুনী?’
‘এবার কিন্তু আপনি ভনিতা করছেন। আমি কার কথা বলছি আপনি বুঝতে পেরেছেন।’
‘না, পারিনি। কার কথা বলছেন?’
‘ঈদের দিন যে তরুনী নিজ হাতে আপনার জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছিল।’
‘আপনি সোহার কথা বলছেন?’
‘হ্যাঁ। ওর অনুরোধেই তো আপনি গ্রামের বাড়িতে যাননি, ঠিক না?’
‘আপনি কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়েও বাড়াবাড়ি করছেন।’
‘এটা কিন্ত ভুল বললেন। বিখ্যাত মানুষের ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই, তার সবকিছুতেই আমজনতার আগ্রহ।’
‘আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন?’
‘আমি হুমকি দিতে যাব কেন, আপনি নিজেই হুমকিতে আছেন।’
‘হুমকিতে আছি!’
‘আমি তো সেটাই জানি।’
‘কীসের হুমকি?’
‘জীবনের হুমকি।’
‘কী বলছেন!’
‘যা বলছি সত্যি বলছি।’
‘আর একটা সত্যি কথা বলবেন?’
‘বলুন, আগে শুনি।’
‘আপনি কি আমাকে খুন করতে এসেছেন?’
‘হাসালেন। আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে।’
‘হাসি পাওয়ার মতো কিছু হয়েছে?’
‘হয়েছে। তার আগে বলুন আপনি কি ভয় পেয়েছেন?’
‘না, ভয় পাব কেন?’
‘অবশ্য ভয় পেয়েছেন।’
‘বললাম তো পাইনি।’
‘মিথ্যা বলবেন না। ভয় পেলে মানুষের মাথা ঠিক মতো কাজ করে না। আপনার বেলায়ও এখন তাই হচ্ছে।’
‘আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি।’
‘আপনার অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি দেইনি। কোনটার উত্তর জানতে চাচ্ছেন?’
‘খুন করতে এসেছেন কিনা?’
‘খুনি এসে কি গল্প জুড়ে দেয়? আপনার কি মনে হয়?’
‘আমার কিছুই মনে হয় না। আমি শুধু উত্তরটা জানতে চাই।’
‘আপনি উত্তেজিত।’
‘না হওয়ার কোন কারণ নেই। আপনি কি দয়া করে উত্তরটা বলবেন?’
‘আমি আপনাকে খুন করতে আসিনি।’
‘তাহলে কেন এসেছেন?’
‘আপনাকে বাঁচাতে।’
‘তার মানে আজ আমি খুন হতে পারি।’
‘হ্যাঁ, একটা শংকা রয়েছে।’
‘বিষয়টা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।’
‘বিশ্বাস করা বা না করা আপনার ব্যাপার।’
‘কে আমাকে খুন করতে চায়? কেন করতে চায়?’
‘সব প্রশ্নের উত্তর একটু পরেই জানতে পারবেন। এবার যে একটু থামতে হয়।’
‘থামতে হবে কেন?’
‘রামু আপনার জন্য ফলের জুস নিয়ে আসছে।’
‘তাতে কী হয়েছে?’
‘কিছুই হয়নি। আমি চাই না সে আমাকে দেখুক।’
‘কেন, কোনো অসুবিধা আছে।’
‘আছে। শুধু একটা অনুরোধ, আমি আবার না আসা পর্যন্ত কিছইু খাবেন না।’
‘কেন খাব না?’
‘জবাব পরে দেবো। এখন যাই। রামু এসে গেছে।’
‘এত দ্রুত কিভাবে যাবেন? কোথায় যাবেন?’
‘দেখুন কিভাবে যাই, কোথায় যাই। হা-হা।’
‘আরে, গেলেন কোথায়? জাদুকর নাকি!’
দুই.
‘আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?’
‘হ্যাঁ, পাচ্ছি।’
‘রামু চলে গেছে, আপনি চাইলে আসতে পারেন।’
‘ঠিক আছে, এই যে চলে এলাম।’
‘আপনি কি জাদুকর?’
‘না, আমি মোটেও জাদুকর নই।’
‘তাহলে আপনি কে?’
‘বলব, বলার সময় প্রায় হয়ে এসেছে।’
‘ঠিক আছে, যখন ইচ্ছে বলবেন।’
‘ধন্যবাদ।’
‘আপনার কা-কারখানা দেখে গলা শুকিয়ে গেছে। আমি একটু জুস খেয়ে নিই।’
‘ভুলেও ও কাজ করবেন না।’
‘কেন, কোন সমস্যা?’
‘মারাত্মক সমস্যা, জুসে বিষ মেশানো। খেলেই মারা পড়বেন।’
‘কী বলছেন!’
