Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বপ্নকথা ও স্বপ্নকথার পরের কথা

খায়রুল বাবুই
১৬ জুন ২০২৪ ১৭:০৫

স্বপ্নকথা

: শোনো, আমাদের যখন অনেক টাকা হবে, একটা পাহাড় কিনে ফেলব।
—আচ্ছা, পাহাড় তো আকাশছোঁয়াও হয়। একটা আকাশ কেনা যায় না?

: অবশ্যই যায়। আমাদের যখন অনেক টাকা হবে, আকাশের একটা অংশ কিনে দেব তোমায়।
—আচ্ছা, পাহাড় কিন্তু নদীঘেঁষাও হয়। একটা নদী কি কেনা যায়?

: খু-উ-ব যায়। আমাদের যখন অনেক টাকা হবে, পুরো একটা নদী কিনে ফেলব।
—আহা! আমার নিজস্ব একটা নদী হবে! ঢেউ হবে! নদীর জলে আরেকটা আকাশ দেখবো, প্রতিবিম্বে…! সত্যি?

: সত্যি। আমাদের যখন অনেক টাকা হবে, তুমি চাইলে একটা সমুদ্রও কিনে ফেলতে পারি।
—নাহ্ বাবা! উত্তাল স্রোতে ভীষণ শঙ্কা। তারচেয়ে তুমি আমাকে কিছু বৃষ্টি কিনে দিও। দেবে তো?

: এমন কী আর চাইলে…? যখন আমাদের অনেক টাকা হবে, উজ্জ্বল রোদ সরিয়ে গুমোট মেঘে ঢেকে দেব পুরোটা আকাশ। তারপর…, তারপরই তো ঝুম বৃষ্টি এসে লুটিয়ে পড়বে তোমায় পায়ে।
—আচ্ছা, বৃষ্টি থামার পর, আকাশে লেপ্টে থাকা রংধনু…

: হা হা হা, বেনিআসহকলা চাইছো তো? যখন আমাদের অ-নে-ক টাকা হবে, পৃথিবীর সব রঙ, ফুলেদের সব ঘ্রাণ, পাখিদের সব গান এনে অর্ঘ্য দেব তোমার সামনে!
—কথার কথা?

: না, স্বপ্নকথা। তবে সবই সম্ভব—টাকা হয় যদি।
—তাহলে চলো, আমরা আগে একটা ‘যদি’ কিনে ফেলি!

‘স্বপ্নকথা’র পরের কথা

: শোনো, আমার মুহূর্ত-সকল থমকে আছে; জানো?
—তোমাকেই জানা হয়-না যেন কত নিযুতবর্ষ ধরে। না-দেখি চোখের সীমানায়, না-পাই মনের আঙিনায়। তবে, কীভাবে হই মুহূর্ত-বিলাসী, বলো?

: আমি তো আছি; আছিই তো… তোমার সব না-পাওয়ার ভেতর।
—আহা! জানতাম যদি আমার শূন্যতার রাজ্যেই তোমার বসবাস, তাহলে কি নির্নিমেষ তাকাই অসীমে? আচ্ছা, তুমি কি হবে না দৃশ্যমান? আসবে না কাছে? বসবে না পাশে?

বিজ্ঞাপন

: দূরে গেলেই তো কাছে আসার টান জাগে। বিন্দুসম জীবনে সিন্ধুসম প্রেম নিয়ে কি দূরে থাকা যায়? …থাক্ ওসব। তুমি ও তোমার মন, বলো এখন কেমন?
—ঝড় নেই, বাতাস প্রবল। তোমার জন্য ‘যদি’ কেনার পর থেকে…

: সত্যি? সত্যিই তুমি পেয়েছো ‘যদি’র খোঁজ? নিয়েছো কিনে আমার জন্য?
—বিশ্বাস হয় না বুঝি?

: আহ্! তার মানে এখন থেকে ওই পাহাড়, ওই আকাশ, এই নদী আর অপেক্ষায় ডানায় জমতে থাকা বৃষ্টি… সব, স-ও-ব একান্তই আমার?
—ঠিক। আমাদের সহজ জীবনের জটিল সূত্রগুলো মিলে যাবে সমান্তরাল। কিন্তু…

: আবার কিন্তু কী?
—কিন্তু তোমার জন্য ‘যদি’ কেনার পর থেকে আমি দাঁড়াতে পারি না পাহাড়ের সামনে। তাকাতে পারি না আকাশের দিকে, গুনতে পারি না নদীর ঢেউ, গালে মাখতে পারি না বৃষ্টিকণা…

: এমনও হয় নাকি?
—হলো তো। হাতের মুঠোয় সব সম্ভবের ‘যদি’ থাকার পরও পারছি না তোমার স্পর্শ কিনতে। পারছি না তোমার অনুভূতি কিনতে…।

: আহা! তাহলে আমি বরং মিশে যাই নৈঃশব্দে। আর মুহূর্ত-সকল গুটিয়ে নিই অতীত-অন্ধকারে। তার আগে একটা কথা, বলতে পারো শেষ মিনতি—আমাকে কিছু অভিমান কিনে দিও প্লিজ; পাথরচাপা সবুজ ঘাসের যেমন থাকে।
—তাহলে আমি নিজেই তোমার অভিমান হয়ে যাব।

: তার পর কী হবে…?
—তারপর হবে তোমার অভিমান আর আমার অপেক্ষার যৌথ-চাষ। দুজনার নামে আর ঘামে ফোটাবো ‘স্বপ্ন’নামক ফুল; প্রতি বসন্তে।

সারাবাংলা/এসবিডিই

খায়রুল বাবুই গল্প সাহিত্য স্বপ্নকথা ও স্বপ্নকথার পরের কথা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর