মিংশুদের ভূতের বাড়ি
১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৪
বাস থেকে সাগর ছাড়া আর কেউ নামল না। ওকে নামিয়ে দিয়ে বাস পাহাড়ের নিচে হারিয়ে গেল। রাস্তা মোড় ঘুরে গেছে। পাহাড়ের জন্য এদিক থেকে আর রাস্তা দেখা যায় না।
যেখানে বাস থেমেছে সেখানে একটি করাতকল। গাছ কেটে তক্তা বানানো হচ্ছে। জায়গার নামের সাথে করাতকলের নাম জুড়ে গেছে। উজানিপাড়া স মিল। স মিল উঠে গেলেও নাম হয়তো রয়ে যাবে। করাতকলের পাশ দিয়ে একটি চিকন রাস্তা পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠে গেছে। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপরে চলে এলো সাগর। ছোট্ট ছিমছাম দুই কামরার একটি কটেজ। তিনদিকে বারান্দা। একটাই সমস্যা। টয়লেট বাইরে। কটেজের সামনে সুন্দর একটা বাগান। নানা রঙের পাহাড়ি ফুলের মধ্যে একটামাত্র ফুলকে চিনতে পারলো সাগর। পাহাড়ী গাঁদা। অনেক গাঁদা ফুল ফুটে আছে। বিকেলের রোদ আর গাঁদা ফুলের হলুদ রঙে জায়গাটা যেন হলুদ হয়ে আছে। ফুলের একটু মরিচ মরিচ গন্ধ এসে লাগছে নাকে।
সাগর কটেজের দরজায় টোকা দিতে যাবে। এসময় বের হয়ে এলো সিং থুয়াই। কাঁধে ওর মতোই ট্রাভেল ব্যাগ।
‘কিরে কোথায় যাচ্ছিস?’
‘ঢাকায় যাচ্ছি। কাল থেকে আমার ক্লাস শুরু দোস্ত।’
‘অং শুই কোথায়?’
‘ও কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসবে। তুই থাক। ও আমাকে বলেছে তুই আজ এখানে থাকবি। হটবক্সে বিন্নি চালের ভাত, কাঁকড়ার তরকারি আর সেমাই আলুসেদ্ধ আছে। তোরা খেয়ে নিস। এ বাড়িতে একটা ভূত থাকে। ওকেও কিছু খেতে দিস। হা হা হা।’
সিং থুয়াই চলে গেল।
বিকেলের নরম রোদ। নভেম্বর মাস। এ সময় শীত পড়ে যায়। কিন্তু এবার শীত পড়ি পড়ি করেও পড়ছে না। সাগর সামনের দিকে তাকলো। এ পাহাড়টা কিছুটা উঁচু। যতদূর দেখা যায় পাহাড়ের পর পাহাড়। এই পাহাড় দিয়ে হেঁটে গেলে বার্মায় চলে যাওয়া যাবে। হাল্কা কুয়াশা কুয়াশা পড়েছে। সূর্য আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের পেছনে। এ সূর্যাস্ত দ্রুত হৃদয়ে ভালোবাসা তৈরী করে। সাগর একটু সময় পেলেই বান্দরবনে চলে আসে। বন্ধুদের সাথে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যায়। সিং থুয়াই আর অংশুই পড়াশোনার পাশাপাশি একটা এনজিওতে চাকরি নিয়েছে। থাকা আর অফিস চালাতে এ কটেজ ভাড়া করে দিয়েছে এনজিওটি।
অংশুই ফোন দিলো। ‘দোস্ত তুই আজকের রাতটা কটেজে কাটিয়ে দে।’
‘কটেজে কাটানোর জন্যই তো এলাম। তুই কই ?’
‘আমার এক বন্ধুর বাসায় আজকে বার বি কিউর আয়োজন করেছে। আমরা কয়েকজন আছি। দোস্ত তুই একা একা কাটিয়ে দে।’
‘শালা। আমাকে এখানে এনে এখন ফাজলামো হচ্ছে?’
