Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কারিগর


১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৮

অবশেষে জয়নালের লাশ পাওয়া গেছে। এই খবরটা আমার কাছে এল সন্ধ্যাবেলা।
খবরটা শুনে আমি এমন ভাব করলাম যেন আমার মনে ভর করেছে অনুনয় মেশানো এক ভয়! আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ খবর শুনে আমি কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। একটা মানুষের নাই হওয়া এত সহজ, এটা জানা ছিল না এখানকার কারও।
আমি তাকিয়ে আছি সামনে, অদ্ভুত এক চাহনি, বাইরের হু হু হিমেল হাওয়া, টুপটাপ ঝরতে থাকা শিশিরের মিহি গুঞ্জন সব যেন চাহনিতে মিশে গেছে। একেবারে দূরে চলে যায় মানুষ, যেতেই পারে; কেননা দূরে যাওয়াই জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য, মিশে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এটাকে এমন ভয়ানক ভাবার কী আছে?
আমাকে এই সংবাদ যে দিয়ে গেল, সে আমার অচেনা। তার স্বরেও আহত বিস্ময়। এমনিতেই শীতের রাত। ভয়ানক ঠাণ্ডা ঘরে-বাইরে। কয়েকদিন ধরে শীত একেবারে জেঁকে বসেছে। এমন শীত, হাত-পা জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। ঘন কুয়াশা। এমন কুয়াশায় দুই হাত দূরে থাকা জিনিসও ঠিকমতো দেখা যায় না। এই এলাকায় এবারের মতো এ রকম ঠাণ্ডা বিগত কয়েকবছরে পড়েনি। এমন শীতের রাতেই পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছে জয়নালের লাশ। দুইদিন ধরে নিখোঁজ ছিল জয়নাল। উজ্জ্বল চেহারা তার। এলাকায় বেশ পরিচিত না হলেও, আশেপাশের অনেকেই তাকে চেনে। কারও সাতে-পাঁচে না থাকা জয়নালের এমন পরিণতি হতে পারে তা একেবারেই ভাবনার বাইরে।
আমিও শুনে খুব অবাক হলাম। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঘটনা। কারণ লাশ যেভাবে আমি লুকিয়ে রেখে এসেছিলাম, পানির ভেতরে ডুবিয়ে, নিচে খুঁটিতে বেঁধে তাতে তো ভেসে ওঠার চান্স থাকার কথা না। বস্তায় ভরে, চল্লিশটা ইটসহ আগে প্যাকেট করেছি। এরপর রশি দিয়ে বেঁধে গেড়ে দিয়েছি। এই অবস্থা থেকে লাশ পচে গলে মিশে যাওয়ার কথা, ভেসে উঠার কথা না। জয়নালের লাশ পাওয়াতে আমার কিছু আসে যায় না। কিন্তু লাশটা পাওয়া গেছে আমার বাড়ির পুকুরে। এক ভয়ানক ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছি, ভেবে আমার অস্থির লাগছে। ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেছে। কিন্তু কীভাবে কী হল, বুঝতে পারছি না।
ছাত্রজীবনেই স্কুলে পড়ার সময়ই আর্কিমিডিসের বিখ্যাত প্লবতার সূত্র আমি জেনেছিলাম। কোনও বস্তু পানিতে ডুবে গেলে সেটি তার সমআয়তনের পানি অপসারণ করে। এই অপসারিত পানির ওজন বস্তুটির নিজের ওজন থেকে কম হলেই কেবল সেটি পানিতে ডুবে থাকে। আবার অপসারিত পানির ওজন বস্তুটির ওজনের চেয়ে বেশি হলে ভেসে উঠবে সেটি। আর আমি জানি মৃত্যু হওয়ার চার-পাঁচ ঘন্টা পর লাশের পেটে থাকা ব্যাকটেরিয়া প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন করতে থাকে। আর একটি নির্দিষ্টমাত্রার গ্যাস জমা হলে মৃতদেহের আয়তন বেড়ে যায়। এভাবে পেটের গ্যাস মৃতদেহকে ভাসিয়ে তোলে।
আবার ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা মৃতদেহের পচন প্রক্রিয়া শেষ হলে লাশের পেট থেকে গ্যাস বের হয়ে যায়। ফলে লাশটি পানির নিচে ডুবে যায়। এই যে ভেসে উঠার বিষয়টি যাতে না ঘটে সেজন্যই আমি যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিন্তু অজানা কারণে সব ভেস্তে গেছে।
