Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তুতু


১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৩

‘তোয়া!’
তোয়া অবাক হয়ে তাকাল।
কাকলি ম্যাম তার দিকে তাকিয়ে আছেন। ম্যাম চিৎকার করে বললেন, ‘এই নিয়ে তৃতীয়বার আমি তোমাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। পরেরবার যখন এমন করবে, আমি তোমাকে ক্লাস থেকে বের করে দেব। ’
তোয়া আস্তে আস্তে মাথা নাড়ল। নানি তাকে ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে সে সবকিছুতেই অমনোযোগী। না, রহিমা তার আসল নানি ছিল না। সে ছিলে তাদের বাড়ির রাঁধুনি। তার নাম রহিমা বেগম। তোয়া তাকে নানি বলে ডাকত। নানি অনেক বছর ধরে তোয়াদের বাড়িতে ছিল।
নানি শুধু রাঁধুনি ছিল না, তোয়ার সবচেয়ে ভালো বন্ধুও ছিল। প্রতিদিন ওকে স্কুলে দিয়ে আসত, আবার নিয়ে আসত। ওর সঙ্গে ক্রিকেট খেলত, গোসল করাত, মজার মজার খাবার তৈরি করত। আর রাতে ঘুমানোর সময় গল্প শোনাত।
ওরা একসঙ্গে কার্টুন দেখত। বৃষ্টিতে ভিজত। আবার একসঙ্গে বোকার মতো গান গাইত। নানির গানের গলা একদম ভালো ছিল না, তোয়ারও তাই। তবুও ওরা বেসুরো গলায় চিৎকার করে গান গাইত। একবার ওদের গান শুনে খুব রেগে যান পাশের বাড়ির জয়া আন্টি। শুধু কী তাই, জয়া আন্টি তোয়ার মায়ের কাছে অভিযোগও করেছিলেন।
নানি অনেক লম্বা ছিল, আরও বয়স ছিল ষাট বছরের বেশি। মাথার লম্বা চুলগুলো সম্পূর্ণ সাদা হয়ে গিয়েছিল।
গ্রীষ্মকালে নানি তোয়াকে বাগানে নিয়ে যেত। আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে তোয়াকে কাঁধে তুলে নিত। তোয়া তখন হাত দিয়ে গাছ থেকে ছোট ছোট সবুজ আম পাড়ত। তারপর একসঙ্গে লবণ এবং মরিচের গুঁড়া দিয়ে মজা করে খেত।
নানি তোয়ার সব বান্ধবীর কাছেও প্রিয় ছিল। তোয়ার জন্মদিনে নানি পুরো বাড়িটি সাজাত। আর তোয়ার পছন্দের চকোলেট কেক বানাত।
হঠাৎ একদিন সকালে নানি চলে গেল। বাবা তাকে বলেছিল, নানু আকাশে চলে গেছে। আর কখনো ফিরে আসবে না।
তারপর একমাস পেরিয়ে গেছে। তোয়া এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি। নানির কথা ভেবে ডুকওে ডুকরে কাঁদে। কিন্তু, নানি ফিরে আসেনি।
একদিন, তোয়া ঘুমাচ্ছিল। তখন সে তার নাকের ওপর কোমল ও শীতল কিছুর স্পর্শ অনুভব করল। তাহলে কী নানি তাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে? সে চোখ খুলে লাফ দিয়ে উঠল। তার সামনে বাদামি রঙের একটি কুকুরছানা দাঁড়িয়ে আছে। তোয়ার দেখা সবচেয়ে সুন্দর কুকুরছানা। ও জিহ্বা, কোমর এবং লেজ দোলাচ্ছে। তোয়ার বাবা-মা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল।
‘এটি কি আমার জন্য? ’
‘হ্যাঁ। এটি তোমার ’ মা বলল।
‘তোমাকে এর যত্ন নিতে হবে’ তার বাবা যোগ করল।
‘অবশ্যই’ তোয়া চিৎকার করে কুকুরছানাকে কোলে তুলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।
শিগগির নতুন অতিথির সামনে দুধে ভরা বাটি রাখা হলো। ও আবারও জিহ্বা এবং লেজ নাচাচ্ছে। দুধ খেয়ে সে কয়েকবার ঘরটি ঘুরল। তারপর তোয়ার বালিশের পাশে ঘুমিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাক ডাকার শব্দে ঘর ভরে গেল। সবাই হাসতে শুরু করল।
‘আমরা তাকে কী নামে ডাকব? ’
‘নানি!’ তোয়া উত্তর দিল।
‘না, তোয়া। কুকুরকে নানি বলা যায় না। নানি ছিল আমাদের পরিবার। ’
‘বাবা, আমাদের নতুন নানিও আমাদের পরিবার। সে আমার জুনিয়র বন্ধু। ’
তোয়ার বাবা-মা একে অপরের দিকে তাকাল।
বাবা তোয়ার পিঠ চাপড়ে বলল, ‘ঠিক আছে, আমরা তাকে তুতু বলে ডাকব। ’
তোয়া বলল, ‘ঠিক আছে, বাবা। ’
তুতু ধীরে ধীরে তোয়ার কাছের বন্ধু হয়ে উঠল। তোয়া তাকে স্কুলে যাওয়া ছাড়া সব জায়গায় নিয়ে যেত। সে তাকে খাওয়াত, গোসল করাত, হাঁটতে নিয়ে যেত, তার সঙ্গে খেলত, এমনকি রাতে গল্পও শোনাত। তোয়া যখন তুতু বলে ডাকত তখন সে লেজ নাচাত।
এভাবে এক বছর কেটে গেছে। তুতু এখন আর ছোট নেই। সে এখন তোয়াকে পিঠে বহন করতে পারে। ঠিক যেমনটি নানি করত।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঈদুল ফিতর ২০২৪ বিশেষ সংখ্যা গল্প তুতু বৈশাখী আয়োজন ১৪৩১ রবিউল কমল