‘ঠিকই বলছি।’
‘রামু কেন এ কাজ করতে যাবে?’
‘রামু নিজে থেকে এ কাজ করেনি। তাকে দিয়ে করানো হয়েছে।’
‘কিভাবে করানো হলো?’
‘তার আর.ম্যাক্সে১ এ কাজ করার নির্দেশনা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
‘এই ভয়ংকর কাজটা কে করেছে?’
‘দুইটি সাইবর্গ ২।’
‘কখন করল?’
‘গত দুপুরে। আপনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন।’
‘কিভাবে করল?’
‘ওরা এসে প্রথমে দারোয়ানদের বিভ্রান্ত করে। বলে, লেখক সাহেবের বাসার রোবটে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আমরা ঠিক করতে এসেছি। এই যে কার্যপত্র। ভুয়া একটা কাগজ দেখায়। দারোয়ানরা গেট খুলে দেয়। ওরা এসে রামুকে ডেকে তার আর.ম্যাক্সে বাকি কাজটুকু সারে।’
‘রামু বাধা দেয়নি?’
‘বাধা দেওয়ার সুযোগ পায়নি। সাইবর্গ দুটি এসেই বিশেষ রশ্মির সাহায্যে রামুর আর.ম্যাক্সকে অকেজো করে দেয়।’
‘আমাকে মেরে ওদের কী লাভ?’
‘ওদের কোন লাভ নেই।’
‘তাহলে?’
‘যার লাভ তিনিই ওদের পাঠিয়েছেন।’
‘কে তিনি?’
‘সগীর হাওলাদার। চিনতে পেরেছেন?’
‘হ্যাঁ, লোকটার অর্থ-বৈভব আছে। ভীষণ প্রভাবশালী। অনেকে বলে উনি নাকি গডফাদার।’
‘ঠিকই বলে।’
‘উনি আমাকে মারতে চান কেন?’
‘কারণ তো অবশ্যই আছে।’
‘কী কারণ?’
‘কারণ এক নয়, একাধিক।’
‘একাধিক!’
‘হ্যাঁ, একাধিক।’
‘বলুন তো কী কী কারণ?’
‘আপনার নতুন উপন্যাস ‘কে তুমি’ ঈদের দুইদিন আগে বাজারে এসেছে। পাঠক লাইন ধরে কিনছে।’
‘তাতে কী হয়েছে?’
‘আহ! আগে আমাকে বলতে দিন।’
‘ঠিক আছে, বলুন।’
‘বইটির উৎসর্গের পাতায় আপনি লিখেছেন : আমার এক ভক্ত পাঠককে, কে তুমি নন্দিনী। এই নন্দিনী কে? সোহা?’
‘এটা তো কারও মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ নয়। আমি একজনের মাধ্যমে মূলত সব নন্দিনীকে বই উৎসর্গ করেছি।’
‘কিন্তু সোহার বাবা যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। তাকে চেনেন?’
‘না, চিনি না। কী নাম উনার?’
‘বলছি। তার আগে বলুন প্রকাশক পিকুল কি আপনাকে কিছু জানিয়েছে?’
‘না, তেমন কিছু জানাননি। তবে ঈদের আগের দিন দুপুরে তার ম্যানেজার ফোন করেছিলেন। জানলেন, বই ভাল চলছে।’
‘ওদিকে তো গুরুতর ঘটনা ঘটেছে।’
‘কী ঘটনা?’
‘পিকুলের ছয় বছর বয়সী ছেলে পিনুকে ঈদের আগের দিন বিকালে অপহরণ করা হয়েছিল।’
‘বলেন কী! এই ছোট্ট ছেলেকে অপহরণ, কেন?’
‘চাপ সৃষ্টি করার জন্য।’
‘কী চাপ?’
‘কে তুমি উপন্যাসের পুরো আয় হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই পিনুকে অপহরণ। তার বাবাকে ফোনে বলা হয়েছে, ছেলে ফেরত চান তো শর্তে রাজি হয়ে যান।’
‘পিনু কি মুক্তি পেয়েছে?’
‘হ্যাঁ পেয়েছে। ঈদের দিন সন্ধ্যায়। তবে তার বাবাকে একটি চুক্তিপত্রে সই করতে হয়েছে। নতুন উপন্যাসের যত আয় তার সবটাই তিনি তুলে দিতে বাধ্য থাকবেন।’
‘কারা করেছিল অপহরণ?’
‘অপহরণের কাজটা করেছিল দুটি সাইবর্গ। পেছনে আছেন একজন গডফাদার।’
‘কে সগীর হাওলাদার?’
‘একদম ঠিক ধরেছেন।’
‘সাইবর্গ দিয়ে উনি অন্যায় কাজ করে যাচ্ছেন, নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র কী করছে?’
‘নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রের কিছু করার নেই।’
‘কেন?’
‘কারণ এই সাইবর্গ দুটির নিবন্ধনই নেই। সগীর হাওলাদারের নিবন্ধন করা দুটি সাইবর্গ আছে। আর দুটি উনি নিজে তৈরি করে নিয়েছেন। নিবন্ধন করা দুটি আড়ালে অন্য দুটি দিয়ে স্বার্থসিদ্ধির কাজ করাচ্ছে।’
‘বলেন কী! এত তো জালিয়াতি। বড় ধরনের অপরাধ।’
‘মনে রাখতে হবে উনি একজন গডফাদার। এগুলো উনার কাছে মামুলি ব্যাপার।’
‘এই সাইবর্গ দুটির তো এতদিনে ধরা খেয়ে যাওয়ার কথা।’
‘না, ওদের তৈরি করা হয়েছে বিশেষ প্রযুক্তিতে। সিসি ক্যামেরায় ওদের ছবি ধরা পড়ে না। ওদের শরীর থেকে একটা বিশেষ রশ্মি বেরিয়ে সিসি ক্যামেরাকে কিছুক্ষণের জন্য অকেজো করে দেয়। এই যে আজ আপনার ফ্ল্যাটে এসেছিল, এই ভবনের কোন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় কিন্তু ওদের ছবি নেই।’
‘আমাকে মেরে সগীর হাওলাদারের কী লাভ?’
‘আপনি মারা গেলে বইয়ের কাটতি আরও বাড়বে। লেখকের সর্বশেষ উপন্যাস বলে কথা। আর উনার আয় বাড়বে। লোকটার ব্যবসায়িক বুদ্ধি আছে বটে।’
‘এ তো গেল একটা কারণ। আর?’
‘সগীর হাওলাদার এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন।’
‘সেটা কী রকম?’
‘সোহা কিন্তু উনার একমাত্র মেয়ে।’
‘তাই নাকি!’
‘উনার ধারণা সোহা আপনার প্রেমে পড়েছেন। জিদ্দি মেয়েকে উনি না পারছেন কিছু বলতে, না পারছেন সইতে। আপনাকে সরিয়ে দিতে পারলে এ সমস্যারও সমাধান হয়।’
‘আমাকে তো সাইবর্গ দুটিই মেরে ফেলতে পারত।’
‘সগীর হাওলাদার দেখতে মোটা, কিন্তু বুদ্ধি খুব চিকন। সাইবর্গের হাতে মারা গেলে তার মেয়ের সন্দেহ হতে পারে। গৃহকর্মী রোবটের হাতে মারা গেলে সেটা নিছক দুর্ঘটনা। উনি নিখুঁতভাবে কাজটা করতে চেয়েছেন।’
‘আপনাকে ধন্যবাদ।’
‘হঠাৎ ধন্যবাদ?’
‘আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন বলে।’
‘আপনার মৃত্যুঝুঁকি এখনও পুরোপুরি কাটনি।’
‘কী বলছেন এসব! আবার কে আসবে মারতে?’
‘রামু। এবার ও আপনার ওপর হামলা চালাবে।’
‘আমি এখন কী করব? আমাকে বাঁচান, প্লিজ।’
‘আমার আসলে তেমন কিছু করার নেই।’
‘কিচ্ছু করার নেই! রামু আমাকে মেরে ফেলবে আর আপনি চেয়ে চেয়ে দেখবেন?’
‘আপনি এতটা অসহায় বোধ করবেন না।’
‘তাহলে কী করব?’
‘আপনি মানুষ। আর রামু যন্ত্রমানব। আপনি ওকে বুদ্ধি দিয়ে হারাবেন।’
‘সেটা কিভাবে সম্ভব?’
‘সম্ভব। আপনি একটা কিছু বলে রামুর আর.ম্যক্সকে বিভ্রান্ত করে দেবেন।’
‘আমি মনে হয় সেটা পারব না।’
‘পারবেন। আপনি অযথা ভয় পাচ্ছেন। মানুষের ক্ষমতা অসীম।’
‘আপনি কি এ ব্যাপারে আমাকে একটু সাহায্য করবেন?’
‘সময় নেই। রামু এসে গেছে। আমি যাই। একদম ভয় পাবেন না।’
তিন.
‘কে, রামু?’
‘হ্যাঁ। কার সঙ্গে কথা বলছিলেন?’
‘তেমন কারও সঙ্গে না।’
‘মনে হল অন্য কারও গলা শুনতে পেলাম। যাকগে, জুস খাননি কেন?’
