মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর মাধ্যমে নির্যাতিত নারীদের সেবা দিয়েছিলেন ডা. হালিদা হানুম আখতার। মুক্তিযুদ্ধকালীন সাদাবাহার সেবাসদনের অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসা প্রদানের গল্প নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছেন বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক। গতকাল শনিবার, ২ মার্চ, অমর একুশে বইমেলায় তার ‘সম্ভ্রমযোদ্ধা : সেবাসদন ও একজন ডা. হালিদা’ নামের এই বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়। এটি প্রকাশ করেছে এসএইচপিএল প্রকাশন।
বইটি প্রসঙ্গে ডা. হালিদা হানুম আখতার বলেন, ‘একাত্তরে সম্ভ্রমযোদ্ধাদের প্রতি যে ন্যায় আমরা করতে পারিনি, তার দায় কিছুটা কমানোর উদ্দেশ্যেই এই দলিল রেখে যাওয়া। আমি দেখেছি, যা আমার জানা ছিল, তা যদি নতুন প্রজন্মকে জানার সুযোগ না করে দিতে পারি, ব্যর্থ হতে বাধ্য আমার জীবনব্যাপী করা প্রতিটি কাজ।’
বইটির বিষয়ে এসএইচপিএল প্রকাশনের সম্পাদক ও প্রকাশক মো. আল-মামুন সেলিম অর-রশিদ জানান, পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্মই হয় কেবল মানুষের উপকারের জন্য। ডা. হালিদা হানুম আখতার তেমনি একজন মানুষ। তিনি তার সমগ্র জীবন ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণে। প্রতিনিয়ত পেয়েও যাচ্ছেন অসংখ্য সম্মান ও সম্মাননা। তার জীবন ও কর্মের একটি সামান্য অংশের প্রতিফলন ঘটেছে এই গ্রন্থে। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে।
ডা. হালিদা হানুম আখতার এবং সম্প্রতি প্রকাশিত তার বইয়ের প্রসঙ্গে লেখক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জান্নাতুল বাকেয়া কেকা জানান, যে কোনও যুদ্ধেই পুরুষ যখন যুদ্ধে যান, অরক্ষিত হয়ে পড়েন নারী ও শিশুরা। আর ১৯৭১ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তারের কারাগার থেকে দেশে ফিরেই নির্যাতিত ও নৃশংসতার শিকার নারীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৌখিক নির্দেশে ‘বাংলাদেশ জাতীয় নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করা হয়। চিকিৎসাসেবায় বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসের ওই কর্মসূচির অধীনে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হয় কাজগুলো। এই কাজে সহায়তা করার জন্য ভোনশুল্টজ, মিসেস আনা মারিয়া, আসুবিহারী ও ডাক্তার ম্যালা পোর্টস প্রমুখ খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে ঢাকায় আসেন। এই বছর ফেব্রুয়ারিতে আষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় জাতীয় নারী পুনর্বাসন বোর্ডের কার্যক্রম। বোর্ডের অধীনে তৎকালীন রাজধানীর সাত নম্বর রোডের ১৬/বি ‘সাদাবাহার’ নামের বাড়িতে শুরু হয় যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের জন্য ‘সেবাসদন’ বা ‘ক্লিনিক’ ও ‘জাতীয় নারী পুনর্বাসন বোর্ড’- এর কার্যালয়। সেখানে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন অধ্যাপক ডা. হালিদা হানুম। এ দেশের নারীদের ঘুরে দাঁড়াতে বঙ্গবন্ধুর সময়োযোগী উদ্যোগ ও কর্মতৎপরতা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকুক সেই উদ্দেশ্যে গুণীজন ডা. হালিদা হানুমকে কাজটি করতে যথেষ্ট সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।
ডা. হালিদা একজন গুণী চিকিৎসক মন্তব্য করে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জান্নাতুল বাকেয়া কেকা জানান, তিনি যে ঐতিহাসিক কাজে উদ্যোগী হয়েছেন, তা শতভাগ সফল হোক এই মনোবাসনা পোষণ করছি। ডা. হালিদা হানুম আখতার ২০২৩ সালে নারী অধিকারে অবদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রোকেয়া পদক পান। তিনি সারাজীবন বাংলাদেশের নারী স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা ও প্রকল্পের কাজ করেছেন। সূর্যের হাসির বাংলাদেশের প্রধান ছিলেন এই চিকিৎসক।