‘দোস্ত আমি এসে যেতাম। কিন্তু শেষ বাসটা যে চলে গেছে খেয়ালই করিনি। আর পাহাড়ে তো জানিসই যানবাহন তোদের মতো না। অহরহ পাওয়া যায়না। সরি দোস্ত। তুই থাক। আমি সকাল সকাল চলে আসবো। এরপর তোকে নিয়ে পুরো বান্দরবন ঘুরবো।’
‘যা শালা, কথা বলবি না।’
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সাগরের। ওকে বেড়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে এসেছে। এখন আবার আরেক বন্ধুর বাসায় গিয়ে বার বি কিউ করছে। ওকে ধরে একটা পিটানি না দিতে পারলে মনটা শান্তি হবে না।
মোবাইল ফোন আবারো বেজে উঠলো। সুমন মল্লিক ফোন দিয়েছে।
‘মামা তুমি নাকি একলা পড়ে গেছো?’
‘সুমন ফাজলামো করবি না বলে দিচ্ছি।’
‘মামা আমি-ও বারবি কিউ করছি। অং শুই এর সাথে। হা হা হা।’
‘হারামজাদা।’
‘মামা। ঐ বাসায় একটা ভূত থাকে। তুমি তার সাথে সাড়া রাত গল্প করে কাটিয়ে দাও। আর যদি ভূতের সাথে ভালো সম্পর্ক করতে পারো তাহলে রাতে আমাদের এখানে পাঠিয়ে দেবে। বেশি না। ভূত এসে রাতে আমাদের বাথরুমের দরজা আটকে দিলেই হবে। তাহলেই বুঝবো ভূত এসেছে। বারবি কিউর খাবার খেয়ে রাতে আমাদের হাগু ধরবে। তখন আমাদের সব দৌড়াতে হবে পাহাড়ের ঝোঁপে। হা হা হা। দোস্ত সাবধানে থাকিস। রাতে আবার খবর নিবো।’
সাগর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিলো। ফোন খোলা থাকলে শয়তানগুলি ফোন করে করে ওর মেজাজ খারাপ করবে।
বাসে আসতে আসতে ওর ক্ষুধা লেগে গিয়েছিলো। বেশ মজা করে সিং থুয়াই এর রান্না করা কাঁকড়ার তরকারি খেলো। বেশিক্ষন হয়নি রান্না করেছে। গরম গরম তরকারির মজাই আলাদা। পাহাড়ি সেমাই আলুসেদ্ধ রেখে দিলো সকালের নাস্তার জন্য। নইলে সকালের নাস্তা নিজেকেই বানাতে হবে। আশেপাশে কোন হোটেল নেই।
ব্যাগ হাতড়ে বের করলো শাহরিয়ার কবিরের ‘সীমান্তে সংঘাত’। বাসে পড়ার জন্য তিনটা বই নিয়ে এসেছিলো। এগুলি এখন কাজে লাগবে। চাদরটা শরীরের ওপর টেনে দিয়ে পড়তে শুরু করলো সাগর। শুয়ে শুয়ে বই পড়া ওর অভ্যাস।
পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে গেছে খেয়াল নেই সাগরের। ঘুম ভাঙ্গলো চাদরের টানে। শরীর থেকে হেঁচকাটানে কেউ চাদর সরিয়ে দিয়েছে। চাদর পড়ে আছে মাটিতে। ধড়মর করে বিছানায় উঠে বসলো সাগর। পাহাড়ে এলে ও বালিশের এক পাশে টর্চলাইট রেখে ঘুমায়। অন্যপাশে খাপে ভরা ছুরি। সাগর টর্চ জ্বালালো। টর্চের তীব্র আলোয় পুরো ঘর আলো হয়ে উঠলো। টর্চের আলো ঘরটাতে ঘুরিয়ে আনলো। কোথাও কেউ নেই। অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ল না। অন্য হাতে ছুরি উঠে এসেছে। সাগর আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নামল। লাইট জ্বালাল। ঘরের চারিদিকে তাকালো। এবার একটা অস্বাভাবিক বিষয় চোখে পড়ল। ঘরের প্রতিটি দরজা জানালার উপর বিভিন্ন সুরা ছোট করে লেখা। আয়াতের নকশাও আছে কয়েকটি। সিং থুয়াই আর অংশুই দুইজনেই বৌদ্ধ। তাদের ঘরে কোরআন শরীফের আয়াত কেন? আগের বাসিন্দাদের কেউ লাগিয়ে গেছে? আগেও তো একজন বৌদ্ধ পরিবার থাকত। পাশের ঘরের লাইটও জ্বেলে দিলো সাগর। সেখানেও কেউ নেই। একটি খাট। খাটে এলোমেলো করে চাদর রাখা। অং শুই ঘুমায় এ ঘরে। চাদর ভাঁজ না করেই চলে গেছে।