‘খেতে ইচ্ছে করেনি।’
‘না খেয়ে কাজটি ভাল করেননি।’
‘কেন কী হয়েছে?’
‘তাহলে আমাকে আর এই অপ্রিয় কাজটা করতে হতো না।’
‘এ কী তুমি আমার গলা চেপে ধরছো কেন? ছাড়ো, দম বন্ধ হয়ে আসছে।’
‘দুঃখিত স্যার, আমার কিছুই করার নেই। আমার আর.ম্যাক্সে যে নির্দেশনা দেওয়া আছে আমাকে তাই করতে হবে। আপনার যাতে কষ্ট কম হয়, আমি সে খেয়াল রাখব।’
‘তুমি কি আমার একটা কথা শুনবে?’
‘কেন নয়, একজন মৃত্যুপথযাত্রীর শেষ ইচ্ছে বলে কথা। বলুন স্যার।’
‘তুমি তো জানো আমি ক্রিকেট খেলা খুব পছন্দ করি।’
‘হ্যাঁ, জানি।’
‘ধরো, একজন ব্যাটসম্যান এক ম্যাচে ৫১, দ্বিতীয় ম্যাচে ২৩ আর তৃতীয় ম্যাচে ২৬ রান করলেন। তাহলে তার গড় কত হবে?’
‘এ তো খুব সোজা। তিন ম্যাচে মোট রান ১০০। তাহলে গড় হবে…।’
‘হ্যাঁ, গড় কত হবে?’
‘গড় হবে ৩৩.৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩৩…।’
‘উফ! যাক বাবা বাঁচা গেল। আর.ম্যাক্সকে বিভ্রান্ত করা গেছে। গলায় আর চাপ অনুভূত হচ্ছে না। রামুর হাত তো নয়, যেন জগদ্দল পাথর। যেভাবে চেপে ধরেছিল, আরেকটু হলেই দম বেরিয়ে যেত। এবার ব্যাটা যতক্ষণ চার্জ আছে তিন-তিন করতে থাকুক।’
চার.
‘কী বলেছিলাম না, ভয় পাবেন না।’
‘ও আপনি এসেছেন।’
‘দেয়ালের এই ছবিটা খুব সুন্দর।’
‘হ্যাঁ, আমার পরিবারের ছবি।’
‘একী আপনি কাঁদছেন?’
‘ভাবছি ওদের সঙ্গে আর দেখা নাও হতে পারত। ’
‘জীবন অনেক সুন্দর। একে জটিল না করাই ভাল, কি বলেন?’
‘হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। আমি বুঝতে পেরেছি।’
‘চোখ মুছে ফেলুন। এত বড় একজন লেখক কাঁদছেন, দেখতে মোটেই শোভনীয় নয়।’
‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। মুছে ফেলছি।’
‘আপনার সম্পর্কে আরেকটা তথ্য আমি জানি।’
‘কী তথ্য?’
‘আপনি নাকি খুব কাছের না হলে কাউকে তুমি বলেন না।’
‘হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আমার কেমন যেন অস্বস্তি হয়।’
‘আমাকে কি তুমি বলা যায়?’
‘অবশ্যই যে উপকার আপনি করেছেন, তারপরও কেন নয়!’
‘এখনও তো আপনিতেই আছেন।’
‘সময় লাগবে। তার আগে বলুন কে আপনি?’
‘না, কাছের না ভাবলে পরিচয় দেবো কেন?’
‘ঠিক আছে, কে তুমি?’
‘আমি এই পৃথিবীর কেউ না। ভিনগ্রহের প্রাণী।’
‘এ যে অবিশ্বাস্য!’
‘আমি আজ যাই। আবার আসব।’
‘আবার আসবে!’
‘হ্যাঁ, আসতেই হবে। আমরা আপনার বই আমাদের প্রিয় গ্রহে আমাদের ভাষায় অনুবাদ করতে চাই। কে তুমি Ñ এই বই দিয়েই শুরু করব। এজন্য আপনার সঙ্গে চুক্তি করতে হবে না?’
‘ঠিক আছে। অপেক্ষায় থাকব।’
‘আগামীতে আরও অনেক কথা হবে। বিদায়। যাচ্ছি।’
‘যাই না, বলো আসি।’
‘ঠিক আছে, আসি। আপনাদের ভাষাটা বড্ড খটমট। এক শব্দের একাধিক অর্থ। ’
১. আর.ম্যাক্স: অ্যানড্রয়েডের মস্তিষ্ক
২. সাইবর্গ: অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক যন্ত্র্র
সারাবাংলা/এসবিডিই
ঈদুল ফিতর ২০২৪ বিশেষ সংখ্যা কমলেশ রায় কে তুমি বৈশাখী আয়োজন ১৪৩১ সায়েন্স ফিকশন