আমি পেশায় একজন ডাক্তার। একসময় শহরে ছিলাম, বড় নামী হাসপাতালে। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে স্থায়ীভাবে গ্রামে এসেছি অনেক আগে। অন্তত অর্ধযুগ তো হবেই। কিন্তু এখনও আমি আগের মতোই মৃতদেহ ভালবাসি। এই ভালবাসাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অথচ এর আগেও বহুজন মৃতদেহের প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছে, আমিই কিন্তু প্রথম না। অথচ এ কারণেই আমার চাকরি চলে যায়, হাসপাতাল থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতাল হওয়াতে বিষয়টি এরা কোনও মাধ্যমকে জানায়নি। আমি সব ছেড়ে এরপর গ্রামে চলে আসি।
এই যে গ্রামে এসেছি, মৃতদেহের প্রতি আমার যে প্রেম, তা কিন্তু শহরে ফেলে আসিনি। এ আমার রক্তে মিশে গেছে। সুতরাং আমি নীরবে এবং কৌশলে আমার কাজ চালিয়ে যেতে থাকি।
মৃত মানবদেহকে এমন ভালবাসা আমিই কিন্তু প্রথম না। লাশকে ভালবেসে সবার আগে এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল তৃতীয় শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রিসে। কালসিডনের হেরোফিলাস এবং সিওসের ইরাসিস্ট্রেটাস নামের দুই চিকিৎসক লাশের প্রেমে পড়ে যান একদিন। তারা আলেকজান্দ্রিয় মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ প্র্যাকটিস করতেন অবশ্য। কিন্তু সেই তৃতীয় থেকে আঠারো শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত অনুশীলনের জন্য লাশ পাওয়া সহজ ছিল না। কেননা তখনও ব্যবচ্ছেদের জন্য মানবদেহের একমাত্র বৈধ উৎস ছিল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এমন অপরাধীদের মৃতদেহ। এই কাজের জন্য সচরাচর ব্যবহার করা হতো ফাঁসিতে ঝোলানো লাশ। মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে, অ্যানাটমিস্টরা মৃতদেহের সন্ধানে ভিন্ন উপায়ের খোঁজ করতে বাধ্য হয়।
বিশ্বব্যাপী মৃতদেহের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে মানুষ কবর-ডাকাতি শুরু করে। অথচ সেই অবস্থা থেকে বর্তমানে শরীর দান একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কথাগুলো বলার কারণ লাশ নিয়ে অনুশীলনের স্বীকৃতি অতো সহজে আসেনি।
জীবিত দেহের চেয়ে আমার মৃতদেহ ভাল লাগে। আমি যে হাসপাতালে ছিলাম, অনেক রোগী যারা আইসিইউতে ছিল এদের অনেককেই আমি মেরে ফেলেছি। আমি সুযোগ খুঁজতাম। কিন্তু মৃতদেহ আত্নীয় স্বজনরা নিয়ে যেত। আমার মন খারাপ হতো। আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যেতে থাকে। এরপর হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি তদন্ত করলে আমি ধরা খেয়ে যাই। আমাকে তারা বের করে দেয়।
গ্রামে আমার একটা বাড়ি ছিল। বেশ বড় বাড়ি। আমি দীর্ঘদিন না থাকায় সেটি বসবাসের অযোগ্য হয়েছিল। কিছু সংস্কার কাজ সম্পাদন করে আমি সেখানে থাকতে শুরু করি। গ্রামের কবরস্থানে আমি প্রায়ই যাতায়াত করতাম। কিন্তু আপাতত তেমন সুযোগ করার মতো পরিবেশ পাইনি। আর সেখানে মানুষ কয়েক মাসে এক-দুইজন মারা যেত।
আমি আমার ড্রাইভারকে খুন করি আগে, তার খোঁজে আসা আরও একজনকে খুন করি। রাস্তায় কোনও পাগল, ভিক্ষুক দেখলে তাকে বাড়িতে এনে সবার অজান্তে খুন করি। এভাবেই চলতে থাকে। যাকেই খুন করি, লাশ কিছুদিন ফ্রিজে রেখে, মধ্যরাতে একা বের করে দেখি। এরপর আবার ঢুকিয়ে রাখি ফ্রিজে। নতুন কাউকে মারলে সেটি মাটিতে পুঁতে দিই। আপন বলতে যার তেমন কেউ নাই, সাধারণত এ রকম মানুষ আমি টার্গেট করি।
গ্রামের বাড়িতে আমার বাসার কিছু কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য একটি মেয়েকে নিযুক্ত করি। মেয়েটির নাম মাজেদা। বয়স ত্রিশের কম-বেশি। স্বাস্থ্য ভাল। শ্যামলা। কাজে আসার প্রথম দিনই মাজেদাকে জিজ্ঞেস করি,
বাসায় কে কে আছে তোমার?