আবার সামনের ঘরের খাটে এসে বসলো সাগর। ও নিজেই নিজের ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করছে। ও নিশ্চই ভয় পেয়েছে। একা একা থাকার কারনে ভয়। কিন্তু ও তো প্রথমবার একা থাকছে না। ক্লাস থ্রি থেকে ওর একা থাকার অভ্যাস। ক্লাস এইট থেকে নানা জায়গায় ও বেড়াতে যায়। অনেক জায়গায়ই একা থেকেছে। এরকম পাহাড়ের উপরে বা কোন চরে একদম একা; তা-ও বেশ কয়েকবার হয়েছে। নাহ ওর ভয় পাওয়ার কথা না। উচিৎও না। সাগর নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিল। পেটে সমস্যা থাকলে মানুষ খারাপ স্বপ্ন দেখে। অনেক সময় সেসব স্বপ্ন বাস্তবের কাছাকাছি হয়। মনে হয় ঘটনা সত্যি ঘটেছে। ওর কয়েকদিন ধরে পেটে কিছুটা সমস্যা যাচ্ছে। সে থেকে ঘটনাটা ঘটে থাকতে পারে।
দরজা খুলে সাগর বাইরে বের হল। টয়লেটে যেতে হবে। ঘড়ি দেখল। রাত দুইটা বাজে। হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা আছে। কিন্তু ঠান্ডা বাতাস নেই। টয়লেট সেরে কিছুক্ষন বাইরে দাঁড়ালো সে। বহুদূর পর্যন্ত কোনও আলো নেই। আকাশেও আজ আলো কম। অমাবস্যা গিয়েছে দুইদিন আগে। তাই চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। অল্পকয়েকটি তারা দেখা যাচ্ছে আকাশে।
ভয় কেটে গেল। ঘুম ঘুম পাচ্ছে। সাগর কটেজের দিকে পা বাড়াল। কটেজের কারুকার্যময় কাঠের দরজার ফাঁক দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। সাগর দরজার সামনে যেতেই প্রচন্ড শব্দে দরজাটা লেগে গেল। সাথে সাথে শীতের প্রচন্ড বাতাস শুরু হল। সাগর মাথা ঠান্ডা করে সামলানোর চেষ্টা করছে। পারছে না। মনের শক্তি সঞ্চয় করে সে দরজা খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খুলছে না। কেউ ভেতর থেকে দরজা ঠেলে ধরে আছে। সে শক্তির ধারেকাছেও সাগরের শক্তি না।
ঠান্ডা বাতাসে ওর জমে যাওয়ার অবস্থা। জ্যাকেট নিয়ে বের হয়নি। জ্যাকেট খাটের উপরে। কিছুক্ষন বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে ও নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। পুরনো দরজা। অনেক সময় ফেঁসে যেতে পারে। ভেতরে কোনো জানালা হয়তো খোলা। যেদিক দিয়ে বাতাস আসে। সে বাতাসে দরজা লেগে গেছে। দরজা লেগে লক ফেঁসে গেছে। অনেকসময় জোরে ধাক্কা দিলে এমন দরজা খুলে যায়।
সাগর আবারো সাহস সঞ্চয় করলো। সাহস সঞ্চয় করে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিলো দরজায়। দরজা খুলে গেছে। এত জোরে ধাক্কা দেয়ার দরকারই ছিলো না।
সাগর ভেতরে ঢুকে জ্যাকেটটা গায়ে জড়ালো। শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। জ্যাকেটটা গায়ে জড়ানোতে বেশ আরাম লাগছে। জানালাগুলি আবার দেখল। না। কোনো জানালা খোলা নেই।
ঘস করে শব্দ হল জ্যাকেটের। দ্রুত শব্দের দিকে তাকালো সাগর। কেউ গাঁ ঘেসে পাশের কক্ষের দিকে চলে গেল। হঠাৎই পাশের কক্ষের লাইট বন্ধ হয়ে গেল। কেউ বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ছে। চাদর টেনে নিচ্ছে।
সাড়া শরীর দিয়ে ঘাম বের হয়ে এলো সাগরের। প্রচন্ড ভয় তাড়া দিলো তাকে। প্রায় ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে এলো সে। কটেজ ছেড়ে আরও বেশ কিছু দূর এসে দাঁড়ালো। হঠাৎই হাঁপানির মতো হচ্ছে তার। হাঁপাতে হাঁপাতে কটেজের দিকে তাকাল। কেউ কি কটেজ থেকে তাকিয়ে আছে?