আছে সবই স্যার। আবার নাই-ও।
খুলে বলো। বিয়ে করেছো?
জি স্যার।
স্বামীর সাথে কি ঝগড়া করো? অভিমানের কথা বলছ তাই জিজ্ঞেস করা।
কথা কাটাকাটি, ঝগড়া এসব এখন আর হয় না।
ও আচ্ছা।
একসময় সারাদিনই ঝগড়া হত দুজনের। সারাক্ষণ লেগে থাকত এটা-ওটা নিয়ে।
কেন?
অভাবের সংসারে যা হয়। তিনটা ছোট ছোট বাচ্চা। ঘরে খাবার নাই। সম্পর্ক মিষ্টি থাকার সুযোগ নেই।
আচ্ছা।
এই অভাবের কারণেই তিনটা এমন ফুটফুটে বাচ্চা রেখে দুই বছর আগে সৌদি গিয়েছিলাম স্যার।
তারপর চলে এলে কেন?
কারণ আছে স্যার।
কী সেটা?
সব আপনারে কইতে পারব না স্যার।
তা ফিরেছো কবে সৌদি থেকে?
ফিরেছি মাস খানেক আগে।
মাজেদার কাছে তার গল্প শুনতে লাগলাম। সৌদি থেকে দেশে ফিরে আসার পর জয়নাল তার সাথে ভালই ছিল। কিছুটা চুপচাপ হলেও সপ্তাহ দুই কথাবার্তা বলছিল মাজেদার সাথে। এরপরই অন্য চেহারা।
এমন চেহারা মাজেদা কখনও দেখেনি জয়নালের। এমন হাসিখুশি মানুষটা চুপ হয়ে গেল। ঘর থেকে বের হচ্ছিল না। শরীর খারাপ কিনা বার বার জিজ্ঞেস করছিল মাজেদা। না, তাও না।
মাজেদার সৌদি যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ তেমন ছিল না জয়নালের। মাজেদারও আগ্রহ ছিল তা নয়। অভাব যদি কিছুটা কমে। ঠিক সে কারণেই। সন্তান ফেলে নইলে কোনও মা ভিনদেশে যায়। অবশ্য এ সম্পর্কে মাজেদার ধারণা ছিল না। রাজ্জাক মোল্লাই সব ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে সে সৌদি গিয়েছিল, তা যে পূরণ হওয়ার নয় সে কথা মাজেদা সেখানে যাওয়ার পরদিনই বুঝে যায়।
সৌদি যাবার আগে এখানে কাসেমের ডাংগারিতে কাজ করত মাজেদা। মাছ কেটেকুটে দিত। লবণ মাখাতো। জয়নাল কাজ কাম তেমন করত না তখন। একদিন কাজে গেলে চারদিন ঘরে বসে থাকত সে। তার নাকি কাম-কাজ সয় না। ভাত জোগাড়ের জন্য এমন কাজ করা লাগবে এ কোনওদিন ভাবেওনি মাজেদা। জয়নালের সাথে বিয়ের সময় এরা বলেছিল, উচ্চবংশের ছেলে। এখন দিন পরতির দিকে। কিন্তু যা আছে, তাও কম নয়। কিন্তু বিয়ের পর মাজেদা এসে দেখে, কিছুই নাই। চাল-তেল কেনার মুরোদই নাই জয়নালের। সে দিনরাত জ্ঞানের কথা কয়। পেটে ভাত না থাকলে জ্ঞান কান দিয়ে ঢুকে না। সে কথা জয়নালকে কে বুঝাবে।
এককালে জয়নালদের পয়সাকড়ি ছিল। গ্রামের মধ্যে প্রভাব প্রতিপত্তি অর্থবিত্ত সবচেয়ে বেশি এদেরই ছিল। কিন্তু বসে বসে গিললে কয়দিন? দাদার রেখে যাওয়া সম্পদ বেচাবিক্রি করে ওর বাপ পর্যন্ত পার হতে পারল। ঠেকলো এসে জয়নাল। ছোটবেলায় কিছু প্রভাব-প্রতিপত্তির গন্ধ সে পেয়েছে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে নেমে এসেছে অভাব।
বাপ যতদিন বেঁচে ছিল, তাও একটু খেতে পরতে সমস্যা হত না। কিন্তু বিয়ের দুই মাস আগে ওর বাপ মারা যায়। দেনা ছিল অনেক। সে সময় যে জমিজমা ছিল, সব বিক্রি করেও দেনা শোধ হয়নি। শেষে পাওনাদারদের হাতে পায়ে ধরে কোনওরকম রক্ষা পেয়েছে।
সংসারে ঢুকেই মাজেদা বুঝে যায়, বড় অভাবের সংসার। একসময় সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আনতে মাজেদা দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব চলে যায়। তাতে গ্রামের মানুষ নানা খারাপ কথা বলাবলি করতে থাকে। আর এভাবে জয়নালের সাথে তার ঝামেলার শুরু।
মাজেদাকে পেয়ে আমার জন্য বেশ ভাল হয়েছে। আমি গ্রামে অনেকদিন ছিলাম না। তাছাড়া রান্নার ব্যাপার আমি নিজেই সামলাতে পারি, যেহেতু আমি একা মানুষ। কিন্তু এর বাইরে বাড়িঘর পরিষ্কার করাসহ আরও অনেক কাজকর্ম আছে যেগুলো আমার পক্ষে সম্ভব না।
একদিন মাজেদা কাজ করছিল। ঘর পরিষ্কার করছিল। আমি এ সময় ছিলাম রান্নাঘরে। মাংস কাটছিলাম। এ সময় মাজেদা সেখানে ঢুকলে হঠাত আমি অন্য একজন হয়ে যাই। কী যেন ভর করে আমার ওপর। আমি মাংস কাটার চাকু দিয়ে মাজেদার বুকের বামপাশে ও গলায় আঘাত করি। মাজেদা লুটিয়ে পড়ে। মাজেদার মাথা আলাদা করি। বডিকে তিন টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দিই। প্রথম দিন কোনও সমস্যা হয় না। আমি অন্যদিনের মতোই রাতে ঘুমাতে যাই। ঘুম থেকে উঠার কিছুক্ষণ পর জয়নাল আসে মাজেদার খোঁজে।
আমি একটু ধাক্কা খাই। কিন্তু কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না কাউকে। জয়নালকে জিজ্ঞেস করি,
কী ব্যাপার জয়নাল? কেমন আছো?
জি স্যার, ভাল।
তা হঠাৎ কী মনে করে?
স্যার। মাজেদার ব্যাপারে আসছি।
মাজেদার কী হয়েছে?
মাজেদার কিছু হয়নি। সে আপনার এখানে নাই?
না। ও তো গতকাল চলে গেছে।
কী বলেন?
বিকেলেই তো মাজেদা চলে যায়, তুমি তো জানো।
তা জানি।
তাহলে?
গত রাতে মাজেদা বাড়ি ফিরেনি স্যার।
বলো কী?
জি স্যার। অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। বাচ্চাগুলো রাতে কান্নাকাটি করে ঘুমিয়ে গেছে।
তাহলে তুমি কালই রাতে খোঁজ করোনি কেন?
না স্যার। অপেক্ষা করতে করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। আর আমি ভাবছি-
কী ভেবেছো?
আমার মনে হয়েছে, যেহেতু আপনি একা মানুষ। আপনার কোনও অসুখ হয়েছে কিনা।
না, না। আমি ঠিক আছি। এখন মাজেদা তাহলে বিকেলে গেল কোথায়?