অংশুই এর ধাক্কায় ঘুম ভাংলো সাগরের। কটেজের সামনে বাগানে ঘুমিয়ে আছে সে। কখন ঘুমিয়েছে মনে নেই। রাতে কি হয়েছিলো বলতে চাচ্ছিলো সাগর। অংশুই বললো, ‘পরে বলিস। বুঝতে পেরেছি কি হয়েছে। আগে কাপড়-চোপড় পাল্টে বিছানায় গিয়ে বিশ্রাম নে।’
‘তুই জানিস কি হয়েছে ? কিভাবে জানিস ?’
‘পাশের পাহাড়ে মারমাপাড়া। সেখানে একটা স্কুল আছে। সে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা থাকতেন এই কটেজে। তার মিংশু নামের এক মেয়ে ছিলো। একটা মাত্র সন্তান। মিংশু একটা বাঙ্গালী ছেলের সাথে প্রেম করত। স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন মারমা। তিনি বৌদ্ধ। ছেলেটা মুসলমান। আবার বাঙ্গালী। নানা দিক বিবেচনা করে তিনি বিয়েতে রাজি হননি। অনেক কান্নাকাটি করেছে দুজন। কিন্তু লাভ হয়নি। একদিকে মারমারা অন্যদিকে বাঙ্গালীপাড়ার বাঙ্গালীরা। কেউ রাজি না বিয়েতে। দুজনেই মা-বাবাকে বেশ ভালোবাসতো। এ কারনে তারা পালিয়ে বিয়ে করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে পারেনি। একদিন মেয়েটি কটেজের পেছনের কক্ষে আত্মহত্যা করে। ছেলেটি আত্মহত্যা করে বাঙ্গালী পাড়ায়। তার বাড়িতে।
প্রধান শিক্ষিকা মহিলা এরপরেও কয়েকমাস এখানে থাকতেন। কিন্তু তিনি প্রায়ই কটেজে তার মেয়েকে দেখতেন। সে এসে মার কাছে কাঁদতো। তিনি ঘুমিয়ে গেলে তার চাদর টেনে নিতো। তাকে জাগিয়ে তার ব্যাথার কথা বলতো। তিনি ঘুমাতে পারতেন না। শেষে প্রধান শিক্ষিকা বান্দরবন শহরে রাজপাড়ায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় চলে গেছেন। এ কটেজ তার স্বামীর করা। ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
এখানে যেই আসে তাকেই বিরক্ত করে মেয়েটি। ভয় দেখায়। তবে বড় কোনো ক্ষতি করে না। আমরাও এখানে থাকবো না বেশিদিন। এনজিওকে বলে দিয়েছি। আমি তোকে পরে ফোন দিয়েছিলাম। এটা বলতে যে তুই মারমা পাড়ায় চলে যা। সেখানে আমাদের বন্ধু আছে সি প্রু। ওদের বাসায় থাকতে পারতি। কিন্তু পরে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় আর বলতে পারিনি। আর সি প্রু মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে না। তাই ওকে বলতে পারিনি তোকে নিয়ে যেতে।’
রাতে ভালো ঘুম না হওয়ায় সাগরের শরীর টলছিল। কোনরকমে সেমাই, আলুসেদ্ধ খেলো। অংশুই চা বানাল। চা হাতে নিয়ে দুজনে চায়ের বদলে পাহাড়ি ফুলের তীব্র গন্ধ পেলো। কাপ রেখে অংশুই পাশের রুমে গেল। সাথে সাগর।
বিছানার সাদা চাদরের উপরে একগুচ্ছ পাহাড়ি নিসাহাসা ফুল পড়ে আছে। মিংশু নামের মেয়েটির প্রিয় ছিলো এ ফুল। পাহাড়ী ফুল হলেও এ ফুল পাওয়া খুব সহজ না। গহীন পাহাড়ে হয় এ ফুল। পাহাড় তন্ন তন্ন করে প্রতিদিন সকালে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে আসে ছেলেটি। রেখে দেয় এ ঘরে। দুজনের কারোরই শরীর নেই। আত্মা রয়ে গেছে। রয়ে গেছে ভালোবাসা।
সারাবাংলা/এসবিডিই
ঈদুল ফিতর ২০২৪ বিশেষ সংখ্যা গল্প বৈশাখী আয়োজন ১৪৩১ মিংশুদের ভূতের বাড়ি শরীফ উদ্দিন সবুজ