খুব চিন্তায় পড়লাম স্যার।
হুম চিন্তারই তো বিষয়।
আপনাকে কিছু বলে যায়নি ডাক্তার সাব?
না।
কই যে গেল। বাচ্চাগুলো নিয়া আমি পড়ছি মহাবিপদে।
জয়নাল চুপচাপ বসে আছে। আমিও কোনও কথা বলছি না। তবে আমার উদ্দেশ্য হল, জয়নালের মনে মাজেদা চলে যাওয়ার বিষয়ে কিছু যুক্তি ঢুকিয়ে দেওয়া। দেখা যাবে, এই যুক্তি সে নিজে থেকেই অন্যদের বলা শুরু করবে। আর এভাবে ব্যাপারটা হালকা হয়ে যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
তোমার সাথে মাজেদার কোনও ঝামেলা হয়েছে?
না স্যার।
মানে কোনও কিছু নিয়ে ঝগড়া?
না স্যার।
কোনও বিষয় নিয়ে মতের অমিল হয়েছে যার জন্য মাজেদা অভিমান করে চলে যেতে পারে?
স্যার। সংসারে কত সমস্যা নিয়ে কত কথাই তো হয়। এখন ঠিক করে মনেও আসতেছে না কিছু।
ভেবে দেখো। এমন কোনও কারণ আছে কিনা যার জন্য মাজেদা এই কাজ করতে পারে।
জি স্যার।
আর সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজ নিয়ে দেখো।
জি।
আর আমার কোনও হেল্প লাগলে বলো।
আমি কথা শেষ করে কিছু টাকা জয়নালের হাতে গুঁজে দিলাম। সে প্রথমবার নিবে কিনা ভাবলো। আমি বললাম,
আরে এ সময় টাকা দরকার আছে। আর সমস্যা নেই। মাজেদা নিশ্চয়ই ফিরে আসবে। তখন সে কাজ করলে মাইনে থেকে শোধ হয়ে যাবে। এ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার।
জয়নাল চলে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও মাজেদাকে পায় না। আসলে মাজদাকে পাবে কোত্থেকে! মাজেদা কয়েক টুকরো হয়ে আমার ফ্রিজে বরফ হয়ে আছে। আমি রোজ রাতে মাথাটা বের করে দেখি।
এই কদিন জয়নাল হন্যে হয়ে মাজেদাকে খুঁজে বেড়িয়েছে। সম্ভাবনাময় সবখানে খুঁজে এক সময় ক্লান্ত হয় জয়নাল। রাতে ঘুম হয় না এক ফোঁটা। না ঘুমানো চোখ নিয়ে সমস্ত দিন তবুও খুঁজে চলে আবার। এভাবে এক সপ্তাহ কেটে যায়। এরপর একদিন আসে আমার ঘরে।
তখন অনেক রাত। আমি অসাবধানতাবশত দরজা লাগাইনি। রুমে বসে মাজেদার মাথাটা দেখছিলাম। জয়নাল হুট করে ঢুকে পড়ে। চিৎকার দিয়ে উঠে। আমি ওকে সজোরে মাথায় আঘাত করি। জয়নাল লুটিয়ে পড়ে। দরজা লাগিয়ে আমি জয়নালের মাথাটা কেটে ফেলি আগে। এরপর চিন্তায় পড়ে যাই। জয়নালের লাশ নিয়ে কী করব! ফ্রিজে জায়গা হবে না। আরেকটা সমস্যা আছে। ততদিনে গ্রামের লোকজন আমার বাড়ির চারপাশে বেশি বেশি আসা-যাওয়া করছিল।
অনেকের ধারণা মাজেদাকে আমিই কিছু করেছি। এমন পরিস্থিতিতে জয়নাল নাই হয়ে যাওয়ায় সমস্যা বাড়বে। জয়নালকে আপাতত এমনভাবে লুকিয়ে ফেলতে হবে যাতে কেউ টের না পায়। আর সেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঈদুল ফিতর ২০২৪ বিশেষ সংখ্যা কারিগর গল্প বৈশাখী আয়োজন ১৪৩১ হাসান হামিদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর